বিভিন্ন কারনে একটু দেরিতে হলেও নিয়ে এলাম ৩য় পর্ব। আগের ২ পর্বে শুন্য দশকের প্রথমভাগ পর্যন্ত ফুটবলারদের হেয়ারস্টাইলের বিবর্তনের নমুনা দেখিয়েছিলাম। আজ ঠিক ২য় পর্বের শেষ থেকেই আবার শুরু করছি।
২য় পর্ব শেষ করেছিলাম কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের ফরাসি ফুটবলার জিব্রিল সিসের বিচিত্র হেয়ারস্টাইল দিয়ে। তবে ৩য় পর্বের জন্য হেয়ারস্টাইলের নমুনা খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম সিসের আরও কয়েকটি স্টাইলের নমুনা যার মধ্যে দুটি শেয়ার না করলেই নয়। দেখুনঃ
শুন্য দশকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত চুল নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট দেখা গেলেও সেখানে মূলত মোহক, কর্নরো আর ফক্সহক চুলেরই ছিল জয়জয়কার। তবে কর্নরো চুল নিয়ে এখন অব্দি আলোচনায় রয়ে গেছেন আর্সেনালের ফরাসী ডিফেন্ডার বাখারি সানা।
এমনিতেই কর্নরো একটি জটিল শিল্প। তবে এই শিল্পকেও যে আরও উন্নত শিল্পের পর্যায়ে নেয়া যায় টা দেখিয়েছিলেন বেলজিয়ামের অ্যাক্সেল উইটসেল।
আর্সেনাল স্ট্রাইকার জারভিনহো ও কম যান না কর্নরোর ব্যাপারে।
তবে কর্নরো নিয়ে বোধহয় সবচেয়ে বেশি এক্সপেরিমেন্ট করেছেন সিএসকেএ মস্কোর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভেগনার লাভ। যখন যে ক্লাবেই গেছেন, জার্সির রঙের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে ফেলেছেন নিজের চুলের রঙও। কখনো সবুজ, কখনো লাল আবার কখনো বা সাদা।
এবার আসি মোহক চুল নিয়ে। অ্যামেরিকান হিপ্পিরা এ স্টাইলের উদ্ভব ঘটালেও তা ফুটবলে ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় নেয়নি। এরপর কালে কালে এই মোহক চুল নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করে এটিকেও ফুটবলাররা নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। নিচে দেখুন এ যুগের ফুটবলারদের কিছু মোহকঃ
কাজুয়ুকি টোডা (জাপান)
মোহাম্মাদু সাখো (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
রোডকিল মোহক চুলে সান্দ্রো রানিয়েরি (টটেনহ্যাম হটস্পার)
ফ্রেডেরিক এলজুনবার্গ (সুইডেন)
মোহাম্মেদ চিতে (রেসিং সান্তাদার)
মোহকের বর্তমান আম্বাসেডর হচ্ছেন মারিও বালোতেল্লি।
তবে পর্তুগালের ফাবিও ফেরেইরা ছিলেন আবার একধাপ এগিয়ে। তিনি মোহক আর কর্নরো মিলিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন নতুন এক স্টাইল।
ফাবিও ফেরেইরা ক্যাবেলো (বোটাফোগো)
১ম পর্ব শেষ করেছিলাম রবার্টো ব্যাজিওর বিখ্যাত "ডিভাইন পনিটেল" দিয়ে। তবে ব্যাজিওর মত বিখ্যাত না হলেও পনিটেলের জন্য কম আলোচিত ছিলেন না সাবেক ইংলিশ গোলকিপার ডেভিড সিম্যান। ডেভিড সিম্যানের কথা মনে আছে তো? ঐ যে ’০২ বিশ্বকাপে পোস্ট ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে রোনালদিনহোর গোল খেয়েছিলেন।
তাঁর পনিটেল বাজিওর মত বিখ্যাত না হলেও এক বিশেষ মাহাত্ম্যের অধিকারী। তিনিই প্রথম ফুটবলার যার চুলের জন্য আলাদা স্পন্সর ছিল। শুধু তাই নয়, ২০০৫ সালে তাঁর সাধের পনিটেলটি কেটে নিলামে তুলে পুরো টাকা ভাগ্যবঞ্চিত শিশুদের উদ্দেশ্যে দান করেন।
