হুদা সাহেব শুয়ে আছেন। তার চেহারায় সব সময় একটা জৌলুস দেখে এসেছি। আজ দেখছি না। তার গায়ের রং উজ্জ্বল হলুদ। চোখ দুটো সদা হাস্যময়। নিত্য সঙ্গী সাফারি -স্যুট। এগুলো সবই আজ অনুপস্থিত। তার শরীরের রং আজ কালো। কয়লার মত কালো। চোখ দুটোতে নির্বাক কঠোরতা। সাফারি স্যুটটাও দেখছি না। তার বদলে তিনি পড়ে আছেন একটা চাদর। সাদা চাদর। হুদা সাহেব মারা গেছেন। ব্যাপারটা এক রকম হত্যাকান্ড।
আজমল হুদা আমার বস। এখন অবশ্য বলতে হচ্ছে বস ছিলেন। একই এলাকার মানুষ আমরা। গ্রামের ছেলে বলে নিজের ইচ্ছাতেই আমাকে ঢাকা এনেছেন। এমন চেয়ারে বসিয়েছেন যে চেয়ারে বসার জন্য লাখ দশেক খরচ করতেও অনেকের চোখের পাতা কাঁপবে না। আমার টেবিলের নিচ দিয়ে দেদারসে দু-নম্বরী জিনিষ লেনদেন হয়। এতে আমার পূর্ন সম্মতি আছে। হুদা স্যারেরও ছিল। দেশের ছেলে হিসেবে আমি তাকে কখনও ঠকাইনি। টাকা পয়সার ব্যাপারে তিনি ছিলেন বড় উদার। কখনও কারও ফাইল আটকে টাকা নিয়েছেন এ কথা তার চরম শত্রুও বলতে পারবে না। তার টাকা পয়সা নেবার ব্যাপারটা ছিল অনেকটা ফ্রি স্টাইল। যে যা দিত তাতেই তিনি খুশি। কেউ না দিলেও তিনি বেজার হতেন না। এমন স্যার যদি ভাগ্যে পড়ে তবে আমরা প্রায়ই তাদের ঠকাই। দু-চারবার আমিও যে তাকে ঠকাই নাই তা নয়। কিন্তু ৯৯% ক্ষেত্রেই তিনি তার প্রাপ্য পেয়েছেন। কেবল আমি না। আমার আগে যিনি ছিলেন তিনিও স্যারকে ঠকান নাই। বসের ভয় নামক ব্যাপারটা এ জায়গার দ্বিতীয় কারন। প্রথম কারন ছিল ঘুষখোর হলেও মানুষটার মনে মায়া মমতা এবং এক অদ্ভূত নৈতিকতা ছিল। যে কোন অপমান কিংবা অপরাধে পারলে নিজেই বিচা করতেন অথবা না পারলে চুপ করে থাকতেন। কারও কাছে সালিশের জন্য পাঠাতেন না। সরকারের কাজটুকু যেন ঠিক মত হয় সে ব্যাপারে ভাল করে নজর রেখেও যে ঘুষ খাওয়া যায় তা তিনিই আমাদের শিখিয়েছিলেন। আজ অবশ্য তিনি ঘুষখোর ছিলেন এটা বলার সময় না। আজ শোকের সময়। একজন ভাল মানুষ হারাবার শোক।
পুলিশ এসেছিল লাশের ময়না তদন্ত করতে। কিন্তু তার পরিবার রাজী না। আগুনে পুড়ে যাওয়া একটা মানুষকে আবার কাঁটা ছেঁড়া কেন? মাথা আর বুকের কাছের একটুখানি জায়গা বাদ দিলে বাকী সবই তো পুড়ে কালো হয়ে আছে। এখন এমন শরীরে বড় বড় সুইয়ের সেলাইয়ের চিহ্ন কেমনে সহ্য করবে তার পরিবার? টাকা এমন বস্তু যা দেখলে কাঠের পুতুলও নাকি হাঁ করে। হুদা সাহেবের টাকার অভাব নাই। পুুলিশ এমন এক প্রকার যন্ত্র যাকে সব জায়গায় খাওয়াতে হয়। না হলে তার খিদে মেটে না। এ অবস্থায় পরিবারের কাউকে এসব ব্যাপারে জড়ানো ঠিক না। তাই লেনদেনটা আমিই করলাম। তবুও লাশটাকে আমরা নিয়ে যেতে পারছি না। কারন ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের হুকুম লাগবে।
