গান, জোছনা, বাতাস, কাব্য- এগুলো একটার সাথে আরেকটার যোগাযোগ আছে। যে গান ভালবাসে সে কিছুটা হলেও জোছনায় মজবে। দুবলা জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। চন্দ্র এতটাই উজ্জ্বল যে নক্ষত্রবীথি অনুজ্জ্বল। ফকফকে জোছনা কি ঝরে পড়ছে গান পাগলা, বিজ্ঞান পাগলা, সাহিত্য পাগলা, মেধাবী অধ্যাপক রেজাউলের কবরে? আর কোন জোছনা রাতে ভাবুক, অপার্থিব রেজাউল সেতার বাজাতে বসবেন না। কখনও না, কখনও না, কখনও না।
কোন জোছনা রাতে গানের ছাত্রের খোঁজে গ্রামে যাওয়া রেজাউল হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরে খেতে বসবেন না। তাড়াহুড়ায় আধা খেয়েই উঠে সেতারের সুরে চাঁদকে বার্তা পাঠাবেন না। কাব্য জোছনায় আজ কি কাঁদছে 'কোমলগান্ধার'? মাত্র ৫৮ বছর। কেউ কি বলতে পারবেন চাঁদের এমন ধবল জোছনায় শুকনো রক্তের রঙ কেমন হয় কেউ কি বলতে পারেন। পুলিশ গার্ডার দিয়ে এখন অধ্যাপকের শাস্তির জায়গাটা নিশ্চয় ঘেরা। সেই ঘেরা জায়গাটার শুকনো কালো রক্তগুলো কি এখন তাদের শরীরটার জন্য হাপিত্যেশ করছে।
রেজাউল সাহেবের শাস্তি কার্যকর হলো ১০০ ঘণ্টার কম বেশি। সে হিসাবে পুলিশের হলুদ ব্যান্ড থাকার কথা। অভিজিৎ রায়ের শাস্তি কার্যকরের জায়গা ১০/১২ দিন এমন ঘেরা ছিল। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আর কি। এখন সব আধুনিক। ছোটবেলা সাদা কালো বাক্সে দেখতাম পুলিশ দড়ি দিয়ে ঘেরা দিয়েছে। এখন রঙিন বাক্সে দেখি, রঙিন ব্যান্ড। আধুনিক। আধুনিকতা। উন্নতি। আর্থিক। কড়কড়ে টাকা, ঝকঝকে রাস্তা। দামী গাড়ি। ঝকঝকে শাড়ি। ঝলমলে টাই। কিন্তু যত্রতত্র থুতু ফেলিবে না সাইনবোর্ডের লেখাপড়া যায় না পানের পিক, কফ থুতুর বর্ণালীতে। আমরা সে দিকে যাচ্ছি। জিয়া এদেশে অবাধ মদের লাইসেন্স, পতিতাপল্লীর পিতা। মদের গেলাসের আস্তিক। আবার ইসলামি ফাউন্ডেশনের জনক বঙ্গবন্ধু, জিয়ার বিপরীত নাস্তিক। দরিদ্রতা ছিল, সুযোগের অভাব ছিল, জানা বোঝার ব্যবস্থা কম ছিল কয়েক বছর আগেও। কিন্তু আজকে পকেটেই পৃথিবী। চোখ কান বন্ধ করে রাখার উপায় কি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা চলছে। কখনও সম্মুখ কখনও গুপ্ত। অস্ত্রের চেয়ে স্নায়ু এবং সূক্ষ্ম মস্তিষ্ক এখন প্রয়োজন। শত্রুরা ধনে মানে আমাদের চেয়ে অনেক স্বয়ংসম্পূর্ণ। ঘরে বাইরে শত্রুর শেষ নাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা, আপনার শত্রুর মুখেও শুনেছি আপনার দিন শুরু হয় ফজর নামায, চা আর পত্রিকা দিয়ে। কখনও কখনও কোরান শরীফও পড়েন ভোরে। কোথায় যেন শুনেছি এ আপনার পারিবারিক অভ্যাস। এই আপনাকেও যে নাস্তিক, ভারতের দালাল বলা হয় আপনি নিশ্চয় জানেন। না জানলে একজন বাঙালি হিসাবে বিনয় নিয়ে জানিয়ে দিলাম।
প্রিয় বঙ্গবন্ধু কন্যা, আমি যতদূর জানি আপনার পৈত্রিক বাড়ীতে সেতার বাজানোর চল ছিল। আপনার এক ভাই সেতার বাজাতেন। তিনিও খুন হন আজকের খুনিদের পিতাদের হাতেই। আমরা কি এমন বংশ পরম্পরায় খুন হতে থাকবো বংশীয় খুনিদের হাতে শ্রদ্ধেয় বাঙালির নেত্রী?
শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ওরা বলে নাস্তিক, কাফের। অথচ এ ইমামের পিছে যত মানুষ নামাজ পড়ে দূর দূরান্ত থেকে এসে, তত মানুষ ঐ বিকৃত মস্তিষ্ক ড্রাকুলাদের সাথেও নেই। ৭৫ পরবর্তী থেকে এখন পর্যন্ত তারা ঘর থেকে শিক্ষা, আকাশ থেকে অতল পর্যন্ত বিছিয়েছে অর্থের মেশিন। কিন্তু তারপরও অত শক্তিশালী সমর্থক আসে নি। এ ইমাম নাস্তিক। বঙ্গবন্ধু কন্যা দিনাজপুরের বিখ্যাত বটতলী মাদ্রাসার মাওলানা আইয়ুব আনসারীও এদের কাছে নাস্তিক। বিখ্যাত ওয়াজিন মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইফী কয়েক বার এদের কোপ খেয়ে বেঁচে আছেন। আমার ধারনা ব্যক্তিগত ভাবেও আপনি এদের চিনেন এবং জানেন। ড্রাকুলাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এদের “অনুভূতি” আঘাত প্রাপ্ত হয়। সেটার নাম হয় ধর্মীয় অনুভূতি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী– গত দু বছরের কত হাজার প্রতিমা ভাঙ্গা হয়েছে? কত শত মন্দির তছনছ করে দেওয়া হয়েছে? কত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী খুন হয়েছে? আপনি কি পরিমাণ হুমকির ভিতর আছে তা আপনারও জানা আছে স্পষ্ট। এ পর্যন্ত যতজন ব্লগার, লেখক, প্রগতিশীল, খুন, আক্রান্ত হয়েছেন তারা সকলে নাস্তিক না হলেও সকলে জামায়াত, রাজাকার, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী?
মাননীয় ‘বাঙালির নেত্রী’ এদেশ সূফী আবহাওয়ার। তাই শত কালো যাদু চেলেও এরা এ দেশ পুরো দখল করতে পারে নি আকাশে উড়ে আসা ভিন শকুনদের সাথে নিয়ে। যারা হুমকির সম্মুখীন, যারা আক্রান্ত প্রত্যেককেই এরা নাস্তিক বানাবে এটা তাদের অস্ত্র। এ অস্ত্রকে বুঝে না বুঝে শক্তিশালী করে ফেলেছেন আপনারই। মধ্যখানে এ অস্ত্রের কার্যকারিতা কমে এসেছিল। কিন্তু হঠাত বেড়ে গেল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী খতিয়ে দেখার কথা বললেন নাজিমুদ্দিন খুন হওয়ার পর। নির্মোহ অধ্যাপক খুন হওয়ার পর আর কি বলার আছে। এর মধ্যে হিন্দু সাধু খুন হওয়ার পরপর ধৃত খুনি সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ বলল “মাথা খারাপ”। পুলিশকে কি এখন ডাক্তারেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়? মাননীয় সরকার আপনাদের সকলের বক্তব্য খুনগুলোকে এক ধরনের জায়েজ করলো। জনমত তৈরিতে সাহায্য করছে। পরপর খুন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
আসলেই এ দেশ, এমন দেশ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুসলিম অধ্যুষিত প্রায় প্রত্যেক দেশই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সিনেমার অংশ। শুধুমাত্র বাংলাদেশে তারা গাছ বড় করতে পারছে না। কৃতিত্ব আপনাদের এবং এ ভূমির চরিত্রের। কিন্তু আপনাদের সফলতা যখন আপনারাই মুছে দিতে চান তখন আমরা আতংকিত হই। বাঙালির নেত্রী বেয়াদবি নিবেন না দয়া করে। বঙ্গবন্ধুর খুনি মোস্তাক বঙ্গবন্ধুর কাছেই ছিল। ভালো মানুষ ফুরায় কিন্তু কালো যাদুকরেরা অফুরান। ৭৫ থেকে কলুষিত হতে হতে আমরা আমাদের আত্মাকেও নষ্ট করেছি নিজের অজান্তেই। পচা আম হয়ে গেছে আমাদের পরম্পরার শিক্ষা। আগে অন্যের সন্তানকে, মাকে, বাবাকে, উদ্বাস্তুকে অজানা অচেনা গ্রামবাসী ঘর দিত, খাওয়াতো, স্থায়ী পরিচয় দিত। শহুরে মানুষ অন্যের সন্তান, অপরিচিতের সন্তানের লেখাপড়ার সুবিধার্থে জায়গা দিত। সম্ভব হলে খাওয়াতো। খুব বেশি দিন আগের কথা না। বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে খুঁজলে এখন এমন চলমান দৃশ্য পাওয়া যাবে। যদিও খুব কম। সেই বাঙালির জন্য আইন করতে হলো আপনার: বাবা-মার ভরণ পোষণ না দিলে জেল জরিমানা।
