পরিকল্পনা রেডি, মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে। আমি খুন করতে যাচ্ছি। কাকে খুন করবো এই ব্যাপারে সামান্য দ্বিধা-'দ্বন্দ্ব' আছি। হাতে তিনজন আছে, একজন বন্ধু ফরহাদ, আরেকজন বান্ধবী ফারহানা। তৃতীয় ব্যাক্তিটি অচেনা টাইপ একজন মেয়ে। নাম জানি, নামটা সুন্দর। মেয়েটা কষ্টে আছে। তাকে খুন করা জরুরী। মানুষকে কষ্টে থাকতে দিতে হয় না। ফরহাদ আর ফারহানা নাম শুনলেই ভাই বোন মনে হয়। অথচ ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা।!
আত্নবিশ্বাস শব্দটা বলতেও আত্নবিশ্বাস পাই না। কেমন আছেন প্রশ্ন শুনলেও মনে হয় বইয়ের বাইরে থেকে করা একটা প্রশ্ন। আমরা কাছে উত্তর নেই। প্রেমিকা ছিলো, প্রেমিকারা ছিলো। সুভা, প্রভা কিংবা সুপ্তি। এরা কোথায় এমন প্রশ্ন কেউ না করলেও নিজেকে নিজে করি। এ প্রশ্নেরও উত্তর নেই। এসব পড়ে আমাকে চরিত্রহীন ভাবাটাই স্বাভাবিক। আমার চরিত্রহীনতা ভাসতে ভাসতে ডুবে যায় মদের গেলাসে, পেগ পেগ করে নৌকা বাইতে ইচ্ছা করে। সামান্য সমস্যা আছে, মাতাল হলে হয় উড়তে ইচ্ছা করে, নইলে মরতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আপাতত আমি মাতাল না। শেষ রাতের সমস্ত ঘোর কেটে এখন সুন্দর সকাল। তবুও আমার সকাল হল না। আশা করছি একদিন হবে, একদিন জমজ সকালে দিনের সাথে সাথে আমারও সকাল হবে। আমি হবো সকাল বেলার পাখি। সেজন্য অবশ্যই আমাকে খুন করতে হবে। গতরাতে ফারহানা আমাকে ফোন দিয়েছিলো। ভীষন খুশী হয়েছিলাম।
-রোমেল, ফরহাদকে নিয়ে মদ খেয়েছিস কেন?
প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কী ভালোবাসারে মাইরি। ফরহাদকে তখন মাতাল হয়ে পাশের বিছানায় ঘুমাচ্ছে। শালাকে দিয়েছি একদম।
-চুপ করে আছিস কেন? ফরহাদকে মদ খাইয়েছিস কেন?
- আমি বন্ধুর হাতে মদ তুলে দিয়েছি, তুই বন্ধুর হাতে হাত তুলে দিয়েছিস!
-তুই এত নোংরা, এত নোংরা। ছিঃ
-আমি নোংরা, এত নোংরা যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম!
-চুপ থাক, ফরহাদকে আমি ভালোবাসি। ওর সাথে আগামী বছরই বিয়ে হবে।
-ফারা, আমি তোকে খুন করে ফেলি?
ফারহানাকে আমি প্রথম থেকেই ফারা ডাকতাম। বড় নাম ছোট করে ডাকার সুবিধার পাশাপাশি আদর-মায়ার মত বিশেষ ব্যাপার থাকে। ফারার প্রতি আমার সেটাই ছিলো। এমনকি তারও আমার প্রতি ছিলো। সে আমাকে ডাকতো পাকু। ওর সাথে পরিচয়ের প্রথমদিকেই বলেছিলাম জীবনে কখনো বিয়ে করবো না, চিরকুমার থাকবো। আমার নামের প্রথম শব্দ পারভেজ এবং কুমার লাগিয়ে সংক্ষেপে পাকু। কিন্তু ফরহাদের সাথে প্রেম হয়ে যাবার পর আর ডাকে না। তাই ওকেই খুন করে ফেলা জরুরী। তাছাড়া আত্নবিশ্বাস প্রাপ্তির ব্যাপারটাতো থেকেই যায়। উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। মেয়েটা কাটাকুটিতে ওস্তাদ। ফারার ফোনে মেজাজ খিচড়ে গিয়েছিলো, ফরহাদকে তুলে আরোও চার পেগ খাইয়ে দিলাম। ব্যাটা সারাটা রাত কী সুন্দর করেই না বমি করলো, ভালো লেগেছে।
কষ্ট পাওয়া মেয়েটির নাম জোছনা। তার অনেক কষ্ট। প্রেমিকটা লম্পট ছিলো, সব নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
-জোছনা তুমি খুন হতে চাও?