পরদিন ভোর নাগাদ ওটা এসে যায়। এর ভেতর হুদা সাহেবের বড় ছেলেটাকে সাথে নিয়ে থানায় গিয়েছি। একটা হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আসামীর সংখ্যা এবং পরিচয় অজ্ঞাতনামা। তবে ওদের শীঘ্র শনাক্ত করা যাবে। টিভি রিপোটিং এ স্পষ্ট ওদের চেহারা আছে। হুদা স্যার গাড়ি থেকে বের হতে পারেন নাই। তার আগেই ওরা গাড়িতে তেল ঢেলেছে। আগুন জ্বালিয়েছে। কত নম্বন ধারায় মামলাটা দায়ের হয়েছে তা অবশ্য আমার মনে নাই। স্যারের বড় ছেলেটা বই ঘেটে নিজেই ধারাটা দিয়েছে। ছেলেটা এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রী নিয়েছে। একটু মোটাসোটা আর ভদ্র গোছের ছেলে। ভদ্রঘরের ছেলে ভদ্রই হয়। এই যে রাত ভর ওর সাথে আমার দৌড়াদৌড়ি হয়েছে এবং আমার যে খাওয়া হয় নাই তা ছেলেটা খেয়াল কখন খেয়াল করেছে জানি না। থানায় বসে পুলিশদের ওখানে খাবারের ব্যবস্থা দেখে আমার জন্য কিছু ব্যবস্থা করার অনুরোধ যখন করল তখন চোখের পানিটা ধরে রাখতে পারলাম না। বাবার উপযুক্ত সন্তান। আপনারা যারা ওকে টিভিতে ইন্টারভিউ দিতে দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন কি সুন্দর শব্দচয়নে ও আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, রাষ্ট্রের দায়িত্ব আর তার বাবার মত ভাগ্য যেন কাউকে বরন করতে না হয় তার শুভ কামনা করেছে। বেঁচে থাকলে এই ছেলে একদিন বাপের মুখ রাখবে।
গরু কেটে চল্লিশার ব্যবস্থা হয়। নতুন বস, আরও বড় কর্তা, পুলিশ কেউ বাদ যায় নাই সে চল্লিশা থেকে। পরিবারটা বড় অদ্ভূত। বাইরের কোন মানুষের সামনে নিজের কান্না, হাহাকার প্রকাশ করে না। উল্টো সবার মেহমানদারী এমনভাবে করেছে মনে হয় বাবার মৃত্যু না, কোন উৎসব হচ্ছে এ বাড়িতে। গ্রামের সম্পর্ক থাকায় জানি গত ক’টা দিন এরা কেউ খুব একটা অন্ন স্পর্শ করে নাই। বেঁচে থাকার জন্য হুদার স্যারের বেগমকে এর ভেতরই দু’বার স্যালাইন দেয়া হয়েছে। থানা পুলিশের পেছন পেছন নিরন্তন ছুটেছে সবাই। অন্তত অপরাধীর চেহারা তারা দেখতে চায়। অপরাধীর পরিবারকে দেখতে চায়। ওদের কাছে গিয়ে বলতে চায় কি অপরাধ করেছিলাম আমরা। হুদা স্যার বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই স্বভাব সুলভ হো হো করে বলতেন, আরে মিয়া এই দেশে কি বিচার পাওন যায়? ওর জন্য লাগে টাকা বা ক্ষমতা। পারলে নিজে শোধ নাও না পারলে চুপ করে সয়ে যাও। টাকা আর সুবিধাকে যদি কায়দা করে চোখের সামনে ঝুলাতে পার দেখবা মরা মানুষকেও এ দেশ বাঁচিয়ে তুলবে।
