জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক দল আম্লিক-বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় কম। অন্যদিকে এনসিপির প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বাংলাদেশে যে লুটপাটের রাজনীতি চলছে এনসিপির মাধ্যমে তা হয়তো অবসান ঘটবে। মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে তরুণদের রাজনৈতিক দলের উপর যে তারা দেশকে নতুন পথের দিশা দেখাবে। কিন্তু ভুল রাজনীতির জন্য তা আজ ভেস্তে যেতে বসেছে।
যখন উপদেষ্টা পরিষদ ঘটন করা হয়েছিলো তখন থেকে ভুলের শুরু । একাধিক ছাত্রদের উপদেষ্টা বানিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন কে কলুষিত করার মেটিকুলাস ডিজাইন তৈয়ার করা হয়েছিলো। পাশাপাশি ছাত্রদের দিয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে আমলাদের অপসারণ ও কোর্ট থেকে বিচারপতি অপসারণের মতো কাজ করানো হয়েছে। প্রশাসন রদবদলে একছত্র ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে ছাত্রদের। ডিসি নিয়োগ ও বদলির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছাত্রদের। সংস্কার কমিশনের মধ্যে একজন ছাত্র প্রতিনিধি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিলো। এভাবেই পুরো সিস্টেমের মধ্যে অবাধ বিচরণের সুযোগ পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে তারা।
বাংলাদেশের আমলা ও ব্যবসায়ীরা নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে যে কারো সাথে হাত মিলাতে পারে। তারা যখন দেখতে পেল ছাত্রদের হাতেই তাদের লাইফলাইন তখন তাদের অতীতের সেই ঘৃণিত কর্ম পুনরায় আরম্ভ করে। ছাত্রদের তারা এক্সট্রা ইনকামের সুযোগ করে দেয়। তদবীর বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য থেকে ব্যবসায়ীদের থেকে অনৈতিক সুযোগ সব কিছুতেই ছাত্ররা জড়িয়ে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ছাত্রদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির উপর। তাদের জনসমর্থন দিন দিন কমে যাচ্ছে। দল হিসাবে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে কিনা অনেকেই সন্দিহান।
এনসিপি ও বৈবিছার অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্তত দুইজন এপিএসকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের এপিএস জুলাই অভ্যুত্থানের অগ্রগামী নেতা তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধে ডাক্তারদের বদলী বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এনসিপির যুগ্মসচিব তানভীরের বিরুদ্ধে ডিসিদের বদলী ও এনসিটিবির কাজে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এনসিপির দলীয় বৈঠকে নাহিদ ইসলাম নিজেই বলেছেন, এনসিপির রাজনীতি ষাট ভাগ শেষ হয়ে গেছে। দলের নেতাকর্মীরা সচেতন না হলে বাকি ৪০ ভাগও শেষ হয়ে যাবে। দলের অনেক শীর্ষ নেতাদের বিলাস বহুল নির্বাচনী প্রচারণা ও চলাফেরায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এই সভায় এনসিপির নেতা তানভীর কে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিসন্দেহে ভালো কাজ হিসাবে তা বাহবা পাওয়ার যোগ্য । একই ভাবে দলের অন্যান্য সদস্যরা করাপশনে জড়িত হয়ে পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অব্যহতি প্রাপ্ত এপিএস দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে কারণ তারা অনেক অনিয়মের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এনসিপি এবং বৈবিছার রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল বিএনপির সমালোচনা করে। নিজেরা কিভাবে ভোটব্যাংক বাড়াবে সেদিকে তাদের নজর কম। তারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হতে দিবে না কিন্তু তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় সংস্কার কে ম্যান্ডেট হিসাবে তারা দাবী করছে না। তারা বলে প্রশাসন পুরো বিএনপির দখলে কিন্তু জামায়াতে ইসলামী কে তারা চোখে দেখে না। এনসিপির অনেক নেতাদের পিছনে জামায়াতের ব্যবসায়ীরা ইনভেস্ট করছে যা এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের কথায় বুঝা যাচ্ছে। বিনা প্রতিদানে কেউ কারো পিছনে ইনভেস্ট করে ? সরকার ও এনসিপির নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলাদের পুনর্বাসনের প্রমাণ ফাঁস হচ্ছে প্রতিদিন । এভাবেই স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথ সুগম হচ্ছে।