জোতি: আই নীড ইওর হেল্প, প্লিজ !!
আমি: কি হইছে? টেল মি।
জোতি: আমি ভাবছিলাম তুমি রিপ্লাই দিবা না !!!
অ্যানিওয়েজ, আগে বল '৭১ এ শহীদদের যে স্ট্যাটিসটিকসটা আমরা জানি সেটা নিয়ে কোন কনফিউশন থাকার চান্স আছে কিনা.........
আমি: কেন রিপ্লাই দিব না!
হঠাৎ কেন এমন প্রশ্ন করছো?
জোতি: মে বি কোন একটা সময় তুমি আমার ওপর বিরক্ত হয়ছো !!! লিভ ইট.........
তুমি কিছু জান কিনা, আই মিন ইন্টারন্যাশনাল জার্নালগুলো নাকি বলে শহীদের সংখ্যা নাকি ৩ লাখ !!! আমি ভালো মতোই কনফিউজড !!!!
আমি: দেখ, আমি এই পরিসংখ্যান নিয়ে কোন গবেষণা করি নাই।
আমি ছোটবেলা থেকে যা জেনে এসছি তা হলো, আমরা ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন সংখ্যাটা আসলে সঠিক কিনা, ৩০ না ৩ এই গবেষণায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এটা নিয়ে প্রশ্ন করতে নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হয়। তবে আমি অনেককে এটা নিয়ে কথা বলতে দেখেছি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলেন, তারা ত্রিশ লক্ষ বলে আসছেন।
জোতি: আমি বিশ্বাস করি এইটা ৩০ লক্ষ, অ্যান্ড আমি একজনকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়বো এইটা ৩০ লক্ষ এবং সেইটা এই ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে !!! অ্যানিওয়েজ, আমি যদি ভুলে না গিয়ে থাকি দেন তুমি এক সময় (ডোন্ট নো এখনও আছো কি না) বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য কাজ করেছো, তাই হঠাৎ মনে হলো প্রুফ বার করার আগে তোমাকে একটু আস্ক করি.......... যাই হোক, আছো কেমন ??
আমি: না প্রতিদিনের জন্য আর লিখি না। আমি ভালো আছি, তুমি কেমন?
যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির প্রশ্ন তুলে আমি তাদেরকে ভালো চোখে দেখি না। তাই প্রথমে তোমার প্রশ্নটা শুনে বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যখন বললে যে তুমি বিশ্বাস কর সংখ্যাটা ত্রিশ লক্ষ এবং তোমার প্রশ্নের কারণটা যখন জানতে পারলাম, তখন মাথাটা ঠাণ্ডা হলো!
তোমার এই বিশ্বাস নিয়ে তোমার দ্বিধা হওয়ার কোন কারণ নেই। যারা অবিশ্বাসী তাদেরকে হাজার প্রমাণ দিলেও তারা মানতে চায় না। কারণ এরা সোজা বাংলায় বেজন্মা।
যা হোক জোতি, এই নাও প্রমাণ...
ত্রিশ লক্ষ শহীদ : মিথ নাকি বাস্তবতা ?
