গত কয় দিন বেশ খুন খারাবী হচ্ছে। পরিকল্পিত লক্ষ্যের সাথে সাথে নিজামীর রিভিউর রায়ও চাপাতি দিয়ে হত্যা বাড়ার কারণ।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্তা রেজাকারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩১শে মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে। মইত্তা রেজাকারের বাবা নাম লুৎফর রহমান খান।
১৯৬৩ সালে টাইটেল (কামিল) এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে।
নিজামী রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে।১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘে (বর্তমান ইসলামি ছাত্র শিবির) যোগ দেয়। ১৯৬৬-৬৯ সালে নিজামী পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মনোনীত হয় । এরপর দুই বার সমগ্র পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। যদিও পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশে তখন বা এখন জামাত-ই-ইসলাম বা তাদের অঙ্গগুলোর কোর প্রভাব নেই। বরং বাংলাদেশের জন্ম প্রক্রিয়ার শুরু থেকে জামাত বাংলাদেশে ভালো অবস্থান তৈরি এবং বড় গাছ হয়ে দাঁড়ায় ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মইত্তা রেজাকার দেশ ছেড়ে পালায়।
১৯৭৮ সালে সালে জিয়াউর রহমান, রাজাকার গোলাম ও নিজামীকে বাংলাদেশে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। মতিউর রহমানের উপর দায়িত্ব পড়ে কিলিং মেশিন শিবির (৭১ এর ছাত্র সংঘ) সংগঠিত করার জন্য।
১৯৭৮-১৯৮২ পর্যন্ত মইত্তা রেজাকার জামাতের ঢাকা মহানগরী আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ১৯৮৩-১৯৮৮ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল । ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব এবং আমীর নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত (২০০০) দায়িত্বে ছিল।
২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরি হিসেবে নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পায়। নিজামীর চার পুত্র ও দুই মেয়ে।
বিএনপির আমলে ২০০১-২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি কৃষিমন্ত্রী ও ২০০৩-২০০৬ সাল পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে। এ সময় সূক্ষ্ম কৌশলে বাংলাদেশের অনেকগুলো শিল্প কারখানা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বেকার সমস্যা বেড়ে যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানা নামে মাত্র মূল্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে কৃষিতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়।
শিল্প মন্ত্রী থাকা কালীন নিজামী পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র চোরাচালানের মূল হোতাদের একজন ছিল। ভারত ও মায়ানমারের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী দলের সাথেও যোগাযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনাকারীদের এক জন ছিল ৭১ এর জল্লাদ বাহিনীর প্রধানদের এক জন মইত্তা রেজাকার। এই অস্ত্র মামলায় মইত্তা রেজাকারের ফাঁসির দণ্ড হয়। এই ফেকু মাওলানার নামে দুর্নীতির অভিযোগ, মামলাও আছে।
২০১২ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ-১:
স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালানোর অপরাধে জুন মাসের ৪ তারিখ পাকি বাহিনী পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে নূরপুর পাওয়ার হাউস ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামী তার ওপর নির্যাতন চালায়। ১০ জুন মাওলানা কছিমুদ্দিনকে ইছামতী নদীর পাড়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-২:
১০ মে বেলা ১১টায় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা হয়। সভায় নিজামী বলে, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬ টায় বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনা,শান্তি কমিটি, রাজাকার হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
এ ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (জি), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৩:
মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ব্যবহৃত হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হিসাবে। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প খুলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। নিজামী ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতো বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), (জি) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৪:
নিজামীর পরিকল্পনায় ও নির্দেশে রাজাকার বাহিনী পাবনার করমজা গ্রামে হাবিবুর রহমান নামে একজনকে হত্যা করে। ৮ মে নিজামীর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী ওই গ্রাম ঘিরে ফেলে নয়জনকে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনী একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনায় হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে মইত্তা রেজাকারের বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৫:
১৬ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে নিজামীর সহযোগিতায় পাকি হানাদারেরা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতেরবাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। সেখানে বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগও করা হয়।
নিজামীকে এ ঘটনায় হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৬:
নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার।
এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৭:
৩ নভেম্বর মধ্যরাতে নিজামীর দেওয়া তথ্যে রাজাকার বাহিনীকে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সেলিমের বাবা সোহরাব আলীকে আটক করে। তাকে রাস্তায় নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর স্ত্রী ও সন্তানদের সামনেই হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তখনকার বদর নেতা নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৮:
৩০ আগস্ট ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামী তার সংগঠনের তখনকার সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদকে সঙ্গে নিয়ে নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলে যান এবং সেখানে আটক মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, বদি, রুমি (শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে), জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালিগালাজ করেন। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে নিজামী বলেন, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আদেশের আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। নিজামীর পরামর্শ অনুযায়ী পরে জালাল ছাড়া বাকি সবাইকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৯:
নিজামী ও রাজাকার বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবং সহযোগিতা প্ররোচনা পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রফুল্ল, ভাদু, মানু, স্বস্তি প্রামাণিক, জ্ঞানেন্দ্রনাথ হাওলাদার ও পুতুলসহ ৭০ জনকে হত্যা ও ৭২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনায় একটি সম্প্রদায়কে নির্মূল করতে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), (সি), (আই), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১০:
মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে পাবনার সোনাতলা গ্রামের অনিল চন্দ্র কুণ্ডু নিরাপত্তার জন্য ভাই-বোনদের নিয়ে ভারতে চলে যান। পরে অগাস্টে তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। নিজামীর নির্দেশে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তার এবং আশেপাশের বহু মানুষের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় নিপীড়নের অভিযোগে আনা হয়েছে আসামির বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১১:
অগাস্ট মাসের ৩ তারিখে চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউটে ইসলামী ছাত্র সংঘের এক সভায় ছাত্র সংঘ, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর প্রধান মইত্তা রেজাকার ঘোষণা করে পাকিস্তান আল্লাহর ঘর। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আল্লাহ প্রিয় ভূমির হেফাজত করছেন। দুনিয়ার কোনো শক্তি পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে না।
সভায় নিরীহ বাঙালিদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য ইসলামী ছাত্র সংঘ, আলবদর, রাজাকারদের মতো সহযোগী বাহিনীগুলোকে উসকানি দেওয়া হয়।
ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (৩) এবং ২০ (ই) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১২:
২২ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায় শয়তানের দোসর মইত্তা বলে, যারা পাকিস্তানকে ভাঙতে চায়, তারা ইসলামের শত্রু। পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে ইসলামের শত্রুরা অস্ত্র হাতে নিয়েছে মন্তব্য করে পাকিস্তানের শত্রুদের নির্মূল করার আহ্বান জানান তিনি।
ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১৩:
৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ইসলামী ছাত্র সংঘের সভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তানের অখণ্ডটা রক্ষায় হিন্দুস্তানের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে রাজাকার, আলবদর সদস্যরা প্রস্তুত। বক্তব্যে মুক্তিকামী বাঙালিকে ভারতের দালাল, স্পাই হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১৪:
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে এক সুধী সমাবেশে নিজামী প্রত্যেক রাজাকারকে ইমানদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আল্লাহর পথে কেউ কখনো হত্যা করে, কেউ মারা যায়। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্র সংঘের সদস্য, রাজাকার ও অন্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি ও প্ররোচনা দেয় নিজামী।
ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১৫:
একাত্তরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প ছিল। নিজামী প্রায়ই ওই ক্যাম্পে গিয়ে রাজাকার সামাদ মিয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (জি) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১৬:
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।
একটি জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ওই ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (সি) (আই), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে ৮ টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এই আট অভিযোগের মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর ঘটনায় নিজামীর ফাঁসির রায় হয়। নিজামীর উকিল বয়স বিবেচনায় শাস্তি কম দেওয়ার আবেদন করে। ঐ ১৫ অভিযোগতো বড় সরাসরি অভিযোগ। কিন্তু এর বাইরেও আছে শত শত শোকগাথা। আজ কি এদেশের ভূমীর দু:খ হয় নিজামীদের, নিজামীদের পাপ আজও বহন করতে হচ্ছে বলে?
