নীলার পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে আতিয়ার সাহেব প্রতিদিনই মোবাইলে খবর নিয়েছেন পরীক্ষা ভালো হচ্ছে কি না? কোন অসুবিধা আছে কি না? টাকা পয়সার অসুবিধা আছে কি না? তাঁর জিজ্ঞাসার যেন অন্ত নেই।
একদিন নীলা হাসতে হাসতে তার বাবাকে বলেছিল, বাবা তোমার কথা শুনে মনে হয় শুধু তোমার মেয়েই ভার্সিটিতে পড়ে আর কেউ পড়ে না।
আতিয়ার সাহেব আর কোন কথা বলেননি।
আজকেই নীলার পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সন্ধ্যায় আতিয়ার সাহেব মোহনার মোবাইলে রিং করেছেন। মোহনা মোবাইল রিসিভ না করে নীলাকে মোবাইলটা দিয়ে বলল, নীলা তোর ফোন, খালু করেছে।
নীলা মোবাইল রিসিভ করে বলল, বাবা।
মা তুই ভালো আছিস্?
জি বাবা, তোমরা ভালো আছ সবাই?
হ্যাঁ মা আমরাও সবাই ভালো আছি। মা তোর তো পরীক্ষা শেষ হয়েছে বাড়ি আসবি না?
বাবা বৃষ্টির পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। আরো কয়েকদিন পর ওর পরীক্ষা শেষ হবে তখন না হয় এক সঙ্গে যাব।
না মা তুই কালই রওয়ানা দে, একাই আসতে পারবি না? নাকি আমি ঢাকা গিয়ে তোকে নিয়ে আসব?
না বাবা তোমাকে আসতে হবে না, আমি একাই আসতে পারব।
তবে কালই চলে আয় মা।
ঠিক আছে বাবা।
নীলা মোহনাকে মোবাইলটা দিতেই মোহনা জিজ্ঞেস করল, খালু আমার মোবাইলে রিং করেছে কেন রে? এতদিনেও তোর মোবাইল নাম্বারদিস্ নি?
না রে এখনো দিইনি, এখন মোবাইল নাম্বারটাদিলে হাজারটা প্রশ্ন করবে, মোবাইল তোর কি প্রয়োজন? টাকা কোথায় পেলি? তাই ভাবছি বাড়ি গেলে তখন বাবাকে বুঝিয়ে বলব।
আমার বাবা নিজেই একটা মোবাইল সেট কিনে দিয়ে বলল, আজকালকার দিনে মোবাইল ছাড়া কি চলে? প্রতিদিন আমি আমার মা’র সঙ্গে কথা বলব না? আমি সেদিন ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেটটা সেকেলে হয়ে গেছে। তবু বাবার দেওয়া বলে কথা, ইচ্ছা করলেই তো আর বদল করা যায় না, বলে মোহনার মনটা যেন হাহাকার করে উঠল, যে বাবা আমাকে এত স্নেহ করে, যে বাবা সবসময় বলতো মেয়েদের আসলে সবার আগে উচিত শিক্ষিত হওয়া, সাবলম্বী হওয়া তারপর বিয়ে করা, শিক্ষিত আর সাবলম্বী হওয়া ছাড়া অধিকারের আন্দোলন অর্থহীন আর আজ সে বাবাই মিলন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে--না মোহনা আর ভাবতে পারছে না।
নীলা তার মোবাইল থেকে আকাশকে মিস্ কল দিয়ে অপেক্ষা করছিল। কয়েকমিনিট পর আকাশ মোবাইল করল, হ্যালো নীলা, কী খবর?
শোন কাল আমি বাড়ি যাচ্ছি।
হঠাৎ করে? একাই যেতে পারবে?
হ্যাঁ বাবা মোবাইল করেছিল। আমি একাই যেতে পারব।
তোমার বাস ক’টায়?
সকাল ন’টায়।
আমি সকালবেলা আসি, তোমাকে বাসে উঠিয়ে দিতে আসব।
এসো, তুমি একবার বৃষ্টিকে মোবাইলটা দাও তো, ওর সঙ্গে কথা বলি।
আমার পাশেই আছে কথা বল।
হ্যালো বৃষ্টি বাবা মোবাইল করেছিল আমাকে কালই বাড়ি যেতে হচ্ছে।
ডিসিশন ফাইনাল?
হ্যাঁ।
আচ্ছা ঠিক আছে।
নীলা একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল। রাত দশটা বাজে। সে মোবাইল করে কাউন্টারে টিকেট বুকিং দিয়ে রাখল। তারপর তার ব্যাগ গুছাতে লাগল।
মোহনা সবসময় খোঁচা মেরে কথা বলে। নীলাকে ক্ষেপানোর জন্য তার সব কথা বা কাজকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখে। সে নীলাকে জিজ্ঞেস করল, কি রে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলি?
হ্যাঁ।
বাড়ি যাবি একথাটা সিদ্ধেশ্বরী না কোথায় থাকে তোর ফ্রেন্ড তাদের জানালি আর আমি তোর রুমমেট আমাকে জানালি না?
আমি তো তোর সামনেই কথা বললাম, তোকে আবার নতুন করে কি বলতে হবে?
আমি তোর রুমমেট, শুধু রুমমেটই না সিনিয়রও, বলতে গেলে আমি তোর ভার্সিটি গার্জিয়ান, একই রুমে থাকি বলে তোর সাথে আমি কখনো সিনিয়রের মতো আচরণ করি না। সিনিয়রই হই আর রুমমেটই হই তুই তো বাড়ি যাবার কথা সবার আগে আমাকে জানাবি নাকি?
সরি আপা।
আর আপা বলবি না, আগে যা বলতিস্ তাই বলবি, তুই সবাইকে জানালি আর আমাকে জানতে হলো তোকে জিজ্ঞেস করে।
বললাম তো সরি, সরি মোহনা তোকে আমার আগে বলা উচিত ছিল। ভুল হয়ে গেছে প্লিজ তুই কিছু মনে করিস্ না। এখন বলছি, বলে নীলা মোহনার কানের কাছে গিয়ে জোরে বলল, মোহনা আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে, কাল আমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।
মোহনা মৃদু হেসে বলল, এবার ঠিক হয়েছে।
ঠিক আছে এখন থেকে আমি সবকিছু তোকে একেবারে তোর কানের কাছে গিয়ে বলব। তুই কবে যাবি?
আমার আগামী পরশু একটা পরীক্ষা আছে তার পরদিন।
চলবে...
এই উপন্যাসটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ওয়েব ঠিকানা
ফেসবুকে আমাকে এ্যাড করতে ক্লিক করুন:আমার ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৯:১১