১
একাত্তর সালে পাকিস্তানের জঙ্গি সদরে রিয়াসৎ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সদম্ভে কইছিলেন, “ওদের ত্রিশ লক্ষ হত্যা কর, বাকীরা আমাদের থাবার মধ্যে থেকেই নিঃশেষ হবে।” (১)
কিছু বিতর্ক আছে ইচ্ছা কৈরা টিকায় রাখা হয়। আসলে বিতর্ক ফিতর্ক কিছু নাই, হুদাহুদি একটা গ্যানজাম লাগায় রাখন আর কি। স্বাধীনতার ৩৫ বছর পরেও একখান বিতর্ক ইদানিংকালে নয়া পাকিপ্রেমী রাজাকার-আলবদর গো মৈদ্দে দানা বাঁধছে আর তা হৈল, মুক্তিযুদ্ধে নাকি ত্রিশ লক্ষ লোক শহীদ হয় নাই, ব্যাপারটি নাকি হুদাই চাপাবাজি।
কয়েকটা পান্ডা রাজাকার আবার কৈতে চায় যে, ত্রিশ পয়ত্রিশ লক্ষ ত দূরের কথা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ গো সংখ্যাডা নাকি কয়েক হাজার, খুব বেশি হৈলে কয়েকশ হাজারের হৈব। কেন্ আৎকা হালারা শহীদ গো সংখ্যা লৈয়া হুদাই ফাল পারন শুরু কোরছে? যুক্তিডা কি? হেগো যুক্তি হৈল, নব্বই হাজার পাক বাহিনীর পক্ষে নাকি একাত্তুরের নয় মাসে ত্রিশ লক্ষ (বা থ্রি মিলিয়ন) বাংগালী গো মাইরা ফালানো সম্ভব না। হাছাই নাকি? আসেন আমরা কিছু অংক-সংক কৈরা দেহি হ্যাগো কথায় কতটুকুন লজিক আছে! অংকের কথা হুইনা ডরাইয়েন না ভাইজানেরা। এই অংক করতে আপনেগো ফিবোনক্কি সিরিজও জানোন লাগব না, যাদবের তৈলাক্ত বাঁশের উপরে দিয়া বান্দরের উডা-নামাও ছলভ করতে হৈব না। প্রাইমারী স্কুল লেভেলের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের জ্ঞান, আর কিছুডা কমন সেনস্ থাকলেই সারব। অংক করন শ্যাষ হৈলে আমরা আমগো বিশ্লেষণডা আরেকডা জেনোসাইডের ভিকটিম কম্বোডিয়ার লগে তুলনা কৈরা দেখুম ত্রিশ লাখ শহীদের ব্যাপারডা অযৌক্তিক কিনা!
বাংলাদেশের গণহত্যা : ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস:
১৯৮১ সালে ইউ এন ইউনির্ভাসাল হিউম্যান রাইটসের ডিকলারেশনে কৈছে (২) :
মানব ইতিহাসে যত গণহত্যা হয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশের ১৯৭১’ এর গণহত্যায় স্বল্পতম সময়ে এই সংখ্যা সর্ববৃহৎ। গড়ে প্রতিদিন ৬,০০০ - ১২,০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। .. .. .. এটি হচ্ছে গণহত্যার ইতিহাসে প্রতিদিনে সর্ব্বোচ্চ নিধনের হার।
তার মানে দাঁড়াইতাছে, পাক বাহিনী এই নাপাক কামডা (দিনপ্রতি ৬০০০-১২০০০ বাঙালী নিধন) করছে মোটামুটি ২৬০দিনে (একাত্তুরের ২৫-এ মার্চ থেইক্যা শুরু কৈরা ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত)। আওয়ামী বাকশালী ভারতের দালাল গো দেওয়া তথ্য না, ইউ এন এর নিরপেক্ষ ডাটা লৈয়া একটু হিসাব করণ যাক। আহেন ভাইসব, একটু ক্যালকুলেটর লৈয়া বসি:
বাঙালী নিধনের লোওয়ার লিমিট: ৬০০০ x ২৬০ = ১৫,৬০,০০০ (১৫ লক্ষ ৬০ হাজার)। আর নিধনের আপার লিমিট: ১২০০০ x ২৬০ = ৩১,২০,০০০ (৩১ লক্ষ ২০ হাজার)।
যদি আমরা “হ্যার মাঝামাঝি” লৈয়া হিসাব করি, তাইলে সংখ্যাডা দাঁড়ায়: ২৩,৪০,০০০ (তেইশ লাখ চল্লিশ হাজার)।
