
দুরে কোথাও মিষ্টি একটা গানের সুর বাজছে।হালকা থেকে আস্তে আস্তে তীব্র হচ্ছে সুরটা।অপু ডানহাতটা হাতড়াতে লাগল বিছনার এপাশ ওপাশ। মোবাইলটা কোথায়।
ঘুমজড়ানো গলায় অপু কোনমতে বলল,"হ্যালো"
ওপাশ থেকে উত্তেজিত মেয়েলী একটা কন্ঠ ভেসে আসল, "কেমন আছ অপু?"
"কে বলছেন?"
"আমি দীপা।"
"কোন দীপা?"
"আরে আমি তোমার ক্লাসমেঠ।"
চমকে গেল অপু, "তুমি এতদিন পর! আমার নাম্বার পেলে কোথায়?"
অল্প একটু হেসে দীপা বলল, "পেয়েছি কোথাও।শুন তুমি এখন আশুগন্জই তো থাক?"
"হুম, বাসাতেই, কেন?"
"আমি দুপুরে তোমার কাছে আসছি, বাসাতেই থেক তুমি।"
অবাক কন্ঠে অপু বলল, "আমার কাছে আসবে, কেন?"
মুচকী হেসে দীপা বলল, "আসতে দাও পরে বলি।এখন বিছনা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।"
দীপা ফোন কেটে দেওয়ার পর অপু চিন্তাই পড়ে গেল দীপা এতদিন পর ব্যাপারটা কি!
দীপার বাবা ছিল সরকারি চাকুরে। তার বাবার বদলিসূত্রে দীপা অপুদের স্কুলে ভর্তি হয়।অসাধারন মেধাবী ও সুন্দরী ছিল সে।তারচেয়ে বেশী অহংকারী।অপু এমনিতেই ছিল মুখচোরা স্বভাবের। ছাত্র হিসাবেও খুব একটা সুবিধার নয়।দীপার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ অন্তত তার ছিল না।কিন্তু অপুর বাবার সাথে দীপার বাবার কিভাবে যেন পরিচয় হয়েছিল। একবার কিসের যেন একটা কার্ড দিয়ে দীপার বাবার কাছে অপুকে পাঠিয়েছিলেন তার বাবা।
দরজা খুলেছিল দীপা।অপুকে দেখে অবাক হয়ে বলল, "অপু তুমি!"
কেমর জানি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল সে।বলল, "তুমি আমার নাম জান?"
হেসে ফেলল দীপা, "কি আশ্চর্য জানব না কেন। ভিতরে আস।"
"আংকেল বাসায় আছে?"
"কে বাবা?"
"হু।"
"না, কেন তুমি কি বাবার কাছে এসেছ?"
"হু।"
"ঠিক আছে তুমি বস, বাবা এখুনি এসে পড়বে।"
ভিতরে বসতেই দীপা বলল, "আচ্ছা আমি তোমার নাম জানি কিনা তা বললে কেন?"
ঘাবরিয়ে গিয়ে অপু বলল,"আসলে ক্লাসে ত তুমি কারও সাথে কথা বল না তাই বললাম"
"কথা না বললেই নাম জানা যাবে না!তুমিওত আমার সাথে কথা বল না তাই বলে কি নাম জান না?"
"তোমার কথা আলাদা।"
"কেন আলাদা হবে কেন?"
"কারন প্রথমত তুমি মেয়ে, দ্বীতিয়ত তুমি অনেক সুন্দর!"
