somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

হারিয়েছি অনেক কিছু....

২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে মনের অজান্তেই অন্যকোথাও হেটে যাই। বাড়ির সামনে দিয়ে কয়েকশত মিটার দূরে হেটে চলে যাই।
আমি ৫/৬ তলায় উঠতে সাধারণত লিফটে উঠি না। হেটেই উঠে যাই। কখনো কখনো এমনও হয়েছে- হেটে হেটে নিজের ফ্ল্যাট পেরিয়ে আরও কয়েক তলা উপরে উঠে গিয়েছি। একবার আমার ফ্ল্যাট পেরিয়ে আরও দুই তলা উপরে উঠে দরজা কলবেল বাজিয়েছি। দরজা খুলে দেওয়ার পর যথা নিয়মে ঘরের ভেতর জুতা-মোজা খুলে ভেতরে চলে যেতে যেতে শার্টের বোতাম খুলে ফেলছি- "আংকেল, আপনি কেমন আছেন?"- জিজ্ঞেস করার পর হুশ ফিরে দেখতে পাই- আমি অন্য ঘরে চলে এসেছি!


বার্ধক্যে পৌঁছে অনুভব করি- আমার, আমাদের একটা শৈশব কৈশোর ছিলো। বৈশ্বিক যন্ত্রায়ণ আর বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতিতে বর্তমান পৃথিবীতে শিশুরা তাদের শৈশব হারায়, কিশোররা হারায় তাদের কৈশোর। পৌড়রা হারিয়ে তাদের অতীত। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খেটেখুটে খাওয়া মানুষের ঘরের যে শিশুদের হাতে বই ধরার কথা, সে হাত যখন হাতুড়ি ধরে, তখন তারা তাদের শৈশব হারায়। তেমনিভাবে যে কিশোর পড়ার ভারে নুয়ে পড়ে, পরিবারের চাপের কাছে সময় হারায়, তারাও তো তাদের কৈশোর হারায়। উচ্চবিত্ত পরিবারের যে শিশুরা সর্বাধুনিক ইলেট্রনিক্স গ্যাজেটস নিয়ে সময় কাটায়- তারাও হারায় সমাজ আর জগৎ সংসারের কঠিন বাস্তবতা।

কত রকমের হারিয়ে যাওয়া যে আছে জীবনে। কতকিছু যে হারাই- চাবি থেকে চশমা, কলম থেকে বইপত্র, চিঠি থেকে সেলফোন। হারাবার বস্তুর কমতি নেই জীবনে। জিনিস হারাই পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে, বাড়ীতে- অফিসে। ঠিকানা হারাই- অনেক বন্ধু স্বজনের বাড়ীর নম্বর হারিয়ে ফেলেছি। হারিয়ে ফেলেছি ফোন নম্বর!

স্মৃতিও তো হারাই আমরা। ভুলে যাই প্রিয়জনের নাম। ছেলেবেলার বন্ধুরা যখন পড়ন্ত বেলায় সামনে এসে দাঁড়ায়, হাতড়ে বেড়াই কি যে ছিল নামটা- এটা কি বেলাল, না কি রমেন, জোসেফ ও তো হতে পারে। ভুলে যাই দিনক্ষন - জন্মদিন ভুলি, বার্ষিকী বিস্মৃত হই। কত ঘটনার স্মৃতি হারিয়ে যায়!

নিজেকে তো হারিয়ে ফেলি নানান সময়ে- চিন্তায় ডুবে যাই পারিপার্শ্বিকতাকে ভুলে গিয়ে। হারিয়ে ফেলি সত্যিকারের আমিকে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই আমিটি কে। আমার নিজের মাঝে শত শত আমিকে দেখি - নিযেকে জানা আমার ফুরোয় না।

অন্যের মাঝেও তো হারায় মানুষ- প্রেমে, মায়ায়, মমতায়। এ হারানোর সুখ আর আনন্দের কি তুলনা চলে? এ হারানো মানুষকে রিক্ত করে না, সিক্ত করে, শূন্য করে না, পূর্ণ করে। এ হারানো মানুষ অনেক সময়ে টের পায় না- হঠাৎই তা হয়ে যায়।

কখনো কখনো বিশ্বাস হারাই মানুষের ওপরে। কখনো হয়তো কেউ বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে- সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে। আর বিশ্বাস ফিরে আসে না- হারিয়ে যায় চিরদিনের মতো। আস্হা হারাই নিয়মে, মূল্যবোধে। আস্হা হারাই রাষ্ট্রের ওপরে, নেতৃত্বের ওপরে। ভাবি রাষ্ট্রে সমতার প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে, ন্যায় লঙ্ঘিত হবে না, মানবিকতা রক্ষিত হবে। যখন এর কিছুই হয় না, আমাদের আস্হার জায়গাটি থাকে না!

