নারীর ক্ষমতায়নে গার্হস্থ অর্থনীতি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে যে কী আর বলবো, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না! দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গার্লস স্কুলে 'নারীর ক্ষমতায়নে গার্হস্থ অর্থনীতির ভূমিকা' শীর্ষক একটি রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। রচনায় গার্হস্থ অর্থনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ছাত্রীদেরকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন গার্হস্থ অর্থনীতি পাঠ্যবইয়ের সম্মানিত রাঁধুনি আইমিন লেখিকারা। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে সেরকম সব গৃহসামগ্রী, যা দিয়ে তারা গার্হস্থ শিক্ষার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারবে। এই প্রতিযোগিতায় সে সব ছাত্রীই শুধু অংশগ্রহণ করতে পারবে যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক পরীক্ষায় গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পাবে। তাই আগ্রহী ছাত্রীদেরকে অনুরোধ করা যাচ্ছে তারা যেন বেশি বেশি করে গার্হস্থ অর্থনীতি অধ্যয়ন করে A+ জিতে আনে। প্রকৃতপক্ষে গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেলেই তারা বুঝতে পারবে নারীর ক্ষমতায়নে গার্হস্থ অর্থনীতির ভূমিকা কি জিনিস!
ছাত্রীদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দেশের প্রধান স্কুলের দুই ক্যাপ্টেন গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেয়েছিল। খালেধা জিআ-ই নাকি প্রথম গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেয়েছিল এবং ক্যাপ্টেন হতে পেরেছিল। খা. জি. জীবনে ৩বার গার্হস্থ অর্থনীতি A+ পেয়েছিল, যা রীতিমত রেকর্ড! তবে দ্বিতীয়বার যখন A+ পেয়েছিল সেবার স্কুলে ভীষণ বন্যা হওয়ার কারণে পরীক্ষার খাতা-পত্র সব ভেসে যায়। তখনও রেজাল্ট প্রস্তুত হয়নি, ছাত্রীদেরকে খাতা দেখানো শুরু হয়েছিল মাত্র। তাই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে হেডমাস্টার নতুন করে আবার পরীক্ষা নেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার নেয়া পরীক্ষায় খা. জি. আর A+ পায়নি! এর পেছনে কি কারণ ছিল তা নির্ণয় করতে গিয়ে ধারণা করা হয়, দ্বিতীয়বার খাতা কাটতে হচ্ছে দেখে বিরক্ত হয়ে মাস্টার আগেরবার A+ পাওয়া খা. জি. কে A- দেন। অন্যদিকে ডায়রিয়ার অজুহাত দিয়ে আগের বারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা শেক হাসানা এবার A+ পেয়ে যায়!
ও হ্যাঁ, বলা হয়নি - খা. জি. ও শে. হা ক্লাস সেভেন থেকে সহপাঠী। তারা তখন একটি ছেলে-মেয়ের স্কুলে লেখা পড়া করতো। ঐ স্কুলে পড়ার আগে শে. হা ছিল পর্যটক ও খা. জি. ঘরে লুডু খেলতো। যা হোক, ছেলে-মেয়ের স্কুলটাতে একটা দুষ্ট ছেলে ছিল, যার নাম হো.মো. এরশাদ। হো.মো. স্কুলের সব মেয়ের সাথে টাংকি মারতো, কিন্তু ভুলেও খা. জি. ও শে. হার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতো না! কারণ দুজনের পরিবার ছিল বেশ খানদানী (কোট+সাফারি=খানদান)। অন্যদের উপরে হোমোর এই অত্যাচার খা. জি. ও শে. হা সহ্য করতে পারলো না! তারা দুজন বান্ধবী পাতিয়ে ফেলল! দুজনে মিলে হোমোকে স্কুল ছাড়া করলো, তার আগে সবাই মিলে হোমোকে টয়লেটে বন্দি করে কি যেন করেছিল! এরপর থেকে মেয়ে দেখলে হোমোর আর কিছু হয় না! পরবর্তীতে অবশ্য হোমো বিদেশে গিয়ে কী সব কসমেটিক চিকিৎসা-টিকিৎসা করে ফর্মে আসার চেষ্টা করেছিল! সে যাকগে, ওসব অনেক লম্বা ইতিহাস, তোমরা ছোট তোমাদের না জানলেও চলবে!
আমরা বরঞ্চ গার্হস্থ অর্থনীতির দুই মেধাবী ছাত্রী খা. জি. ও শে. হার গল্পে ফিরে যায়। তো হোমোকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করার পর খা. জি. ও শে. হা ঠিক করলো আর কোন হোমোর যেন জন্ম না হয় তাই স্কুলটিকে ভেসেকটমি ও লাইগেশন করাবে। যো চিন্তা, হো কাজ। স্কুলটিকে ছেলেহীন করে মেয়েদের স্কুল বানিয়ে ফেলা হলো। এটাই এখন দেশের সেরা স্কুল!
