somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ : নানা মুনীর নানা মত !

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডোনাল্ড ট্রাম্পের রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘটনায় দেশজুড়ে উচ্চশিক্ষিত বিবেকবান শ্রেনীর মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আমরা যারা আম-জনতা তারা এখনো বুঝতে পারছি না ডোনাল্ড ট্রাম্প কি করছেন ! কেন করছেন ! এদিকে গর্তে লুকিয়ে থাকা পলাতক স্বৈরাচার ইহাকে ইন্টেরিম সরকারের উপর চাপ হিসাবে দেখছে। তাদের যুক্তি আপার আমলে শুল্ক ১৫ শতাংশ থাকলেও এখন তা ৩৭ শতাংশ হয়েছে। চীন সফরের কারণে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছে। অন্যদিকে যারা আপা বিরোধী শক্তি তাদের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর বিগত আম্লিক সরকার ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছিলো। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর বেশি মাত্রায় শুল্ক আরোপ করে রেখেছিলো তাদের পণ্য রপ্তানির উপর তার অর্ধেক শুল্ক আরোপ করেছে। এখন ইন্টেরিম সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্রের উপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয় তবে রপ্তানির উপর শুল্ক কমে যাবে। অন্যদিকে আরেক গ্রুপ মনে করছেন, এখনই সময় আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে বেশি বেশি আমদানি করলে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানির উপর শুল্ক কমিয়ে দিবে। এছাড়া ইন্টেরিম সরকার যুক্তরাষ্ট্র কে স্টারলিংক ও এলএনজি চুক্তি করে শুল্ক কিছুটা প্রত্যাহার করতে ম্যানেজ করতে পারে। এই কথিত শুল্কের হিসাব আসলে কিভাবে করেছে ট্রাম্প প্রশাসন ?

উত্তর হলো- স্রেফ কোন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিকে যুক্তরাষ্ট্রে ঐ দেশের মোট রপ্তানি দিয়ে ভাগ করে পারেসেন্টেজ করেছে।যেমন: ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি ১৩৬.৬ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ১৩.১ বিলিয়ন , সুতরাং বাণিজ্য ঘাটতি ১৩৬৬-১৩.১= ১২৩.৫ বিলিয়ন ডলার। এখন কথিত শুল্ক হিসাব করতে যুক্তরাষ্ট্র যেটা করেছে তা হলো ভিয়েতনামের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি(১২৩.৫ বিলিয়ন ডলার) কে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি(১৩৬.৬ বিলিয়ন ডলার) দিয়ে ভাগ করে ভাগফলকে শতাংশ করেছে। (১২৩.৫/১৩৬.৬)×১০০%= ৯০.৪১% বা ৯০%

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ৮.৪ বিলিয়ন ডলার, আমদানি ২.২ বিলিয়ন ডলার সুতরাং বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৮.৪-২.২= ৬.২ বিলিয়ন ডলার। (৬.২/৮.৪)×১০০% = ৭৩.৮১ শতাংশ বা ৭৪ শতাংশ। এভাবেই বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির অনুপাতকে শুল্ক হিসেবে চালিয়ে দিয়ে ট্রাম্প সরকার কথিত “Tariffs Charged to the U.S.A.” হিসেব করেছে। এটা মূলত রাজনৈতিক অপপ্রচার এবং আর্থিক অপব্যাখ্যার একটা চমৎকার উদাহরণ মনে হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে বাণিজ্য ঘাটতির হারকে শুল্ক হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে, যাতে জনসাধারণ বিভ্রান্ত হয় এবং তারা মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে অন্যায্য শুল্কের শিকার হচ্ছে।

আসল শুল্কের হিসাব একেবারেই ভিন্ন। যদি চীন বা ভিয়েতনাম সত্যিই ৬৭% বা ৯০% হারে শুল্ক নিত, তাহলে মার্কিন কোম্পানিগুলো বহু আগেই হৈচৈ করত, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) তে অভিযোগ দিত, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি একেবারেই বদলে যেত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, কারণ এই তথাকথিত "Tariffs Charged to the U.S.A" আসলে শুল্ক নয়, বরং একটি বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক চাল।

ট্রাম্প সবসময় বাণিজ্য ঘাটতিকে একটা খারাপ জিনিস হিসেবে দেখাতে চান, যদিও অর্থনীতিবিদরা বলে যে, বাণিজ্য ঘাটতি মানেই অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয়। অনেক সময় একটা দেশ যদি বেশি আমদানি করে, সেটার মানে হতে পারে যে সেই দেশের ক্রয়ক্ষমতা বেশি এবং ভোক্তারা বৈচিত্র্যময় পণ্য কিনতে পারছে। কিন্তু ট্রাম্প এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, "আমরা হারছি, ওরা জিতছে"—যা পুরোপুরি ভুল।

বাংলাদেশ আসলে কতটা সাফার করবে ? বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান অংশ হচ্ছে পোশাক যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসাবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তেমন উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় না চীন বা ভিয়েতনামের মতো। ব্রান্ডগুলো কম দামে পণ্য ক্রয় করে বেশিদামে বিক্রি করে। বাংলাদেশের রপ্তানীকৃত পোশাকের মূল্যের রেঞ্জ ২০-৬০ ডলারের মধ্যে। আমদানি শুল্ক প্রয়োগ হয় বন্দরে পণ্যের ক্রয়মূল্যের উপরে। আগে শুল্ক দিতে হতো ৭৫ সেন্ট কিন্তু আগামী ৯ই এপ্রিল থেকে সেটা বেড়ে হবে ২ ডলারের মতো। পোশাকের দাম বাড়িয়ে সমস্যা সমাধান করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর উপরও যখন আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে তাই পোশাকের অর্ডার অন্যদেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কেবল ভারত(২৬%) হওয়ায় কিছুটা থ্রেট আছে। খুব বেশি বিকল্প ইউএসের আছে বলে মনে করেন না অনেকে। পোশাক রপ্তানীকারকদের শঙ্কা তবু কাটছে না।

আমরা যারা এসব কম বুঝি তাদের উচিত চুপচাপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাওয়া। সরকার ও বিশেষজ্ঞদের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি গভীর ভাবে লক্ষ্য করতে পারি আমরা।




সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলেম কি? এ বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:১০




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প- ৯৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১



নাম তার তারা বিবি।
বয়স ৭৭ বছর। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। সামনের পাটির দাঁত গুলো নেই। খেতে তার বেগ পেতে হয়। আমি তাকে খালা বলে ডাকি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়ি বুনো ফল-রক্তগোটা ভক্ষন

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫

পাহাড়ি বুনো ফল রক্তগোটা এর রয়েছে বিভিন্ন নাম-রক্তগোটা, রক্ত ফল, রক্তআঙ্গুরী, রক্তফোটা, রক্তজবা পাহাড়িরা আবার বিভিন্ন নামে ডাকে। এর ইংরেজী নাম ব্লাড ফ্রুট।











প্রতি বছর... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×