somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই মেলার কের্তন

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসা থেকে বাহিরে বেরিয়ে বাস রিক্সা মোটরসাইকেল কিছুই পাচ্ছিলাম না। আমার গন্তব্য বইমেলা। যেহেতু এক খানা কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে তাই নিজ দায়িত্বে ও তাগিদে বই মেলায় যাবার জন্য মনের ভেতর খছমচ করছিলো আজ সারাদিন। তো বুকের খছমচিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম বই মেলায়।



বইমেলার প্রথম গেটে ভিড়ের ঠ্যালা ঠেলি দেখে যতটুকু মোবাইল মানিব্যাগ হারাবার ভয় পাচ্ছিলাম তার থেকে বেশি আশা জাগানিয়া ছিলো যে আজ বই পাঠকরা খপাত করে ধরবে আর ব্যাগ ভড়বে। ঠেলে গুতিয়ে, পিছন দিকে আপত্তিকর স্পর্শের অনুভব নিয়ে (সম্ভাবত তাহা অনিচ্ছাকৃত ছিলো) মেলার গেট ঠেলে ঢুকে পরলাম। মোবাইল ও মানিব্যাগের নিরাপদ অস্তিত্ব আমাকে স্বস্তি দিলো।

লোকজন কে জিজ্ঞাসা করতে করতে, হাতিয়ে হাতিয়ে খুজে পেলাম আমার স্টল। জলছবি-৮০৬ । প্রকাশকের ব্যাজার মুখ বলে দেয় বিক্রির অবস্থা গোল্লা। তারপরেও জিজ্ঞাসা করতে হয় বলে জিজ্ঞাসা করলাম। কি, বিক্রি কেমন? প্রকাশক ভাই। নিম তেতো মুখ করে বললেন, আপনি কি আসছেন তামাশা করতে? এই যাদের দেখছেন এরা আমার মনে হয় তাদের পিতৃ কুলের কারো সময়েই কফি নামক পানীয় গলধকরন করে নাই। যে পরিমানে কফি খাচ্ছে তার সিকি পরিমান বই কেউ কেনে না। আর আপনি জিগান বইয়ের বিক্রি কেমন।

এইরকম তিতা মিঠা আলাপে সময় পার করছিলাম। হঠাৎ আড় চোখে একজন সুন্দরী তরুণী কে দেখলাম আমার বই খানা নাড়াচাড়া করছে। আগ্রহি হয়ে একটু আগ বাড়িয়ে কাছে গেলাম। রমনী মিস্টি হাসির সাথে বই খানা খুলে সেল্ফি তুলে আমাকে চিরতরে বেদনার কুয়ায় ফেলে বই খানা ফেলে পালিয়ে গেল। নারী মাত্রই ছলনাময়ী।

এমন হৃদয় খণ্ডন ঘটানার পর প্রকাশকের মিচকা হাসি সহ্য করতে না পেরে আমাদের রুপক সাধু ভাইয়ের বইয়ের সন্ধানে নেমে গেলাম। আমার স্টলের পাশেই তার বইয়ের প্রদর্শনী কেন্দ্র। সেথাও তন্বী তরুনী মোহনীয় ঢং এ দাঁড়িয়ে। তাকে সাধু ভাইয়ের বইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই উড়ে গিয়ে বই খানা যত্নের সাথে আমায় বুঝিয়ে দিলেন। লেখক আশেপাশে ঘাপটি মেরে আছেন কি না জিজ্ঞাসা করতে লাস্যময় এক খানা হাসি উপহার দয়ে উর্বশী আমাকে নিরাশ করলো।