২য় পর্বে দেখিয়েছিলাম জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান জিয়েগে আর ইতালির মারিও বালোতেল্লি কিভাবে তাঁদের চুলে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তবে দেশপ্রেমের মত অনেক ফুটবলার চুলে ক্লাবপ্রেমের নজিরও দেখিয়েছিলেন।
জার্মান ক্লাব উলফসবার্গের জনৈক খেলোয়াড়ের চুলে ক্লাবের লোগো।
ক্লাবের জার্সির সাথে মিলিয়ে চুল রেখেছিলেন টটেনহ্যামের জার্মেইন ডিফো।
২০০২ বিশ্বকাপে রোনালদোর সেই বিখ্যাত চুলের কথা মনে আছে তো?? (২য় পর্ব দ্রষ্টব্য) ঠিক তার পরের ২০০৬ বিশ্বকাপে রোনালদোর সেই চুলের অ্যাডভান্সড ভার্সন নিয়ে হাজির হন অ্যাঙ্গোলার ম্যানুয়েল ক্যাঙ্গে লোকো। দেখুনঃ
ম্যানুয়েল ক্যাঙ্গে লোকো (অ্যাঙ্গোলা)
এখানেই শেষ নয়। তার পরের ২০১০ বিশকাপেও সেইম স্টাইল নিয়ে হাজির হন আলজেরিয়ার গোলকিপার ফাওজি চাউচি।
ফাওজি চাউচি (আলজেরিয়া)
শুন্য দশকের আরও কিছু বিচিত্র হেয়ারস্টাইল দেখুনঃ
“ক্ল্যারেট অ্যান্ড ব্লু ডাই” চুলে ওয়েস্ট হ্যামের জাভিয়ের মার্গাস।
"স্কাঙ্ক" চুলে আসু একোট্টো (টটেনহ্যাম হটস্পার)
সেড্রিক মনগোঙ্গু (কঙ্গো)
জিদান (বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
মার্সেলিনহো (ব্রাজিল)
পল শার্নার
মাথার পেছনে ভক্তদের জন্য বানী নিয়ে পল শার্নার।
নাথান ক্যারল (অস্ট্রেলিয়া)
এবারে বর্তমানের বিখ্যাত কিছু ফুটবলারদের অপরিচিত রূপ দেখা যাক।
এঁকে চিনতে পেরেছেন?? হাহা!! মুলেট চুলে সেস ফ্যাব্রিগাস, স্পেনের যুবদলে খেলার সময়।
“কর্নর্রো” চুলে ইংলিশ স্ট্রাইকার অ্যান্ডি ক্যারল (নিউক্যাসলে খেলতেন যখন)।
“সিয়ামিজ মুলেট” চুলে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ফার্নান্ডো টোরেস।
ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার (বছর দু’য়েক আগে)।
আর্জেন্টিনা পিছায় থাকবে ক্যান?
কার্লোস তেভেজ (আর্জেন্টিনা)
২০১০-১১ সিজনে সুপার মারিও!!
“কর্নরো” চুলে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস।
চেনা চেনা লাগছে? হে হে!! মাদ্রিদের জার্মান মিডিও মেসুত ওজিল ফক্সহক মুলেট চুলে।
৩য় পর্ব এখানেই শেষ করে দিলাম। কালপরশুর ভেতরেই বাহারি চুলের শেষ পর্ব নিয়ে আসছি। চুল নিয়ে ফুটবলাররা কি পরিমান এক্সপেরিমেন্টটা করেছেন তা বাহারি চুলের ফুটবলের পর্ব তিনটি দেখলেই বোঝা যায়। এর বাইরেও রয়েছে আরও অজস্র বিচিত্র স্টাইল। কিন্তু ফুটবলে হেয়ারস্টাইলের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে একজনের কথা না বলাটা রীতিমত মহাপাপ। তিনি হচ্ছেন ডেভিড বেকহ্যাম। এই তিনটি পর্বে যে কয়টি হেয়ারস্টাইল দেখিয়েছি আপনাদের, তার চেয়েও বেশি স্টাইল ট্রাই করেছেন এপর্যন্ত ডেভিড বেকহ্যাম। শেষ পর্বে তাই থাকবেন শুধুই ফুটবলের এই হেয়ার কিং।
আমার আগের পোস্টসমুহঃ
ফুটবলম্যানিয়াঃ বাহারি চুলের ফুটবল (পর্ব-১)
ফুটবলম্যানিয়াঃ বাহারি চুলের ফুটবল (পর্ব-২)
বালোতেল্লিনামা
ব্যাটম্যান হতে চান?? তাহলে জেনে নিন খরচাপাতি..
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩২