পরদিন বৃষ্টি এলো নীলাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে। রুখসানা আম্তা আম্তা করে বললেন, ও তো কালকেই এলো মা, দু'য়েকদিন পরে না হয় তোমাদের বাড়িতে যেত।
বৃষ্টি বলল, খালা আম্মা আপনি কী যে বলেন, আমাদের ভার্সিটি কি অনেকদিনের জন্য ছুটি হয়েছে যে পরে যাবে। ওর ভার্সিটিতে মারামারি হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য ভার্সিটি বন্ধ হয়েছে, কর্তৃপক্ষ আবার যে কোনদিন ভার্সিটি খোলার নোটিশ দিতে পারে।
কিন্তু তোমার খালুকে যে একবার বলতে হবে মা।
খালা আম্মা আপনি না হয় মোবাইলে খালুর কাছ থেকে জেনে নিন, বলে বৃষ্টি নীলাকে বলল, খালুর মোবাইল নাম্বারটাবল্ তো আমি রিং করি।
বৃষ্টি নীলার কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়ে রিং করে মোবাইলটা রুখসানার কাছে দিল।
রুখসানা বললেন, হ্যালো।
অপর পাশ থেকে আতিয়ার সাহেবের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, হ্যালো, আমি রুখসানা।
কী খবর? কোন সমস্যা?
কোন সমস্যা না, নীলার কাছে ওর বান্ধবী বৃষ্টি এসেছে, ও নীলাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তুমি কি বললে?
আমি আবার কী বলব? সেজন্যই তো তোমাকে মোবাইল করলাম।
নীলা যেতে চাইলে যাক, কবে আসবে জেনে নিও।
আচ্ছা।
বৃষ্টি হাত তালি দিল, আমি জানতাম, আমার কথা শুনলে খালু নীলাকে যেতে দিবে।
বৃষ্টি ধামইরহাট উপজেলার অদূরের একটি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা বিত্তশালী কৃষক। তাছাড়া ধামইরহাট উপজেলায় ধান-চাউলের ব্যবসা আছে। গ্রামে বিশাল বাউন্ডারী ওয়াল বেষ্টিত বাড়ি। বাউন্ডারী ওয়ালের ভিতরে ঘাটবাঁধা পুকুর, বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছ। দু'বোন এক ভাই’র মধ্যে বৃষ্টি সবার বড়।
অনেকদিন পর বৃষ্টি আর নীলা নিরিবিলি গল্প করার সুযোগ পেয়েছে। একের পর এক গল্প চলছে রাত কত হয়েছে কারো কোন খেয়াল নেই। বৃষ্টি তার মোবাইলের ঘড়িতে দেখল রাত বারোটা বাজে।
বৃষ্টির মোবাইলের বিং বেজে উঠল।
পল্লব মোবাইল করেছে।
বৃষ্টি রিসিভ করল, কি রে? এত রাতে মোবাইল করেছিস্ কেন?
বৃষ্টি তুই কোথায়?
কেন? এত রাতে আমাকে খুঁজছিস্ কেন?
বল্ না তুই কোথায়?
বৃষ্টি কিছু বলল না। অপর পাশ থেকে পল্লবের কণ্ঠস্বরভেসে এলো, ঠিক আছে কোথায় আছিস্ বলার দরকার নেই। কাল একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবি?
না।
বৃষ্টি প্লিজ।
পারব না তো বলছি, বিরক্ত করিস্ না তো, আমি ঘুমাবো, বলে বৃষ্টি মোবাইল রেখে দিল।
নীলা কয়েকমুহূর্ত বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করল, কীরে এভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কী দেখছিস্?
আচ্ছা বৃষ্টি তুই কি পল্লবকে ভালোবাসিস্?
বৃষ্টি মুখ আংশিক বিকৃত করে বলল, ফিফটি ফিফ্টি।
ফিফ্টি, ফিফ্টি মানে? নীলার চোখে বিস্ময়!
ফিফ্টি ফিফ্টি মানে অর্ধেক অর্ধেক।
ভালোবাসা আবার অর্ধেক হয় নাকি?
অফ কোর্স, তোর মাথা খারাপ, একজনকে পুরো হৃদয় দিয়ে ভালোবাসবো, তারপর সে যখন চিট করে অন্য কারো কাছে চলে যাবে তখন সুইসাইড করব?
এরকম হবে কেন? যাকে ভালোবাসবি তাকে পুরো হৃদয় দিয়ে ভালোবাসবি। আর যদি কাউকে তোর সন্দেহ হয় তবে তাকে ভালোবাসবি না। তার কাছ থেকে দূরে থাকবি। পল্লবকে দেখে আমার যতটুকু মনে হয়েছে তাতে ওকে আমার বিশ্বাস হয়েছে, ওকে এক পলক দেখেই আমার মনে হয়েছে ছেলেটা সহজ-সরল। ও তোকে প্রচণ্ডভালোবাসে, আমার মনে হয় ও তোর সঙ্গে প্রতারণা করবে না।
বৃষ্টি বলল, আমারও তাই মনে হয়।
তবে আবার ফিফ্টি ফিফ্টি কেন?
