নির্বাসিতের কলাম : তথাকথিত অভিযোগে বাংলাদেশে এবার খোদ সংসদে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র দমন বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে! যার প্রথম শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছেন সময়ের সাহসী সম্পাদক মতিউর রহমান। এর আগে আদালত অবমাননার দায়ে দৈনিক আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও একই পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক ওলিউল্যাহ নোমানীকে কারাদন্ড দেয়া হয়। আর এখন সংসদ অবমাননার অভিযোগ আনা হচ্ছে জনপ্রিয় সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলেই বন্ধ করে দেয়া হয় চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভির পরীক্ষামূলক সম্প্রচার। আরও বন্ধ করা হয়েছে দৈনিক আমার দেশ। গণমাধ্যমের ওপর প্রতিশোধপরায়ণতা গণতন্ত্রের জন্য কোন শুভ লক্ষণ নয়।
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক “প্রথম আলো”র সম্পাদক মতিউর রহমান। যিনি একজন পেশাদার সম্পাদক। তার হাতে গড়ে উঠেছে একাধিক সংবাদপত্র। মতিউর রহমান একজন ডাইনামিক সম্পাদক হিসেবে সুপরিচিত। অগণতান্ত্রিক চর্চা, স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, দু:শাসন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার ক্ষুরধার লেখনি দেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে স্টাবিলিস্টমেন্ট বা সরকার সমর্থকদের অপরাধ, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য অপকর্মের বিপক্ষে মতিউর রহমানের লেখা খুবই শক্তিশালী। সেই জনপ্রিয় সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সরকার এক আজগুবি অভিযোগ উত্থাপন করলো। তিনি নাকি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত!যা একটা হাস্যকর অভিযোগ। আসল কথা হলো- হাসিনা সরকার বোধহয় সত্যকে এবং গণমাধ্যমকে ভয় পায়!
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সংসদ সদস্য ও সদস্যদের পাশ কাটিয়ে ‘অগণতান্ত্রিক’ সরকারকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের কথিত ভূমিকা নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১০ জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনা হয়। এতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মইনুদ্দিন খান বাদল এমনকি খোদ স্পিকার আবদুল হামিদও আলোচনায় অংশ নেন। সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন স্পিকার। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেনেড হামলার অভিযোগ আনেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। তবে মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, সংসদ অভয় দিয়েছে বলেই পত্রিকাগুলো লিখছে। ভবিষ্যতেও অভয় দেওয়া হবে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী তোপের মুখে’ এবং জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু সম্প্রতি ‘প্রথম আলো’তে ‘এমপিদের ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি ও আয়করমুক্ত সম্মানী ‘এবং’ আইনপ্রণেতাদের আইন প্রণয়নে আগ্রহ নেই’ শীর্ষক দু’টি সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখার পরই এই দীর্ঘ বিতর্কের সূচনা হয়। এছাড়া দৈনিক সমকাল, দৈনিক আমাদের সময়সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে স্পিকার সংবাদ পরিবেশনে আরও দায়িত্ববান হওয়ার ছবক দিয়েছেন।
সরকারি দলের কর্মকান্ড, দুর্নীতি নিয়ে খবর পরিবেশন বা লেখালেখি করলেই সরকার সমর্খকরা ক্ষিপ্ত হন-এটা নতুন কোন বিষয় নয় বাংলাদেশের মত দেশে। হ্যাঁ কোন সাংবাদিক, সম্পাদক বা গণমাধ্যম যদি কোন মিথ্যা রিপোর্ট পরিবেশন বা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে তবে তার বা তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এতে কারও কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড বা নীতির সমালোচনা করা মানেই সংসদের অবমাননা নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোর আলোচনায় অংশ নেয়া বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কেও কটুক্তি করা হয় আলোচনায়।
যে সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে সেই সরকার গণতান্ত্রিক হতে পারে না। আবার এটাতো সত্য যে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আর দুর্নীতির জন্য রাজনীতিবিদরাই দায়ি বেশি। কাজেই আমরা বলবো গণমাধ্যমকে শায়েস্তা করার আগে নিজেদের দিকে একবার ভালো করে তাকান। নিজের বুকের ওপর হাত দিয়ে বলুন, মন্ত্রি-এমপি হওয়ামাত্রই কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় কেমনে? গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে কেউ ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। এটা বোঝা দরকার। http://www.eurobangla.org/?p=1020