৭১ এ নিজামীর কিছু বাণী
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলা ইসলামি ছাত্র সংঘের সভাপতি মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে জামালপুর শহরে আল বদর বাহিনী গঠিত হয়। মূলত ইসলামী ছাত্র সংঘকেই আল-বদরে রূপান্তরিত করা হয়। আল-বদর প্রধান কাঠ মোল্লা নিজামী তার বাহিনী সম্বদ্ধে দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ পত্রিকায় ২৩ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে আল বদর বাহিনী নিজেদের সম্পর্কে বলে,
"আলবদর একটি নাম! একটি বিস্ময়। আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই! যেখানেই দুষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর বা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।"
মইত্তা রেজাকার শুধু আল-বদর বাহিনীর প্রধানই ছিল না, আল-শামস বাহিনী হওয়ার পর তারও প্রধান ছিল।
* বাংলাদেশ বিরোধীদের প্রথম মিছিলে নেতৃত্বদানকারী ভিতর নিজামী একজন – দৈনিক সংগ্রাম -এপ্রিল ১৩, ১৯৭১
* পাক সেনারা আমাদের ভাই, তারা জেহাদি চেতনায় উজ্জীবিত – দৈনিক সংগ্রাম ৩র আগস্ট ।
* পাকিস্তান টিকলেই এদেশের মুসলমানরা টিকবে, দুনিয়ার কোন শক্তিই পাকিস্তানকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। গ্রামে গঞ্জের প্রতিটি এলাকা থেকে শত্রুর চিহ্ন মুছে ফেলার আহ্বান -দৈনিক সংগ্রাম ৫ই আগস্ট,
*দুষ্কৃতকারীদের এর পরিণাম ফল ভোগ করতে হবে – দৈনিক সংগ্রাম ১২ই আগস্ট ।
* পাকিস্তান ভূখণ্ডের নাম নয় একটি আদর্শের নাম– দৈনিক সংগ্রাম ১৬ই আগস্ট ।
* পাকিস্তানকে যারা বিচ্ছিন্ন করতে চায়- তারা ইসলামকেই উৎখাত করতে চায় –মতিউর রহমান নিজামী
* কেউ পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে না । পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসে গোলাম আজম ও মতিউর রহমান নিজামী
* ছাত্রসংঘ কর্মীরা পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি জায়গা রক্ষা করবে ।
* আল্লাহ মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করেছেন।
* বদর দিবসে বায়তুল মোকাররমে জনসভায় ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ মোকাবেলার আহ্বান করে
* পাক সেনাবাহিনীর সহায়তায় বদর বাহিনী গঠিত হয়েছে।
* সেইদিন বেশী দূরে নয় আল-বদরের তরুণরা সশস্র বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে হিন্দু শক্তিকে পরাজিত করবে এবং ভারত ধ্বংসের পর ইসলামের বিজয় পতাকা সারাবিশ্বে উত্তোলন করবে। দৈনিক সংগ্রাম,১৪ নভেম্বর ।
* বদর বাহিনী হিন্দুস্তানকে খতম করবে।
* রাজাকারদের জাতীয় বীর বলা উচিৎ।
* পাকিস্তান আল্লাহর ঘর।
* দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে আমরা জীবনের বিনিময়ে যেমনভাবে পাকিস্তানের সেবায় এগিয়ে এসেছি তেমনি সরকারের উচিত হবে আমাদেরকে খাঁটি সৈনিকরূপে গড়ে তোলা।
মাদ্রাসা শিক্ষা, ইসলামী শিক্ষা বলে কাঁদতে কাঁদতে, বক্তৃতা দিতে দিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করা নিজামীর সন্তানেরা কে কি করে পড়ে আসেন জানি ।
মহসিনা ফাতেমা, বড় মেয়ে : চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক
ড. নাকিবুর রহমান বড় ছেলে: পড়ালেখা মালয়েশিয়া ইন্তারন্যাশনাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ করোলিনা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করে।
দ্বিতীয় ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন বর্তমানে হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। এ একজন দেশে।
তৃতীয় ছেলে ডা. নাইমুর রহমান খালেদ পাকিস্তানের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া লেখা শেষ করে বর্তমানে অস্টেলিয়ায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
ছোট ছেলে নাদিম তালহা মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়ালেখা করছে।
ছোট মেয়ে খাদিজা লন্ডনের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। ছোট মেয়ের স্বামী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম শিবিরের প্রাক্তন সেক্রেটারি । নজরুল ইসলাম বর্তমানে লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
মাদ্রাসায় শিক্ষা, ইসলামী শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সরব নিজামীর ভণ্ডামির নমুনা দেখার পর পরও যাদের মনে নিজামীকে নিয়ে অন্তত সংশয় জাগবে না তারা ধরে নিতে পারেন তারা কিছুটা হলেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ৭১ এ সালেও মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্তা মাদ্রাসা শিক্ষা, ইসলামি শিক্ষার পক্ষে সরব ছিল। যশোরে এক বক্তৃতায় এই ধর্ম ব্যবসায়ী বলে “ তিনি ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে তরুণ ছাত্র সমাজকে সত্যিকার পাকিস্তানী করে গড়ে তুলতে হবে।”
আমরা দেশের আইন অনুযায়ী এ খুনির বিচার চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। তার সাথে এদের যারা এ দেশে লালন, পালন করেছে, বাড়িয়ে তুলেছে, বাড়িয়ে তুলছে তাদের বিচারও। বিষ বাতাসে বাতাসে ছড়ানো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