১। কমিশন বলছে, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এইসব রাষ্ট্র বা সংবিধানের মূলনীতিতে থাকবে না।
বিএনপি বলছে, থাকবে সব আগের মতোই।
২। কমিশন বলছে, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না।
বিএনপি বলছে, পারবেন আগের মতোই।
৩। কমিশন বলেছ, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে তাকে সংসদের নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন লাগবে।
বিএনপি বলছে, না, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কিছু নাই। আগের মতোই নিজেরা ঠিক করবে।
৪। কমিশন বলছে, সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন এবং
গণভোট লাগবে।
বিএনপি বলছে, না, গণভোট দরকার নাই।
৫। কমিশন বলছে, প্রধানমন্ত্রী আস্থা ভোটে হেরে গেলে সংসদের নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠন করতে পারবেন, যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন তার থাকে। সংসদ ভাঙার দরকার নাই।
বিএনপি বলছে, না, প্রধানমন্ত্রী তখন আগের মতোই ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং‘... রাষ্ট্রপতি তার পরামর্শে ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবেন।’
৬। কমিশন বলছে, প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি দুইবারের বেশি হতে পারবে না।
বিএনপি বলছে, পারবেন। ধারাবাহিক দুইবারের বেশি পারবেন না। থেমে থেমে যতবার ইচ্ছা পারবেন।
৭। কমিশন বলছে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর।
বিএনপি বলছে, না, আগের মতোই পাঁচ বছর।
৮। কমিশন বলছে, তত্ত্বাবধায়কের মেয়াদ হবে চার মাস।
বিএনপি বলছে, না, আগের মতোই তিনমাস।
৯। কমিশন বলছে, তত্ত্বাবধায়কের সময় আগে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন হবে, তারপর জাতীয় নির্বাচন।
বিএনপি বলছে, না, আগের মতোই আগে জাতীয়, পরে স্থানীয় নির্বাচন।
১০। কমিশন বলছে, সংসদ নির্বাচন করার বয়স ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হলে হবে।
বিএনপি বলছে, না। আগের মতোই ২৫ বছর থাকবে।
১১। কমিশন বলছে, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক কমিশনের (এনসিসি) সিদ্ধান্তক্রমে।
বিএনপি বলেছে, না। সেটা করবে আগের মতোই প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে রাষ্ট্রপতি।
১২। কমিশন বলছে, জরুরি অবস্থার সময় মানুষ আদালতে যেতে পারবে। তাদের কোনো মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
বিএনপি বলছে, না, জরুরি অবস্থায় নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকার হারাবে। এমনকি আদালতে যেতে পারবে না।
১৩। কমিশন বলছে, জাতীয় সংসদের মেয়াদ হবে চার বছর।
বিএনপি বলছে, না, আগের মতোই পাঁচ বছর।
১৪। কমিশন বলছে, দেশের সবগুলো বিভাগে বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্ট আসন থাকবে।
বিএনপি বলছে, না, এটা সংবিধানের সঙ্গে যায় না।
১৫। কমিশন বলছে, আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক হবেন প্রধান বিচারপতি।
বিএনপি বলছে, না, প্রবীণতম তিনজনের একজনকে সরকার পছন্দমতো নিয়োগ দেবে।
১৬। কমিশন বলেছেন উচ্চ কক্ষের ১০০ সদস্য নির্বাচিত হবেন রাজনৈ্তিক দলগুলর সারা দেশের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ।
বিএনপি বলেছে , তারা আগের নিয়মেই নির্বাচিত হবে।
১৭ । কমিশন বলেছে প্রধানমত্রীর ক্ষমতা কমানো হবে।
বিএনপি বলেছে প্রধান্মন্ত্রীর ক্ষমতা আগের মতই থাকবে।
১৮ । কমিশন বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য হবে।
বিএনপি এই সুপারিশের সাথে একমত নয় বলে জানিয়েছে।
১৯। কমিশন বলেছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ করা হোক
বিএনপি বলেছে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশই থাকবে।
এরপরেও বিএনপির নেতা কর্মীরা দাবী করছে যে , বিএনপি নাকি সংস্কার চায়!! অথচ চোখের সামনে দৃষ্যমান যে বিএনপি সংস্কার চায় না, বিচার চায় না , চায় শুধু নির্বাচন। এত এত ছাত্র কি রক্ত দিয়েছে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী পরিষদের ব্যক্তিদের নির্বাচনে দাঁড়ানো দেখতে ? এরপরেও লীগের সাথে বিএনপির আতাতের কথা শুনলে রেগে যাচ্ছে বিএনপির নেতা কর্মীরা!!
আসুন দেখি দেশের অন্য্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যূ্তে কি বলছে -
এনসিপি স্পষ্ট জানিয়েছে যে, আগে সংস্কার, বিচার ও তারপরে নির্বাচন। এছাড়াও সংসদ নির্বাচনের আগে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি দাবী তুলেছে গনপরিষদ নির্বাচনের। নাহিদ ইসলাম বলেছেন "বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামোতেই স্বৈরাচার তৈরির সুযোগ আছে। রাষ্ট্রের মতো অনেক দলেও তাই সর্বময় ক্ষমতা একজনের হাতে চলে যাচ্ছে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।''
সংস্কার ও বিচার ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।এ ক্ষেত্রে জামায়াত ইসিকে নির্বাচনের কোনো দিন, মাস, ক্ষণ বেঁধে দেয়নি। ইসলামিক ঐক্য জোটের অন্যান্য রাজনৈ্তিক দলগুলোর একই মতামত ।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা পরীক্ষা হবে। মানুষও দীর্ঘদিন পর ভোট দিতে পারবে। আওয়ামী লীগ ও তার জোটের কোনো দল যেনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেই কথাও কমিশনকে জানিয়েছে তারা।সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করেই জাতীয় নির্বাচনের দাবী নুরের।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার হচ্ছে একটা গণঅভ্যুত্থানের সরকার এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন সরকার এত পরিমাণ জনসমর্থন জনমত নিয়ে কোনোদিন আবির্ভূত হন নাই।তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাড়ে তিন বছরের এপিসোডের পরে সফল গভার্ন্যান্সের এপিসোড হবে ড. ইউনূসের এপিসোড। তবে এটা নির্ভর করবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে। ড. ইউনূস যদি দুই-তিন চার বছর থাকতে পারেন, বাংলাদেশটা আসলেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে গত পাঁচ দশক ধরে ছিল সেই আকাঙ্খার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমরা সংস্কারও চাই, নির্বাচনও চাই।তবে তার আগে জুলাই-আগস্টসহ গত ১৫ বছরে যত গুম, খুন ও নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেটির জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও শেখ হাসিনাসহ যারা দায়ী, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।তিনি বলেন, দল হিসেবে এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের দায় কতটা, সেটাও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেজন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। এর ওপর নির্ভর করবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী।
এক বিএনপি ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলই দ্রুত নির্বাচন চাইছে না। অবস্থা এখন এমন দাড়িয়েছে , ডক্টর ইউনুস যদি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরে পড়তেও চায় তাহলে এ দেশের বিভিন্ন রাজনৈ্তিক দল ও ছাত্র জনতা রাস্তায় নামবে নির্বাচন চাই না দাবীতে।
তথ্যসুত্র ঃ গনমাধ্যম
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৭