somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসা খুজতে গিয়ে রাক্ষসের আস্তানাতে আমরা দুজন

৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতে আমি আর খলিল ভাই একটা বাসা দেখতে গেলাম।
এই মুহুর্তে বাসা নিয়ে খুবই সংকটে আছি, বাসাটা খুবই জরুরি। এজেন্টের কাছ থেকে এপয়েনমেন্ট নিয়ে রাতেই গেলাম দেখতে।
সাধারনত এজেন্ট বাসা দেখার সময় দিয়ে থাকে দুপুরে কিন্তু এই এজেন্ট রাতে যেতে বল্লো, ৯/৬ ভাবার সময় নাই। বাসা লাগবে জরুরি তাই ছুটলাম দুজন.........
প্রাইভেট এরিয়াতে ছিমছাম একটা বাংলো, লোকেশনটা একটু ভিতরে তাই বাসষ্টপে যেতে ৫/৭ মিনিট হাটতে হবে। বাসার এমন হরার দিনে ৫/৭ মিনিট হাটা তেমন বিষয়না।
বাসার সামনে গিরস্থ বাড়ির মত ছোট একটা উঠান আছে, ৬টা চেয়ার আর একটা টেবিল বিছানো। কাজ শেষে এখানে বসে কিছুটা সময় আড্ডা দেয়া যাবে। একটা গাড়িও পার্ক করা যাবে। দামের তুলনায় বাসাটা অনেক সুন্দর।
গেইট খুলে মেইন দরজার সামনে আসতেই ভিতর থেকে শব্দ আসলো "ভিতরে আসেন"। সাধারনত এজেন্ট দরজা খুলে দিলেও এখানে সম্পূর্ন ভিন্ন দেখা যাচ্ছে, এপয়েন্টমেন্ট অসময়ে আবার দরজাও খুলে ভিতরে আসতে বলছে। কিছুই মিলাতে পারছিনা।
যায়হোক ভিতরে আসতেই মধ্য বয়সি একজন মানুষ বসে আছে, আমাদের দুজনকে বাসাটা ঘুরে দেখতে বল্লো। আমরা আস্তে আসতে সবগুলি রুম ঘুরে দেখছি আর ভিডিও করছি, ৩টা বেড রুম একটা ডাইনিং ড্রইং কিচেন টয়লেট সাওয়ার ষ্টোর ক্লিনিং বে...... সবকিছুই দেখলাম। খলিলভাইয়ের সাথে পরমর্শ করছি কোন রুমে কি করা যায়, ষ্টোরে কি কি মাল পত্র রাখা যায়।
লিভিং এর ভিডিও দেখাতে গিয়ে নোটিশ করলাম ভিডিওতে এজেন্ট ভদ্রলোককে দেখা যাচ্ছেনা, এমন কি ছায়াও না। ভাবলাম হইতো উনি ছিলনা কিন্তু ক্যামেরা হাতে উনার সামনে আসার পরও মোবাইলের স্ক্রিনে উনাকে না দেখতে পেরে ভয় পেয়ে গেলাম। বেচারা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো, ঠিক যেনো কোন রহস্য লোকিয়ে আছে হাসিতে।
ভাড়া নিয়ে কথা বলার জন্য সোফাতে বসতে যাবো এমন সময় কারেন্ট চলে গেছে, সিঙ্গাপুরে এই প্রথম এমনটা দেখলাম। এজেন্ট আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বল্লো, ইলেক্ট্রিসিটি লাইনে একটু সমস্যা তাই শট-সার্কিট হইছে। একটু বসুন আমি অন করে দিচ্ছি।
এই বলে চলে গেলও প্রায় ৫/৭ মিনিট আসার কোন খবর নাই, খলিল ভাই বল্লো কারেন্টে আটকে গেছে কিনা একটু দেখে আসি। আমি ভীতু মানুষ তাই বসে থাকলাম।
