এ্যাফ্রোদিতি বা ভেনাস ছিলেন দেবরাজ জিউসের কন্যা। কিন্তু তার জন্ম সম্পর্কে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। তা হলো ইউরেনাস গ্রহ কক্ষচ্যুত হয়ে পড়লে পৃথিবীর সপ্ত সমুদ্রের মাঝে বিক্ষোভ দেখা দেয়। সেই বিক্ষোভকালে সমুদ্রের বিক্ষুদ্ব ও উত্তাল তরঙ্গমালা থেকে উঠে আসেন এ্যাফ্রোদিতি। গ্রিক ভাষায় এ্যাফ্রোদিতি শব্দের অর্থই হলো সমুদ্রোদ্ভুতা। তার বাড়ি ছিল সাইপ্রাস আর সাইথেরা দ্বীপে। এর থেকে বুঝা যায় তিনি ইজিয়াস সাগর পার হয়ে আসেন।
গ্রিসের বাইরে তাকে সামান্য এসতার্তে নামে এক হীন কামকলার দেবী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু গ্রিসে এক স্বতন্ত্র মহিমায় প্রতিষ্ঠিত তিনি। গ্রিসে তাঁকে দেখানো হয় ফুলে ফুলে সুশোভিত এক রথের ওপর তিনি আরূহা, অদ্ভুত এক মিষ্টি সখ্যতা বিরাজমান তার মাঝে। তার রথটি বাহিত হয় কখনো কপোত অথবা কখনো বনহংসের দ্বারা। এ্যাফ্রোদিতির এক কটিবন্দ্বনি ছিল এবং এই জিনিসটার একটা অলৌকিক ক্ষমতা হলো এইটা দেখার সঙ্গে প্রেম জাগ্রত হত যেকোন দেবতা অথবা মানুষের মাঝে। এই কটিবন্দ্বনী মাঝে মাঝে স্বর্গের অন্য দেবীরা ধার নিতেন তাদের প্রেমিকদের বশে আনার জন্য। একবার হেরা জিউসের উরন্ত মনটাকে তার মধ্যে স্তিথিবদ্ব ও বিশ্বস্ত করে তোলার জন্য ধার নেন। প্রথম প্রথম এ্যাফ্রোদিতির যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় তিনি উত্তম পোশাকে সজ্জিতা। কিন্তু পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষ্করেরা ভেনাসের যে মুর্তি গড়েন তাতে তাঁকে নগ্ন মূর্তিতেই দেখা যায়।
শেক্সপিয়ারের কাব্যে দেখা যায় দেবী এ্যাফ্রোদিতি ভা ভেনাস তাঁর সুদর্শন প্রেমিক এ্যাডনিসের জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন এক সুগভীর প্রেমাতিশয্যে। সে এ্যাডনিসের জন্য স্বর্গলোক পরিত্যাগ করে শিকারিদেবী আর্তেমিসের মতো বনে বনে ঘুরে বেড়ায় এ্যাডনিসের সঙ্গে। সেখানে গিয়ে ভেনাস এ্যাডনিসকে শুধু বনের যত সব নির্দোষ ও নিরীহ জন্তুদের শিকার করার জন্য প্ররোচিত করতে থাকে। এ্যাডনিসের এইসব ভালো না লাগার কারনে সে ভেনাসের হাত থেকে ছিন্ন হবার জন্য হন্ন হয়ে সুযোগ খুজতেছিল। একদিন সে সুযোগ পেয়েও গেল।
এ্যাফ্রোদিতি ও এ্যাডনিস
একদিন ভেনাস যখন তাকে আবেগভরে আলিঙ্গন করে বসেছিল গভীর বনপ্রদেশে তখন অদূরে একটা বন্য শূকুর গোলমাল শুরু করায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুহূর্ত মধ্যে উঠে গেল এ্যাডনিস। শূকুরটিকে হত্যা করার জন্য মেতে উঠলো এক তীব্র সংগ্রামে। কিন্তু ভাগ্যদোষে সে সংগ্রামে জয়ী হতে পারলো না এ্যাডনিস। শূকুরটিকে মারতে গিয়ে সে নিজেই নিহত হলো। বুকভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ভেনাস। সব সান্তনার সীমা ছাড়িয়ে তার বুকের মাঝে ফুলে ফুলে উঠতে লাগল তার শোকের আবেগ।
