রাত ১০টা ৩১মিনিট ....বুধবার....১৩ই মে,২০০৯
অনেক দিন পর আবার লিখতে বসলাম। অনেকটা জোর করেই। প্রতিদিনকার ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনা কিংবা নিজের মনের ভিতরের শান্ত-অশান্ত চিন্তা ভাবনাগুলোকে লিখতে ইচ্ছে হয় সব সময়ই; কিন্তু আমার মত অলস ও অধৈর্যের পক্ষে তা প্রায়ই অসম্ভব ।এরসাথে নিজের ব্যস্ততা তো আছেই....
গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এমাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা নিয়েই ছিলাম। ব্লগে পরীক্ষার সময়টাতে প্রতিদিনই এসেছি, কিন্তু আলসেমি করে কিছুই লিখিনি।এমন না যে এসময়টা পড়েছি...আমার আলসেমি পড়াকেও ছাড়েনি। আর তাই পরীক্ষার আগের রাত পড়ে পরীক্ষা দিলাম।ভাল না খারাপ হলো তা আমি খুজতে যাইনি।একটি করে পরীক্ষা শেষ হয়েছে আর আমি যেন তা থেকে উদ্ধার পেয়েছি। বিসিএসের বিষয়গুলো আমার জন্য বড়ই রসহীন। তাই মাঝে মাঝে পড়া রেখে নেটে বসেছি কিংবা টিভিও দেখেছি।মোটামুটি সব পরীক্ষাই ১ রাতের পড়া দিয়েই দিয়েছি। যা এসেছে আর আমি যা লিখেছি তাতে আমি নিজের ওপর সন্তুষ্ট। এরথেকে আর বেশি ভাল কিছু লেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়তো হতোনা। প্রায় ১২ বৎসর পর বাংলায় ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা দিতে হল।খুবই কষ্ট হয়েছে লিখতে।কলম চলতেই চাচ্ছিলোনা।এরওপর, হাতের লেখা দেখে আমার নিজেরই হাসি এসেছে।তাও আমি খুশি।যদিও পরীক্ষা শেষ হয়নি এখনও,আমার বিষয়ের ২ টি পরীক্ষা এখনও বাকী।কিন্তু বিরিক্তিকর রকম শুকনো বিষয়গুলো শেষ হলো এটাই আমার জন্য মানসিক শান্তি। তবে এই পরীক্ষার একটা ব্যাপার আমার খুবই পক্ষে ছিলো।আমার পরীক্ষার সিট পরেছে আমার নিজেরই স্কুল/কলেজে। এখানেই আমি ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত পরেছি।আর আমার বাসা থেকেও কাছে। প্রতিদিনই প্রায় হেটেই পরীক্ষার হলে গিয়েছি। আর কখনই মনে হয়নি অপিরিচিত কোন পরিবেশে আছি,যদিও স্বুলের শিক্ষকরা সবাই নতুন মুখ।তবে প্রথম পরীক্ষার সময় আমার অতিপরিচিত একজন স্যার ছিলেন।এইস্যারের কাছে আমি প্রায় ৪ বৎসর প্রাইভেট পরেছি।প্রথম দিন আমি পৌছেছিলাম সবার শেষে। স্যারকে দেখে বেশ খুশি হয়েছিলাম,স্যারও আমাকে দেখে খুশি হলেন। পরীক্ষা শেষে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলেন। আর একটা ঘটনা হয়েছে এই পরীক্ষার সময়; আমার রুমেই আমার মেডিক্যালের ১ বৎসরের সিনিয়র ভাইয়ের সিট পরেছিলো।তার নাম আর আমার নাম একই ও তিনি মেডিক্যালে ছাত্রদলের ভিপি ছিলেন। আমাকে দেখে প্রথমে উনি মনে হলো একটু ধাক্কা খেল,কিন্তু আমি হাসি মুখেই তার সাথে কথা বলেছি ,কিন্তু পরের পরীক্ষাগুলো তিনি আর দিলেন না।আমি অনেক অবাক হয়েছি কেন তিনি পরীক্ষা দিলেন না।এখনো জানি না।আমার কলেজে আমার মেডিক্যালের আরও অনেকেরই সিট পরেছে।