একাত্তুরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা আছিল মোটামুটি সাত কোটি পঞ্চাশ লাখ। গড়ে প্রত্যেক পরিবারে ৫জন কৈরা সদস্য আছিল। সাত কোটি পঞ্চাশ লাখরে ৫ দিয়া ভাগ কোরলে খাড়ায় - ১ কোটি পঞ্চাশ লাখ। অর্থাৎ, ১ কোটি পঞ্চাশ লাখ পরিবার আছিল তখন দেশে। প্রত্যেক পরিবারে মারা গেছে: ০.১৬ জন। অর্থাৎ, একাত্তুরে গড়ে একশটা পরিবার খুঁজলে এর মৈদ্যে ষোলডা পরিবার পাওন যাইত যারা পাক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হৈছে। ১৬টা পরিবার-এইডা তা এমন আহামরি কোন বড় সংখ্যা না যে ঘটবার পারব না।
তার মানে অন্তত ১৬% বাঙালী পরিবার একাত্তুরে আছিল যাগো কেউ না কেউ না-পাক বাহিনীর হাতে শহীদ হৈছিল। ‘অন্তত’ শব্দডা ইচ্ছা কৈরাই এইখানে বসাইছি কারণ হাজার হাজার পরিবারের উদাহরণ আমরা জানি যারা ম্ুিক্তযুদ্ধে একাধিক সদস্য হারাইছে। পুরা পরিবার হুদ্দা নিশ্চিহ্ন হৈয়া গেছে এইরকম উদাহরণও কৈলাম আছে ঢের! আমরা না হয় নিও-রাজাকারগো একটু ছার দিয়া ঐ মর্মান্তিক উদাহরণগুলা এই ক্যালকুলেশনে না আনি।
পাক বাহিনীর সংখ্যা আছিল নব্বই হাজার। একাত্তুরের ২৬০ দিনে একেক জন পাকি আর্মির হাতে ২৬ জন কৈরা বাঙালী মারা গেছে (তেইশ লাখ চল্লিশ হাজার’রে নব্বই হাজার দিয়া ভাগ করেন)। মনে রাইখেন, আমি এইখানে পাকবাহিনীর দোসর রাজাকার আলবদর গো সংখ্যা গোনায় লৈ নাই। প্রায় লাখ খানেক রাজাকার গো সংখ্যা যোগ করলে একেক পাকির হাতে শহীদের সংখ্যা দশ-বারোর মৈদদে নাইম্যা আইব। আমরা আপাতত: ছাব্বিশ ধৈরাই আগাইয়া যাই।
কাজেই একেক পাকিস্তানীর হাতে প্রতি দিনে খুন হৈছে শূণ্য দশমিক এক জন কৈরা (২৬ রে ২৬০ দিয়া ভাগ করেন)। কাজেই বুঝা যাইতাছে, (০.১) শূন্য দশমিক এক-মানে একেক পাক-বাহিনীর হাতে প্রতি দশ দিনে একজন কৈরা বাংগালী মারা গ্যাছে ঐ সময়। এইডা যুদ্ধের সময় কোন “মিশন ইম্পসিবল” জব নাকি? আইজক্যা ফকরুদ্দিন ছাবের আর্মি ব্যাকড গর্ভমেন্ট যে দ্যাশডারে “শান্তির নীড়” বানায় রাখছে, সেই “শান্তির নীড়ে”ও তো পেপার খুললেই দিনে বিশ পঁচিশটা কৈরা খুনের খবর পাওন যায়। আর সেইখানে একাত্তুরে যখন পাক-বাহিনী প্ল্যান প্রোগ্রাম কৈরা গণহত্যা করতে নামছে, তখন দশ দিনে মারছে একজন কৈরা।
কাজেই বুঝা জাইতাছে ত্রিশ লাখ শহীদের ব্যাপারটা কোন অতিরঞ্জন না, কোন “অবাস্তব ফিগার” না। আসলেই ত্রিশ লাখ লোক শহীদ ঐ যুদ্ধে। আরো এক কোটির মতন হৈছে শরণার্থী। আপনেগো যদি স্মরণে থাকে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ১৯৭২-এর ইস্যুতে লেখা হৈছিল বাংলাদেশে একাত্তুরে তিন মিলিয়ন (বা ত্রিশ লাখ)-এর বেশি লোক মারা গ্যাছে (৩)। আরও অনেক নিরপেক্ষ ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতেই তখন “থ্রি মিলিয়ন” উল্লেখ করা হৈছিল। যেহেতু যুদ্ধের দুই-তিন বছরের মৈদ্দে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ায় যে তথ্যগুলান নিরপেক্ষভাবে উইঠা আইছিল সেইগুলান যে স্বাধীনতার পয়ত্রিশ বছর পরে নিও-রাজাকার গো “গবেষণাধর্মী” প্রোপাগান্ডার চাইতে অনেক বেশি অথেন্টিক, তা বোধ হয় কওনের অপেক্ষা রাখে না। জেনোসাইড ডট অরগে’ও (http://www.genocide.org)সেই সত্যের উচ্চারণ শুনি (৪)
