হাসিনা পালাইছে আর সবকিছু আগের মতোই আছে....
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগের আলী ইমাম মজুমদার এবং তার পিএস আহসান কিবরিয়া। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আলী ইমাম মজুমদার যখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তখন আহসান কিবরিয়া ছিলেন তার একান্ত সচিব।
২০১৫-২০২০ পর্যন্ত আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক, হাসিনার অপকর্মে সহযোগিতার পুরস্কার হিসেবে ২০২০-২০২৪ দুই মেয়াদে মহাপরিচালক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিনও এই আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। এই আহসান কিবরিয়াকে বর্তমানে রানিং পিএস বানিয়েছেন আলী ইমাম মজুমদার। ১৬ বছর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা আলী ইমামকে কেন এখন জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হলো এবং আহসান কিবরিয়া কিভাবে অভ্যুত্থানের পর তার পিএস করা হলো- সেটা বিরাট এক রহস্য!
এই আলী ইমাম মজুমদার সাহেবের বদান্যতায় বঞ্চিত নাম ভাঙিয়ে বিভাগীয় মামলা খাওয়া কয়েকজন সিনিয়র সহকারী সচিব ২ মাসের মধ্যে তিনটা প্রমোশন পেয়ে কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে অতিরিক্ত সচিব বনে গিয়েছে! ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড ৯০% আগের যায়গায় আছে। এরা সবাই স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার গুণাগ্রাহি। হাসিনা পালাইছে আর সবকিছু আগের মতোই আছে....
এবার দেখাযাক পুলিশ প্রশাসনঃ বর্তমানে দেশের প্রতিটি থানায় গড়ে চারজন ওসি (ইনস্পেক্টর) আছেন। OC এডমিন, তদন্ত, OC DB এবং OC CID। প্রতিটি জেলায় SP আছেন তিনজন- জেলা এসপি, এসপি সি আই ডি, এসপি ডিবি। এছাড়াও একই র্যাংকের নৌ পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে/ট্রাফিক এসপি, শিল্প এলাকা এসপি, রেলওয়ে এসপি ইত্যাদি। পুলিশ বাহিনীর প্রধান শক্তি এবং কলকাঠি হচ্ছে থানার ওসি, জেলার এসপি এবং ডি আই জি রেঞ্জ। তাদের মধ্যে যারা শেখ হাসিনার মতো পালিয়েছে তাদের কথা বাদ। যারা পালায়নি তাদের মধ্যে থানার ওসি ৯০% স্বপদে আছেন। এমপিদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কিম্বা মেট্রোপলিটন এলাকায় ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছে। এসপি র্যাংক অফিসে মেট্রোপলিটন এলাকা ডিসি, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে এ আই জি পদে পদায়ন হয়। সব থানার ওসি, জেলার এসপি এবং ডি আই জি রেঞ্জ সাহেবেরা সবাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে গনবিরোধী সকল অন্যায় অনৈতিক কাজ করেছে। এরাই ভোট কারচুপি, মানুষ হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলো।
প্রাথমিকভাবে দেশে প্রায় বারো শতাধিক ইনস্পেকটর, প্রায় চার শতাধিক এসপি র্যাংকের অফিসার, অর্থাৎ প্রতিটি পদের বিপরীতে তিন থেকে চার জন একই র্যাংকের অফিসার থাকা সত্বেও ঘুরেফিরে সেই আগের থানার ওসি, জেলা এসপিদেরই পদায়ন করা হয়েছে- জাস্ট 'এধারকা মাল ওধারকা'। এরা কেউই দায়িত্ব পালন পালন করেছে না, বরং উস্কানি দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
অনেক সিনিয়র পুলিশ অফিসার '১৫ বছর বঞ্চিত' নাম ভাঙিয়ে বিভাগীয় মামলা খাওয়ারাও এক মাসের মধ্যে ডাবল-ট্রিপল প্রমোশন বাগিয়ে নিয়েছে। অথচ এরা দায়িত্ব পেয়ে নিষ্ক্রিয়! হাসিনা পালাইছে আর সবকিছু আগের মতোই আছে....
গত পনেরো বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটপাট করেছে, তাদের প্রায় সবাইকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার উৎস ইন্ডিয়া। সেখানে বসে মোদি সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বাংলাদেশ জুড়ে নানারকম নাশকতা, বিশৃঙ্খলা চালিয়ে যাচ্ছে। হাসিনা পালাইছে আর সবকিছু আগের মতোই আছে....
শেখ হাসিনার আমলে সব সরকারি চাকুরিজীবী, বিজনেস টাইকুন যারা "গাছেরটাও খেয়েছে, তলারটাও কুড়িয়েছে"- তারাও, তাদের ইন্ধনেই সবাই দাবি পূরণ আন্দোলনে মাঠে নামিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডেকেট এখানে আছে, তাই কোনো একটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেনি।
রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং প্রশাসনে অনভিজ্ঞ, তার উপর রানিং প্রশাসনের অসহযোগিতায় দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে সবার দাবী মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। পারছেনা শুধু আসল কাজ "রাষ্ট্র সংস্কার" করতে। হাসিনা পালাইছে আর সবকিছু আগের মতোই আছে....
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:০০