ক্লাস এইটে উঠার পর খা. জি. ও শে. হার সখী সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল। খা. জি. যখন প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেল, শে. হার তখন কী কান্না! খা. জি. ক্লাস ক্যাপ্টেন হয়ে গেল। এখন থেকে গার্হস্থ অর্থনীতিতে যে A+ পাবে, সে হবে ক্লাস ক্যাপ্টেন। প্রথম ক্যাপ্টেন হতে পেরে খা. জি. খুব খুশি। শে. হা. তো রাগে ফুঁসছে, শে. হা. খা. জি. কে চুল টেনে ক্যাপ্টেনসি থেকে নামিয়ে দিতে চাইলো। তারপর তো দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা, ডায়রিয়া, বন্যা, আবার পরীক্ষা এসব হলো। শে. হা. প্রথমবারের মতো ক্যাপ্টেন হলো। শে. হার তখন সেকি হাসি, হাসিতে মাথার স্কার্ফ পরে গেল! ক্যাপ্টেন হয়ে শে. হার মধ্যে আবার পর্যটক প্রতিভা জেগে উঠলো। শে. হা স্কুল ফান্ডের পয়সা দিয়ে ভালো ক্যাপ্টেনসি শিখার নাম করে বিদেশি স্কুলগুলোতে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। আর অনারারি জেএসসি ডিগ্রি উপহার আনতে লাগলো। খাজি এই সব চেয়ে চেয়ে দেখত আর মনে মনে ভাবতো, আমি কি বোকাটাই না ছিলাম!
এক সময় তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষা আসলো, এবার খাজি ফার্স্ট হয়ে গেল! বলা বাহুল্য গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+! শেহার তখন সেকি মুখ খারাপ! শেহা হেডমাস্টারকে 'বেঈমান' উপাধি দিল! খাজি এবার অনেক ম্যাচিউরড, ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠলো বলে কথা! ওদিকে শেহার মুখ বন্ধ হচ্ছে না! স্কুলের গভর্নিং বডি বললেন, 'রং হেডেড'! কিন্তু শেহা থামলো না, ফন্দি আঁটতে লাগলো কি করে নবম শ্রেণীর প্রথম পরীক্ষায় সব বিষয়ে A+ সহ (গার্হস্থ অর্থনীতিতে একশতে একশ) ফার্স্ট হওয়া যায়। খাজিও কম যায় না। সে ক্যাপ্টেনসি টিকিয়ে রাখার জন্য স্কুলে পছন্দমতো হেডমাস্টার আনালো। এসব নিয়ে স্কুলে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হলো। আকাশে মেঘ জমলো, ভীষণ বর্ষা হলো। স্কুল মাঠে নৌকা বাইচ শুরু হয়ে গেল! কে কতো জোরে বৈঠা চালাতে পারে!
খাজির দলবল এই খেলায় ইমম্যাচিউরড প্রমাণিত হলো। এই ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করলো স্কুলের প্রধান সিকিউরিটি গার্ড। সে ভাবলো বহুত হইছে, আমি থাকতে আবার ক্যাপ্টেন কেডা? ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতিতে সে নিজেকে ক্যাপ্টেন ঘোষণা না করে স্কুলের এক দপ্তরিকে ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলো। এই মহান বিপ্লবী প্রধান সিকিউরিটি গার্ডের নাম মইউন উহ্ আহ্ আর তার মনোনীত কমরেডের নাম Fকরাতদিন আমেদ। তাদেরকে সমর্থন দিল স্কুলের ইংরেজি পত্রিকা ডলি স্টার, বাংলা পত্রিকা প্রথম মালা। তারপর তারা যা করলো সে এক বিরাট পাতিহাস। ওসব তোমরা বড় হলে শুনবে। শুধু এটুকু জেনে রাখ, তারা দুই সাবেক কাপ্তেনকে এমন শিক্ষা দিল যে কি আর বলবো, বড় হলে জানবে!
আগেই বলেছি, শেহা যে করেই হোক প্রথম হতে চায়। ওদিকে দপ্তরি ও গার্ড রুটিন বহির্ভূত কাজ করতে করতে ক্লান্ত। স্কুলের সবাই প্রথমে তাদেরকে পছন্দ করলেও পরে অপছন্দ করতে শুরু করলো। হোমোর মতো তাদেরকেও টয়লেটে বন্দি করা হতে পারে সে ভয়ে তারা স্কুল থেকে পালাবে ঠিক করলো। কিন্তু এমনি এমনি তো আর পালানো যায় না, একটা সেফ এক্সিট তৈরি করতে হবে। শেহা যেহেতু ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল, তাই তারা শেহাকে ঠিক করলেন এক্সিট ওয়ে হিসেবে। শেহা গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পাবে, বিনিময়ে উহ্ আহ্ ও Fকরাতদিনের কর্মকাণ্ড জায়েজ করে দিবে। খাজি এসব বুঝতে পেরে আওয়াজ তুললো, গার্হস্থ অর্থনীতি বাঁচাও, গার্হস্থ অর্থনীতি বাঁচলে স্কুল বাঁচবে! শেহা তার পর্যটন বুদ্ধি কাজে লাগালো, বললো, গার্হস্থ অর্থনীতিকে ডিজিটাল করে দিব, সবাই ব্যবহারিক কাজগুলো কম্পিউটারে করবে, বাসা থেকে আর কাঁথা-বালিশ সেলাই করে আনতে