ঘটনা -১। দু’চোখ ভরে আছে পানিতে। সামনের কাগজে কি লেখা আছে তা বোঝা যায় না। চোখ মুছতে পারি না পাছে বাবা যদি টের পায়। পড়ার টেবিলের খোলা বইটি তাই ভরে যায় চোখের জলে। জানি পরদিন পরীক্ষা। তাই সময় নষ্ট করা যাবে না, ম্যাকগাইভার দেখা যাবে না। কিন্তু এসব জানায় কি এসে যায় যদি ম্যাকগাইভারই দেখতে না পারি!
ঘটনা-২। লাকসামের এক প্রত্যন্ত বাজার। নাম খিলা বাজার। গতকালই ওখানে এসেছি । আসার রাস্তাটা মন্দ হয়নি। র্জানি বাই বোট। ইন্জিনচালিত নৌকায় করে ডাকাতিয়া নদীর নদীপথ পাড়ি দেওয়া সে অল্প বয়সের শহুরে বালকটির জন্য বিরাট এক এডভেন্চার। শীতের রাত। গ্রাম্য বাজারের বড় বড় কুপির আলোর নাচানাচিগুলো গা ছমছম এক অনুভূতির জন্ম দেয় সন্ধ্যে সাতটা বাজতে না বাজতেই। তারপরও অল্প বয়সী বালকটি বসে থাকে নদীর পাড়ের এক বেকারীর টুলে। পুরো বাজারে ওই এক জায়গাতেই যে একটা টেলিভিশন আছে। র্যাভন দেখতে হবে না!
ঘটনা-৩। আবছা আবছা চোখে ভাসে। ঘরে টেলিভিশন আসছে। ওতে কি দেখা যায় জানা নাই। ছোট একটা বাচ্চা সে খাটের উপর লাফাচ্ছে আর লাফাচ্ছে। সাদাকালো টেলিভিশন চালু হল। বাচ্চাটা যেন জমে গেল। এইটা কি! এইটারে কি বলে! ধীরে ধীরে জানা গেল এর নাম কার্টুন। ইনাকে বলে মিকি মাউস।
ঘটনা-৪। তোর কপালে শনি ঘুরতাছে। ছিল্লা কাইট্টা লবন লাগায়া দিমু। খেলার মাঠের ঝগড়ায় লবন কই থেকে আসব তা ছেলেটি মনে করার আগেই হেসে ফেলে। রানা ভাই, আবার বল না! রানা ভাই হাসে। তুই কি ইত্যাদি দেখিস। দেখুম না কেন? বল না, বল না। কোনটা? ওই যে কুত্তা মরার খবর টেলিফোনে দিল ওইটা বল না !
ঘটনা-৫। দুইটা মন খারাপ দৃশ্য। টুনি মরেছে। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়েছে। রাস্তা ঘাটে একই কথা। মেয়েটারে বাঁচায়ে রাখতে পারত। লোকটারে ফাঁসি না দিলেও হত।
ঘটনা-৬। জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখা যায় বিটিভিতে। উত্তপ্ত কয়েনটি বসানো হচ্ছে হুরমতির কপালে। চোখ বেরিয়ে আসছে হুরমতির, পেছনের আবহ সংগীতটা ভয়াবহ। আমি নাকি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছি। বাবায় নাকি কোলে নিয়ে বলে , এইটা নাকি কিছু না। অভিনয়। তাড়াতাড়ি টিভি বন্ধ হয়। একটু পরই টিভি চলে। আমি কাঁদি আর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে আবার টিভিও দেখি। রমযান। কান কাটা রমযান। নাটকের নাম সংশপ্তক। আজও বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান, সুবিধাভোগী এই কথাগুলো কল্পনা করলে সংশপ্তকের রমযানকে এক লহমায় মনে পড়ে। অভিনেতার নাম হুমায়ন ফরিদী।
ঘটনা-৭। তুই রাজাকার। টিয়া পাখি বলে , তুই রাজাকার। মিষ্টার জোনসের জোকস। তরুন সমাজ আজ কোথায় যাচ্ছে! এইগুলি নাকি হাসির গল্প। নাটকের নাম বহুব্রীহি।
ঘটনা-৮। অয়োময় নাটকের মীর্জা সাহেব চলে যাচ্ছে। পালতোলা নৌকায় দাঁড়িয়ে তিনি চলে যাচ্ছেন। সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যাচ্ছেন আনিস ভাই। তিতলী ভাইয়া। কঙ্কা ভাইয়া। জোনাকী জ্বলে। বারো রকমের মানুষ। ছ্বি। ছ্বি। ছ্বি। তুমি এত্তো খারাপ। নাটকের নাম রুপনগর। খালেদ খান যুবরাজ।
ঘটনা-৯। মুরগী পেলে এত টাকা আয় করা যায়? গাড়ি -বাড়ি করা যায়? মাছ চাষে এত লাভ? বিশ্বাস হয় না। বিশ্বাস করালো মাটি ও মানুষ।
ঘটনা-১০। দি সোর্ড অব টিপু সুলতান। সেই মিউজিক। সেউ দামামা।
ঘটনা-১০। একটু পর পর নতুন একটা মনে আসে। লিখি। এভাবে চলতে থাকলে এ পাতায় কুলাবে না। আলাদা বুক লিখতে হবে। বিটিভিরর আজ পন্ঞাশ বছর পুতি। বাসায় বিটিভির ২৫ বছর পুতির স্মারক গ্রন্থখানি আছে। ৫০ বছর পূতির্র কোন স্মারক গ্রন্থ যোগাড় করা গেলে মন্দ হত না। বাংলাদেশের বিনোদন জগৎ এ সুস্থ বিনোদন, সুস্থ অভিনেতা-অভিনেত্রী, সুস্থ তারকা তৈরী করেছে বিটিভি। সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিভির সীমাবদ্ধতা আছে। বিটিভির কাজ যেহেতু সৃষ্টিশীল তাই এখানে সৃষ্টিশীল মানুষদের পদচারনা বৃদ্ধি পাক এই শুভকামনা করি।
ধন্যবাদ বিটিভি।