ছবি টি সফিকুল আলম কিরন ভাইয়ের তোলা।
আজ পহেলা বৈশাখ মানেই শহরের রাস্তায় মুখোশ, কাগজের ঘোড়া, আর লাল-সাদা শাড়ির বাহার। তার নাম—মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতিসংঘ স্বীকৃত, উৎসবমুখর, মিডিয়ায় আলোচিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই মঙ্গল কার জন্য?
এই শোভাযাত্রার পায়ে পায়ে বলি হয়েছে পল্লির হালখাতা। যে হালখাতা ছিল একসময় বৈশাখের কেন্দ্রবিন্দু—দোকানি-ক্রেতার সম্পর্কের নবায়ন, পুরনো হিসাব চুকিয়ে নতুন করে শুরু করার প্রতীক—তা আজ শহরের আয়োজন থেকে নির্বাসিত। হালখাতা এখন শুধুই ব্যানার-লেখা এক শব্দ, বাস্তবতায় তার আর কোনো জায়গা নেই।
যে বৈশাখ ছিল মাটির উৎসব, সে আজ মঞ্চের উৎসব। যেখানে গান নেই, গামছা নেই, লাঠিখেলা নেই, নেই জারিগান বা মুর্শিদি—
আছে প্লাস্টিক মুখোশ, ক্যামেরাবন্দি উৎসব, আর রবীন্দ্রসংগীতে মোড়ানো একরৈখিক সংস্কৃতি।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ‘শোভা’ বটে, কিন্তু মঙ্গল কি? যে শোভাযাত্রা হাজার বছরের গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষকজীবন, আর মাটির সংগীতকে বাদ দিয়ে চলে, তা কি সত্যিই মঙ্গল বয়ে আনে?
আজ সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার—আমরা কি এক শহুরে 'মঙ্গল'-এর নামে পুরো গ্রামীণ বাংলাকে ছেঁটে ফেলছি?
আমরা কি ভুলে যাচ্ছি, এই উৎসব একদিন ছিল মাটি ও মানুষের, হিসাব ও হালখাতার?
মঙ্গলের নামে যদি হারিয়ে যায় সেই গ্রামীণ সুর, তাহলে সেই মঙ্গল আর কাকে বলে?