এর পর আমাদের ব্লগের লাস্যময়ীর (শায়মা) বইয়ের দিকে কু নজর দেবার জন্য ছুটলাম। চিলে কোঠায় তিনি কি কি সব কান্ড ঘটিয়েছেন তার সবিস্তর বর্ননা সমেত বই খানা সংগ্রের জন্য আর এক মনহরিনির পানে চাহিয়া রইলাম। তিনি কোন ভাবেই চিলে কোঠার কান্ড কারখানার স্বরুপ উন্মোচন করতে পারলেন না। আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম বই কি ছাপে নাই। লাস্যময়ী মাথা নাড়িয়ে বোঝালেন ছাপিয়েছে কিন্তু খুজে পাচ্ছেন না। (লাস্যময়ীরা কথা কম বলে, কেন?) শাড়ির আঁচল অমন ত্বন্বী কোমড়ে ঠেস দিয়ে গুজে বইয়ের হদিস বের করতে লেগে গেলেন। আমি চেয়ে চেয়া থাকি সারাদিন। আমার একটুও কষ্ট হয় নাই। আমি চাচ্ছিলাম যেন কখনোই না পাওয়া যায়। কিন্তু বিধিবাম। পাওয়া গেছে। চিলে কোঠার প্রেম।



বই দুইখনা সংগ্রহ করে। হুমায়ুন কে মনে করলাম। তার লেখা তিন কন্যা কিনে নিজেকে একটা উপহার দিলাম। এরপর আসলে কিচ্ছু করার ছিল না। তাই ফুচকা খেতে চলে গেলাম খাবারের স্টলে। হায় মাবুদ! হায় কপাল! বিকেলের সেই পাঠকের ঢেউ খাদকের গুষ্টিতে পরিনত হতে দেখে নিজেই চমকে গেলাম। ফুড আপা, ভাইয়াদের দৌরাত্ম ও দেখতে পেলাম। সব নদী সাগরে মিলায়। খাদক কুলের খাই খাই দেখে আমার ইহাই মনে হলো। সকল পাঠক হাজির বিরিয়ানি বা ফুচকায় মিলায়। মেলার ৯০ শতাংশ পাঠক আসলে ছিলো খাদক বজলুর ভাগ্না ভাগ্নি বৃন্দ। বই হাতে আমি একা ছিলাম অসহায় ভ্যাবলা কুমার হয়ে। কিছু মুখে গুজে। স্বাদ ফাদের তোয়াক্কা না করে বইয়ের স্টলে ফিরে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

ওমা! চেয়ে দেখি তারাশঙ্কর বাবুর কীর্তিহাটের কড়চা দেখি আমার দিকে তাকিয়ে অসভ্যের মতো হাসছে। যেন বলছে কই ছিলা চাঁদু? বইয়ের দোকানে হেদিয়ে পরে আছি দেখতে পাও না। নাও তুলে নাও। জমজ ভাই। শুয়ে থাকতে থাকতে আমাদের পিঠ ব্যথা হয়ে গেলো। আমিও তারা বাবুর অসম্মান হবে ভেবে আর দেড়ি করলাম না। ঝটপট ব্যাগে পুরে নিলাম। ভয় পাবেন না। দাম দিয়ে দিয়েছি। পাশ থেকে বিভুতি বাবুর তারানাথ তান্ত্রিক কেঁকিয়ে উঠলো। মিনসের কি চোখে ন্যাবা হয়েছে। আমি হেথায় কেলিয়ে পরে আছি। দেখতে পাচ্ছ না!? নাও আমাকেও তুলে নাও। কতো আর যাবে। এতো কেপ্পন কেন গা তুমি?






তারপর আর কি সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এলো। আমি যদিও রাত কানা নই কিন্তু বাড়ির প্রতি এক অমঘ টান আমাকে টেনে বাড়ির দিকে ডায় ডায় বায় বায় করে নিয়ে চললো। আমি চেয়ে চেয়ে থাকি সারাদিন, যেন ওই চোখে সাগরেরও নীল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এত হট্টগোল এত সুরাসুর এখানে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬



নিত্যতই লেগে থাকে হট্টগোল, রাজপথে জায়গা নেই,
হাঁটতে গেলেই মানুষের ধাক্কায় হারাই খেই,
বিশৃঙ্খল নগরীর বুকে স্বার্থপরতার বসবাস;
এখানে মাটিতে পা ফেললেই বুকে মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস।

বাস, কার, রিক্সা, ভ্যা ন, ম্যা ক্সি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×