আগামী ১৯ মার্চ বিএনপি’র জাতীয় কাউন্সিল। যেখানে দলের রাজনীতিতে অভিষেক হচ্ছে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের। শুধু তাই নয়, তাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের একটি আসনে তাকে দলীয় প্রার্থী করার চিন্তাভাবনাও চলছে, বিএনপি’র একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এবং ঘনিষ্ট কিছু সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, গত ২৭ জানুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় মার্চে জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রয়োজন বিবেচনায় খালেদা জিয়াই পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শও করেছেন তিনি। পূত্রবধূকে রাজনীতিতে আনার বেগম জিয়ার এ প্রস্তুতি অবশ্য অনেক আগে থেকেই। গত ২০ নভেম্বর ছিল তারেক রহমানের ৪৮তম জন্মদিন। ওই দিনই পুত্র, পুত্রবধূ এবং নাতনি জায়মা রহমানের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের এক পর্যায়ে তিনি নিজের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ করেন এবং মায়ের আগ্রহে তারেক ইতিবাচক সম্মতি প্রকাশ করেন।
তারেক রহমানের সহধর্মীনীর রাজনীতিতে আসাকে ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। পাশা-পাশি বিএনপি’র প্রবীণ ও নবীন নেতারাও এ নতুন নেতৃত্বকে বেশ ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন। তাদের মতামত জানার জন্যই টাইমসওয়ার্ল্ড২৪.কম একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছিল।
জাতিসংঘের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত রাশেদ আহমেদ চৌধুরী জোবায়দার রাজনীতিতে আসা সম্পর্কে তার ব্যাক্তিগত অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেকোন ব্যাক্তিই রাজনীতিতে আসতে পারেন। পার্টি বা দেশের জনগণের কাছে যদি সে ব্যাক্তি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া পাবেন। তবে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সে সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে। কারণ যেকোন গণতান্ত্রিক দেশের ফাইনাল কোর্ট জনগণ। আর গণতন্ত্র অর্জনের থেকে তা রক্ষা করা কঠিন। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রেখেই সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের কোটায় নিযুক্ত ঝানু এ কুটনীতিক বলেন, সেক্ষেত্রে জোবায়দা রহমান যোগ্য বলে আমি মনে করি কারণ তিনি যথেষ্ট সুশিক্ষিত, বুদ্ধিমতি এবং ভালো রাজনৈতিক বংশের মেয়ে। এমন একটি পরিবারের মেয়ে রাজনীতিতে আসলে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ঘটবে। তাছাড়া গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য এই মূহুর্তে এমন একজনের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশেই এ ধরনের পরিবারভিত্তিক রাজনীতির নজির রয়েছে। প্বার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারতেও নেহেরু থেকে ইন্দিরা। ধারবাহিকভাবে রাজীব। রাজীব থেকে সোনিয়া-রাহুল। পাকিস্থানে ভুট্টো থেকে বেনজির, বেনজির থেকে জারদারী-বিলাওয়াল এভাবেই কিন্তু রাজণেতিক পটপরিবর্তন চলে আসছে। সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নতুন নেতৃত্ব আসতেই পারে এটাই গণতন্ত্র। তবে তিনি যদি সত্যিই রাজনীতিতে আসেন তাহলে বিএনপির রাজনীতিতে রদবদল ঘটবে এবং নতুন ছোয়া লাগবে বলে আমি আশা করি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জোবায়দা রহমান যথেষ্ট বুদ্ধিমতি ও পরিশ্রমা। তিনি যদি আসলেই রাজনীতিতে আসেন তাহলে আমার বিশ্বাস অল্পদিনেই সব কিছু বুঝে নিতে পারবে। শ্বাশুরীর পাশে থেকে বিএনপির রাজনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন তিনি।
এ সময় মুনিরুজ্জামান তার ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, তবে আমার মনে হয় দলের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তারেক রহমান গুরুতর অসুস্থ্য থাকায়ই তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিএনপির রাজনীতিতে আসছেন।
বিএনপি’র কাউন্সিলে ডা. জোবায়দা রহমানের অভিষেক ঘটলে দলের সিনিয়র নেতারা বিষয়টি কিভাবে নিবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটি’র সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের কাউন্সিলে সর্বসন্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্ত হবে তা সবাই মেনে নিবে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেখানে যোগ্য কোনো নেতৃত্ব আসলে অবশ্যই তাকে স্বাগত জানানো হবে।
বিএনপি’র সহ-সভাপতি শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিএনপি’র কাউন্সিল সম্পন্ন হবে। সে কাউন্সিলে দলের বিভিন্ন পদে যারা মনোনীত হবেন তা দলের সবাই মেনে নিবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলার এক শীর্ষ নেতা বলেন, ডা. জোবায়দা রহমানের অভিষেকের বিষয়টি জানা নেই। তবে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে দলের যেকোন পদে যে কেউ অধিষ্ঠিত হতে পারেন। তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কাউন্সিলররা মনোনীত করলে তাকে অবশ্যই সন্মানের সাথে বরণ করে নেওয়া হবে।
জোবায়েদা রহমানের রাজনীতিতে আসা সম্পর্কে বিএনপি’র যুব বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি টাইমস ওয়ার্ল্ডকে জানান, এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য আমার কাছে নেই। দলের নীতি নির্ধারকেরা যদি এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের তা জানার কথা। কিন্তু এ ধরণের কিছুই আমার জানা নেই। তবে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পেলে তখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেছেন, জোবায়দা রহমান রাজনীতিতে আসছেন এটা আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ। তিনি শুধু বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনীই নয় এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূই নন তিনি প্রয়াত নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মাহবুব আলী খানের মতো একজন দেশপ্রেমিক ও দায়িত্ববান অফিসারের কন্যা। তার পিতা মৃত্যুর আগ মুহূর্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্বও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। এমন একজন মহৎ ব্যক্তির কন্যা সত্যিই যদি রাজনীতিতে আসেন তাহলে জাতীয়তাবাদী শক্তি আরো শক্তিশালী হবে এবং বিএনপি’র রাজনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
Click This Link