বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই আলাদা। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গের এক বন্ধুর সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তার সহজ উক্তি ছিল—“তো জাতির জনক নিয়ে আমাদের অন্তত মাথাব্যথা নেই। উনি মেসো , পিষো টাইপের।” তার কাছে এটা বড় কিছু নয়, বরং এমন একটি বিষয় যা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন সে খুব একটা অনুভব করে না।
এই কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে জাতির ধারণার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা নিজেদের পরিচয় তৈরি করে। এই অঞ্চলের মানুষ জাতির জনক ধারণাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না।
ভাষা দিয়ে সংযোগ
বাংলা ভাষাই বাঙালিদের মধ্যে প্রাথমিক সংযোগের মাধ্যম। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ভাষার ব্যবহার ভিন্ন হতে পারে, তবে এই ভাষার প্রতি দুই দেশের মানুষের ভালোবাসা অটুট। তবে, প্রশ্ন থাকে—এই ভাষা কি সব বাঙালির ঐক্যের ভিত্তি হতে পারে?
সাংস্কৃতি দিয়ে ঐক্য
বাঙালিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংযোগ শক্তিশালী। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ এবং পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো বাঙালিদের আলাদা আলাদা ঐতিহ্য তুলে ধরে। যদিও উৎসব আলাদা, তবু ঐতিহ্যের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ রয়েছে। কিন্তু এই সংযোগ কি একটা বড় জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে পারবে?
রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ভিন্নতা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ভাষা আন্দোলন জাতীয় চেতনার মূল ভিত্তি। পশ্চিমবঙ্গে এই সংগ্রামগুলোর গুরুত্ব তেমন নয়, কারণ তারা ভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। এ কারণে, রাজনৈতিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে দুই বাংলার বাঙালির মধ্যে পার্থক্য রয়ে গেছে।
জাতির জনক নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
যেখানে বাংলাদেশের বাঙালিরা একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সম্মান করে, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের বাঙালিরা তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মধ্যে নিজেদের পরিচয় খুঁজে পায়। তাই, একটি প্রশ্ন থেকেই যায়—একজন জাতির জনক সব বাঙালির জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে কি?
সর্বজনীন বাঙালি জাতীয়তাবাদের সম্ভাবনা
শেষমেশ প্রশ্নটি থেকেই যায়—বাঙালি জাতির ঐক্যের ধারণা কি বাস্তবায়নযোগ্য? নাকি এটি কেবলমাত্র আমাদের কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৫