
দুপুর বেলা ভাল লাগার কিছু নেই, বাইরের কটমট রোদে পৃথিবীটা আরও বেশি নিষ্ঠুর লাগে, দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে যেখানে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। খেয়ে ঘুমাতে পারলে তবু যন্ত্রণাময় উদাসীনতা থেকে কিছুক্ষন রেহাই পাওয়া যায়। ঘুম আসছিলনা, ফেইসবুকে লগইন করে জমে যাওয়া না পড়া মেসেজগুলোর দিকে তাকাতেই হঠাৎ চোখ আটকে গিয়েছিল গাঢ় নীল রঙে। নীল শার্ট পরা, পরিচিত কেউ না।
টিম টিম করে একটা গান বাজছিল, কেমন যেন নস্টালজিক সুর- “যেওনা দখিন দ্বারে, বাতাস তোমায় উড়িয়ে নেবে…দেখোনা আজ চাঁদের মুখ, কলংক যে পিছু নেবে… ডেকোনা আজ এমন করে এ চোখ আবার পথ হারাবে…—শ্রীকান্ত আচার্য্য” আগেও শুনেছি, ভাল লাগত। দখিন দ্বার হবে হয়তো দূরে কোথাও।
নীল শার্ট পরা মানুষটার ছবিটাও যেন কেমন; একজন মানুষ, কিন্তু অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে, তাকিয়ে আছে আরও দূরে। কি দেখছে দেখতে ইচ্ছা করছে। আমার কি অত দূরেই পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে? হয়ত। এই মানুষটারও কি আমার মত ইচ্ছা হয়েছিল? সেজন্যেই কি সে এত দূরে? নাহ্, তা হবে কেন। এতো শুধু ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী আর্ট, অনেকেই শখ করে তোলে; হয়ত মানুষটা একা না, একটু আশেপাশেই সবাই আছে। নাকি সত্যিই সে দূরে চলেগেছে, সময়ের সীমানা পেরিয়েও দৃশ্যমান? ফিরে আসতে চায়? চায় না বোধয়। দূরে গেলে কেমন লাগে? সবাইকে ভুলে গেছে? যেমন আমি চাই?
মেসেজে তেমন বিশেষ কিছু লেখেনি তবে ছোট্ট সাধারণ প্রশংসার নীচে চাপা পড়েও কৌতূহলটা ঠিকই উঁকি দিচ্ছে। চেহারা, বৃত্তান্তহীন, শুধু নাম দেখে মেসেজ পাঠানোর পেছনে স্বাভাবিক যোগাযোগের মহৎ উদ্দেশ্যে কতখানি ঘাটতি পরিমাপ করা না গেলেও আঁচ করা যাচ্ছে। পূর্ণতা, প্রাচুর্য্যে মানুষ কত কিছুতেই বিনোদন পায়!
হতাশা যখন রুচি, আত্ম সম্মানবোধকে ডুবিয়ে দেয় তখন ক্ষয় ক্ষতির অনুভূতিহীন আমার আর ভয় কিসের; দেখি, তাদের মতই ভদ্রতার মুখোশ পরে তাদের খেলা দেখি।
গানটা বাজছেই, এত সুন্দর সুন্দর শব্দ, কিন্তু এত কিছু করতে নিষেধ করেই যেন করার প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে। আগেতো এমন মনে হয়নি, আজ আমার মনের ভুল হয়তো।
তার গোছানো শব্দ আর সুপরিকল্পিত ছন্দের দক্ষ কসরত অথবা মান-অভিমান খেলার গোপন উদ্দেশ্য ধরতে পারলেও এক অজানা
আকর্ষনে আটকে গিয়েছি। গানের করুন সুরটা কানে বাজত, ছবির মানুষটার কথা ভাবতাম, ছলনা তার সাথে কখনই মানানসই না। ছবির নিস্তব্ধ ধূসর কংক্রীট ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা ভেবেও উদাস হতাম। এভাবে অনেকদিন, তারপর সে চলেগেছে, আমি চলেগেছি; সে আবার এসেছে, আমিও এসেছি বারবার কিন্তু দূরত্ব কমানোর আনুষ্ঠানিকতা হয়নি যদিও কথা হয়েছিল খুব কাছে এসে।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৪৪