-চাই!
-কীভাবে খুন হতে চাও বলো? অর্ডার নিবো আজকে, কাল খ্যাঁচ!
-আমরা হৃদপিন্ড বরাবর চাকু ঢুকিয়ে দিতে পারবেন না?
-আমি রক্ত ভয় পাই জোছনা, আমি বরং তোমাকে ধর্ষন করি, তুমি গলায় উড়না পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করো?
-আপনি একটা সিক!
-হুম, আমরা সবাই অসুস্থ। এই যে তুমি তোমারে প্রেমিকের জন্য খুন হতে চাচ্ছো? তুমি কী সুস্থ? তোমার বাবা-মা কী ভাববে। তুমি আমার চেয়ে বড় অসুস্থ। ছিঃ জোছনা ছিঃ
মেয়েটাকে লজ্জা দিয়ে আমার ভালো লাগছে। মেয়েরা লজ্জা পেলে অন্যরকম করে হাসে, অপমানিত হলে মুখ চিমসে যায়। লজ্জায় কাঁদতে পারে না, বসে থাকতে পারে না, তাকাতে পারে না। আনন্দদায়ক বিষয়। জোছনা কিছু একটা বলবে বোধহয়। কী বলবে? মেয়েটা সুন্দরী, নাকের পাশ দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছে, চোখের ঘাম লুকিয়ে আছে অনেক ভিতরে। তবে উষ্ণতা আমি বেশ বুঝতে পারছি। জোছনা ভেবেছে আমি তাকে বুঝানোর জন্য ধর্ষনের কথা বলেছি। সে বুঝে গেছে, আমি জানি আর কিছুক্ষন কথা বললে মেয়েটি প্রেমে পড়ে যাবে। মন দুর্বল, প্রাক্তন ব্যথায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
-রোমেল ভাই, আপনি এমন কেন?
-কেমন?
-আপনি ভালো না খারাপ আমি বুঝতে পারি না! আপনাকে কেন আমি পড়তে পারি না? আপনি কেন আমাকে একা সময়ে সময় দিচ্ছেন? আমিতো বেঁচেই থাকতাম না!
-শোন জোছনা, বেঁচে থাকা খুব পরিশ্রমের ব্যাপার। তুমি অলস, তাই মরে যেতে চাইছিলে। আমি চাই পুরো জাতি পরিশ্রম করুক। বেঁচে উঠুক।
জোছনা কান্না করছে। এখন সে বুঝতে পারছেনা কেন কান্না করছে। গতকালও সে তার কান্নার কারণ জানতো। মেয়েদের কান্নার কারণ খুব দ্রুত পাল্টে যায়। কান্না ব্যাপারটা ভয়াবহ, এখন ওর কান্না খুন করতে ইচ্ছা হচ্ছে। খুন করার প্রক্রিয়াটা খুব খারাপ, তবুও জোছনার কান্না খুন করে দিয়েছি। আমি উঠে পড়লাম, ঠোঁটে নোনতা স্বাদ। সিগারেট খেতে হবে।
স্মার্টনেস বিষয়টা আমার কাছে নেই, আমি মনে করি ফরহাদের কাছেও নেই। ফরহাদ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, একদল মানুষ কোন কারণ ছাড়াই তার কথা শুনে। তাই তাকে লোকে স্মার্ট বলে। জামা কাপড়ও ভালো। দুয়ে মিলিয়ে সে স্মার্ট। ফারার মত রুপবতী মেয়ে কোন কারণ ছাড়াই ফরহাদকে ভালোবাসে, ফরহাদের বুকে লুটুপুটি খায়। ফরহাদের যোগ্যতা ফরহাদের চরিত্র ভালো, সে মদ খায় না, নেশা করে না। ফালতু মেয়েলী চিন্তার কারণে ফরহাদ প্রেমিক, আমি চরিত্রহীন। অথচ ফারাকে বলেছিলাম “মাননীয়া, আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনি আমাকে নিন, ধারণ করুন, পথ দেখান, আপনার বুকে আমি ঘুমিয়ে যাবো লক্ষী ছেলে হয়ে। ইতিহাস বলে আমি খারাপ ছেলে , আপনি এসে ইতিহাস পাল্টে দিন, একদিন না হয় ইতিহাস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবে রোমেল খারাপ ছেলে?