টাকা তাদের আছে। কিন্তু ওই যে নিকট ভবিষ্যৎ এ সুবিধা দেবার ক্ষমতা ওটা তাদের নাই। খুব বেশী ক্ষমতার দরকার নাই। কেবল যে জায়গায় পোস্টিং চায় সেখানে থাকার নিশ্চয়তা দেবার ক্ষমতা যদি তাদের থাকত তাহলেও অজ্ঞাতনামা অপরাধীরা সবাই এই কয়েকদিনেই চৌদ্দ শিকের ভেতর থাকত। কিন্তু যা নেই তা থাকলে কি হত তা জেনে কি হবে। বরং এটাই জানাই যে অজ্ঞাতনামা অপরাধীরা সবাই বহাল তবিয়তে বাইরে আছে এবং শোনা যায় তারা নাকি আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের পক্ষে কাজ করে চলেছেন।
সময় গড়িয়ে যায়। পুড়ে যাওয়া কালো অংশের মতই হুদা স্যারের শরীরের বাকী অংশটাও এক সময় মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির জৈব পদার্থের পরিমান বৃদ্ধি করে। স্যার মারা যাবার পর ছ’মাসও সেই চেয়ারটাতে টিকতে পারি নাই। কম গূরুত্বপূর্ন একটা চেয়ারে সরিয়ে দেবার আগে নিজেই সরে যাই। নতুন বসদের বড্ড চাহিদা। আমার মত গূরুত্বহীন চেয়ারগুলোকেও অনেক অপকর্ম তাদের জন্য করতে হয়। টাকার ভাগের কথা চিন্তা করি না। ঢাকা শহরে পোস্টিং ধরে রাখাই বড় চিন্তা। কে যে চেয়ারের কোন পা ধরে বসে আছে তা তো জানি না। যে কারও এক টানে চেয়ার উল্টে দিলে একেবারে ঢাকার বাইরে পত্রপাঠ বিদায় নিতে হবে। মাঝে মাঝে অসহ্য লাগে। অপরাধীর নিজেদেরও তো কিছু মানদন্ড আছে। এক প্রফেসর বন্ধুকে মাঝে মাঝে বলি, তোরা একটা জরিপ কর। কেবল ঢাকা শহরে আমার মত পোস্টিং ধরে রাখার জন্য কতজন মানুষ বিনে পয়সায় দেদারসে দুনীর্তি করে চলেছে তার জরিপ।
ও কেবল মুচকি হেসে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে। কি যে আয়নায় দেখে তা ওই জানে। পরে আছি কেবল মেয়ে দুটোর জন্য। ওদের পড়ালেখা। ভাল স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সবই তো ঢাকায়।
হুদা স্যারকে আমি ভুলতে পারি না। প্রায়ই তার কথা মনে পড়ে। যিনি আমার ওত উপকার করেছেন তার কথা মনে হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। নিজ থেকে অবশ্য মনে আসে না। যখনই রাস্তায় আগুনে বা ইটের আঘাতে কিংবা পুলিশের গুলিতে পথচারী বা অফিস ফেরত মানুষের মৃত্যুর খবরগুলো টেলিভিশনের নিচের স্ক্রলে ভেসে উঠে, তখনই আমার তার কথা মনে পড়ে। আমার হুদা স্যার তো ওদিন কাজ সেরেই ফিরছিলেন। সেদিন অফিসের বন্ধ ঘরে তিনি আর আমরা যা করেছি তাতে দেশের কোন লাভ হয়েছিল কিনা তা আপনাদের জানাতে পারছি না বলে দুঃখিত। রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয়। কিন্তু জনগনের অধিকারের জন্য সেই তাকেও তো মরতেই হল। জনগনের সামনে আসলেই বড় কিছু নাই। সব জনগন ক্ষমতা প্রয়োগ করলে অসুবিধা হয় বলে প্রতিনিধিরাই তাদের পক্ষে আশেপাশে আমাদের মত ছারপোকাদের পিষে মারেন।
