নিচের শর্তাবলী গুলো ভালো করে লক্ষ্য করুণ এবং এই শর্তাবলী পুরনের ফলে আপনারা যেকেউ পর্তুগালে বৈধ হতে পারবেন।
১- আপনাকে ইউরোপে বৈধভাবে প্রবেশ করেছেন তার প্রমানাধি দেখাতে হবে অর্থাৎ আপনাকে ইউরোপের সেঞ্জেন ভুক্ত যেকোনো দেশের ভিসা নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে হবে। (তবে সাইপ্রাস, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ইউকে, আয়ারল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া এই দেশসমুহের ভিসা বাদে)
২- আর সেনজেন ভুক্ত দেশ থেকে আপনি পর্তুগালে বৈধভাবে প্রবেশ করেছেন যেমন বিমানের টিকেট, মাসের টিকেট বা ট্রেনের টিকেট ইত্যাদি দেখাতে হবে (যদিও ইমিগ্রেশন থেকে আগে এইসব চাইত না কিন্তু এখন এইসব বাধ্যতামূলক লাগবে।
৩-পর্তুগাল প্রবেশের পর আপনাকে নিজস্ব আইডেনটিফীকেশান (পাসপোর্ট) দেখিয়ে ট্যাক্স অফিস থেকে ট্যাক্স কার্ড করিয়ে নিতে হবে। পর্তুগিজ ট্যাক্স নাম্বার . এটাকে NIF বলা হয়ে থাকে. -Número de Identificação Fiscal (NIF) ( খরচ পড়বে ১০.৯০ ইউরো ) তবে সাথে পর্তুগালে যেকোনো বৈধ ব্যাক্তির রেফারেন্স লাগবে অর্থাৎ ট্যাক্স কার্ড করতে যাদের পর্তুগাল রেসিডেন্স কার্ড আছে তাকে সাথে যেতে হবে। অন্যথায় একজন উকিল এর সাহায্য নিতে পারেন যার জন্য আপনাকে ১৫০ ইউরোর মতো গুনতে হতে পারে।
৪-মেইন প্রসিডিউর হিসাবে পর্তুগালে আপনাকে বৈধ ভাবে প্রবেশের পর জব/কাজের কন্ট্রাক্ট দেখাতে হবে মিনিমাম ৬ মাসের। আর পর্তুগালে এই জব কন্ট্রাক্ট মেনেজ করা অনেকটা দুস্কর বলা চলে। নরমালি কাগজের জন্য এই জব কন্ট্রাক্ট টাকা দিয়ে বাঙালি, পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ান, আফ্রিকানদের কাছ থেকে কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে টাকার পরিমান ২০০০-৩০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে (ক্ষেত্র বেধে কম বেশি হয়ে থাকে) যদি আপনার কোন বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন আপনাকে হেল্প করে জব কন্টাক্টে তাহলে এই টাকার খরচ থেকে বেঁচে যাবেন নিসন্দেহে।
৫- পর্তুগিজ Social security number যা সংক্ষেপে NISS বলা হয়ে থাকে (.Número de Identificação de Segurança Social -NISS ) এটা আপনি যখন পর্তুগালে কোন মালিকের অধীনে কাজ করবেন বা যেকোনো দেশের মালিকের কাছ থেকে কাজের কন্ট্রাক্ট করালে এই নাম্বার পারেন।
৬- জব কন্ট্রাক্ট হাতে পাবার পর প্রত্যেক মাসে আপনাকে নিজের পকেট থেকে ১৮৪,১৪ ইউরো ( মিনিমাম সেলারি ৫৩০ ইউরো এর জন্য এই ট্যাক্স ,তবে সেলারি বেশি দেখালে ট্যাক্স এর পরিমান বেশি হবে ) করে গুনতে হবে। নরমাল হিসাব হল আপনাকে পেপারস হবার আগ পর্যন্ত ট্যাক্স পে করতে হবে। আপনি শুদু মাত্র পেপারস পাবার জন্য কাগজে কলমে জব দেখাবেন অরিজিনালি আপনি নিজের পকেট থেকে সব টাকা খরচ করছেন। পর্তুগীজদের অধীনে জব পেলে এই সব টাকা সেভ হয়ে যাবে কিন্তু দুঃখের বিষয় পর্তুগালে অবৈধ অবস্থায় স্পেশাল কোন লিঙ্ক ছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় পর্তুগীজ জব পাবেন না , আর ভাষাগত একটা প্রবলেম তঁ থেকেই যায়।
