বাংলাদেশ সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস এর নিউজটা যথাসময়েই পড়েছিলাম। নিজের মতো করে রিপোর্টের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট লিখতেও শুরু করে ছিলাম। কিন্তু চোখের সমস্যার জন্য বিষয়টা শেষ করতে পারিনি।
এবার দেখা যাক বাংলাদেশ সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস কি বলছেঃ
প্রথমে লিখেছে- "বাংলাদেশ জঙ্গিদের চারন ভূমি হয়ে উঠেছে"।
আবার শেষ করেছে- "বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদী, জঙ্গী নেই"।
যদিও এই বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই পজিটিভ অর্থে নিজস্ব মতামত দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কিছু লিখেছেন, তবুও আমি আমার বক্তব্যটা নেতিবাচক ভাবেই শেয়ার করছি।
এই দুই পক্ষের কোনো পক্ষের সাথে একমত পোষন না করেও বলা যায়, পাচ আগষ্টের পর যা ঘটেছে, সেগুলো কোনোভাবেই ঘটা উচিত ছিলোনা। বিশেষ করে হাসিনার ফ্যাসিষ্ট রেজিম পতনের জন্য যদি আপনি জেন জিকে ক্রেডিট দেন। তাহলে তো কোনোভাবেই উচিত ছিলোনা পাচ আগষ্টের পর দেশে এমন সব উশৃঙ্খলতা প্রশ্রয় দেয়া কিম্বা জেনজির এসব উশৃঙ্খলাতাকে স্পন্সর করা। এম্নিতেই পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামোফোবিয়া নিয়ে এক ধরনের কুমতলব আছে, ছিলো সব সময়। সুতরাং আগষ্ট অভ্যুত্থানের পর, কিছু কিছু ইউটিউবার, কিম্বা সোশাল মিডিয়া কিছু সেলিব্রিটির ইনফ্লুয়েন্সে জেনজির তথাকথিত বালখিল্য পদক্ষেপ ইনটেরিম গভর্নমেন্টকে দেশে বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবশ্য এর জন্য ইনটেরিমও দায় এড়াতে পারেনা। শুরুটা হয়েছিলো, আগষ্ট অভ্যুত্থানের পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার মাধ্যমে। ওই দুইটা দু:খজনক ঘটনার পর, জেনজির আগ্রাসি প্রতিশোধ পরায়নতার রাশ টেনে ধরার দরকার ছিলো। কিন্তু ইনটেরিম সরকার ছিলো নির্বিকার। বরং প্রচ্ছন্ন মদদ ছিলো সরকারের। ফলে দিনে দিনে তারা হয়ে উঠলো বেপরোয়া। যদিও তখন হাসিনার পুলিশবাহিনী পলাতক। থানা পুলিশ বলতে কিছু ছিলোনা। ফলে সুযোগ সন্ধানিরা মওকা বুঝে শুরু করলো অরাজকতা। অবশ্য সেনাবাহিনী তখন মাঠেই ছিলো, কিন্তু রহস্যজনকভাবে তারাও ছিলো কাঠপুত্তলির মত নিরব। ফলে বেপরোয়াভাবে তখন যে যার মত সমাজে এরোগেন্সি শো করে যাচ্ছিলো।
প্রথম তিন চার মাস না হয়, মাফ করা গেলো। নভেম্বর ডিসেম্বরের পর, আর কি এমন এনার্কি এক্সকিউজ করা যায়? সেগুলোও হলো- বত্রিশ নাম্বার তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভাঙচুর হলো দুইদিন ধরে! কই সরকারের কোনো বাহিনীতো সেখানে প্রতিরোধ করতে এলোনা। আমি বত্রিশ নম্বর ভাঙ্গার বিপক্ষে বলছিনা, আমি বলছি, জেনজির স্বেচ্ছাচারীতার কথা। বত্রিশ নম্বর বাড়ি সরকার নিজেই তো একুয়ার করতে পারতো। ঘোষনা দিতো, বত্রিশই হবে জুলাই যাদুঘর। সেটা সরকার করবে। গণভবনের মত একটা বিশাল জায়গা শুধুমাত্র জুলাই আন্দোলনের জন্য সংরক্ষিত করা আমি মনে করি বাড়াবাড়ি!
এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা যেভাবে, সরকারের চেয়ে নিজেদের পাওয়ারফুল ভাবতে শুরু করলেন, সেটা ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত। যেখানেই সমস্যা, সেখানেই তারা। একে ধরে, ওকে মারে- রীতিমত অরাজকতা। সরকারের ভেতরে যেন আরেকটা সরকার। মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশটাকেই মবের মুল্লুক বানিয়ে ছেড়েছিল। ওদের আচরনটাই ছিলো একাত্তরে দেশ স্বাধীনের পর মুজিববাহিনীর মত।
সবশেষ, হিজবুত তাহিরীর ঘোষনা দিয়ে শো ডাউন।খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি। কি হাস্যকর! এই একবিংশ শতাব্দিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ইনটেরিম সরকার এসব হুজুগে সব আন্দোলনই সরকারের টলারেন্সের পরীক্ষা হিসেবে নিয়ে, দেশ ও জাতির কাছে প্রমান করতে চেয়েছে- দেখো, হাসিনা কাউকে নুন্যতম ফ্রিডম অব স্পিচ যেখানে দেয়নি, সেখানে আমরা কত উদার, কত সহিষ্ণু যে সবাইকে মত প্রকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি। আসলে, সরকারের এই নীতিটাই ছিলো ভুল তাদের জন্য বুমেরাং।
মতরপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে আপনি যথেচ্ছাচারকে প্রশ্রয় দিতে পারেননা। আপনি নিষিদ্ধ দলকে মিছিল সমাবেশ করতে দিতে পারেননা। ধরে নিলাম, হিজবুত তাহিরী কোনো এক্সট্রিমিষ্ট দল না। হাসিনা তাদের জিদের বশে নিষিদ্ধ করেছিলো, গুড। তাহলে সরকারের উচিত ছিলো, দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া। কিন্তু সেটা না করে, তাদের ব্যাপক আস্ফালনের সুযোগ করে দিয়ে বর্হিবিশ্বে কি মেসেজ দিলো!
সুতরাং "নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের কোনো সারবত্তা নেই, ইউনূস চায়না সফর করেছে বলে, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়া বিলা হয়েছে বলে বাংলাদেশ নিয়ে এমন প্রতিবেদন ছেপেছে"- যারা এই তত্ব কপচাচ্ছেন, তাদের বলি- সব কিছুর সরলীকরন করা ঠিক নয়। আত্ম জিজ্ঞাসারও দরকার আছে, কখনো কখনো দরকার হয়।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৫৮