somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদিতি ( দ্বিতীয় পর্বের প্রথম পর্ব)

১২ ই জুন, ২০২৩ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেষ রুগী দেখতে দেখতে বেশ রাত হয়ে গেলো । আমার ছোট্ট কামড়ার ওপাশ থেকে সহেলীর বিরক্তের আলোমত পাচ্ছিলাম । অবশ্য ওঁর কোন দোষ নেই । প্রায় প্রতদিন যদি রাত নয়টা দশটা বাজিয়ে দেই বেচারার আর করার কিবা আছে। আসলে দোষ আমারি রুগী আমি অল্প দেখায় ছেড়ে দিতে পারি না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না দেখলে আমার আবার তেমন সুবিধা হয় না । সহেলী অবশ্য প্রায় আমাকে বলে এতোক্ষন লাগিয়ে রুগী দেখি বলেই নাকি আমার বাজারে তেমন কাটতি নেই । লোকজন এক বসায় এক থেকে দেড়শ রুগী দেখে ফেলে আর আমি সারা বিকেল সন্ধ্যা আর রাত ধরে পঞ্চাশ জন রুগী দেখি । তারপরে আমার ফিস ও কম । লোকে বলে যে ডাক্তার রুগীর নাড়ী ধরেই যদি রোগ না বলে দেয় সে আবার ডাক্তার নাকি । আমি অমন পারি না। আমাকে রুগীর নাড়ী না তার মস্তিষ্কের অলি গলিতে ঘুড়ে দেখতে হয় । রুগীর নাড়ী হয়তো বলে দেয় রোগের সন্ধান কিন্তু মস্তিষ্ক খুবি বুদ্ধিমান। সে তার রোগ লুকিয়ে রাখে কোন খুদ্র রক্ত কনিকায় বা কোন গোলক ধাঁধার ভেতরে । আমাকে সেই গোলোক ধাঁধার রহস্য ভেদ করতে মস্তিষ্কের সাথে একটা অদ্ভুত রাজা উজির মারার খেলা খেলতে বসতে হয় । প্রায় বেশিরভাগ খেলায় মস্তিষ্ক জিতে গেলেও আমি মস্তিষ্ক কে একদম কোন রকম সুজুগ দেই না পুনরায় সেই খেলা শুরু করার । সহেলী কে ছুটি দিয়ে আমি দোতলায় উঠে গেলাম । আমার চেম্বার পৈতৃক সুত্রে পাওয়া আমার বাড়ির নিচে যা আগে গ্যারেজ নামে ছিলো যেহেতু গাড়ি একটা অহেতুক বস্তু তাই উহা বেঁচে দিয়ে চেম্বার বানিয়ে ফেললাম ।

আমি একা মানুষ এতো রাত্রে আমাকে রান্না করে হাত পুরিয়ে খেতে হয়। সহেলী অবশ্য মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে এটা ওটা বানিয়ে আনে দুপুরে অল্প খেয়ে বাকিটা রাত্রের জন্য রেখে দেই । রান্না নামক বস্তুতে আমি কোন কালেই তেমন পাকা ছিলাম না । আজো সে কি এক মানচুরিয়ান বানিয়ে এনেছে। বাঁধাকপি সবজিটা খেতে যে এতো চমৎকার হতে পারে এটা তেমন জানা ছিলো না । ফ্রীজে রাখা দুই দিন আগের পুরানো পাউরুটি টোস্ট করে মানচুরিয়ানের সাথে খেয়া নেয়া যাবে । সাথে এক পেয়ালা হোমরস । রুগী দেখার পরে এক পেয়ালা হোমরস না হলে আমার নিজের মস্তিষ্কই আমাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয় । পাউরুটি টা টোস্ট করে এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে মানুচুরিয়ান নামক বাঁধাকপির তরকারিতে জাস্ট একটা কামড় দিয়েছি ওমনি ঘটাং ঘং করে ঘন্টি বেজে উঠলো। মেজাজ টা বিগড়ে গেলো । আমি নিশ্চিত সহেলী ফেরত এসেছে। এক গামলা গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত সেই সাথে ঘিয়ের দুর্গন্ধ দিয়ে মাখা আলু ভর্তা নিয়ে হাশিমুখে দড়জায় দাঁড়িয়ে বলবে আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে আগে বলি নাই ঘি দিয়ে মাখা আলুভর্তা আর মসুর ডাল অতুলনীয় । সরে দাড়ান ডালটা আমি এখনি রেধে দিচ্ছি । ডাল রান্না একটা আর্ট এটা সবাই পারে না কিন্তু আমি পারি । এই মেয়ে কে আমি কিভাবে বোঝাই আলুভর্তা আমার মোটেও প্রীয় কোন খাদ্যবস্তু না ডাল তো একদম না । ঘটাং ঘটাং করে ঘন্টা বাজতেই লাগলো । আমি নিশ্চিত ওটা সহেলী । হাতে গরম ভাতের বাটির কারনে হয়তো হাত পুড়ে যাচ্ছে । ইচ্ছে করে একটু দেরি করলে কেমন হয় । হাত পুরুক । ওঁর বোঝা উচিত আমি এতো রাতে এমন কোন নারীর আগমন চাই না যার হাতে আলুভর্তা আর গরম ভাত থাকবে ।