এরমাঝে আমার ইয়ারমেট,একসময়কার রুমমেট ও ছাত্রদলের আর এক ভিপিও আছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেই বড় ভাইয়ের কথা।সেও কোন সদুত্তর দিতে পারলোনা;কিন্তু একবার আমাদের কে দোষারোপ করলো যে হয়তো আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দেইনি।কিন্তু এরকম নিচু মানসিকতা আমার বা আমাদের যে নেই সেটা বুঝার ক্ষমতা ওদের নেই। তা হলে আমার এই দোস্ত নিজেই পরীক্ষা দিতে পারতোনা।কারণ এরা মেডিক্যালে থাকতে অন্যদলের অনুসারী ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ ছাত্র সবাইকেই বেশ জ্বালিয়েছে। আমাদের অনেক বন্ধু,সিনিয়র কিংবা জুনিয়রের প্রফেশনাল পরীক্ষা এরা দিতে দেয়নি।পরীক্ষার হলের সামনে দল-বল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে যাতে চিহ্নিত কেউ পরীক্ষা দিতে না পারে; অনেকেই পরীক্ষা দিতে গিয়ে মার খেয়েছে এদের হাতে। আবার চাঁদা হিসেবে টাকাও নিয়েছে। যাক সেসব কথা। কিন্তু আমি এখনও জানতে চাই কেন সে পরীক্ষা দিলোনা। খোজ নিতে হবে সামনে...
প্রতিদিনই পরীক্ষা শেষে বের হয়ে আমার এক সিনিয়র রাজীব দা আর এক জুনিয়র সুমন সেন এর জন্য অপেক্ষা করতাম। এসময় আরও কিছু জুনিয়র ছেলে-মেয়ে এর সাথে দেখা হত। অনেকেই দেখলাম আমার মেডিক্যালের লিখিত পরীক্ষা দিলো আমার কলেজে। যাইহোক,পরীক্ষার শেষের পর মনটা হালকা লাগতো,মনে হত যাক এটা শেষ হলো!এরপর আমি আর সেই দু'জনে মিলে গল্প আর হাসি ঠাট্টা করতে করতে বাসার দিকে রওনা হতাম।আর এর ফাঁকে রাজীব দা কে আমি আর সুমন মিলে সিল মারার চেষ্টা করেছি। এটা আমাদের ক্যাম্পাস ট্রাডিশন যে সিনিয়ররা জুনিয়রদের খাওয়ায়। রাজীব দা খাইয়েছেন,তুবে আমিও খাইয়েছি। আর সুমন যেহেতু জুনিয়র সবার থেকে ও একটু গাই-গুই করতো,কিন্তু সেও খাইয়েছে যখন আমি বলেছি ওর থেকেও জুনিয়র আমি ডেকে আনবো...।যাইহোক , পরীক্ষার পরের সময়টা ভালই কেটেছে।
১১ইমে আপাত শেষ পরীক্ষার পর বাসায় এসে দেখি নেটের কানেকশান নেই। গতকালও সারাদিন ছিলোনা।এসেছে রাতে। একবার ভাবলাম কিছু লিখি,কিন্তু নেটে বসার কিছুক্ষনের মাঝেই বিদ্যুত চলে গেল।পরে আর লেখার ইচ্ছে হলোনা। বিদ্যুত যাবার পর রাতের খাবার খাওয়ার সময় আম্মা আমাকে হঠাৎ 'তার' কথা জিজ্ঞেস করলো। আমি অবাক হয়নি,কিন্তু বিব্রত হলাম,যদিও মোমের আলোয় আম্মা হয়তো বুঝেনি।আমিও অবশ্য সরাসরিই বর্তমান অবস্থা জানিয়ে দিয়েছি এবং কী কারণ সেটাও।আম্মা শুনে কিছুটা মন খারাপ করেছে। খাওয়া শেষে আমার রুমে এসে অনেকক্ষন গল্প করলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে; এরমাঝে তাঁর ছোট বেলার কিছু স্মৃতি আর আমার বর্তমান ঘটনা সম্পর্কে তাঁর মতামত জানালো।আমি যে জন্য এইসব কথা নিজ থেকে বলিনি সেটাই সে বললো। আমি পারিবারিক কথা-বার্তাতে আগ্রহ বোধ করিনা,তাই চুপ থাকলাম...অবশ্য আমার বলারই বা কী ছিলো???
আম্মা আজ সকালে বরিশাল চলে গেল।আমার নানা অনেকদিন থেকেই অসুস্থ। তাকে দেখেতে যাওয়াই উদ্দেশ্য।আম্মার স্কুল গ্রীষ্মের ছুটি,তাই বেড়াতে যাওয়া।আম্মা না থাকলে বাসা একদমই খালি খালি লাগে।একদমই ভাল লাগে না আমার ।যখন ছোট ছিলাম তখন আম্মা যদি আমাকে রেখে কোথাও যেত আমার বুক ফেঁটে কান্না পেত।এখন পায়না কিন্তু খারাপ লাগাটা রয়েগেছে।আমার ছোট ভাইয়ের অনুভূতিটা কেমন তা জানিনা।ওকে বুঝা সম্ভব না;বা হয়তো আমি কোন দিনই চেষ্টা করিনি।আসলে বড় ভাই হিসেবে আমি তেমন কোন দায়িত্ব নিইনি।মাঝে মাঝে এজন্য আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগে ,তবে কখনো কখনো ওর আচরণ বরই অসহ্যকর ...তবে এটা ছোট বেলা থেকে খেয়াল করেছি আমাকে মাঝে মাঝে অনুকরণের চেষ্টা করে....
আম্মা না থাকলে আমাদের দুভাইয়ের সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়। বাসায় আসা-যাওয়ার ও খাওয়া দাওয়ার কোন ঠিক থাকেনা। মাঝে মাঝে আমি ভাবি, আম্মা যখন সত্যি সত্যিই থাকবে না আমাদের কী অবস্থা হবে!!?? ভেবে কোন দিশা পাইনা,বুকের ভেতরটা কষ্টে ভরে ওঠে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে আমরা কখনও আম্মার দিকে খেয়াল করিনা,তাঁর নিজের চাওয়া-পাওয়া,ভাল লাগা-খারাপ লাগা, শখ-আবদার কিছু নিয়েই ভাবিনা....এই মে মাসেরই ২১ তারিখে আমার আব্বার মৃত্যুর ১০ বৎসর হবে...এই সময়টাতে আমি কোন দিনও তাঁর কথা গভীরভাবে ভাবিনি...আমার আম্মা যেন বেঁচে আছেন আমাদের দুভাইয়ের স্বার্থপূরণের জন্য,তাঁর নিজস্ব যেন কিছুই নেই আজ!!!! .....আমরা আসলেই কতটা স্বার্থপর....এমনকি এখন পর্যন্ত ফোন করে খোঁজও নিলাম না ঠিক মত পৌছেছে কিনা...
সকালে আম্মাকে মামার বাসার উদ্দেশ্যে মিশুকে উঠিয়ে দিয়ে হাসপাতালে গেলাম। পরীক্ষার জন্য এ'কদিন যাইনি। আমি সহ আরও ৫ জনের বিসিএস পরীক্ষা ছিলো।তাই ওয়ার্ডের যে কী অবস্থা তা ভেবে পেলাম না। আর আমাদের সহকারী রেজিস্ট্রার বেটা একটা ছাগল। ওয়ার্ড ম্যানেজমেন্টের কোন আইডিয়াই তার নেই।আইএমও, ইন্টার্ণ সহ সকলেই এর ওপর বিরক্ত।কিন্তু এর এমনই অবস্থা যে সেটা বুঝার মত আই.কিউ এর নেই। যাইহোক, হাসপাতালে যেয়ে কিছুক্ষন ওয়ার্ডে বসে থেকে পরে আইএমও মিজান ভাইকে নিয়ে কেবিনের দিকে গেলাম। আমি পরীক্ষার আগে কেবিনে আমাদের ইউনিটের রুগিদের দেখতাম ।আমার সাথে মিজান ভাই থাকতো।কিন্তু তার থাকা না থাকা সমান কথা।যাইহোক, কোথায় কী রুগি আছে তা দেখে আসলাম। আর ধারণামতই বেশ কিছু মিস-ম্যানেজমেন্ট দেখলাম ও যথারীতি সহকারী রেজিস্ট্রারের ওপর মেজাজটা আরও খারাপ হলো। ওয়ার্ডে ফিরে এসে দেখি এসে আর তেমন কিছু করার ছিলোনা। এর মাঝে স্যার ২ বার রাউন্ড দিলেন।