ফারা হেসে কুটিকুটি হয়েছিলো, ওর গালে টোল পড়ে। ইচ্ছে করে টোলের ভিতর ঘুমিয়ে থাকি। ঘুম হয় না, ফারা ঘুমাতে দেয় না। আড়াই বছরের বন্ধুত্ব জীবনের প্রথম এক বছর সে আমার ছিলো, প্রেমিকা না। ছায়াসঙ্গী। আমার কুকর্ম, সু-কর্ম সব ছিলো ওর নখদর্পনে। আমাকে মানা করতো বেশ। তবুও খারাপ ছেলে বলে দূরে যায় নি। কারণ আমি বন্ধু হিসাবে ভালো ছিলাম। স্বার্থপর সবাই, ভালো হবো এমনটা বলিনি কখনো। তবে বলেছিলাম ভালোবাসাটা সত্যি। বিশ্বাস করিনি। এতদ্বারা তাকে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছিলো তার সাথে আমি কখনো মিথ্যা বলিনি। তবুও হলো না। তাই খুন করবো। খুন করে আত্নবিশ্বাস জোগাড় করবো। আমাকে পাগল ভাবলে কিছু করার নেই, ইতোমধ্যে আত্নবিশ্বাস ফেরানোর জন্য খুনের চেয়ে বেটার কোন কাজ মনে হয়নি। যে খুন করতে পারে সে পৃথিবীর সবচে আত্নবিশ্বাসী। সব খুনীদের আমি শ্রদ্ধা করি।
জোছনাকে খুন করা সহজ ব্যাপার, কিন্তু খুন করা যাবে না। ভালোবাসার সোর্স মারতে হয় না। তারচে সহজ ফরহাদকে খুন করা। মদ খেলেই ব্যাটার সব অন্ধকার হয়ে যায়। সামান্য বোকাও আছে। আমাকে অসীম বিশ্বাস করে। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো সামান্য হাসি পায়। আমার সাথে ফারা বিষয়ক আলোচনা করছে।
-বন্ধু, শোন ফারহানাকে বিয়েটা করেই ফেলতে হবে। মেয়েটাকে দরকার।
-হুম করে ফেল, খুব ভালো হবে, শুক্রবার আমি তোদের বাসায় যাবো। ফারহানা রান্না করবে। শুক্রবার ছাড়া যাওয়া যাবে না। তাহলে তুই সন্দেহ করবি।
-কী যে বলিস না! তোকে সন্দেহ করবো। তুই আমার যতটানা ভালো ফ্রেন্ড, তারচে দ্বিগুণ ফারহানার ফ্রেন্ড।
স্মার্ট মানুষরা সাধারণতা বুদ্ধিমান এবং চালাক কিসিমের হয়। কিন্তু ফরহাদ স্মার্ট কিন্তু বোকা। বোকা স্মার্ট মানুষ আমি আর দেখিনি। এজন্য ফরহাদকে আমার ভালো লাগে। ও জানে কোথায় বুঝতে হবে, কোথায় ভুল বুঝতে হবে। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ছেলেরা মদ বিষয়ক পুরানো কোন ঘটনা আলোচনা করতে পছন্দ করে। আমরাও গত বছরের একটা ঘটনা আলাপ করে হেসে লুটুপুটি খাচ্ছি। আমি বোধহয় বেশী খাচ্ছি, আরো খেতে ইচ্ছা করছে। ফারার ঠোঁটে চুমু খেতে ইচ্ছা হচ্ছে, আমার ইচ্ছা হচ্ছে ফারার বুকের কোন অজানা অধ্যায় জানবো। ইচ্ছার মূল্য দিতে হয়, মাতাল মানুষরা ইচ্ছা পূরণে ব্যাকুল।
আজও নেশা মাথায় চড়ে গেছে, ফরহাদের চোখ ছোট হয়ে আসছে। ঘরে একটি মোমবাতি জ্বলছে, বাকিটুকু ধোঁয়া। ফরহাদকে জিজ্ঞেস করলাম “ফারা চুমু খেতে দেয়?
ফরহাদ চুপ, সে ভাবছে। কী ভাবছে আমি বলে দিতে পারি, পিঠে হাত দিয়ে আলতো করে থাপ্পড় লাগালাম “লজ্জা পাস মামা, লজ্জা পাস?