দড়জা খুলতেই আমাকে বেশ জোড়ে ধাক্কা দিয়ে একজন ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে পরলো । আশেপাশে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা ড্রয়িং রুমে চলে গেলো যেন বহুদিনের চেনা। এতো রাতে অচেনা একজন আমার ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে পা নাচাচ্ছে আর সিগারেট টানছে এটা হজম করতে আমার বেশ সময় লাগলো । বুঝলাম আজ রাতের খাওয়া আমার মাথায় উঠলো । হঠাত করে কিছু ঘটে গেলে আমার দুই হাটূ খটর খটর কাঁপতে থাকে । এখনো কাঁপছে । কোন রকমে পা দুট দিয়ে নিজের ভাড়ি শরীলটা কে টেনে নিজেকে লোকটার সামনে এনে দাড়া করালাম । হাতে সোমরসের পাত্র ছিলো । এক চুমুক দিয়ে মস্তিষ্কের চমকে যাওয়াটা কব্জায় আনার জন্য চুমুক দিতে গিয়ে দেখি হাত ও তার জন্মকালীন সঙ্গির সাথে কাঁপছে । কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কারের একটা বৃথা চেষ্টা করলাম । কাশিটা তেমন জোড়ালো হলো না । লোকটা আমার কাশির শব্দ শুনে না আমার উপস্থিতি অনুভব করে চমকে আমার দিকে তাকালো তা ঠিক বুঝলাম না ।
- আপনি কি ডাক্তার খবির উদ্দিন? কাঁপা গলায় নেশগ্রস্থ লোকের মতো করে জিজ্ঞাসা করলো ।
- জ্বী আমি খবির উদ্দিন, একটূ দুরত্ব বজায় রেখে বসলাম । যেখানে বসলাম তার ঠিক এক কদম দুরে সোফার নিচে একটা বাঁশের লাঠি আছে। বেতাল কিছু দেখলেই লাঠি বের করে মাথায় বসিয়ে দেয়া যাবে।
- আপনি পাগলের ডাক্তার, আমার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো ।
এইবার গলায় বেশ জোর ফিরে পেলাম । আমাকে কেউ পাগলের ডাক্তার বললে আমার মেজাজ ঠিক থাকে না । আমি গলা বেশ জোরের সাথে খাকরি দিয়ে বললাম, আমাকে দেখে কি আপনার পাগলের ডাক্তার মনে হয় ? জ্বী না, তবে লোকে বলে । পা নাড়াতে নাড়াতে জবাব দিলো লোকটা । ভালো করে লোকোটা কে দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি , হাতের নখে ময়লা জমা নেই যা সাধারনতো থাকে । চুল বেশ পরিপাটি করে সাজানো ছিলো কোন কারনে তা এলোমেলো হয়ে আছে । গায়ে মেরুন রঙের শার্ট সেই সাথে কালো জিন্সের প্যান্ট । অদ্ভুতভাবে লোকটার পায়ে কোন জুতা নেই কিন্তু তার পায়ে এক চিমটি ময়লাও লেগে নেই । সম্ভাবত ঢোকার সময় দড়জার বাহিরে রেখে এসেছে। উঠে যেয়ে দেখে আসতে পারলে ভালো হতো । মনে মনে একটা বাজি ধরলাম । জুতা পরে আসলে একশ টাকা না পরে আসলে দুইশ টাকা ।