হবে না, পিঠা-পরটা বানিয়ে আনতে হবে না, সব কিছু কম্পিউটারে বসে বসে করা যাবে। আমার বাবাও এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেহার আবেগি ও মডার্ন কথাবার্তায় মেয়েরাও খুশি, টিচাররাও খুশী। ও হ্যাঁ, উহ্ আহ্ ও Fকরাতদিনের বুদ্ধিতে এবার ভোটাভুটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। A+ পেলেও ক্যাপ্টেন হিসেবে কাউকে না চাইলে 'না ভোট' দেয়া যাবে। শেহা গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেল, ভোটাভুটিতেও জিতলো। খাজির আশির দশকীয় শ্লোগান কাজে আসলো না। খাজি দাবি করলো শেহা নকল করে A+ পেয়েছে! খাজি আবার ক্যাপ্টেন হলে এটা নাকি সে প্রমাণ করে ছাড়বে!
দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা এগিয়ে আসছে। শেহা এবারও গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেতে চায়। তা না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। শেহা প্রথম সাময়িকের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। শেহা এখন জানে কিভাবে যথেষ্ট না পড়েও A+ পাওয়া যায়। শেহা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি না। শেহা এবার কোন সিকিউরিটি বা দপ্তরিওয়ালাকে সুযোগ দিতে চায় না। হেডমাস্টারকেও আর ভরসা করে না। যদিও এখনও গার্হস্থ অর্থনীতির ব্যবহারিকে কাঁথা-বালিশ সেলাই করে আনতে হয়, পিঠা-পরটা বানিয়ে আনতে হয়, কারণ কম্পিউটারে এসব করা যায় না। কিন্তু শেহা এখনও গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেতে চায়!
প্রিয় প্রতিযোগীরা, তোমরা নিশ্চয় এবার বুঝতে পারছো, ক্ষমতায়নে গার্হস্থ অর্থনীতি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ! এবার শেহা ও খাজিকে নিয়ে কানাঘুষা-ফিসফাস না করে তোমরা মনোযোগসহকারে গার্হস্থ অর্থনীতি পড়তে থাক। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর। সহায়িকা হিসেবে সাইফা সামিরার 'নারীর ক্ষমতায়নে গার্হস্থ অর্থনীতির ভূমিকা!' বইটি পড়বে। বইটি শাহবাদের খাজিশেহা সুপারমার্কেটের 'প্রথম মা' বুক স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। কাউওয়ান বাজারে 'প্রথম মারলো' পত্রিকা অফিসেও খোঁজ নিয়ে দেখতে পার। মনে রাখবে, যে করেই হোক গার্হস্থ অর্থনীতিতে A+ পেতেই হবে!
ছেলেরা তোমরা রাগ করো না। তোমাদের জন্যও শিগগির একটি প্রতিযোগিতা আসছে। শিরোনাম হবে, পুরুষত্বে কৃষি শিক্ষার ভূমিকা! আপাতত তোমরা শেহার স্কুলে চলে যাও। ওখানে আজ শেহার জন্মদিন পালিত হচ্ছে। আজ স্কুলটি ছেলেদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে, হোমোও নাকি ওখানে আসবে। হোমোর সঙ্গে যদি তোমাদের দেখা হয়ে যায় তবে পুরুষত্বে কৃষি শিক্ষার ভূমিকা সম্পর্কে অনেককিছু জানতে পারবে। আসলে 'পুরুষত্বে কৃষি শিক্ষার ভূমিকা' শিরোনামে আমি যে বইটি লিখেছি সেটা হোমোর সঙ্গে কথা বলেই লিখেছিলাম। হোমোর আগামী জন্মদিনে বইটির শরীর উন্মোচন করার কথা। কিন্তু তোমরা যদি আরও আগেই বইটির জিসমের স্বাদ পেতে চাও আমাকে লিখে জানাতে পার। আমাকে লিখার ঠিকানা শেহার কাছ থেকে জেনে নিও। শেহা আমার ভালো বান্ধবী। নার্সারিতে আমরা এক সঙ্গে পড়তাম!

টীকাভাষ্য:
১. এটি একটি অরাজনৈতিক প্রতিযোগীতা

২. এখানে বর্ণিত ঘটনা অকাল্পনিক

৩. খালেধা জিআ = বানান ঠিক আছে, ভুল হয়নি

৪. শেক হাসানা = বানান ঠিক আছে, ভুল হয়নি

৫. হোমো এরশাদ = বানান ও চরিত্র একই

৬. ভেসেকটমি = মেডিকেল টার্ম, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ছেলেদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি :#>
৭. লাইগেশন = মেডিকেল টার্ম, জন্ম নিয়ন্ত্রণে মেয়েদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি :#>
৮. ৮০+ = A+

_______
☛ জুমার দোয়া: বিশেষ ছাগল সমাচার!
☛ নারীর সামাজিকায়ন!
☛ লেডিস টয়লেটে বিব্রতকর ১৫ মিনিট!
☛ ভালোবাসা গাড়ীতে নয়/ভালোবাসা বাড়ীতে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৯