somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি সেদিন সত্যি সত্যি মরেই যেতাম

২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামনের পাটির উপরের দিকে অদৃশ্য একটি দাঁত, থুঁতনিতে গিঁটলু পাকানো সেলাইয়ের দাগ, মুখের এখানে-ওখানে আঘাতের চিহ্ন আর কয়েক সপ্তাহের না কামানো দাঁড়ি-গোঁফে ঠিক বাংলা সিনেমার দাগীর আসামীর মত চেহারাটার দিকে তাকিয়ে আম্মু যখন ঠিক মত ঔষধ না লাগানোয় উদ্বিগ্ন হন, দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া নিয়ে গড়িমসি করায় বিরক্ত হন কিংবা সাবধানে গাড়িতে চড়ার বিষয়ে সাবধান করে দেন, তখন আপনা আপনিই মাথায় চলে আসে, “কোথায় হারাতো এত ভালবাসা, যদি সত্যি সত্যিই সেদিন মরে যেতাম”!

সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে মুখের উপর সিএনজির লৌহ বেষ্টনীটা এসে আঘাত হেনে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। রক্তে ভেসে যাওয়া মুখটা চেপে ধরে যখন মাত্র চার-পাঁচ হাত দূরে দাঁড়ানো ট্রাকটা দেখতে পেলাম, তখনি বুঝে গেলাম, বড় বাঁচা বেঁচে গেছি আজ!

নিজে নিজে সিএনজির দরজা খুলে নামতে নামতেই টের পেলাম একটা মোবাইল ফোন হাপিস হয়ে গিয়েছে! ভাগ্যিস মনে করে ল্যাপটপের ব্যাগটা কাঁধে নিয়েছিলাম। আহত ড্রাইভারটাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে আমিও টিস্যুতে মুখ চেপে ধরে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা হাসপাতালে। সে এক নতুন অভিজ্ঞতা!

ইমারজেন্সীতে দায়িত্বরত ডাক্তার দেখেই বললেন, ‘আপনাকে তো ভর্তি হতে হবে, কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে আসেন!’ রক্তাক্ত মুখে দৌড়ে গিয়ে টিকেট নিলাম। এবার, যিনি রেজিস্ট্রেশন করছেন, তাঁর পালা। আমার ভিজিটিঙ কার্ড দেখেও কি-বোর্ডে অক্ষর খুঁজে খুঁজে বের করতে তাঁর দশ মিনিট মত লাগল! এরপর তিনি আমার ফোন নাম্বার চাইলে পাশের এক ভদ্রমহিলা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, ভিজিটিঙ কার্ডে মানুষের ফোন নাম্বারও দেয়া থাকে! এরপর নার্সের সাহায্যে ওয়ার্ডে গিয়েই অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়া। ওটির নির্ধারিত পোশাক পরা, ঔষধপত্র কেনা। ছোট ভাইটা আর এক বন্ধু এসে পড়ায় সে যাত্রায় রক্ষা।

ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর, কর্তব্যরত ডাক্তারের বিরক্তিও ছিল চোখে পড়ার মত। কারন, তাঁর দুইটা সিজারের মধ্যিখানে আমাকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে! যাই হোক, এর মাঝে ওখানকারই ছাত্র আমার ভাস্তে এসে পড়ায় আর খুব একটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নি। অপারেশন শেষে ছোটখাট অন্যান্য টেস্ট আর ফর্মালিটি শেষে সন্ধ্যায় বাসায় চলে আসতে পেরেছিলাম।

বাসায় এসে বিশ্রামে ছিলাম ক’দিন। লোকজনের দেখতে আসা, দেশের পরিবহন ব্যবস্থার সংকট, আমার চিরকালের অসাবধানী চলাফেরা ইত্যাকার আলোচনায় বেশ কেটেছে সময়। এরপর আবার ন’টা-পাঁচটা অফিস শুরু। চোখের পলকে কেটে গিয়েছে একটা মাস।

ভাবছি, কেমন হত আজকের দিনটা, যদি সেদিন সত্যি সত্যি নাই হয়ে যেতাম? এ শতকের ব্যস্ত মানুষের শোকের আয়ু নাকি তিনদিন! চতুর্থদিন হতে ‘এই মতে পোহাইবে রাত, জাগিবে জগৎ ‘পরে জাগ্রত প্রভাত’। গত বছর বন্ধু মাসুদ যখন অস্ট্রেলিয়ায় হুট করে মরে গেল, তখন মনে হয়েছিল, এ দুঃখ ভোলা সম্ভব নয়। কিন্তু, অবাক করার বিষয়, ওর কথা প্রায় ভুলতেই বসেছি। ফেসবুকে এখনো চালু থাকা ওর অ্যাকাউন্টটা দেখে মাঝে মাঝে মনে পড়ে- এই যা!

