আত্মবান্ধব হাওয়ার ইহকাল
-আবু মকসুদ
ঘুমন্ত ছুরি ফালাফালা করে দিচ্ছে দুরন্ত শৈশব। পুরানো বৈরাগী
ডাকে ফের, বুকের শিরায় অঘ্রানের ঘ্রাণ
জেগে উঠলে, আমি কাতর হই লোকনিন্দায়।
সে ছিল আত্মভোলা। ধোওয়া ভোরগুলো মাড়িয়ে হেঁটে দূরে যেত
তার পায়ের অদ্ভুত শব্দ নর্তকীর ঘুঙুর হলে আমার বুকে
কামড়াত অজস্র লাল পিঁপড়ে। নদী পাড়ে হাওয়ার তারানায় বিদ্ধ হলে
নকল সাম্পান ভাসিয়ে হাজির হতাম, দুকুল মাতিয়ে
নদী ভাসাতে ভাসাতে কিনারা ভুলাত ফেলে আসা স্মৃতির শহর।
পাখিদের দিয়ে খবর পাঠাতাম, ফিরবার আগ্রহ হারিয়েছি বলে দিও।
পাখিরা অন্তহীন উড়ে কোথায় মিলাত সে খবর জানতে
চাইলে নৈঃশব্দ্যের গাঢ় প্রলেপ ধীরে ধীরে নদীকে জড়াত।
আমাদের চোখাচোখি, আঙুলের ছুঁয়াছুঁয়ি
পুলক জাগালে, সম্বিৎ ফিরে পেতাম-
এ ভাবে এগোনো ঠিক নয় স্থিত হলে,আমরা গৃহস্থ মাটিকেই
আকড়াবার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতাম, বিধাতাপুরুষ ভাগ্যলিপি সংরক্ষণ করেন
এ ভাবনায় আমরা সমর্পিত হলে, এক রাশ আত্মবান্ধব হাওয়া
আমাদের পৌঁছে দিত,পাতার মর্মর পেরুনো নিকানো উঠোনে-
ভবিষ্যত ভাবনায় মন কাতর হলে আমরা দেখতাম মধুগন্ধী বৃষ্টির ছোঁয়া
জানালায়, কার্নিশে-নতুন পাতার চঞ্চলতা নিয়ে হাজির হতো হারানো শিশির।
খানিকটা বিরতির পরে উঠবে নতুন পর্দা। এই ভেবে শষ্যাক্লান্ত হলে, নদীর
পাখিদের জর্জরিত করে কতিপয় ধূর্ত চিল।
তাদের রাজ্যপাটে এমন বেল্লেপনা চলবেনা -শাসানিতে নিভে যায়
মঙ্গলকামনার প্রদীপ, আহ্লাদী বচনে ভিজবে না চিড়ে, পৌঁছানো যাবে না
সেতু অবদি, জানা হয়ে গেলে চিলদের ছোবল বাচাতে রাত্রি নামে,
একদল শববাহকের খাটিয়ায়,
শ্মশানে পৌঁছে আমরা নেই জীবনের প্রথম পাঠ। শুরু করি জলের ভিতর
মাছের খেলা, খেলা জমে উঠে
এবং হাটে দিগন্তের আলপথে।
ওপারে রয়েছে সুখ এই ভাবনা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।পুলকিত মন
আচমকা বাস্তবের কঠিনে আছাড় খেলে হলদে পাতারা ঝরে,
মন্তর রাতে আরশিতে দেখা নিজস্ব প্রতিবিম্ব আস্তে আস্তে
ক্ষয় হতে শুরু করলে যৌথ বিছানায় শোয়া শরীরে ধোঁয়া উড়ে
আর এই ধোঁয়ার পরিনিতিতে পুড়ে যায় যাবতীয় ইহকাল পরকাল।
আমাদের শখ ছিল গাছজন্মের কিন্তু দগ্ধনরকবাসের দাগ
আমাদের কপালে সেটে গেলে আমরা কাতর হই লোক নিন্দায়,
নদীর পাখিরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, শুধু উঠোনে অনাদরে
পড়ে আছে কয়েকটা লেবুফুল,
যার গন্ধে একদা আমরা সত্যিই মাতোয়ারা ছিলাম