প্রতিকী ছবি
সম্প্রতি ইউটিউবার ইমরান বশির তাঁর এক ভিডিওতে নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ও উম্মে হানী (رضي الله عنها)-এর সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন নবী (ﷺ) ফতহে মক্কার দিনে উম্মে হানীর (رضي الله عنها) ঘরে অবস্থান করলেন, সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করলেন, এবং পরবর্তীতে গোসল করে আট রাকাত নামাজ আদায় করলেন। এই সন্দেহের মূলে রয়েছে অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞান এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ভুল ব্যাখ্যা।
ফতহে মক্কা ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বিজয়ের দিনে নবী মুহাম্মদ (ﷺ) প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। তিনি মক্কায় প্রবেশ করে বিভিন্ন গোত্রের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছিলেন, ইসলামের শিক্ষা প্রচার করছিলেন এবং মক্কার মানুষের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি উম্মে হানীর (رضي الله عنها) বাড়িতে যান, যিনি ছিলেন তাঁর চাচাতো বোন এবং শৈশবের প্রিয় আত্মীয়।
নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর গোসল করা কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। ইসলামী শিক্ষা অনুসারে, শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা রক্ষার জন্য বারবার গোসল করা একটি সাধারণ ও সুন্নত বিষয়। ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা যায়, নবী (ﷺ) ক্লান্তি দূর করতে বা ইবাদতের আগে পবিত্রতা অর্জনের জন্য প্রায়শই গোসল করতেন। ফতহে মক্কার দিনও তিনি যুদ্ধ পরবর্তী ধূলাবালি ও পরিশ্রমের কারণে গোসল করেন, যা স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক।
ইমরান বশির প্রশ্ন তুলেছেন, কেন উম্মে হানীর স্বামী সেই মুহূর্তে অনুপস্থিত ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, উম্মে হানী (رضي الله عنها) তখন বিধবা ছিলেন এবং তাঁর স্বামী বহু বছর আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন। অর্থাৎ, স্বামীর অনুপস্থিতি ছিল একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা, যা সন্দেহ উত্থাপনের কোনো কারণ হতে পারে না। নবী (ﷺ)-এর উম্মে হানীর (رضي الله عنها) ঘরে যাওয়াটা ছিল পারিবারিক ঘনিষ্ঠতারই বহিঃপ্রকাশ, যেখানে তিনি একজন চাচাতো বোনের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন।
সহিহ হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, নবী (ﷺ) উম্মে হানীর (رضي الله عنها) ঘরে যান, সেখানে বিশ্রাম নেন, এরপর গোসল করেন এবং চাশতের আট রাকাত নামাজ আদায় করেন (সহিহ বুখারি, ৩৫৭; সহিহ মুসলিম, ৩৩৬)। এখানে কোথাও শারীরিক সম্পর্কের কোনো উল্লেখ নেই। এই ব্যাখ্যাটি কেবলমাত্র অপব্যাখ্যার ফসল, যা ইসলামের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করার একটি প্রচেষ্টা।
ইসলামের ইতিহাস ও নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর জীবনচরিত একটি স্বচ্ছ আয়নার মতো। সেখানে অস্পষ্টতার স্থান নেই। যাঁরা ইতিহাসকে বিকৃত করে সন্দেহ ছড়ানোর চেষ্টা করেন, তাঁদের জন্য উচিত নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জ্ঞান আহরণ করা। ইমরান বশিরের মতো ইউটিউবাররা প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন না করে বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যা শুধুমাত্র অজ্ঞতাকে প্রসারিত করে।
ইতিহাসকে বিকৃত করা সহজ, কিন্তু সত্য কখনো মুছে ফেলা যায় না। নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর চরিত্র ছিল সর্বোচ্চ নৈতিকতার প্রতিচ্ছবি, যা মুসলিম ও অমুসলিম ঐতিহাসিকগণও স্বীকার করেছেন। তাই, সন্দেহ নয়, বরং জ্ঞান ও গবেষণার আলোতে সত্যকে উপলব্ধি করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৩১