জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হওয়ার ভুয়া দাবি করে সহায়তার টাকা নিতে গিয়ে ফাঁস হয়েছেন মামি-ভাগনে ফারহানা ইসলাম ও মহিউদ্দিন সরকার। তাঁদের জমা দেওয়া এক্স-রে রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, দুটো রিপোর্ট হুবহু এক! পরে তাঁরা স্বীকার করেন, আন্দোলনে আহত হননি। এসব ভুয়া নথি তৈরি করে দিয়েছিলেন ফারহানার স্বামী নাজিরুল বাশার, যিনি কেরানীগঞ্জের নিউ লাইফ জেনারেল হাসপাতালের একজন মালিক।
এই ধরণের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ফাউন্ডেশনে সহায়তার জন্য ভুয়া দাবি নিয়ে আসছেন অনেকে—কেউ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত, কেউ গাছ থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন, কেউবা ডাবের আঘাতে জখম হয়েছেন। কিন্তু সবাই নিজেদের আন্দোলনে আহত বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন ! এ পর্যন্ত ৫০টির বেশি প্রতারণার ঘটনা ধরা পড়েছে, তিনটি মামলা হয়েছে, এবং তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জনের পাঠানো ১৯৯টি আবেদনের মধ্যে ১৫৬টিই ভুয়া বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যাচাইয়ের ফাঁক গলে অনেকেই টাকা নিয়ে গেছেন। এদিকে, টাকা তুলে প্রতারণা ধরা পড়ার ঘটনাও কম নয়। পাবনার চামেলী বেগম তাঁর ১৬ বছর বয়সী ভাইকে আহত সাজিয়ে এক লাখ টাকা তুলেছিলেন। পরে ধরা পড়লে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে, মাসুম হোসেন নামে এক ব্যক্তি আন্দোলনে আহত হননি এমনদের তালিকায় ঢুকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন—প্রতি লাখ টাকায় তাঁর কমিশন ছিল ৫০ হাজার!
প্রতারকদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত আহত ও শহীদ পরিবারের সহায়তা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেক পরিবার অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এখনো নিহত ও আহতদের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৮৩৪ জন শহীদ এবং ১২,০৪৯ জন আহত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ফাউন্ডেশন থেকে ৬৮৬ জন শহীদের পরিবার এবং ৩,৭১৯ জন আহত ব্যক্তিকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফাউন্ডেশনের জনবল সংকটের কারণে যাচাই-বাছাইয়ে সময় লাগছে, যা প্রকৃত ভুক্তভোগীদের হতাশ করছে।
ফাউন্ডেশনের ভাবমূর্তি রক্ষায় দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রতারণার এই প্রবণতা বন্ধ না হলে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন, আর আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগ অপমানিত হবে!
বাংলার ডাক !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৭