প্রথমবারের মত দেশি মাদক পাচার চক্রের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করা হয়েছে চট্টগ্রামে। স্যাটেলাইট ফোন নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণের মত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরাকারের বিটিআরসি কিংবা অন্যকোন সংস্থার নেই বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়ানোর জন্য বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তের মাদক পাচার চক্রর সদস্যরা এই ফোন ব্যবহার করতো।
সোমবার রাতে চট্টগ্রামের বন্দরটিলা থেকে একটি স্যাটেলাইট ফোনসহ ইয়াবা পাচার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া স্যাটেলাইট ফোনটি যুক্তরাষ্ট্রের বহুল ব্যবহৃত ইরিডিয়াম ব্র্যান্ডের।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, দেশী অপরাধী চক্রের হাতে এটাই প্রথম স্যাটেলাইট ফোন আটকের ঘটনা। এর আগে ভারতের আসামের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড লিবাশেন ফ্রন্ট অব আসাম ‘উলফা’র শীর্ষ কমান্ডার অনুপ চেটিয়ার কাছ থেকে এই ধরনের স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করার হয়েছিলো।
বিশ্বেও বড় বড় জঙ্গি এবং মাদকপাচারকারী চক্র স্যাটলাইট ফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালিত করে। এই ধরনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ট্র্যাক কিংবা মনিটরিং এর কোন প্রযুক্তি বাংলাদেশের নেই বলেও র্যাব সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সোমবার রাতে যে তিন জনকে আটক করা হয়েছে তার মধ্যে সৈয়দ আলমের বাড়ী টেকনাফে আর শাহজাহন এবং মনজুরুল হকের বাড়ী বন্দরটিলা এলাকায়।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘প্রচলিত মোবাইল এবং অনান্য নেটওয়ার্ক মনিটরিং হওয়ার কারনে পাচারকারীদের গতিবিধি নজরে চলে আসতো, তাই তারা ফাঁকি দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করতো বলে মনে হচ্ছে।’
‘সম্প্রতি আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারনে মাদক পাচারকারীরা রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা অপেক্ষাকৃত দূর্গম পাহাড়ী এলাকা এবং গভীর সমুদ্রের দিকে রুট সরিয়ে নিয়েছে যেখানে সাধারণত মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই,’ জানান তিনি।
নজরুল ইসলাম আরো জানান, ‘স্যাটেলাইট ফোনের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একবারেই নতুন। আমাদের সিস্টেমে স্যাটেলাইট ফোনের যোগাযোগ ট্র্যাকিং নাও হতে পারে। কিভাবে তারা এটা ব্যবহার করছে তা আমরা অনুসন্ধান করে দেখবো। তবে কলম্বিয়া, থাইল্যান্ডসহ বড় বড় মাদক পাচারকারী চক্র এই ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা স্বাভাবিক ঘটনা।’
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা চক্রের সন্ধান পেয়ে বন্দরটিলার অভিযান চালানো হয়। চক্রটি যে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করতো সেই ব্যাপারে র্যাবের কাছে অভিযানের পূর্বে কোন তথ্য ছিলো না।
র্যাব -৭ এর এসএসপি দেলওয়ার হোসেন জানান, ‘মাদক পাচার চক্রের কাছ থেকে ইরিডিয়াম ব্রান্ডের স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যা দিয়ে বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে যেকোন প্রযুক্তির ফোনে কথা বলা যায়। সাধারণ প্রযুক্তির মোবাইল ফোনের নেটওযার্ক নেই এমনস্থানেও এই ফোন কার্যক্ষম।’
‘সাধারণ মোবাইল নেটওয়ার্ক যেভাবে ফলো করা হয় স্যাটেলাইট ফোন ট্র্যাকিং করার সেই ধরণের কোন ব্যবস্থা আমাদের কাছে নেই, এমনকি বিটিআরসি ( বাংলাদেশ টেলি রেগুলটরি কমিশন) ও এই ব্যাপারে কিছু করতে পারে না, এটা বিটিআরসির আওতার বাইরে,’ জানান এএসপি দেলওয়ার।
তিনি আরো জানান, ‘আটককৃত তিন জনের নামে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হবে, তবে,স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধারের ঘটনায় কোন ধারায় অভিযোগ আনা হবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইট সূত্রে জানা গেছে, ইরিডিয়াম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল স্যাটেলাইট ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। ৬৬টি লো- আর্থ অরবিটিং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তারা পৃথিবীব্যাপী এই সেবা দিয়ে থাকে।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যূরো, বিদেশী দূতাবাস ও বিদেশী উন্নয়ন সহযোগীরা সরকারের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করতে পারে।View this link আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন