এই বিষয় নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একবার অন্ততঃ কোনো একটা বস্তি ঘুরে আসুন, একজন শ্রমিকের সারাদিনের কাজ দেখুন পানাহার দেখুন! আপনি যদি হৃদয়সম্পন্ন কোনো মানুষ হোন তাহলে আপনার ইচ্ছে করবে মুহুর্তেই সমস্ত গার্মেন্টস পুড়িয়ে শেষ করে দিতে! একটা ঘরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কি করে দুইবেলা আধাপেটা খেয়ে না খেয়ে দিনানিপাত করছে! কি তাদের বাচ্চাদের জীবনের মান! কোথায় তাদের পোশাক, কোথায় শিক্ষা ! কোথায় চিকিৎসা!! একবার দেখে আসুন আপনি কাঁদবেন!
ছবিঃ এমন পরিবেশে দিনানিপাত করেই ওরা আমাদের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে!
গার্মেন্টস শ্রমিক দের সমস্যা নতুন কোনো সমস্যা নয়, সরকার বদল হয় পুজিপতি দের স্বার্থ হয় হস্তান্তর গার্মেন্টস শ্রমিক দের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না!
মানবাধিকার কর্মীরা নিজেদের স্বার্থ দেখেন, এন জি ও গুলো চায় সমস্যা টিকে থাকুক, তা না হলে তাদেরও ব্যবসা বন্ধ, বিদেশী ফান্ড বন্ধ! অনেক বুদ্ধিজীবিরা লিখছেন, বস্তুনিষ্ঠ কোনো প্রস্তাবনা নেই, থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই!
এখানে কয়েকটা ইস্যু আছে-
গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলছিলাম গার্মেন্টস সেক্টরে এ কাজ করে এমন এক প্রকৌশলী বন্ধুর সাথে- তার সাথে কিছু ব্যপারে আমিও একমত- ১৭০০ টাকা থেকে হঠাৎ করে ৫০০০টাকা করা হলে কিছু সমস্যা থেকে যায়, যেমনঃ
১।দীর্ঘদিন ধরে যারা কাজ করছেন সেই অভিজ্ঞ শ্রমিকরা কেন মানবেন যে একজন অনভিজ্ঞ শ্রমিক তাঁর সমান/বেশি বেতন পাবে!
২।বাজার ব্যবস্থার উপর হঠাৎ করে বড় একটা চাপ পড়বে এবং এটা বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হতে হয় না যে, এতদিন ধরে যাদের হাতে মাসে ১৭০০টাকার বেশি উঠতো না এমন লাখ লাখ লোকের হাতে যদি তিনগুন টাকা চলে আসে তাহলে বাজার অস্থিতিশীল হতে বাধ্য।
৩।এরপর আসে মালিক দের স্বার্থের প্রশ্নে- এই হঠাৎ বেতন বৃদ্ধি বড় কোম্পানীগুলো হয়তো সহজে সামলাতে পারবে কিন্তু বেশিরভাগ বাজার ধরে রাখা ছোট ছোট কোম্পানীগুলো যারা কোনো রকমে টিকে আছে তারা বাধ্য হবে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে, এবং এর পর কি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
কিন্তু বর্তমান অবস্থা ধরে রাখা আর আমাদের অর্থনৈতিক মূল চালিকা শক্তি পোশাক শিল্প খাত কে ধংশের মুখে ঠেলে দেয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই! তাহলে কি করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমিক বেশ কিছু বিষয় ভাবা যেতে পারে।
ছবিঃওরা মুখ তুলে চেয়ে আছে আপনাদের সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে!
প্রস্তাবনাঃ
প্রথমতঃ শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বেতন বৃদ্ধির বিকল্প নেই সুতরাং বেতন বাড়াতেই হবে।
দ্বিতীয়তঃ বর্তমান বাজার মূল্য নিচারে ৫০০০ টাকা খুব বেশি টাকা নয় সুতরাং নূন্যতম ৫০০০ থেকে ৭০০০টাকা বেতন নির্ধারনের দিকেই আমাদের যেতে হবে, তবে-
তৃতীয়তঃ ছোট ছোট গার্মেন্টসগুলো এবং বাজার ব্যবস্থার স্বার্থে এই বেতনবৃদ্ধিকে করতে হবে পর্যায়ক্রমিক, যেমনঃ সরকারী স্পষ্ট নির্দেশনা/নীতিমালা দিয়ে একটা সময় বেধে দেয়া যেতে পারে ২/৩ বছর, প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর বেতন বৃদ্ধি করে ৩বছরের মাথায় নূন্যতম ৫০০০ বা ৭০০০টাকা বেতনেই পৌছাতে হবে।
চতুর্থতঃ শ্রমিকের শ্রম দিয়েই যেহেতু মালিক লাভ করছেন, সেহেতু মালিক কে প্রতি বছর বোনাস আকারে একটা নির্দিষ্ট পরিমান লভ্যাংশ শ্রমিকের হাতে তুলে দিতে হবে।প্রয়োজনে এটা অবসর কালীন ভাতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
পঞ্চমতঃ বেতনের পাশাপাশি মালিক পক্ষকে শ্রমিকের সুস্থ আবাসন এবং কর্মক্ষেত্রের দিকেও নজর দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২০