হেসে ফেলল দীপা বলল, "তুমি একটু বোকা আছ অপু।"
আস্তে আস্তে দুজনের মাঝে ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে উঠল।ভুলটা অপু তখনই করল।কখনই সে কোনো মেয়ের এত কাছে যেতে পারেনি।হয়ত তাই সীমারেখাটি্ও বুঝতে পারেনি।অনেকটা হঠাৎ করেই সে প্রস্তাব দিয়ে বসল।
দীপা অবাক হয়ে বলল, "অপু তোমার আসলে দোষ নাই তোমরা সব ছেলেরা এক। একটু মিশলেই অন্যরকম ভাব।তোমাকে আমি এমন ভাবিনি।"ছি:
এই এক ছি:তেই সব শেষ তা বুঝল অপু।
এসএসসি পরীক্ষার পর দীপার বাবা বদলি হয়ে চলে গিয়েছিল কুমিল্লাতে।এইচএসসির পর ভর্তি কোচিং এ ঢাকাতে এসে কাকাতালীয়ভাবে দেখা হয়ে যায় দুজনের।দুজনের মাঝে আবার সম্পর্কটা তৈরী হয়।আবার ভুল করে অপু। আবার রেগে যায় দীপা। দুজনে অনেক কথাকাটাকাটি হয়েছিল। একপর্যায়ে দীপা বলে, "দেখ অপু আমি কাউকে ভালবাসি না এও বুঝি তুমি আমাকে অনেক পছন্দ কর।যদি কখনও মনে হয় তোমাকে আমার দরকার তাহলে আমি অবশ্যই তোমার কাছে আসব।"
৫ বছর পর সেই দীপা কি জন্য আসছে ভেবে কুল পায় না অপু।ফ্রেশ হয়ে এসে সে ফোন দেয় দীপার নাম্বারে।ফোন বন্ধ দেখে তার অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়।প্রায় ভুলতে বসা দীপার ছবি আবার ভেসে উঠে তার চোখের সামনে। দীপাকে কি এখনও ভালবাসে অপু? উত্তরটা খুজে পায় না সে।আবার ভাবে দীপা হয়ত বড় কোনো আর্থিক সমস্যায় পড়ে তার কাছে আসতে পারে তখন সে কি করবে। নানা চিন্তাই অস্থির হয়ে উঠে সে।
দুপুরের দিকে বিশাল এক লাগেজ নিয়ে হাজির দীপা।
এসেই সরাসরি বলল, "কি অপু তুমি খুব টেনশনে আছ নাকি? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?"
"না তেমন কিছু নয়, আসতে কোনো সমস্যা হয়নিত তোমার?"
"মোটেও না। এখন আমার রুম দেখিয়ে দাও।বিকালে তোমার সাথে কথা আছে।"
রুম দেখিয়ে চিন্তা আরও বাড়ে অপুর। এই বিশাল লাগেজ মানে কি?
বিকাল দুজন একসাথে বসে।
"অপু তোমার এখান থেকে চরচারতলা কতদূর?"
"এই ৫ কিলো হবে, কেন?"
"আমার একটা এনজিওতে চাকুরি হয়েছে।ওখানেই আমার অফিস।যাওয়ার আগে ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যায়।এখন আমি উঠব অপু।"
অবাক হয়ে গেল অপু,"এজন্য তুমি এসেছ?"
"কেন তুমি কি ভেবছ তোমার কাছে থাকতে এসেছি" বলে হোহো করে হাসতে লাগল দীপা।
"না তবে..."
একটু হেসে দীপা বলল,"অপু তুমি এখনও আগের মতই আছ।"
"একথা বললে কেন?"কিছুটা বিষন্ন গলায় বলল অপু।
মুচকী হেসে দীপা বলল, "চলি অপু।পরে দেখা হবে।"
"আজকে থেকে গেলে হয় না।"
"না হয়না।আমার জন্য অফিসের লোক অপেক্ষা করছে। আর কাছেইতো তোমার সাথে দেখা ত হবেই।"
বারান্দায় দারিয়ে অপু দীপার চলে যাওয়া দেখতে লাগল। তার ঠোটের কোনে মুচকি হাসির রেখা। টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে নাকি তার বোকামীর জন্য এই হাসি তা অবশ্য দেখে বুঝার কোনো উপায় ছিল না।