মানুষের জীবনটা আসলে কি? এই যে আছি, শ্বাস নিচ্ছি, আস্বাদন করছি চারপাশের জগৎ। হঠাৎ একদিন সবকিছু থেকে নাই হয়ে যাব। তখনও কিন্তু সবই থাকবে। এই আলো, এই বাতাস সবকিছু। জগৎটা কি মিথ্যা কিংবা তারও চেয়ে বেশি মিথ্যা কি মানুষের জীবন? রবীন্দ্রনাথ জীবনের একেবারে শেষে 'শেষ লেখা ' কাব্যে লিখেছিলেন তাঁর সারা জীবনের সঞ্চিত উপলব্দি :
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ-
অর্থাৎ কবি গুরুর কাছে জগৎ মিথ্যা বা স্বপ্নময় নয় । আর সে জগৎ সত্য হয়ে উঠে মানুষের চেতনার স্পর্শে।
আমাদের প্রিয় ব্লগার, বাংলা ব্লগ জগতের সক্রিয় তাপসের মত ছিলেন যিনি, সেই ইমন জুবায়ের ভাইয়ের মৃত্যুতে বারবার আমার মধ্যে জীবন সম্পর্কে একটা জিজ্ঞাসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
ইমন জুবায়েরের ব্লগে আগমন ঘটে সম্ভবত সামহোয়্যার ইন ব্লগের হাত ধরে। প্রথম দিকে যতদূর মনে পড়ে, উনি প্রচুর লিখতেন। একটার পর একটা পোস্ট লিখেই যেতেন অসধারন নিষ্ঠার সঙ্গে। মাঝে মাঝে অবাক হতাম এই ভেবে যে, লোকটা এত লেখে কি ভাবে? তখন কি তিনি জানতেন কয়েক বছর পরেই তিনি চলে যাবেন না ফেরার দেশে? তিনি কি তখন বুঝতে পেরেছিলেন সময় আছে মাত্র কয়েক বছর? জানি না। আর জানবোও না কোন দিন।
মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয়ে ভাবি, যে লোকটা ২ জানুয়ারি ব্লগে অতিপ্রাকৃত গল্প লিখলেন। যা এখনো জীবন্ত হয়ে আছে তাঁর ব্লগ পাতায়। তিনি চলে গেলেন ৪ তারিখেই। একেবারে চিরতরে। না ফেরার দেশে। কিন্তু গল্পটা রয়ে গেছে। যেমনভাবে রয়ে গেছে ইমন ভাইয়ের লেখা অন্য লেখাগুলোও।
ব্লগ ছাড়াও তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগটা ছিলো ফেসবুকের মাধ্যমেও। বলাবাহুল্য দুটোই ভার্চুয়াল মাধ্যম। জীবনে কখনো প্রত্যক্ষভাবে দেখিনি তাঁকে। কিন্তু কি আশ্চর্য ! তাঁর মৃত্যু আমাকে ব্যথিত করেছে আপন স্বজন হারানোর বেদনার মত করে। ফেসবুকে তিনি প্রায় দিনই ভোরের সূর্যের ছবি দিতেন। নিচে লেখা থাকত, ৫: ২০ বা ৬: ৩০ এই জাতীয় সময়। ইমন ভাইয়ের মৃত্যুর পর আরো দুবার ভোরের সূর্য উঠেছে। অথচ তিনি নেই সেই সূর্যকে দেখার জন্য বা ছবি তোলার জন্য। তাঁর ব্লগ পাতা পড়ে আছে অথচ তাতে জ্ঞান গর্ভ পোস্ট দিয়ে তাতে প্রাণ দেয়ার জন্য কেউ নেই। তাঁর ফেসবুক মনে হয়, এখনো জীবন্ত। অথচ তিনি নেই সেখানে স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য। কি নির্মম সত্য! এ কারণেই হয়ত বলা হয়, মানুষের মৃত্যুর মত নিষ্ঠুর সত্য পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
পরিশেষে ইমন জুবায়ের ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলি, আপনি আমাদের মাঝে ছিলেন এবং এখনো আছেন। হয়ত বা অবয়বগতভাবে নন কিন্তু চেতনাগতভাবে অবশ্যই। এবং যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুন আমাদের অনুভূতিতে আর চেতনায়।