একাত্তরের ২২শে ফেব্রুয়ারী তারিখে পশ্চিম পাকিস্তানের জেনারেলরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে। প্রথম থেকেই স্থির করা হয় যে (এদের) হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনকে নির্মূল করতে হলে সামরিক গণহত্যার অভিযান শুরু করতে হবেঃ ‘ওদের ত্রিশ লক্ষকে হত্যা কর’, ফেব্রুয়ারী সম্মেলনে নির্দেশ দিয়েছিলেন সদরে রিয়াসৎ ইয়াহিয়া খান, ‘এবং বাকীরা আমাদের থাবার মধ্যে থেকেই নিঃশেষ হবে।’ (রবার্ট পেইন, ম্যাসাকার, ১৯৭২, পৃ ৫০)। ২৫শে মার্চ তারিখে গণহত্যার রকেট উৎক্ষিপ্ত হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় আক্রান্ত হল এবং শত শত ছাত্রকে নির্মূল করা হল (পাকিস্তানী বর্বর সেনাদের হাতে)। দলে দলে এই নৃশংস হত্যাকারীরা সারা ঢাকা শহরের রাজপথ অলি গলি চষে বেড়িয়ে একই রাতে কম করেও ৭,০০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করল। কিন্তু এটা তো ‘শুরু’ মাত্র। এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যার অর্ধেক পালিযে বাঁচল, এবং অন্তত ৩০,০০০ মানুষ এর মধ্যে পাক বাহিনীর হতে নিহত হল। চট্টগ্রামেও জনসংখ্যার অর্ধেক নিশ্চিহ্ন হল। সারা পূর্ব পাকিস্তানে জনগণ পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, এবং হিসাব থেকে দেখা গেছে এপ্রিলেই সারা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তত তিন কোটি মানুষ সামরিক নর পিশাচদের হাত রক্ষা পাওয়ার জন্য গ্রাম-গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়িয়েছে (রবার্ট পেইন, ম্যাসাকার, পৃ ৪৮)। এক কোটিরও ওপর পূর্ব পাকিস্তানবাসী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল- যা তাদের অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে পরিণামে উদ্ভুত পরিস্থিতি ভারতকে সামরিক হস্তক্ষেপে বাধ্য করেছিল (গণহত্যার শুরুতে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৭.৫ কোটি) ।
আমি পরের অংশে কম্বোডিয়া নামের রাষ্ট্রের আরেকখান গণহত্যার শিকার খতিয়ান দিয়া দেখামু যে খেমাবুজরা সেখানে যেই গণহত্যা চালাইছিল সেই তুলনায় বাংলাদেশের গণহত্যার ফিগার (ত্রিশ লাখ) অনেক রিয়ালিস্টিক। কম্বোডিয়ায় চার বছরের (১৯৭৫-১৯৭৯) গণহত্যায় খেমারুজেরা প্রতিদিন মারছিল একজনের উপরে, আর বাংলাদেশে পাক বাহিনী প্রতি দশ দিনে মারছে একজন কৈরা। বাংলাদেশের গণহত্যায় শূন্য দশমিক ছয় জন ফ্যামিলি ভিকটিমাইজড হৈছে, সেখানে কম্বোডিয়ায় হৈছে এক দশমিক এক আট জন। তারপরও নিও-রাজাকার আবালেরা ফাল পারে - “থ্রি মিলিয়ন” নাকি আনরিয়ালিস্টিক ফিগার!
২
আমরা এখন অন্য একটা রাষ্ট্রের গণহত্যার খতিয়ান হাজির করমু। এইডার উদ্দেশ্য হৈল, যে গাণিতিক যুক্তি আগে হাজির করা হৈছে ঐতিহাসিক বাস্তবতার নিরিখে সেই দাবিটা পর্যালোচনা করা। এইডাই প্রকৃত গবেষণার পদ্ধতি। যারা বিজ্ঞানের জার্নালে দুই-চাইরটা পেপার পাবলিশ করছে তারা সবাই এই পদ্ধতির কতাডা জানে।
আমরা আইজক্যা ইতিহাসের আরেকখান গণহত্যা লৈয়া আলোচনা করমু, যে গণহত্যাডা নির্মমতা আর ভয়াবহতায় সম্ভবত বাংলাদেশরেও ছাড়ায় গেছে গা। পলপটের খেমারুজ বাহিনী কম্বোডিয়ায় বুর্জোয়া নিমূর্ল করবার লাইগ্যা কি ভাবে পংগপালের মত মানুষরে কচুকাটা করছে তার একটু নমুনা দেই।
