আমরা থাকতাম মফস্বল শহরে। বাবার চাকুরীর সুবাদেই এখানে থাকা। তাই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে যখনই স্কুল ছুটি হতো চলে যেতাম ঢাকায়। ঢাকায় আমার নানার বাসা। খুবই মজা হতো ঢাকায় গেলে। কারণ আমারই বয়সী মামাতো ভাইয়ের সাথে খেলে বেড়িয়েই দিন ঝড়ের গতিতে বয়ে যেত সেখানে। অনেক অনেক ঘুরে বেড়াতাম আমরা।
একদিন ভাই বলল- চল্ নাটক দেখে আসি। এইতো একটু হেঁটেই মহিলা সমিতি। ওখানে তৌকিরের কি একটি নাটক চলছেল। চল্ দেখে আসি।
আমি আগে কখনই নাটক দেখিনি। ও কোন এক ভাইয়ের সাথে টেলিফোনে কথা বলে টিকেটের ব্যবস্থাও করে ফেলল। বের হচ্ছিলাম দুইজনে এমন সময় দেখি, মামীর অগ্নিমূর্তি সামনে উদয় হল। কোথায় যাওয়া হচ্ছে দুইজনে? ও বলল এই একটু হেঁটে আসি। মামী বলল বাইরে অনেক ঠান্ডা পড়ছে সুয়েটার গায়ে দিয়ে যাও দুজনে। কেউই আর দ্বিমত করলাম না তাড়াতাড়ি সুয়েটার গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে গেলাম। সুয়েটার গায়ে দিতেই কেমন যেন অস্বস্তি হতে শুরু করল। কারণ পুলওভারটা যথেষ্ট মোটা এবং গরম।
অতঃপর আমরা দুই কিশোর হাঁটতে হাঁটতে নাটক দেখতে গেলাম। আমরা ঢুকতে ঢুকতে নাটক শুরু হয়ে গিয়েছিল। দুইজন পাশাপাশি দুইটি সিটে বসে পড়লাম। দরজা জানালা সব বন্ধ। অন্ধকার একটি হল রুম শুধু মঞ্চের অংশটি আলোকিত। অনেকেই বসে আছে আশে পাশে। ওখানে কিছুক্ষণ বসেই আমার অবস্থা বারোটা না একদম তেরোটা বেজে গেল। গরমে আমার হাঁসফাঁস হতে লাগল। মনে হচ্ছিল আমি এখনই মাথাঘুরে পড়ে যাব। পাশে বসা ভাইকে জানাতেই সে বলল এই তো নাটক শেষের দিকে। একটু বস্, নাটকের শেষটা একটু দেখে নেই। জানিনা শেষের দিকে কিনা কিন্তু আমার তখন শেষ অবস্থা। পেটের মধ্যে বিশাল এক মোচর অনুভব করলাম।
ঠিক তখনই মঞ্চে কি এক নাটকের দৃশ্য চলছিল যেখানে অভিনেতা অভিনেত্রীরা সবাই লাফালাফি ধস্তাধস্তি করছিল। পুরো হল রুমে দুম দাম দুম দাম আওয়াজ হচ্ছিল। এই আওয়াজে আমার অবস্থা আরো শোচনীয়তার দিকে মোড় নিল। ভিতরের সব কিছু বমি হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইল। বমি ঠেকানোর জন্য আমি একটু সামনের দিকে ঝুকলাম। কিন্তু কি করে যেন মুখ দিয়ে বের না হয়ে বিশাল এক বোম ফাটিয়ে পেটের সকল ঝড়ো হাওয়া নিম্নমুখী ছুট দিল এবং খোলা ময়দানে বেড়িয়েই চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেল, অতঃপর দেরি না করে সাথে সাথেই সুগন্ধি ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমিও যেন রাজ্যের শান্তি পেলাম। পাশে ফিরতেই দেখি আমার ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। আমি বললাম কি হল? ও মুচকি হেসে আশে পাশে দেখাতে লাগল। দেখি আশে পাশে যারা আছে কেউ নাকে হাত দিয়ে, কেউ নাকে ওড়না চেপে সুগন্ধির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বিরক্তি সহকারে কোণা চোখে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
আমি চুপচাপ নাটক দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সাথে নাকে হাতটি দিতেও কিন্তু দেরি করলাম না। সেদিন সম্পুর্ণ নাটকটি দেখেই কিন্তু আমরা বেরিয়েছিলাম। দারুণ একখান নাটক ছিল ভাইজান। তৌকির, ত্রপা মজুমদার আর কে কে যেন।