৭- নরমালি যারা সেনজেন ভুক্ত দেশের ভিসা নিয়ে পর্তুগাল প্রবেশ করবে তারা মিনিমাম ৬ টা ট্যাক্স দেয়ার পর ইমিগ্রেশনে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে পারবে। সব ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে কপাল অতিশয় ভাল হলে ৬ টা ট্যাক্স দিয়েই রেসিডেন্স পারমিট পেয়ে যার তবে আবার অনেকের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর যারা বিশেষ করে ভিসা ছাড়া অর্থাৎ সাদা পাসপোর্ট নিয়ে পর্তুগাল প্রবেশ করেছেন তারা ২০১৩ সালের আগে পর্যন্ত রেসিডেন্স পেতে লিগ্যালভাবে পর্তুগালে অনেক সময় লেগে যেত কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে সেই আইনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে পর্তুগীজ বর্ডার অ্যান্ড ফরেইনার সার্ভিস (http://www.sef.pt/) ২০১৩ সালের আগে সাদা পাসপোর্টে এন্ট্রি যাদের পর্তুগালে তারা মিনিমাম ১৮-২৪ মাস ট্যাক্স পে করতে হত যা বর্তমানে ১২ থেকে ১৮ তে পরিবর্তন করা হয়েছে । এখন ভিসা ছাড়া যারা যারা পর্তুগালে পেপারস করতে চান তারা এই সুত্র অনুসরন করতে হবে অর্থাৎ আপনাকে মিনিমাম ১২-১৮ টি ট্যাক্স পে করে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে ।
৮- আরও কিছু ডকুমেন্টস লাগবে সেই বিষয় গুলো এখানে আলাদা ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হল।
বাংলাদেশী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় থেকে সত্যায়িত করে আনার পর পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করে বাংলাদেশ এম্বেসী অফ লিসবন থেকে সত্যায়িত করতে হবে।
পর্তুগাল এর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট + ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। ২ টা সার্টিফিকেটই একই অফিস থেকে তুলতে হয়। পর্তুগালের লিসবনে Loja do cidadão নামে একটা অফিস আছে ওই অফিস থেকে ওই সার্টিফিকেট ২ টা তুলতে পারবেন। ২ টার জন্য ১২ ইউরো খরচ হবে।
আপনি যদি অন্য কোন দেশে ৬ মাসের বেশি অবস্থা করেন যেমন লন্ডন, সাইপ্রাস আয়ারল্যান্ড রোমানিয়া এই সকল দেশে ছাত্র ছিলেন পরে সেনজেন ভিসা নিয়ে ইউরোপ ডুকেছেন তাদের ক্ষেত্রে যে যেই দেশে অবস্থা করেছেন ওই ওই দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগবে বাধ্যতামূলক। কিংবা ইতালিয়ান ভিসা নিয়ে ইতালি এসেছেন ৬ মাসের ও বেশি সময় ইতালি কাটিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও ইতালিয়ান পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগবে। অন্য কোন ভাষায় হলে সেটা কে ট্রান্সলেট করে শুধু নোটারি করতে হবে।
আপনি যে ৬ টি ট্যাক্স প্রদান করেছেন সেটার সার্টিফিকেট যা Social security office থেকে আপনি যতবার খুশি বিনা পয়সায় তুলতে পারবেন। তবে সেটার জন্য লম্বা লাইন দাড়াতে হবে।