খেমারুজ বাহিনী ক্ষমতায় আছিল ১৯৭৫ থিকা ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত, চাইর বছর। এর মৈদ্দে নিজস্ব আদর্শের নামে মাইরা সাফা করছে প্রায় ১৭ লাখ থিকা ৩০ লাখ লোক (৫,৬)। ভাবতাছেন, কৈ এইডা তা বাংলাদেশের গণহত্যারে সংখ্যায় অন্তত: অতিক্রম কৈরা যায় নাই। হাছাই ধরছেন, তয় খাড়ান, কথা আছে! কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা বাংলাদেশের একাত্তুরের লাহান সাড়ে সাত কোটি আছিল না। খেমারুজরা ক্ষমতায় যাওনের সময় কম্বডিয়ার জনসংখ্যা আছিল মোটামুটি ৭৬ লাখ (৭)। তাইলে চিন্তা করেন, ছিয়াত্তুর লাখের মৈদ্দে ১৭-৩০ লাখ মাইরা সাফা কৈরা ফালাইছে। আমরা ১৭ লাখ মারছে এইডা ধৈরাই হিসাব করি আপাতত: কাজেই খেমারুজেরা মুল জনসংখ্যার ২২ ভাগের বেশি মাইরা সাফা করছে। আর অন্যদিকে পাকবাহিনী সাফা করতে পারছে আমগো জনসংখ্যার ৪ ভাগ (৩০ লাখরে ৭.৫ কোটি দিয়া ভাগ কইরা ১০০ দিয়া গুণ দিলে পাওন যায়)।
আমার অবশ্য কম্বোডিয়ার ফ্যামিলি সাইজ সম্বন্ধে কোন ধারণা নাই। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা আগে ধরছি (প্রত্যেক পরিবারে পাঁচ জন সদস্য) তা ধৈরাই আগাইয়া যাই। হেই হিসাবে ১৯৭৪ সালে কম্বোডিয়ায় পরিবারের সংখ্যা আছিল মোটামুটি ১৫ লাখ ২০ হাজার। কাজেই প্রত্যেক পরিবারে মারা গেছে: এক দশমিক এক আট (১.১৮) জন কৈরা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিসাবডা আছিল শূণ্য দশমিক ছয় (০.৬)। সাধারণ বাংলায় কৈলে কৈতে হয়, কম্বোডিয়ার গণহত্যায় এভারেজে প্রত্যেক পরিবারই কাউরে না কাউরে হারাইছে, যা বাংলাদেশে ঘটে নাই। বাংলাদেশে একাত্তুরে একশটা পরিবার খুঁজলে ষোলডা পরিবার পাওন জাইত যাগো কেউ না কেউ পাকবাহিনীর হাতে মরছে। কাজেই বাংলাদেশের পরিসংখ্যান আনরিয়ালিস্টিক কিছু না।
এইখানে একটা ব্যাপার আছে। খেমারুজরা গণহত্যা করছে চার বছর ধৈরা। আর পাক বাহিনী করছে নয়মাসে। হের লাইগ্যা পাকিরা আমগো জনসংখ্যার বাইশ তেইশ ভাগ সাফা কৈরা দেওনের সময় পায় নাই, যা খেমারুজেরা করবার পারছে। এখন যদি খেমারুজেরা চাইর বছরে না মাইরা পাকবাহিনীর মতৈ ২৬০ দিনে লোকগুলানরে মারত, তাইলে দিনপ্রতি মারত প্রায় ৭০০০ জন কৈরা। ঐ সংখ্যাডাও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইউএন-এর দেওয়া পরিসংখ্যানের সাথে খাপ খায় (৬,০০০ থেকে ১২,০০০)। কাজেই বাংলাদেশে শহীদের সংখ্যাডা হুদাই বানাইন্যা না।
ব্যাপারডারে আরেকটু ঘুরায়া দেখন যায়। আমরা ছোট বেলায় স্কুলে শিখা ঐকিক নিয়মে হিসাব করণের চেষ্টা করি, জনসংখ্যার ২২ ভাগ সাফা করতে খেমারুজরা চার বছর (৪৮ মাস) সময় নিছিল। তাইলে জনসংখ্যার ৪ ভাগ সাফা করতে (যা পাকিস্তানীরা করছিল) তারা কয় মাস সময় নিত? এইডা তা সোজা ঐকিক নিয়ম, রাম, রহিম, যদু, মদু হ¹লতেরই পারন উচিত। হের জন্য ৪৮ রে ২২ দিয়া ভাগ করেন, তারপর ৪ দিয়া গুণ করেন। কি বাইর হৈল? সাড়ে আট মাসের কিছু বেশি। তাইলে আবারও দেখা যাইতাছে নাপাক কামডা পাক বাহিনী নয় মাসে করছে, খেমারুজেরা হয়ত সেইটা সাড়ে আট মাসেই কম্পলিট করতে পারত। কাজেই নয় মাসে ত্রিশ লাখ মারনটা আকাশ কুসুম কল্পনা না, কোন আনরিয়ালিস্টিক ফিগারও না। আর কতভাবে প্রমাণ করমু?