খলিল ভাই ভিতরে যাওয়ার ২/৩ মিনিট পর ভিতর থেকে কান্নার শব্দ পেলাম, অনেক মানুষের এক সাথে কান্না। ভয়ে হাত পা কাপছে, এতক্ষন সারা বাড়ি খুজেও একটা মানুষ দেখলাম না এখন এত মানুষের কান্না আসছে কোথা থেকে।
ভয়ে ভয়ে আমি ভিতরের দিকে গিয়ে দেখি দরজার সামনে কিছু পাউডার দেয়া আছে, পা ভিতরে দিতেই ভয়ংকর দৃশ্য। অনেকগুলি মানুষকে রুমে আটকে রাখা হয়েছে, উদ্ভট চেহারার কয়েকজন মানুষের হাতে বিকৃত অস্ত্র।
ভয়ে পিছন ফিরে দৌড় দিতে যাবো এমন সময় খেয়াল করলাম পা আটকে আছে, উদ্ভট মানুষগুলি উচ্চ স্বরে হাসছে।
এটা যাদুর রুম, এখানের রাক্ষসদের আস্তানা। বাহির থেকে কাউকে জোর করে আনতে পারেনা কিন্তু এই রুমে চলে আসলে রাক্ষসরা তাকে বন্ধি করে, রাক্ষসদের ক্ষমতা এই রুমেই সীমাবদ্ধ।
আমাকে দুজন রাক্ষস এসে ধরে নিয়ে গেছে, মানুষের রক্ত দিয়ে গোসল করানো হচ্ছে। একটু পরেই "বলি" দেয়া হবে। খলিলভাইকেও গোসল শেষে রাক্ষসদের দেবতার সামনে বেদে রাখা হইছে।
দোয়া দূরূস পরতেছি, কোন রকম জানে বাচতে পারলে আর কোনদিন রাতে বাসা খুজতে আসবনা।
যাকে এতক্ষন এজেন্ট মনে করেছিলাম সে আসলে একজন অভিশপ্ত রাক্ষস, দেবতার সাথে বেয়াদবির জন্য তাকে বিতারিত করা হয়েছে। শর্ত একটা, যদি ১০০ নর বলি দিতে পারে দেবতার জন্য তাহলে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। আমরা দুজনকে নিয়ে আজ ১০০ নরবলি পূর্ন হবে। তারমানে আমাদের দুজনকে বলি দিলেই তার অভিশপ্ত দিনের শেষ।
আমাদের পাশে আরও ৯৮জনকে বন্ধি করা হইছে, এমনও কাউকে বন্ধি করা হইছে যে প্রায় ৩০ বছর আগে। একসাথে সবাইকে বলি দিতে হবে।
এতদিন খলিল ভাই ভূত দেখার জন্য বন জঙ্গলে ঘুরতো, এখন চোখের সামনে ভূত পেত্নি আর আমরা বন্ধি। ভয়ের মাঝেও হাসি আসলো। একটু পরেইতো শেষ, তাহলে আর হাসতে মানা কোথায়।
একজন একজন করে মানুষের রক্ত দিয়ে ঘুসল করানো হচ্ছে, কপালে এবং মাথায় ভিন্ন ভিন্ন রংএর পাউডারের মত ছিটানো হচ্ছে মন্ত্র পরে পরে। চোখ মুখ জ্বালা করছে, ঠিক মরিচের ঘুরো চোখে মাখার মত জ্বালা।
পানির পিপাশাতে কলিজা ফেটে যাচ্ছে, সাহস করে একজন রাক্ষুসের কাছে পানি চাইলাম। এই রাক্ষসটা বয়সে একটু ছোট, শারীরিক গঠনও অন্যদের তুলনা একটু নরম। একটা মাটির গ্লাস হাতে কাছে আসছে, গ্লাসে ভর্তি মানুষের রক্ত। একেবারে তাজারক্ত। পানি খাওয়ার বধলে ভমি করে বসলাম, এও কি সম্ভব!!!!!!!!!!!!!!!!
