কিউরিল আইল্যান্ডস (Kuril Islands ) হলো ১৩০০ কি.মি. ব্যাপী প্রসারিত এক আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ। জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ হোক্কাইদো (Hokkaidō) থেকে শুরু হয়ে রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ (Kamchatka Peninsula) পর্যন্ত বিস্তৃত এই কিউরিল আইল্যান্ডস। ওখট্স্ক সাগর (Sea of Okhotsk) আর প্রশান্ত মহাসাগরকে আলাদা করেছে এই দ্বীপপুঞ্জ। কিউরিল আইল্যান্ডস বা কুরিল দ্বীপপুঞ্জ-এর অন্তর্গত দ্বীপের সংখ্যা ৫৬।

বিরোধঃ
কিউরিল দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদেরকে সরিয়ে জাপানিরা এই দ্বীপপুঞ্জে বসবাস শুরু করে। জাপানিদের দাবি অনুযায়ী ৪০০ বছর আগেই তারা জাপানের উত্তর-পূর্বের এই দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। ১৬৪৪ সালে জাপানিদের তৈরিকৃত একটি ম্যাপে ৩৯ টি দ্বীপের খোঁজ পাওয়া যায়। রাশিয়ানরা সতের শতকে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে। তবে তারা কখোনই উরুপ দ্বীপের (Urup Island) দক্ষিণে যায়নি। কিন্তু আঠারো শতকে ইতুরুপ দ্বীপে (Iturup Island) তারা বসতি স্থাপন করে।

১৯ শতকের শুরুর দিকে জাপান ছিল এক গোপন সাম্রাজ্য। তারা বাকি বিশ্ব থেকে নিজেদের আলাদা করে রাখতে চাইত। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল শুধু চীন এবং হল্যান্ড-এর সাথে। এই দুই দেশের কেউই জাপানে প্রবেশ করতে পারত না, শুধু বন্দর পর্যন্ত তাদের প্রবেশাধিকার ছিল। এরই প্রেক্ষিতে অনেক জাপানি জেলে ধরা খেত রাশিয়ানদের হাতে, একইভাবে রাশিয়ান জেলেরা ধরা খেত জাপানিদের হাতে। এরূপ আরো নানা কারণে ১৮৫৫ সালে শিমোদা চুক্তি (Treaty of Shimoda )স্বাক্ষরিত হয় জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে। রাশিয়ার সীমানা নির্ধারিত হয় উরুপ দ্বীপ পর্যন্ত, আর জাপানের ইতুরূপ দ্বীপ পর্যন্ত।
অন্যদিকে জাপানের উত্তরে অবস্থিত সাখালিন দ্বীপে (Sakhalin )রাশিয়ান এবং জাপানি উভয়েই বসবাস করত। এর ফলে এই দ্বীপেও সংকট সৃষ্টি হয়। আর শিমোদা চুক্তির ফলেও কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় নতুন করে চুক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই ফলে ১৮৭৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় সেইন্ট পিটার্সবাগ চুক্তি (Treaty of Saint Petersburg )। এর ফলে জাপান সাখালিন দ্বীপের দাবি ছেড়ে দেয় এবং রাশিয়া কিউরিল দ্বীপের দাবি ত্যাগ করে।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া সমগ্র কিউরিল দ্বীপ দখল করে নেয়।
বর্তমান অবস্থাঃ
সমগ্র কিউরিল দ্বীপপুঞ্জ রাশিয়া'র সাখালিন অব্লাস্ট এর অন্তর্ভূক্ত। এবং সমগ্র দ্বীপপুঞ্জে রাশিয়ার অধীনতা বজায় আছে। জাপান বর্তমানে শুধু চারটি দ্বীপের দাবী বজায় রেখেছে। ২০০৬ সালে পুতিন সরকার দুইটি দ্বীপ জাপানকে ফিরিয়ে দেবার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু শর্ত ছিল এর বিনিময়ে বাকি দুইটি দ্বীপের দাবি জাপানকে ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু জাপান যৌক্তিক কারণেই এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৯