-না কীসের লজ্জা! চুমু? হুম দিবে না কেন? গতকালওতো বাসায় গিয়ে.......
ফরহাদ থেমে যায়। ওকে থামিয়ে দেয়া চলবে না, বলাতে হবে “কীরে মামা? কার বাসায় গেছস?
-বাদ দে
-মদের কসম, তোর আর আমার প্রার্থনার কসম, পিনিকের কসম তুই বলবি।
-ফারা অসাধারণ! অসাধারণ
-কেমন?
-ভালোবাসা ক্রোধ হয়ে যেখানে ঘাম হয়ে যায়, ক্রোধ যখন আবার ভালোবাসা হয়ে যায়
-ওরে শালার কবিতা চুদাইতাছসরে...
-দোস্ত জানবি না, বুঝবি না, এই যে দেখ হাতে নখের দাগ, দেখ দেখ.....
একটি নগ্ন দেহ, কে সে? ছলকে যাচ্ছে কোমর থেকে এক ফোটা ঘাম, ফারা, বুক থেকে স্রোত নেমে যায়। অশালীন হয়ে আয়না বোকার মত সব বলে দিচ্ছে। এখানে আয়না থাকবে কেন? বিছানাটাও নরম; হোটেল রুম। খুলে যাচ্ছে কী যেন, আবার কেন খুলছে? নাহ! সবকিছু ঠিক আছে। আমার ঘোর পেয়েছে। ফরহাদ বকে যাচ্ছে, মাতালের মত নিজের প্রেমিকার স্তনের বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে। শালা ভুদাই, রাম ভুদাই।
ফারার শরীর মাথা থেকে নামছে না। সুন্দর বিকাল, আকাশে সামান্য বেগুণী রঙের আভাও আছে। চা দোকানে বসে বসেই ফারাকে খুন করার প্ল্যান রেডি করে ফেললাম। জোছনা মেয়েটা সুন্দরী, আমাকে চায়। তার কাছে আমি এক অবাক বিস্ময়। তাকে নাকি শাসন করবার জন্য নিজেকে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করছি। একটা বড় ধরণের ভুল বুঝে মেয়েটা ইনিয়ে বিনিয়ে আমাকে চাচ্ছে।
সকালটা রোদে ভরপুর, আকাশে আজকে রোদের চাষ ভালো হয়েছে। হোটেলগুলোতে মুরগীর স্যুাপ বলে একটা জিনিস পাওয়া যায়, পরোটা দিয়ে খেতে আরামদায়ক। এসব উপাদেয় খাবারের সাথে সকালের গোসলের একটা যোগসূত্র আছে। যোগসূত্রের পুরোটাতেই আরাম। পরোটা ছিড়ে মুখে পুরেছি, ফরহাদের ফোন। বুকটা ধুক করে উঠলো। কথা বলে ফোনটা রাখলাম। সে হোটেলে দিকে আসছে। অফিসে যাবে। আমাদের থাকার জায়গায় পাশাপাশি গলিতে। সকালের নাস্তাটা এক সাথে হোক তাহলে।
-আজ রাতে বসবি নাকি?
-হুম প্রার্থনার জন্য আমি আজীবন ফ্রি
-তুই নিয়ে আসবি? না অফিস থেকে ফেরার পথে আমি আনবো।
-তুই নিয়ে আসিস, তোর অফিসের ফেরার পথেইতো।
-আজ নতুন কিছু হোক
-অবশ্যই বন্ধু, নতুনই তো হবে, নতুন একটা সকাল, নতুন রাত আসুক না নতুন ভাবে।
জানিনা আজ রাতে কোন কিছু হবে কি না। গতরাতে ফারাকে খুন করেছি কীভাবে সে ঘটনা ভুলতে পারছি না। নিজেকে ফ্রি রাখার চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছি। ফরহাদ ভোদাইটা এখনও কোন খবর পায়নি। কেন খবর পায়নি এটা একটা বিস্ময়। কত বড় বোকা, প্রেমিকা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মরে গেছে আর সে যাচ্ছে অফিসে। পৃথিবী এভাবেই চলছে!