টিভিতে যখন পরিবারগুলোর সাক্ষাৎকার দেখায়, আহজারী দেখায় তখন রিমোট তুলে চ্যানেলটা পাল্টে ফেলি। ভাল লাগে না এসব দেখতে। টিভির ক্যামেরা দেখলে ওদের কান্নাটা যেন বেড়ে যায়। সবকিছুতেই আজ বাড়াবাড়ি। প্রথম প্রথম যখন রাস্তায় মানুষ মরত তখন ছ’ বছরে - ন’বছরে একটা মরত। সেই উত্তেজনা যেভাবে মনে দাগ কাটত তার সাথে আজ যে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যায় শিশু, কিশোর থেকে সব বয়সের মানুষের লাশ ভেসে যাবার খবরগুলো পাই তা কি একই গভীরতায় দাগ কাটে? কাটে না। কারন এগুলো আজ স্বাভাবিক নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। একটু দেখে-শুনে পথ চললে আর গন্ডগোলের দিন ঘরের বাইরে না গেলেই তো হয়। তারপরও মাঝে মাঝে চ্যানেলগুলো পাল্টাবার ভেতরই এসব খবর চোখে পড়ে। হুদা স্যারের বড় ছেলেটাকে এ সব ঘটনার সংবাদে অনেকদিন ধরেই দেখা যায়। ছেলেটা শুনেছি খুব খাটছে এগুলোর বিচারের জন্য। সংগঠন বানিয়েছে। নিজের বাবার বিচারের কোন কূল করতে পারল না সে দেয় অন্যকে বিচারের আশ্বাস!
দিন কয়েক পর মেয়েটা আমার জানালা খোলা রেখে হোম ওয়ার্ক করছিল। সেদিন ও আমাদের যুগের ট্রান্সলেশন কষছিল। তার একটা ছিল ডাক্তার আসার পূর্বে রোগী মারা গেল। আমার মেয়েটাও ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই মারা গেল। রাস্তায় গন্ডগোলের ভেতর ওরা বাসার ভেতর বোমাটা ছুঁড়ে মারে। মূহুর্তেই আগুন। নিজ ঘরে, নিজ চেয়ারে আর নিজের প্রিয় ল্যাপটপের পাশে মেয়েটা পুড়ে কয়লা হল। বাবা হিসেবে আমার অবস্থা কি তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না। সে চেষ্টাও করব না। কেবল ভাবি, আমার মেয়েটা যখন চিৎকার করে মা-বাবাকে ডাকছিল তখন কি ওর মা-বাবা যে কতটা শক্তিহীন তা বুঝে গিয়েছিল? ও কি খোদাকে ডেকেছিল? খোদা যখন বিনা অপরাধে আগুনের পুড়ে যাবার হাত থেকে ওকে বাঁচাবার জন্য কিছু করে নাই তখন কি ও খোদার অস্তিত্বতে বিশ্বাস রেখে মরতে পেরেছিল? আচ্ছা, এ কি আমার পাপের ফল? কিন্তু খোদা তো একের অপরাধে অন্যকে সাজা দেয় না। তাহলে?
জানাজায় প্রচুর মানুষ হল। বেঁচে থাকতে এতগুলো ক্যামেরার সামনে আমার মেয়েকে কোনদিন আসতে হত কিনা তার উত্তর একমাত্র উপরওয়ালাই দিতে পারবেন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কাঁদলাম। গলা ছেড়ে কাঁদলাম। আমার মামনিকে শেষবারের মত দেখতে ওরা আমাকে দেখতে দিল না। আমাদের কাউকেই দিল না। আমরা কেউ নাকি ওর চেহারা সহ্য করতে পারব না। অথচ ও চেহারাটায় কত আদর করেছি। কত টিপ ওর কপালে বসিয়ে দিয়েছি। হায়রে আগুন!