অকারনে বাজি ধরছেন, আমি জুতা পরে আসি নাই , আমাকে চমকে দিয়ে লোকটা বলে উঠলো । আসলে আমি জুতাই পরি না, তো বাজী টা ধরছেন কার সাথে? নিজের সাথে নিজে বাজী কিন্তু পাগলে ধরে। আমার অবস্থা খানিকটা মিষ্টি চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে যাবার মতো হলো । আমার চেহারার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার কাছে সিগারেট হবে , আমার সিগারেট শেষ হয়ে গেছে । তব্দা খাওয়া ভাবটা কাটানোর জন্য নড়েচড়ে বসলাম। আমি সিগারেট খাই না । তাই ওটা আমার কাছে পাবেন না। ভর সন্ধ্যায় মদ খান কিন্তু সিগারেট খান না, ব্যাপারটা কেমন যেনো হয়ে গেলো না? এইবার আর সহ্য করা গেলো না । দেখুন আমি কি খাবো বা খাবো না তা একান্ত আমার সমস্যা , আপনি গভীর রাতে একজন ভদ্রলোকের বাসায় এসে হুট করে ঢুকে পরে তাকে জিজ্ঞাসা করছেন যে সিগারেট আছে কি না এটা কি যথেষ্ঠ মাত্রার পাগলামো না। লোকটা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে দিলেন, আপনি কি দয়া করে নিচে যাবেন নিচে আমার ড্রাইভার বাতেন আছে ওঁর কাছে আমার সিগারেট আছে। যদি এনে দিতেন আমার বড্ড উপকার হতো ।

দুঃখিত এতো রাত্রে আমি কোথাও যেতে পারবো না । আপনি আমাকে বলুন আপনি আমার কাছে কি উদ্যেশে এসেছেন । লোকোটা আমার কথায় কোন রকম পাত্তা না দিয়ে হাত পা নাড়াতে লাগলো । আপনি আসলে ভুল করছেন, আমি ধুমপান ছাড়া কথা বলতে পারি না। আর রাত তো এখনো শুরুই হলো না কেবল তো সন্ধ্যা ।
আমি মোটেও কোথাও যাচ্ছি না। আপনার কাছে মোবাইল আছে আপনার ড্রাইভার কে কল করুন সে এসে দিয়ে যাবে । কঠিন চেহাড়া করে বললাম ।
আমি মোবাইল ব্যাবহার করি না। যদিও একটা আছে ওটা গাড়িতে ফেলে এসেছি ।
তো আপনি নিজে কেনো যাচ্ছেন না,
আমার উপায় নাই । দেখছেন না আমার হাত পা শরীর কাঁপছে । ধুমপান না করলে আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না।
আসলেই লোকটার গাড়ি আছে কি না এটা জানার জন্য আমার পেট ফেটে যাচ্ছিলো । তারপরেও ওঠা ঠিক হবে না । বুঝতেই পারছি ভদ্রলোক মানুষিক রুগী কিন্তু সে মোটেও আর দশটা রুগীর মতো না । যথেষ্ঠ বুদ্ধি রাখে সে। এর সাথে দাবার চাল খুব সাবধানে দিতে হবে নতুবা এই লোক আমাকেই রুগী বানিয়ে ছাড়বে।
যাচ্ছেন না কেনো, একটু যান, সিগারেট এনে দিন প্লিজ । আমার গাড়ি আসলেই আছে কি না ওটাও জেনে যাবেন।
বিনা প্রতিবাদে উঠে গেলাম । দরজার কাছে কোন জুতা বা স্যান্ডেল দেখতে পেলাম না। দড়জা চেঁপে দিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকাতে একটা আধুনিক নতুন মডেলের ঝাঁ চকচকে রেঞ্জ রোভার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । রাস্তার লাইটের আলোয় গাড়ি খানা চকচক করছে। ড্রাইভার গাড়ির পাশেই দাড়ানো ছিলো আমাকে দেখেই হাতে সিগারেটের প্যাকেট দেখালো । ইশারায় ওকে উপরে আসতে বলে বসার রুমে এসে বসলাম ।
কি বিশ্বাস হলো যে আমার গাড়ি আছে । আধ শোয়া অবস্থায় পা দুখানি সামনের দিকে ছড়িয়ে নাড়তে নাড়তে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো লোকটা । আপনার তো খাওয়া হয় নাই , যান খেয়ে নিন, সিগারেট আসুক , দুই তিন টান মেরে আপনার কৌতুহল মেটাচ্ছি । যান খেয়ে নিন। বাতেন এলে আমি দড়জা খুলে সিগারেট নিয়ে নেব ।
না আপনি আরাম করুন, আমার খুধা আর নেই । তো আমার কাছে কেনো এলেন বলেন এইবার শুনি।
বলবো অবশ্যই বলবো । কিন্তু আপনার ঠিক এক কদম দুরত্বে যে বাঁশের লাঠিখানা আছে ওটা আপনি হাতে নিয়ে বসতে পারেন । কারন আমি যে কথা বলবো ওটা শুনে আমার মাথায় আপনার আঘাত করার ইচ্ছা জাগতেই পারে।
এবার আর চমকালাম না । কোন এক আশ্চার্য উপায় এই লোক সব যেনে যাচ্ছে । বাতেন এসে দড়জা ধাক্কা দিতেই লোকটা নিজেই উঠে সিগারেট নিয়ে এসে বেশ কায়দা করে সিগারেট ধরালো । হতবাক হয়ে টের পেলাম লোকটা সিগারেটের নামে গাঁজা খাচ্ছে । আমার বাসায় বসে নেশ করবে একজন নেশাখোর আর এটা আমাকে দেখতে হবে ।

