somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই দেশ থেকে রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করা যায় কিভাবে?

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয়, যা দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। এই সমস্যা সমাধানে দেশের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, শিক্ষাব্যবস্থা, এবং প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন। চলুন, এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

১. রাজনৈতিক অন্ধকারের কারণসমূহ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অন্ধকারের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

দুর্নীতি: রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা ব্যাপক দুর্নীতি, যা সরকারের কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করে এবং জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করে।

পারিবারিক রাজনীতি: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারিবারিক প্রভাবের আধিক্য, যা নতুন, প্রতিভাবান নেতাদের উত্থান রোধ করে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে জমাট করে রাখে।

অস্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা: অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ এবং পক্ষপাতমূলক হয়, যা জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি আস্থা নষ্ট করে।

প্রতিবন্ধকতা ও ভীতি: সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে ক্রমাগত দ্বন্দ্ব, হিংসা এবং প্রতিবন্ধকতা যা জনগণকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।


২. রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?

i. সুশাসন প্রতিষ্ঠা

সুশাসন প্রতিষ্ঠা হল রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করার প্রথম এবং প্রধান শর্ত। এর জন্য প্রয়োজন:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে, কীভাবে সরকারি সম্পদ ব্যয় হচ্ছে, এবং কোথায় কি কাজ হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আইনের শাসন: সব ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং আইন প্রয়োগে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না করা।

প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ব্যবস্থা: নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু করতে হবে। এখানে জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।


ii. তরুণ নেতৃত্বের উত্থান

পারিবারিক রাজনীতির প্রভাব কমিয়ে, নতুন তরুণ এবং মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে:

রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ: তরুণদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা জনগণের সাথে সংযুক্ত হয়ে নিজেদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে।

দলীয় সংস্কৃতির পরিবর্তন: রাজনৈতিক দলগুলোর ভিতরে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য তাদের সংস্কৃতিকে বদলাতে হবে। পারিবারিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তে যোগ্যতা ভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিভাবান জনগণের সমর্থন: জনগণের মধ্যে প্রতিবাদী, চিন্তাশীল এবং সক্রিয় নাগরিক সমাজ তৈরি করা যাতে তারা রাজনৈতিক অন্ধকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে।


iii. শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার

প্রকৃত শিক্ষা জাতির উন্নতির মূল ভিত্তি হতে পারে, যা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে:

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করে, যোগ্য শিক্ষকরা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষা ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সচেতনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, এবং সুশাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা বাড়ানো প্রয়োজন। এর মাধ্যমে তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।


iv. গণমাধ্যমের ভূমিকা

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বপূর্ণ সাংবাদিকতা রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে:

স্বাধীন গণমাধ্যম: যে কোনো প্রকারের রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে জনগণ সঠিক তথ্য পাবে এবং সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রম নিয়ে অবগত হবে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে গণমাধ্যম: গণমাধ্যম দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব হলে, রাজনৈতিক অন্ধকার অনেকটাই দূর হবে। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে এবং শাসকদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।


v. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ

রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করতে জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

অ্যাকটিভ সিটিজেন আন্দোলন: জনগণকে সচেতন করে একত্রিত করা, যাতে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন: এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠবে।


৩. দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ

রাজনৈতিক অন্ধকারের সমাধান শুধু তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপে সম্ভব নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি:

রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য কার্যকর আইনি ব্যবস্থা: একটি স্বচ্ছ, শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা রাজনৈতিক অন্ধকার এবং দুর্নীতি নির্মূল করতে সাহায্য করবে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শিক্ষা: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা বড় হয়ে পরিপক্ব নাগরিক হিসেবে সমাজে কাজ করতে পারে।


শেষ কথা

রাজনৈতিক অন্ধকার দূর করা একটি বড় এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যা শুধুমাত্র সরকার বা একটি দলের কাজ নয়। এটি সমগ্র জাতির একত্রিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ হতে পারে। দেশবাসী যদি নিজেদের মধ্যে একতা এবং সচেতনতা তৈরি করতে পারে, তবে আস্তে আস্তে রাজনৈতিক অন্ধকার দূর হয়ে একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

এটি একটি বৃহৎ লক্ষ্যমাত্রা, তবে প্রতিটি ছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২০
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হিলিয়াস

লিখেছেন নিথর শ্রাবণ শিহাব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩২


“আমাদের হাতে সময় কতটুক আছে আর?” নিয়ানা ফিরে তাকায় রোমানের দিকে।
“অক্সিজেনের হিসেবে আর আট ঘণ্টা। নাইট্রোজেন কনভার্সন হিসেবে ধরলে আরো বাড়তি তিন ঘণ্টা। মোটে এগারো ঘণ্টার রেস্পিরেটরি সাপ্লাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা ( শেষ পর্ব)

লিখেছেন সামিয়া, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০২



ঈশান সবার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
- আই’ম সরি ফর বিহেভিং দিস ওয়ে ইন ফ্রন্ট অফ এভরিওয়ান। বাট ওলি ডিজার্ভড ইট। হি মাস্ট অ্যাপলজাইজ টু অহনা রাইট নাউ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওয়াক্ফ সম্পত্তি আইন ২০২৫: ভারতের মুসলিম নিধন নীতির আইনগত চাবিকাঠি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


ভারত আজ আর গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়—আজকের ভারত এক হিন্দুত্ববাদী নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রকল্প, যেখানে সংবিধানকে অস্ত্র বানিয়ে একের পর এক সংখ্যালঘু নিধন চালানো হচ্ছে। 'ওয়াক্ফ সম্পত্তি আইন ২০২৫' তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ওরিয়ানা ফাল্লাচির সাক্ষাৎকার - Sheikh Mujibur Rahman's interview with Oriana Fallaci

লিখেছেন জনাব রায়হান, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৫

(Interview with History বই থেকে, পৃষ্ঠা ১২২-১৩৫, বাংলায় ভাবানুবাদ)

"১৯৭২ সালে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফাল্লাচি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একটি তীব্র ও বিতর্কিত সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তার বই Interview... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫০

মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....

'সাইড লাইনে সাক্ষাৎ" দেখে যারা উল্লাসে উচ্ছ্বসিত, আনন্দে উদ্ববেলিত....কেউ কেউ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গলাবাজি করছেন- ভারত ভুল বুঝতে পেরেছে, ডক্টর ইউনুস স্যারের কাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×