যতটুকু জানতে পারলাম, এখানের বন্ধি সবাইকে এতদিন যাবত মানুষের রক্ত পান করিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে।
মানুষের রক্ত দেখে ভমি করে দেয়াতে ছোট রাক্ষসটা কেমন মায়া নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে, কাছে এসে কুকুরের মত কি যেন ঘ্রাণ নিচ্ছে, রাক্ষসের শরীর থেকেও কেমন একটা উদ্ভট ঘন্ধ আসছে। মনে হচ্ছে এখনি আবার ওর উপরে ভমি চলে আসবে।
এমন সময় রাক্ষসটা কানের কাছে মুখ নিয়ে আসতে আসতে বলছে, এখানে সবাইকে বলি দেয়া হবে চাঁদ গ্রহন হলেই। কিন্তু বাচার একটা উপাই আছে যদি কোন নারি এখানে এসে উপস্থিত হয় তাহলে নরবলি অসম্পূর্ন রেখে দেবতা চলে যাবে, সবাই মুক্তি পাবে। অভিশপ্ত রাক্ষস নতুন করে আবার ১০০ নর যোগার করতে হবে।
ভাবছি সিঙ্গাপুরের মত দেশে পরিচিত নারি পামু কই? আর কাজের ক্ষেত্রে যে কয়েকজনের সাথে পরিচয় তারা আমাকে বাচানোর জন্য এমন ভূতুরে জায়গাতে আসবেনা। সুতরাং বাঁচার সব পথই বন্ধ।
.
সব পেত্নি রাক্ষস মিলে গলা কাটার অস্ত ধার দিচ্ছে, নরবলির এটা সর্বশেষ প্রস্তুতি। আমরাও দোয়া দুরুদ পরে মরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় মনে হলো, আরে!!! আমার বউকে একটু খবর দিতে পারলেইতো বেচে যাবো। সমস্যা হইছে যদি বউকে এই বিপদের কথা বলি তাহলে বউ অজ্ঞান হয়ে পরে থাকবে কয়েক ঘন্টা ততক্ষনে কল্লা শেষ।
ছোট রাক্ষসকে একটু ইশারা করে ডাকলাম, কাছে আসতেই আস্তে করে বল্লাম হাতের বাধনটা খুলে দিতে প্রচন্ড ব্যাথা লাগছে, রাক্ষস একটু হাসলো। কেন হাসলো বুঝতে পারিনি। হেসেই হাতের বাধন খুলে দিল। আমি আস্তে আস্তে পকেট থেকে মোবাইল বের করে বউকে লোকেশন পাঠিয়ে লেখলাম "অনেদিন হলো সিঙ্গাপুর এসেছো, দেখি ১৫ মিনিটের মধ্যে এই লোকেশন খুজে বের করতে পারো কিনা"
রাক্ষসের আস্তানাতে কোন প্রকার কথা বল্লেই এরা কিভাবে যেনো বুঝে যায়, তাই বাধ্য হয়ে টেক্স করলাম। রাক্ষসের জগতে এখনো ফেইসবুক হোয়াইটএ্যাপস আসে নাই, তাই এরা এমন সোস্যাল মিডিয়াতে কমুনিকেশন করলে বুঝতে পারেনা।
বউ মনে করছে আমি মস্করা করছি, তাই রেগে আগুন হয়ে উত্তর দিছে। অপেক্ষা করো, সময়ের আগেই চলে আসবো, তুমি কি ভেবেছো আমি রাস্তা ঘাট চিনিনা?
.
এখন অপেক্ষা করছি কল্লা কা টার আগে যদি বউ এসে উপস্থিত হতে পারে তাহলেই বাচি।
সামনের কাতারের দুজনকে ঝুলানো হইছে, জল্লাদ রাক্ষস মন্ত্র পরছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সবার কল্লা আলাদা করবে।
এমন সময় ভুমকম্পের মত সারাটা ঘর কেপে উঠলো, পাশে থাকা আগুনের প্রদীপ গুলি মাটিতে পরে গেছে। রাগান্নিত দেবতা অভিশপ্ত রাক্ষসের কানে ধরে হাওয়াই মিলে গেছে, আমি তাকিয়ে দেখি বউ পাশে দাড়িয়ে ধমকের সাথে বলছে "এতবড় মাঠে এতরাতে দুজন কি করো? অফিস থেকে অনেক আগেই বের হইছো, কি করেছো এতক্ষন?"
কোন কথা বলতে পারছিনা, অজ্ঞান হওয়ার আগে বউকে বল্লাম একটু পানি দাও..................................
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৩০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×