Proof of address আপনি যে মিউনিসিপালিটি তে থাকেন সেখান থেকে এই সার্টিফিকেট টা নিতে হবে . junta de freguesia এই অফিস থেকে নিতে হবে। আপনি যে এরিয়াতে থাকেন ওই খানকার junta de ফ্রেগুসিয়া থেকে নিতে ১০ ইউরো খরচ পড়বে। তবে ৩ দিন আগে আবেদন করতে হবে। এক দিনে ও নিতে পারেন তবে ৩০ ইউরো চার্জ দিতে হবে।
৯- আপনার ফাইল ইমিগ্রেশন পোর্টালে এন্ট্রি করার পর আপনাকে একটা আই.ডি ও গোপন নম্বর দেয়া হবে . ওই নম্বর ও আইডি নির্দিষ্ট জায়গায় (http://www.sef.pt) প্রবেশ করে আপনি আপনার ফাইল চেক করতে পারবেন। এরা যদি আপনাকে ইন্টারভিউ এর তারিখ দেয় তাহলে ও আপনি দেখতে পাবেন। সাধারণত অনলাইন তারিখ প্রদানের পর ঠিক ওই দিন ই ইমিগ্রেশন থেকে আপনাকে কল করবে। ইন্টারভিউ এর তারিখ পাওয়ার পর উপরোক্ত ডকুমেন্টস সহ টাইম মত ইমিগ্রেশন অফিস এ হাজির হতে হবে। তখন তারা যদি সব ডকুমেন্টস দেখে ওকে মনে করে তাহলে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে নিবে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য। ঠিক ওই সময়টাটে আপনাকে ৮৯০ ইউরো অ্যাপলিকেশন ফি দিতে হবে ইমিগ্রেশন অফিস কে। যেহেতু আপনি ভাষা পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারবেন না তাই আপনার সাথে একজন লয়ার-উকিল সাথে নিয়ে যাওয়া ভাল। উকিল আপনার কাছ থেকে আপনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল পরামর্শ ও কাজ করে দিবে চার্জ নিবে ৩০০-৬০০ ইউরো।
সারাংশঃ আমরা বাঙালি হুজুগে মাতাল বিষয়টা কম বেশি সবার জানা। শুনা কথায় কান দেই বেশি সত্য মিথ্যা যাচাই করি কম। যে লোক প্রথম আলোতে ২/৪ লাইন পর্তুগাল সম্পর্কে লিখছে তাতে হাজারো প্রবাসি ছুটতে শুরু করেছে, কথা চালাচালি শুরু করেছে এর থেকে অর। ভিতরের কাহিনি সে কিছুই জানাই নাই যার কারনে অনেকে বিষয়টা নিয়ে পরিষ্কার না। আশা করি এই পোস্ট পড়ার পর সকলেই বিষয়টি সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।এবং আমরা আশা করি যে, এখন থেকে আপনিও আপনার বন্ধুদের বলতে পারবেন যে এখন বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশান ইন ইউরোপ পর্তুগালে লিগ্যাল হওয়ার বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বলে দিতে।
শেষ করার আগে পর্তুগাল রেসিডেন্স পারমিট পেতে হলে কত খরচ হবে তার একটা ছক বা হিসাব দিয়ে দেই সবার সুবিদারথে ।
ট্যাক্স কার্ড করতে – ১০.৯০ ইউরো (উকিল এর সাহায্য নিলে ১৫০ ইউরো )
জব কন্ট্রাক্ট – ২০০০-২৫০০ ইউরো
ট্যাক্স প্রতি মাসে – ১৮৪,১৪ ইউরো ( মিনিমাম ৬-১০ মাস পে করতে হবে ধরে রাখেন যাদের পাসপোর্টে ভিসা রয়েছে)
ইমিগ্রেশন ফ্রি -৮৯০ ইউরো
অ্যাডভোকেট এর ফ্রি -৩০০-৬০০ ইউরো