বলা তো যায় না, ছেলে মানুষ পাল্টে যেতে কতক্ষণ।
নীলা রাগান্বিতস্বরেবলল, বৃষ্টি আমি যতটুকু জানি তাতে তোর সঙ্গে কেউ প্রতারণা করেনি, আর তুই নিজেও বুঝতে পাচ্ছিস্ পল্লব তোর সঙ্গে প্রতারণা করবে না। ব্যাপারটা ষ্পষ্ট করা দরকার, তুই যদি ওকে ভালোবাসিস্ তবে ভালো ব্যবহার করবি আর যদি না ভালোবাসিস্ তবে বলে দিবি, অযথা একজনকে আশ্বাস দিয়ে রাখিস্ কেন?
আমি তো ওকে কোনদিন আশ্বাস দিইনি।
তুই তো ওকে তোর পিছু পিছু ঘুর ঘুর করতে নিষেধও করিস্ নি।
বৃষ্টি কিছু বলল না।
নীলা আবার বলতে শুরু করল, এভাবে থাকতে থাকতে ও একদিন তোকে ছেড়ে চলে যাবে সেদিন তুই খুব কষ্ট পাবি, আজ যেমন ফিফ্টি ফিফ্টি ভালোবাসছিস্ সেদিন তোর ফিফ্টি পার্সেন্ট হৃদয় ভেঙ্গে যাবে। তুই খুব কষ্ট পাবি। আমি বলি কি তুই এসব বাদ দে।
বৃষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, বাদ দে ওসব কোথাকার কোন্ পল্লব তার জন্য আবার তোর এত মায়া, এখন তোর কথা বল্?
আমার কোন কথাই তো তোর অজানা নেই।
বৃষ্টির মোবাইলের রিং বেজে উঠল।
বৃষ্টি মোবাইলের স্ক্রিনে আকাশের নাম দেখে বলল, তোর আকাশ মোবাইল করেছে, আগে একটু ইয়ার্কি করে নিই।
বৃষ্টি মোবাইল রিসিভ করে বলল, কী রে এত রাতে কী মনে করে?
তুই কেমন আছিস্?
ভালো, আমার খুব ঘুম পেয়েছে রে, আমি ঘুমাবো, রাখ কাল কথা বলব, বলে বৃষ্টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে কানের কাছে মোবাইল ধরে রাখল।
অপর পাশ থেকে আকাশের কোন কথা শোনা গেল না।
বৃষ্টি বলল, কী রে মোবাইল রাখছিস্ না কেন?
বৃষ্টি তোর সঙ্গে কি নীলা আছে?
আমার এখানে নীলা থাকবে কেন? নীলা তোকে বলেনি যে ওদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি দুরে।
হ্যাঁ কিন্তু তুই যে বলেছিলি আজ আমাকে নীলার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিবি?
হ্যাঁ বলেছিলাম, তাই বলে আমি তো তোর বেতনভুক্ত কর্মচারী না যে বলেছি দেখে আমার নিজের কাজ ছেড়ে তোর কাজ করব।
নীলা তুই আমার ছোট বোন, লক্ষ্মী বোন আমার, তুই আমার জন্য এটুকু কর প্লিজ।
আমার সঙ্গে যখন ঝগড়া করিস্ তখন মনে থাকে না যে আমি তোর ছোট বোন।
এরপর খেয়াল থাকবে?
অবশ্যই থাকবে।
এই কথা বল্, বলে বৃষ্টি মোবাইলটা নীলাকে দিল।
হ্যালো আকাশ।
নীলা তুমি ভালো আছ?
আমি ভালো আছি, তুমি?
ভালো।
নীলা দেখ তো বৃষ্টিটা কত ফাজিল, তুমি পাশেই আছ তারপরও আমার সঙ্গে কতক্ষণ ফাজলামি করল।
হ্যাঁ ও রকমই, সবার সঙ্গেই ফাজলামি করে তবে তোমাদের ভাইবোনের সম্পর্কটা খুব চমৎকার তো তাই তোমার সঙ্গে একটু বেশি ফাজলামি করে।
নীলা আর ক’দিন থাকবে?
ভার্সিটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ থাকলে আমি ঢাকা গিয়ে কী করব?
আমার মনে হয় বেশিদিন বন্ধ থাকবে না।
ভার্সিটি চালু হলেই আমি চলে আসব।
নীলা বৃষ্টিদের বাসায় ক’দিন থাকবে?
কালই চলে যাব।
তাহলে তারপর আর তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারব না?
নীলা কিছু বলল না।
অপর পাশ থেকে আকাশের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, নীলা তোমাদের বাড়িতে মোবাইল নেই?
আছে কিন্তু সেটা তো বাবার কাছে থাকে। কেন কথা বলবে?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে কাল থেকে আমি বাবার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে রাখব। তবে আমি মিস কল না দিলে কখনো রিং দিবে না।
থ্যাংক ইউ নীলা।
চলবে...
এই উপন্যাসটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২২