বাঙালির নেত্রী আমাদের আত্মা কলুষিত হওয়ার উদাহরণ দিলাম। আরও ধ্বংস হতাম। অনেক বছর পর আমরা সুযোগ পেলাম নিজেদের চিকিৎসা করার। এক বাক্য যদি সব চেষ্টার কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয় আমাদের আতংকিত না হয়ে উপায় কি। এত বছর পরের অর্জিত সময় যদি হাতছাড়া হয় তাহলে আরও কয়েক যুগ বাঙালি কাঙাল হয়ে থাকবে।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) আমেরিকান দূতাবাসের কর্মী এবং দীপু মনির ভাইকে (কাজিন) কুপিয়ে হত্যা করা হলো। সাথে আরও একজন। হয়ত এখন বলা হবে নাস্তিক মুরতাদদের অফিসে কাজ করতো তাই কতল। এরপর পর মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বললেন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। তিনি যদি এখন এমনই বলবেন তাহলে তখন ওমন বললেন কেন?! তেমন না বললে খুনিরা হয়তো সাহস কম পেত। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মুখ যুদ্ধকালীন সময় অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি পারছেন না। সমস্যা হচ্ছে আপনারা ডুবলে বাংলাদেশ ডুবে যাবে। সমস্যা হচ্ছে আপনারা ডুবলে বাংলাও ডুবে যাবে। আপনারা এই যে ভেসে আছেন এ জন্য বাঙালি নি:স্বার্থ প্রগতিশীলদের বড় সমর্থন ২০১৩ ও ২০১৪। সেই আপনারা পলিসির জন্য শত্রুকে দোর খুলে দিচ্ছেন। যারা অগোচরে ভুল বুঝিয়ে এসব করাচ্ছে দেশ ডুবলেও, বাংলা ডুবলেও তারা বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকবে বিদেশি গাছের অক্সিজেনে, সুন্দরে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার আর কোন জায়গা নেই এ দেশ ছাড়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কোন স্বজন নেই এই বাঙালি ছাড়া। মাননীয় বাংলা নেত্রী আর কেউ নেই আমাদের আপনি ছাড়া। খতিয়ে দেখা তত্ত্ব প্রদানকারীরা আমাদের আর আপনার সম্পর্ক নষ্ট করছে। আমরা আর কার কাছে যেতে পারি? সন্ততির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কার উপর দিতে পারি।
আপনি ভাল থাকুন। ভালো থাকুক বাংলাদেশ। ভালো থাকুক বাঙালি। ভালো থাকার কথাও ছিল। কিন্তু……… । আর কত রক্ত সহ্য করবে বাঙালি? আপনিই বা আর কত থাকবেন বন্দি অবস্থায়। আমার জানা মতে আপনি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। একদিন এমন হবে, আপনি আর সাধারণ মানুষ এক সাথে কক্সবাজার বা কোন নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছেন, মানুষজন আপনার সাথে সেলফি তুলছে মাঝে মাঝে। বাঙালির নেত্রী এখনতো আমাদের সে পথে হাঁটার কথা। রাত জেগে বাউল গান শুনার কথা কিন্তু শান্ত হতে হতে আতংকিত। এ দেশে আসলে জঙ্গি নাই। বিভিন্ন প্রচার, প্রচারণার কারণে কিছু মানুষ ধর্মীয় ভাবে খানিক উগ্র কিন্তু মারদাঙ্গা নয় ঐ প্রচারকারীরাই জঙ্গি বানায়, নাস্তিক বানায়।
বাংলা নেত্রি বেয়াদবি নেবেন না- এরা নাস্তিক কোপাচ্ছে আপনাদের কোপানোর জন্য। সে পথ সুগম করছেন আপনারা অথচ বন্ধ করছিলেন আপনারাই। নাস্তিক এক শক্তিশালী অস্ত্র। যার ব্যবহার শুরু হয়েছে ৭১ সালে। বাংলাদেশে প্রথম নাস্তিক সম্ভবত বানানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকেই।
মাননীয় বিনয় নিয়ে, ভালোবাসার জায়গা থেকে কথাগুলো বললাম। আমাদের কোথাও কোন জায়গা নেই। ৭১ বুদ্ধিজীবী মেরে ছিল ছাত্রসংঘ, আলবদর, আলশামস নামে, আজও আবার শুরু করেছে আই.এস, হিজবুত তাওহীদ, জেএমবি নামে। ভিতরের তরল কিন্তু সেই মওদুদীই।
আপনারা যতই ধর্মের সহনশীলতা বা খতিয়ে দেখার কথা বলেন ওরা কখনওই “আলহামদুলিল্লাহ” বলবে না। ওরা তৃপ্ত হতে আসেনি; ওরা দখলদার!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:১৯