“থ্রি মিলিয়ন” বা ত্রিশ লাখের ব্যাপারটা কোন হাওয়া থেইকা পাওয়া না। আমার মতে এইডা খুবৈ রিয়ালিস্টিক একটা ফিগার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বেশ কয়েক বারই যুদ্ধে শহীদগো সংখ্যা “থ্রি মিলিয়ন” বা ত্রিশ লক্ষ উল্লেখ করছিলেন (তথ্যসূত্র ৮)। অহন কোন কোন নিও-রাজাকার কৈবার লাগছে যে “অশিখ্যিত” শেখ মুজিব নাকি মিলিয়ন আর লক্ষের পার্থক্য বুজত না, হের লাইগ্যা নাকি গুবলেট কৈরা ফেলাইছিল। হেগো (কু) যুক্তি হুনলে হাসুম না কান্দুম বুজবার পারি না। আমি তো আগেই কৈছিলাম অনেক ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতেই তিন মিলিয়ন বা ত্রিশ লাখ মারা যাওনের পরিসংখ্যান ছাপা হৈছিল। যেমন, ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিকের ১৯৭২ ইস্যু। এছাড়াও The Portsmouth Herald (Monday, January 17, 1972), Y C Rossiter Curriculum as Destiny: Forging National Identity in India, Pakistan, and Bangladesh সহ অনেক ম্যাগাজিন আর পত্র পত্রিকাতেই “থ্রি মিলিযন” কতাডা বাইর হৈছিল (৮)। এ ছাড়াও সেসময় লিখা অনেক ইংরেজী বই-পত্রে ত্রিশ লক্ষ শহীদের উল্লেখ আছে (৯)। ছাগু গো কথা হুইনা মনে হয় ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফক, পোর্টসমাউথ হেরাল্ডসহ হ¹লতেই বুজি শেখ মুজিবের লাহান “অশিখ্যিত” বৈনা গেছিল না! যুক্তির বলিহারি!
আবারও পরিসংখ্যানে ফির্যা যাই। তুলনামূলক বিচারে কম্বোডিয়ার গণহত্যা, পাকবাহিনীর গণহত্যার চাইতে অনেক অনেক বেশি নৃশংস আছিল। আগেই কৈছি কম্বোডিয়ার গণহত্যায় পরিবারে মারা গেছে এক দশমিক এক আট (১.১৮) জন কৈরা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিসাবটা আছিল শূণ্য দশমিক ছয় (০.৬)। কাজেই ভাগ দিলে পাওন যায় যে কম্বোডিয়ার গণহত্যার ভয়াবহতা বাংলাদেশের তুলনায় অন্তত: সাত গুণ বেশি আছিল। কিন্তু কম্বোডিয়ার কেউ গণহত্যার ভয়াবহতা লৈয়া চিক্কুর পাড়তাছে না, কিংবা গণহত্যার ফিগার লৈযা জল ঘোলা করতাছে না, অন্তত: আমার ত চোখে পড়ে নাই।
আরও একখান বিষয়ে বোধ হোয় পার্থক্য আছে হেগো সাথে আমগো চরিত্রের। পলপটের জামানার পরিবর্তনের পর পলপটের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের আয়োজন করা হৈচ্ছিল। ঐডা আছিল ইউ এন-এর পলিসির উপর ভিত্তি কৈরা প্রথম গণহত্যার বিচার। যদিও বিচার শুরুর আগেই পলপট পটল তুলছিল (কেউ কেউ কয় আত্মহত্যা), কিন্তু বিচারের আয়োজনের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা রাজাকার আলবদরগো বিচার কোরতে পারি নাই। পাকি’গো কাছ থাইক্যা কোন খেতিপূরণও আদায় করবার পারি নাই। জাহানারা ইমাম একসময় অসুস্থ শরীর লৈয়া শুরু করছিল একডা আন্দোলন, মাগার শেষ কৈরা জাইতে পারে নাই। বিচার কোরতে পারি আর না পারি, অন্তত: এইডা যেন আমরা ভুইলা না যাই যে, পাক বাহিনীর গণহত্যাডা ইতিহাসের অন্যতম বর্বর হত্যাকান্ড। ত্রিশ লাখ লোক আমগো