দুদিন কেটে গেলো, ফারার মৃত্যূ বিষয়ক একটি নিউজ পত্রিকায় এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পেয়েছি বন্ধুর কাছ থেকে। ভালো লাগে, খবর তৈরি করা মানুষ যখন খবর পায় অন্য মারফতে। মায়ের কাছে মামা বাড়ীর গল্পের মত। পুলিশ তদন্ত করছে, আত্নহত্যার আপাতত কারণ দেখানো হয়েছে পারিবারিক ঝামেলা। ঢাকা শহরের একটা মেয়ে একা থাকার ব্যাপারে এরকম সুবিধা পাওয়া যায়। কাছের বন্ধু হিসাবে জানাজাতে যাওয়া জরুরী ছিলো। জরুরী কাজ করে চলে এসেছি, ফরহাদকে দেখিনি কোথাও। বেচারা প্রেমিকার মৃত্যূতে কোথায় কোথায় বিরহ পালন করছে কে জানে। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
সময়টা সপ্তাহে গড়ালো। ফরহাদের ফোন তখনও খোলেনি। জোছনার সাথে আমার অভিসার জমে উঠেছে। মেয়েটা আমার বুকে নাকি নিরাপত্তা পায়। বুকের খুন টের না পাওয়া জোছনাকে জোছনার মত সুন্দর দেখায়। জমজ সকাল শুরুর পর থেকে আমার আত্নবিশ্বাস বেড়ে গেলো। চলতে থাকলাম নিরবিচ্ছিন্ন। কিন্তু আরেক সকাল আমার জন্য ভালো হল না। বাসায় পুলিশ এসে ধরে নিয়ে আসলো এই হাজতে। এখন আমি নিজেকে চরিত্র করে খুনের ডার্ক স্টোরি লিখছি। অপরাধী নাকি প্রমান রেখে আসে, আমিও রেখে এসেছিলাম। ফারার মোবাইলের কললিষ্ট, কল রেকর্ড। আপাতত গল্প এখানেই শেষ। আমার আত্নবিশ্বাস প্রাপ্তি এখানেই শেষ। মাঝে মাঝে জোছনা আসে, আমি সব স্বীকার করে নিয়েছি। সে আমাকে ঘৃণা করে, তবুও দেখতে আসে। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। লেখার এই পর্যায়ে কেউ একজন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। আমি গিয়ে দেখলাম ফরহাদ। তাকে এত ঝলমলে দেখাচ্ছে কেন? ক্লিন শেভড, পারফিউমের ঘ্রাণ।
-কেমন আছিস রোমেল?
-ভালো
-এটা কেন করলি তুই? আমরা দুজনেইতো তোর বন্ধু ছিলাম। কেন করলি?
লজ্জায় মাথা নত করে চুপ থাকলাম। ফরহাদ আরো কিছুক্ষন কেন করলি টাইপ চিৎকার চেঁচামেচি করে গেলো। মাফ চাইলাম। কান্না পাচ্ছে আমার, কেন পাচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। অসহায় লাগছিলো। হঠাৎ ফরহাদ হো হো করে হেসে দিলো। কী হয়েছে?
-বন্ধু, ধন্যবাদ। তোকে ধন্যবাদ
-কেন?
-বন্ধু, অনেক কিছু জমা ছিলো, ফারহানার সাথে আর পারছিলাম না। কিন্তু ওকে ছেড়ে দেয়া অসম্ভব ছিলো।
-মানে কী?
-বহু কারণে আমি ফারহানার কাছে আঁটকে ছিলাম, টাকা, সেক্স, নেশা, ব্যবসা সব মিলিয়ে ওকে ছুড়ে ফেলা কোন সমাধান না। আর কোন সমাধান হাতে ছিলো না, খুন করা ছাড়া। দিন দিন আমি তোর সাথে অভিনয় করে গেছি, ফারহানার শরীরের বর্ণনা দিয়ে তোকে বিকৃত করেছি, তুই একটা ভোদাই, আমার সৌভাগ্য, কোন এক কারণে তুই ভেবে বসে আছিস খুন করলে আত্নবিশ্বাস বাড়বে। আমি কেবল তোকে উৎসাহ দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তুই বাঁচিয়ে দিলি। নইলে সাড়ে সতের লাখ টাকার হিসাব মিলতো না, একদম মিলতো না। ধন্যবাদ বন্ধু।
কথাগুলো বলে এক মিনিটও দাঁড়ালো না ফরহাদ। দ্রুত হেঁটে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম। বোকারা এভাবেই চালাকদের চলে যাওয়া দেখে পড়ে থাকে!