উপকার করলে নাকি প্রতিদান পাওয়া যায়। হুদা স্যারের ছেলেটার জন্য একদিন আমি যা করেছি আজ তাই আমার জন্য করল ও। পোস্ট মর্টেম করে ডোমের কুড়ালের আঘাতে আমার মেয়ের মাথার খুলিটাকে ও দু’ভাগ হতে দিল না। অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামীদের নামে মামলার সংখ্যা আরেকটা বাড়ল। অথচ সবাই জানি কারা ওই অজ্ঞাত পরিচয়ধারীরা। কিন্তু এত দুঃখের ভেতরও জানতাম ওরা অজ্ঞাতই থাকবে। ওদের নাম ধরে মামলা করার মত সাহস আমার নাই। আমাদের নাই। একটা মেয়ে না হয় গেছে কিন্তু ওর মা আর বোনটা তো আছে। ওদের তো বাঁচাতে হবে। আর বিচার? বিচারের হাল যে কি তা তো হুদা স্যারের ছেলেটাকে দেখে আমার বুঝতে বাকি নাই। ছেলেটাকে আজও পেয়েছি ভদ্র। অমায়িক। এত বছর পুলিশ, আদালতে ঠোকর খাবার পরও তার ব্যবহারে রুক্ষতা আসে নাই। বিচারের উপর তার প্রবল আস্থা। যাবার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, বিচার পাবেন। কেবল একটু ধৈর্য্য ধরেন।
বিচার , সালিশ নিয়ে আমার মাথা-ব্যাথা করার সময় ওটা ছিল না। আর ধৈর্য্য? ওটা ধরে কি হবে ? মেয়েকে কি ফেরৎ পাব? হুদা স্যারের মত, আমার মেয়ের মত মানুষগুলোর কি অযথা মৃত্যু বন্ধ হবে?
মেয়ের চল্লিশার পর আমার বদলীর হুকুম হল। নিজেই করেছি। গন্তব্য পাবর্ত্য জেলা বান্দরবান। এ শহরে আর না। ক্ষমতাহীনদের জন্য এ শহর না। বিদেয় নেবার জন্য আজ অনেকেই এল। হুদা স্যারের বড় ছেলেটাও এল। সবাইকে বিদেয় করে, সবার সান্ত¦না বুকে নিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম।
কে জানি গাড়ির ভেতর দুটো পত্রিকা রেখে গেছে। পত্রিকা দুটোর প্রথম পাতায় খবর আবার সেই আগুনের। লাশের। ছুঁড়ে ফেলে দিতে গিয়েও দিলাম না। পত্রিকার একটা বেশ পুরানো। ওর যে ছবিটা দেখছি ওটার আগুনটা আমার বাসার। আমার মেয়ে যখন আগুনে পুড়েছে তখন কোন এক নাম না জানা সাংবাদিক নিচ থেকে ছবি তুলে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। উল্লাস করা অজ্ঞাতনামার দাঁত বের করা মুখ ওতে আছে। ছবির কোনার ছোট ছবিটাতে আমি কাঁদছি। পাশের পত্রিকাটা আজকের। প্রথম পাতার ছবিটাতে পরিচিতি এক মুখ। আমার বাসার আগুনের অজ্ঞাতনামার মুখ। এ ছবিতে ও কাঁদছে। গতকাল আমিনবাজারের কাছে গলাকাটা যে কিশোরীর লাশটা ভেসে এসেছে ওটা তার মেয়ে।
চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখি হুদা স্যারের বড় ছেলেটা রাস্তার ওপাশ থেকে অপলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতে হাতটা কপালে ঠেকিয়ে উল্টো ঘুরে হাঁটতে শুরু করে। এ ছেলেটাই ওদিন আমাকে বলেছিল বিচার পাবেন।
আমি বিচার পেয়েছি। আমার খুশী হবার কথা। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে হুদা সাহেবের ভদ্র ছেলেটার পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে আমার শরীরটায় কেন জানি কাঁপুনি উঠতে থাকে।