ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এরশাদ পতনের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বিগত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনটাকে শুরুতে ছাত্রদের অন্যান্য সাধারন আন্দোলনের মতো করেই দেখেছিলাম। ব্যাপারটাতে আমার আগ্রহ দৈনন্দিন কাজের ফাকে ফাকে খানিকটা খোজ-খবর নেয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটাকে সেই সময়ে শুরুতে একেবারেই পূর্ণমাত্রার সরকার পতনের আন্দোলন মনে হয় নাই। আদপে সেটা ছিলোও না। কিন্তু ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের হত্যাকান্ড দেখার পরই সমগ্র দেশবাসীর সাথে সাথে আমার জগতটাও উলটপালট হয়ে গেল। জড়িয়ে গেলাম একটা আলাদা কর্মকান্ডে।
তারপরের গত আড়াইটা মাস পার করলাম পর্যায়ক্রমে দুঃখ, শোক, রাগ, ক্রোধ, শান্তি, আশা আর সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে। এই সময়টা দৈনন্দিন কাজের বাইরে মূলতঃ ব্যস্ত থেকেছি বিদেশে বসে দেশ নিয়ে যতোটা কাজ করা সম্ভব, তা নিয়ে। যেমন, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত খবর নেয়া, আন্দোলনের জন্য - বন্যার জন্য ফান্ড রেইজিং, লন্ডনে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশগ্রহনসহ আমাদের শহরে কিছু কমিউনিটি ভিত্তিক বিক্ষোভ-সমাবেশ-আলোচনার ব্যবস্থা, ব্লগে লেখালেখিসহ অতিরিক্ত সময় দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন দেশ ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে/উঠছে। বাংলাদেশের মানুষ দেশে কিংবা বিদেশে আবার নতুনভাবে আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে জেগে উঠেছে। কাজেই রিল্যাক্স অবস্থায় ভাবলাম আমিও ধীরে ধীরে আমার পুরানো স্বাভাবিক রুটিনে ফেরত যাই।
সত্যি বলতে এই আন্দোলনটার ট্রান্সফরমেশানের পুরো ক্রেডিট জননেত্রী, কওমী জননী শেখ হাসিনা আর তার ল্যাস্পেন্সার কাউয়া কাদেরকে দেয়া যায়। আন্দোলনের যদি কোন মাষ্টারমাইন্ড আসলেই থেকে থাকে তাহলে এই দুইজনকেই সেই কৃতিত্ব দিতে হবে সর্বাগ্রে।
তবে আজ, এই মুহুর্তে যদি পেছন ফিরে তাকাই, তাহলে বলতেই হয় পতি..............থুক্কু জনদরদী হযরত শেখ হাসিনার ভারতে হিজরতের পরে আমি কয়েকদিন অত্যাধিক বিষাদগ্রস্থ ছিলাম। এতোটা আসলে আশা করি নাই। গত কিছুদিন ধরে ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়াও করা হয় নাই। সব সময়েই চোখে কেমন যেন একটা আন্ধার আন্ধার ভাব!!! যাক, ক্রমে ক্রমে সেই শোক এখন কিছুটা কাটিয়ে উঠেছি। এখন সময় সামনে তাকানোর।
আজকাল কেন জানি ব্লগে আসতে ভালো লাগে না। ব্লগে আসলেই কিছু আওয়ামী সহযোদ্ধার দুঃখভারাক্রান্ত আচার-আচরণ দেখে ব্যথিত হই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্লগ থেকে দূরে থাকার। দূরে থাকলে থাকবো, সেটা আবার মাইকে আযান দিয়ে বলার কি হলো? আমি কোথাকার কোন হরিদাস পাল!!!! আসলে ঘটনা হলো, যারা আমার লেখা নিয়মিত পড়েন, তারা আমার ''তিনমাসের অনুপস্থিতি''র বিষয়টা নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারেন। আমি চাই না পরলোকে যাত্রা করার আগেই কেউ আমার বিদেহী আত্মার মুক্তির জন্য প্রার্থনা শুরু করুক!! সেইজন্য বিতং করে এতোকিছু বলা!!!!
ভবিষ্যতে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে আবার ফিরতে পারি। সে সম্ভাবনা কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ততোদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকেন আর কষে ব্লগিং করা জারি রাখেন।
জয় বাংলা!! জয় জনদরদী শেখ হাসিনা!!!!
ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