এ্যাডনিসের প্রতি ভেনাসের এই শোকের তীব্রতা দেখে বিচলিত হয়ে উঠলেন মৃত্যুপুরীর রানী। এদিকে তিনি নিজেও এ্যাডনিসের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে উঠেছেন। তিনি এ্যাডনিসকে বিনা শর্তে ছেড়ে দিতে রাজি হলো না। তিনি বললেন, তিনি শুধু একটা শর্তে ছেড়ে দিতে চান এ্যাডনিসকে। বললেন, এ্যাডনিস মাত্র ছয়মাস পৃথিবী প্রিষ্টে থাকতে পারে ভেনাসের কাছে। বাকী ছয়মাস থাকতে হবে তার কাছে। নরকের রানী পার্সিফোনে এ্যাডনিসকে এমনই ভালোবেসে ফেলেছেন যে তিনি কোনমতেই চিরদিনের জন্য ছেড়ে দিবেন না তাকে। অবশেষে জিউস মধ্যস্থতা করে দিলেন। তিনি ঠিক করে দিলেন চার মাস এ্যাডনিস থাকবে পার্সিফোনের কাছে, চার মাস থাকবে ভেনাসের কাছে আর চার মাস নিজের ইচ্ছামতন যেখানে খুশী সেখানে থাকবে।
পার্সিফোনে
গ্রিকদেশের কিউপিড বা কামদেবতা ভেনাসেরই সন্তান। অনেকের মতে ভেনাসের বয়স একটু বেশি হলে কিউপিডের জন্ম হয়। কিউপিডের অন্য নাম হলো ইরস। ইরস বা কিউপিড যেমন কামের দেবতা তেমনি লাভ হচ্ছে প্রেমের দেবতা। এ দেবতা সবচেয়ে প্রাচীন হয়েও একাধারে সবচেয়ে নবীন। কিউপিডের ঠিক কিভাবে উদ্ভব হয় তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তবে খেয়ালি কামদেবতা কিউপিডের চেহারাটিকে বড় অদ্ভুত করে দেখানো হয়েছে। তার দেহটি সম্পুর্ণ নগ্ন, দু’ধারে দু’টি পাখা আছে। তার হাতে একটি মশাল আছে। এই মশালের আলোর তীব্রতা দিয়ে মানুষের অন্তরের দ্বীপকে প্রজ্জলিত করতে চান। তার তুণে কতগুলো তীর আছে। তীরগুলোর মধ্যে কিছু তীর সোনার আর কিছু তীর সীসার। সোনার তীর দিয়ে তিনি মানুষের অন্তরে প্রেমবোধকে ত্বরান্বিত করেন আর সীসার তীর দিয়ে মানুষের প্রেমচেতনা্কে মন্দগতি করে দেন। আসলে কোন কিছুই বিবেচনা না করেই নিজের খেয়াল মত ফুলশর নিক্ষেপ করে কিউপিড।
কিউপিড বা কামদেবতা
এ্যাফ্রোদিতির অন্যতম সহচরী হচ্ছে হাইমেন। ইউফ্রোসিনে, আগলাইয়া ও থেলিয়া এই তিন জিউস কন্যা ছিল এ্যাফ্রোদিতির অভিরাম সহচরী। এরা ছিল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আনন্দানুভুতির প্রতিক। শোনা যায় দেবী এ্যাফ্রোদিতি স্বর্গের অন্যান্য দেবতাদের মধ্যে অগ্নিদেবতা হিফাস্টাসকে বেছে নেন স্বামী হিসেবে। রোমে ভেনাসের যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় তিনি ট্রয়বীর ইনিসের মা।
থেলিয়া
ইউফ্রোসিনে
গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে গ্রিস দেশে যে ভেনাসের উপাসনা করা হয় তাতে যায় দুটি মত প্রচলিত আছে। একটি হলো ইউরানিয়াম আর একটি হলো প্যান্ডিয়াম। ইউরানিয়াম প্রেমের বিশুদ্ব আত্মিক দিকটি তুলে ধরে আর প্যান্ডিয়াম মতবাদ তুলে ধরে তার দেহগত ইন্দ্রিয় – লালসার দিকটি।
সূত্র ও ছবি : বিশ্ব পৌরাণিক সাহিত্য এবং ইন্টারনেট
সবাই ভালো থাকবেন
পেক পেক পেক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০১