আরও একটু বিস্তারিত বললে - বর্তমান সময়ে যাদের লিগ্যাল এন্ট্রি নেই ইউরোপের অর্থাৎ ইউরোপে ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেন নি কিংবা পাসপোর্ট কোন কারনে হারিয়ে ফেলেছেন তারাও পর্তুগাল গিয়ে পেপারস এর জন্য আবেদন করতে পারবেন । ফল সরুপ ব্রিটেনে, ফ্রান্সে, ইতালিতে, গ্রিসে অবৈধ থাকা বেশির ভাগ ই পর্তুগালে পাড়ি জমাচ্ছেন । এখন প্রশ্ন হল কত সময় লাগতে পারে সাদা /ব্ল্যাংক পাসপোর্ট দিয়ে আবেদন করলে ? যারা ভিসা নিয়ে প্রবেশ করবে তাদের জন্য মিনিমাম ১৮০ দিন অর্থাৎ ৬ মাস ট্যাক্স পে করার পর রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদনের রুলস আছে আর সাদা পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে মিনিমাম ৩৬৫ দিন অর্থাৎ ১2 মাস ট্যাক্স প্রদান করে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদনের রুলস । ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইমিগ্রান্টদের চাপের কারনে বরতমানে সাদা পাসপোর্ট আর ভিসা নিয়ে এন্ট্রি করা মানুষের সমান ট্যাক্স দিয়ে আবেদন করতে হচ্ছে । আগে একটা সময় ছিল ফাইল জমা দেয়ার ১ মাসের মধ্যে অ্যাপইয়েন্টমেন্ট ডেট পাওয়া যেত কিন্তু এখন মিনিমাম আপনাকে ৬-১০ মাস অপেক্ষা করা লাগবে । কিন্তু পেপারস পাবেন যদি আপনার মালিকের / যে কোম্পানির আন্ডারে কাজ করেন অর সব ঠিক থাকে । এখন প্রশ্ন হল অ্যাপইয়েন্টমেন্ট ডেট পেলে আপনার কি কি ডকুমেন্টস লাগবে ?
মালিক পক্ষের ডকুমেন্টস -
১. ডিল্কেরেশান মালিক/ কোম্পানি থেকে যে আপনি এখনও জব করছেন ।
২. মালিক/কোম্পানির লাস্ট ৩ মাসের ব্যালেন্স শিট ।( কত টাকা কেনা-বেচা করছে গত তিন মাসে )
৩. IVA ডিল্কেরেশান লাস্ট ৩ মাসের।
৪. IVA পেমেন্ট কনফারমেশন ।
৫. মালিকের রেসিডেন্স কার্ড এর কপি ।
৬. Inicio De Actividade - মানে কবে আপনার মালিকের বিজনেস শুরু হইছে ।
৭. Não tem dívida de Finanças সার্টিফিকেট - অর্থাৎ ট্যাক্স অফিসে মালিকের নামে কোন পাওনা নাই, দেনা নাই সার্টিফিকেট ।
৮. Não tem dívida de Segurança Social - সোশ্যাল সিরিউরিটি অফিসে মালিকের কাছে কোন পেমেন্ট বাকি নাই সেটার সার্টিফিকেট ।
এই ডকুমেন্টস গুল মালিক পক্ষ দিবে, এখন আসি আপনার নিজের কি কি সংগ্রহ করতে হবে ?
1. আপনার অরিজিনাল পাসপোর্ট + কপি
২. পর্তুগীজ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ।
৩. পর্তুগীজ সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার ।
৪. পর্তুগালের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ।
৫. বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
৬. যেসকল দেশের ৬ মাসের বেশি ছিলেন বা ভিসার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি অই সকল দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
৭. পর্তুগালের মিউনিসিপাল থেকে বর্তমানে যে জায়গায় অবস্থান করতেছেন তার প্রমানাদি - Atestado de Junta Freguesia - প্রফ অফ অ্যাড্রেস বলে ইংলিশ এ ।
৮. ইমিগ্রেশন অথোরিটির দেয়ার পুরন করা আবেদন ফর্ম ।
৯. মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স এর পেপারস ।
১০. সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে ডিক্লেয়ারেশন কত টা ট্যাক্স পে করেছেন , এতা আপাতত না নিলে ও চলে যেহেতু তারা অনলাইনে দেখতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