স্যারের মন মেজাজ বুঝা গেল বেশ ভাল,কারণ সে সহকারী রেজিস্ট্রারকে তার বিভিন্ন ছাগলামীর জন্য ঝারলেন না। তবে তার নতুন ছলামীর গল্প কেবিনে রাউন্ডের সময় রিজভী বললো,শুনে হাসাহাসি হলো রাউন্ডের পিছনে।স্যার অবশ্য আমার যেসব ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন ছিলো বা ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপত্তি ছিলো সেগুলো ঠিক করে দিলেন নিজ থেকে;,যদিও এগুলো সহকারী রেজিস্ট্রারেই করা উচিত ছিলো।কিন্তু আমার সন্দেহ তার মাথায় এগুলো ধরে কিনা?? যাইহোক, তার নামে অনেক বদনাম হলো।আসলে তার কিছু কিছু কথা বার্তা ও কাজে আমি বেশ বিরক্ত ও খুব্ধ।যদিও একটা জরুরী দায়িত্ব তাকে আমি দিয়েছলাম অনেক পরীক্ষারও সপ্তাখানেক আগে, কিন্তু এইসব কারণে আর ইচ্ছা করেই খোজ নিইনি। নিব কিনা ভাবছি।কিন্তু ডিসিশন নিতে পারছিনা...
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে পিজিতে গেলাম। সামনের পরীক্ষারগুলোর পুরোনো বিসিএস প্রশ্নপত্র গুলো আশিকের কাছ থেকে নিয়ে আজিজ মার্কেটে গিয়ে ফটোকপি করালাম।এরমাঝে রাশেদ ও মামুনের সাথে আজিজে দুপুরে খেলাম। রাশেদ খাওয়ালো।রাশেদ ও মামুন দুইজনই আমার অন্য মেডিক্যালের বন্ধু।আজিজে এমন দোকান/রেস্টুরেন্টে আমি কখনও খাইনি। খাওয়া খারাপ হলো না,কিন্তু ভাবলাম প্রতিদিন এমন খাবার খাওয়া আমার পুক্ষে সম্ভব না।কিন্তু রাশেদ ,মামুন ওরা প্রতিদিনই খায়,বা খেতে বাধ্য হয়।এসব নিয়ে কথা বার্তা হলো।এরপর আজিজে ওদের রুমে গিয়ে অনেক সময় গল্প করে আবার পিজিতে ফিরে আসিকের সাথে দেখা করে বাসায় চলে এলাম। পুরোবাসায় আমি একা।একটু পর ছোট ভাই আসলো।আমি গোসল করে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো চেম্বার থেকে আসা ফোনে,৭টার দিকে। একদমই ইচ্ছে হলো না যেতে,মনে হলো আরো কিছু সময় ঘুমাই।পরে মোবাইলের রিংটোন অফ করে রেখে তাই করলাম।কিন্তু ঘুম আর গভীর হলোনা।৭।৩০এর দিকে ঊঠে দেখে অনেকগুলো মিসকল চেম্বার থেকে।আমি কলব্যাক করে বললাম আসছি।পরে চেম্বারে গিয়ে ৫ জন পেসেন্ট পেলাম। আমার জন্য ভালই হলো। চেন্বার থেকে বাসায় ফিরলাম ১০টার দিকে হয়তো। এরপর এসেই নেটে বসে ফেসবুক আর সা.ইনে কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে এই লেখাটা লিখতে বসলাম....
এখনও রাতের খাবার খাইনি...রাতও অনেক হলো, আর সকালে ওটি...সাথে কাল ইভিনিং ডিউটি...এখনই খেয়ে ঘুমুতে যাওয়া উচিত...কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছে না...
(রাত ১২টা ৫২মিনিট, ১৪/০৫/০৯ইং)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০০৯ রাত ১:৪৮