স্বাধীনতার লাইগ্যা প্রাণ দিছে। এই ব্যাপারডা লৈয়া এরপর থেইক্যা কোন নিও-রাজাকার জানি এই লৈয়া জল ঘোলা করবার না পারে। আমার প্রবন্ধের উদ্দেশ্য এইডা না যে বাংলাদেশের গণহত্যার তুলনায় কম্বডিয়ার গণহত্যা কত বড় বা ছোট হেইডা দেখানো, বরং ইতিহাস ঘাইটা এইডা ও অঙ্কের হিসাবে দেখানো নয় মাসে পাক বাহিনী যে ত্রিশ লাখ লোকরে মাইরছে- এইডা কোন “মিশন ইম্পসিবল” জব আছিল না, তাগো কাছে।
জোতি, এতক্ষণ সামহোয়্যার ইন ব্লগের সাবেক ব্লগার "যুঞ্চিক্ত" -এর অনেক পুরনো একটি লেখা পড়লে। এই প্রমাণটা অভিনব, তাই এখানে রিব্লগ করলাম। আশা করি তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু জোতি, যে কথাটা সবচেয়ে জরুরী সেটা কি জান? এখানে একটি গণহত্যা হয়েছিল, ভীষণ নারকীয় গণহত্যা- এটাই সবচেয়ে বড় কথা! যার জন্য আজও হত্যাকারীরা ক্ষমা চাইনি, ঐ পাকিস্তান রাষ্ট্রটি কোন দুঃখ প্রকাশ করেনি। করবে কিভাবে বল, সেটা করতে গেলে যে তাদের পাপ-স্বীকার হয়ে যাবে! আরেকবার কি তারা চাইবে নিজেদের মাথা নিচু করতে? তারা হয়তো এভাবেই ভাবে। এটা সত্য যে, তাদের 'অফিসিয়াল দুঃখ প্রকাশ' তাদের পূর্বপুরুষের পাপ মোচন করবে না, কিন্তু এটা তাদের কে বোঝাবে, এতে অন্তত তাদের বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম সমান পাপী হওয়া থেকে রক্ষা পাবে!
ওদেরকে হয়তো আমরা ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে পারি না। তাছাড়া জোর করে আদায় করা ক্ষমার কোন মূল্য নেই। কিন্তু আমরা ওদের এদেশীয় দোসরদের বিচারটা নিশ্চিত করতে পারি। চার দশক ধরে বয়ে বেড়ানো বোঝাটা এতে হালকা হবে। এটা নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। কেউ যেন এটাকে শুধু নির্বাচনীয় ইস্যু বানিয়ে না রাখে!
স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের যারা আজ ঐ পশুদেরকে বাঁচাতে চায় তাদেরকে বলো, তারা যেন নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞেস করে, তারা আসলেই এই দেশের সন্তান কিনা? যে দেশের বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে তারা বড় হয়েছে, সে দেশের জন্মলগ্নের মীরজাফরদের জন্য কিভাবে তারা গলা ফাটাতে পারে? তাদের শরীরে কি শকুনের রক্ত? তাদের মগজের ঘিলু কি সাফ করে ফেলা হয়েছে? তাদেরকে বলো, যাবতীয় লোভ-লালসা ত্যাগ করে নিজেদেরকে নিয়ে যেন তারা একটু ভাবে। নিজেদের জন্ম-পরিচয়টা যেন পরখ করে দেখে।
জোতি, ত্রিশ লক্ষ না উনত্রিশ লক্ষ এই প্রশ্নও যদি কেউ করে তার অন্তরে ময়লা আছে জেনো। এখানে একদম সঠিক সংখ্যা বলে তো কিছু হতে পারে না। তাই সংখ্যাটা প্রধান না। যারা সংখ্যা নিয়ে খেলতে চায় তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত কর। এখান রক্তপাত হয়েছিল, অসংখ্য নিরীহ মানুষের রক্তপাত। নরখাদকদের কবলে আমাদের পূর্বপুরুষের রক্তপাত। এতদিন পর সংখ্যায় তাঁরা ত্রিশ না তিন লক্ষ জিজ্ঞাসে কোন ছোটলোক?