বন্ধুরা-পরিচিতরা একটু দুঃখ করতেন। দুই-একজন হয়তো ‘ছেলেটা বড় ভাল ছিল’ সার্টিফিকেটও দিতেন! কূলখানি, বছর ঘুরে মিলাদ। এরপরে নিরেট শুন্যতা।

এ পৃথিবী তো কারো জন্যে বসে থাকে না; এগিয়ে যায়!

কিন্তু, আজ হঠাৎ যে কালবৈশাখী এসে উদ্দাম হাওয়ায় মনটাকে যেমন করে ভিজিয়ে দিয়েছে, সে কী আর হোত! বহু বছর পরে শখ করে কেনা ব্যাডমিন্টনের র্যা কেটটা দিয়ে এবার মাত্র দু’তিনদিন খেলেছি। পরেরবার ধুমিয়ে খেলব ভেবে দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছি। এভাবেই হয়তো ঝুলে থাকত স্মৃতি হয়ে। মাস দুয়েক আগে কেনা লুঙ্গীটা এখনো পরা হয় নি-ভাঁজই খোলা হয় নি। এভাবেই হয়তো পড়ে থাকত আরো কিছুকাল!

গত ক’বছরে কেনা শ’পাঁচেক বইয়ের অর্ধেকের বেশিই আজ পর্যন্ত পাতা উল্টিয়েও দেখি নি। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে একটা তালিকা করার কাজ শুরু করেছিলাম- শেষ করি নি। কখনোই সে আর শেষ হোত না! মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকা কয়েকটি আর ইতিমধ্যেই শুরু করা আরো কিছু অর্ধসমাপ্ত লেখার অপমৃত্যু হোত। এতদিনে মগজের নিউরনের সাথে পঁচে-গলে অন্তরীক্ষে বিলীন হয়ে যেত!

মানুষটাই হারিয়ে গেলে, আর কোন কিছুই হারাবার ভয় থাকে না- এত কিছু মাঝে এই বুঝেছি সার, মানবজন্মে কেবলি এপার-ওপার!

গত ২৭ মার্চ অফিস যাওয়ার পথে সিএনজি আর ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয়েছিলাম। একটু এদিক-ওদিক হলেই এতদিনে সকল কিছুর উর্ধ্বে উঠে গিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে যেতাম। এ সময়ে বন্ধুদের আন্তরিকতা-ভালবাসায় কৃতজ্ঞতাবোধ করছি। ভালবাসাই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ওয়ান ম্যান আর্মি!!!!!

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

ইন্টারিম সরকারে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এর চমক দিয়ে যাচ্ছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। ভঙ্গুর, মেরুদন্ডহীন শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু, গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া একটি দেশের দায়িত্ব কাঁধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

পেপ্যাল লোগোটি বিবিসি ওয়েব পেইজ থেকে সংগৃহিত।

ভূমিকা

বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখন এক অনস্বীকার্য শক্তি। আপওয়ার্ক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বৃষ্টি এলেই মন নরম নরম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



যত বিতৃষ্ণা এক লহমায় যায় দূরে চলে, বৃষ্টি এলেই,
কী ফুরফুরে হাওয়া বয় দেহ জুড়ে, ভালো লাগে আমার
ভালো লাগে জমানো কর্মে মন দিতে,
দেহ যেন পাখিরর পালক, ছুটোছুটিতে নেই ক্লান্তি;
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় সার্কাস দল!!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

আওয়ামিলীগ আমলে আওয়ামি মন্ত্রী এম্পিরা বিনোদনবঞ্চিত :( এই দেশের জনগনকে বিনোদিত করত তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের দ্বারা। এখন এই স্থান একছত্রভাবে দখল করেছে বিএনপি !! দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:২৩


সিরাজদিখানের মাহফুজুর রহমান সাহেবের কান্ড দেখে মনে হলো, তিনি ব্রিটিশ আমলের একটা গল্প খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। গল্পটা পুরনো, কিন্তু ঘুষখোরদের মধ্যে এখনো জনপ্রিয়। এক ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বাংলায় দুর্বল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×