আবার অনেক মানুষকে অন্যভাবেও হারিয়েছি। বহু মানুষকে যে ভাবে দেখেছি, পরে তাঁরা সেখান থেকে হারিয়ে গেছে। বহু সম্মানিত মানুষের চারিত্রিক পদস্খলন দেখেছি- তাঁরা আমাদের শ্রদ্ধা আর আস্হা হারিয়েছেন। বহু বান্ধব তাঁদের মত ও পথ বদলেছেন, নানান মোহের কাছে পরাজিত হয়েছেন। যা তাঁরা হতে পারতেন, তা তাঁরা হন নি, যা তাঁরা করতে পারতেন, তা তাঁরা করেন নি। সুতরাং তাঁদেরও তো আমরা হারিয়েছি, সর্ব অর্থেই। নেতা নৈতিকতা হারায়, জাতি পথ হারায়, দেশ লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে।

অনেক সময়ে হারিয়ে ফেলি ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মূল্যবোধ। পরিবর্তনের নাম করে বদলে ফেলি সনাতন মূল্যবোধ। আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অস্বীকার করি ঐতিহ্য। নানান স্বার্থ প্রনোদিত হয়ে বদলে ফেলি ইতিহাস। আমাদের দেশের সংস্কৃতি, স্বকীয়তা আর মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে এ হারানো বড় কষ্টদায়ক। আমরা বিস্মৃত হই যে, এগুলো হারালে আমাদের আর কিছুই থাকে না।

আমরা তো মানবতাও হারাই। আমাদের ক্রিয়া-কর্মে আমরা প্রায়শ:ই মানবতা বলি দেই - ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে, শুদ্ধির নামে, ক্ষমতার দম্ভে, বিত্তের দাপটে। যখন সমাজে, রাষ্ট্রে যে কোন সংখ্যালঘুরা দলিত হয়, যখন সংখ্যাগুরুদের দ্বারা পিষ্ট হয়, তখন মানবতাকেই হারাই। দীর্ঘ বছর যাবত প্যালেস্টাইনে যা ঘটছে, ভারতে, চীনের উইঘুরে যা ঘটছে তাতো মানবতা হারানোর নিকৃষ্টতম উদাহরণ। চূড়ান্ত বিচারে মানুষ হিসেবে মানবতাকে যখন আমরা হারাই, তখন আমরা যে আর মানুষ থাকি না, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

অনেক কিছু হারানোর পরে এবার নিজেকে হারানোর পালা- যেখানে হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঈশ্বরের ভুল ছায়া সিরিজ তৃতীয় পর্ব: বাতাস যার পায়ে পথ খোঁজে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৭



"প্রতিটি গল্প একটি প্রশ্ন নিয়ে জন্ম নেয়।
এই গল্পের প্রশ্ন ছিল—

ভালোবাসা কি নিয়ন্ত্রণ চায়?
না কি নিয়ন্ত্রণ চাইলেই তা আর ভালোবাসা থাকে না?"


'ঈশ্বরের ভুল ছায়া' সিরিজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ শুনতে চায়না, সবাই শোনাতে চায়....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ৯:০৯

কেউ শুনতে চায়না, সবাই শোনাতে চায়....

আত্মকেন্দ্রীক দুনিয়ায় এখন আনন্দ বা দুঃখ হলে ভাগ করে নেবার মানুষের খুব অভাব। ধরুন আপনি একটি আনন্দ সংবাদ ভাগ করে নিতে চান। যাকে বলছেন সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ‘৫ মিনিটও পাবে না পালানোর জন্য…’,

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



পালানোর জন্য পাঁচ মিনিটও সময় পাবেন না..., মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদী দলগুলির। তাদের দাবি ইউনূস সরকারের গঠিত মহিলা বিষয়ক সংস্কার কমিশন ‘ইসলাম-বিরোধী’, তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফারুকীর সংবাদ সম্মেলন, সিদ্দিকুর রহমানকে গণধোলাই এবং ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা মে, ২০২৫ রাত ২:০৮


সারাদেশ যখন ভারত পাকিস্তানের ফেকু যুদ্ধ নিয়ে প্রেডিকশন করছে তখন কতিপয় লোক ব্যস্ত সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকীকে বিতর্কিত প্রশ্ন করতে, কেউ ব্যস্ত অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান কে গণধোলাই দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এন,সি,পি-কে টিকে থাকতে হলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০২ রা মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৪

আমি যত দূর জেনেছি, ৭০-এর দশকে আওয়ামী লীগের সাথে জাসদের তুমুল মতানৈক্য হয়। পরবর্তীতে, ক্ষমতা হাতে পেয়েই, আওয়ামী লীগ জাসদ নির্মুলে লেগে যায়। কয়েক হাজার জাসদ সদস্যকে হত্যা করে। জাসদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×