থামুন, খানিকটা চিৎকার করে বললাম । আমার বাসায় আমার সামনে একজন নেশখোর আজগুবি সব কান্ড কারখানা করবে আবার নেশাও করবে এটা আমাকে সহ্য করতে হবে, অসম্ভব, আপনি এখনি বেড়িয়ে যান । ইশারায় দড়জা দেখিয়ে দিলাম ।
আমার কথায় কোন রকম কর্নপাত না করে , আরাম করে গাজার ধোঁয়ায় ঘর ভাসিয়ে দিলো । আমার নাক মুখ দিয়ে গলগলিয়ে গাঁজার ধোঁয়া ঢুকে পড়ছে । আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। উঠে দাড়ালাম লোকটাকে ঘরের বাহিরে রেখে আসতে ।
যা খেলে রুগীর উপকার হয় তা যদি মাদক হয় তা কি সেবন করা উচিত নয়? সিগারেটের ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে লোকটা বলে উঠলো । আমাকে যদি ঘর থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেন আপনি এমন একজন রুগী হারাবেন যা আপনি আগামী একশত বছরেও তপস্যা করলেও পাবেন না।
না পেলে নাই , কিন্তু কোন গাঁজা খোরের চিকিৎসা আমি করতে পারবো না। গলায় বেশ জোর এনে বলার চেষ্টা করলাম ।
শুনুন বসুন, উত্তেজিত না হয়ে আমার কথা শুনুন। তার উপর আপনার পা কাঁপছে, সম্ভাবত আপনি উত্তেজিত । সেই সাথে আপনার শ্বাস ঘন হচ্ছে । দয়া করে আপনি অসুস্থ্য হবেন না । হলে আমার উপায় থাকবে না ।
আমি ঝাড়া দশ সেকেন্ড লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করেও যখন আর পারলাম না তখন বসে পরলাম । লোকটা সিগারেটের ছাই ফেলে মেঝে নোংড়া করে ফেলছে । ওনাকে ওটা বলতে যেয়েও থেমে গেলাম । দেখলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । কোথাও কিছু পেলাম না তাই বাধ্য হয়ে মেঝেতেই ফেলছি মাইন্ড করবেন না, ছাই ঝাড়তে ঝড়াতে বললো । হালকা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, আচ্ছে বলুন আপনার সমস্যা ।
আমি অন্যের মনের কথা শুনতে পাই , বেশ নির্লিপ্ত ভাবে বললো লোকটা। তার প্রমান আশাকরি পেয়ে গেছেন কিন্তু সমস্যা শুধু এটা না আরো একটা আছে। আমি আমার মৃত স্ত্রী কে দেখতে পাই ।

আমি মৃদু হেসে দিলাম। এমন সমস্যা অহরহ ঘটছে নতুন কিছুই না। স্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত প্রেমের কারনে এমনটা ঘটে । শরীরটা সোফাইয় এলিয়ে দিয়ে হাসি মুখে শুনতে লাগলাম । ভাব দেখালাম আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছি । আসলে মৃত স্ত্রী কে দেখা একটা সাধারন সমস্যা । কারো প্রতি তিব্র প্রেম থাকলে সে যদি কোন কারনে মারা যায় প্রেমিক বা প্রেমিকা তাকে দেখতে পায় ।
আপনি যা ভবছেন তা কিন্তু না, পা দুখানা নামিয়ে সোজা হয়ে বসলো লোকটা । আমার স্ত্রীর প্রতি আমার কোন প্রেম ছিলো না । ওকে আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম এবং ঘৃনা করতাম ।
কেনো ভয় পেতেন কেনো?
আপনি যদি মাঝ রাত্রে উঠে দেখেন আপনি যে মানুষ টার পাশে শুয়ে আছে সে আসলে সেই মানুষ না । তাহলে কেমন লাগবে?
ঠিক বুঝলাম না
আমার স্ত্রী ঘুমিয়ে যাবার পর তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেতো । আমার স্ত্রী ভয়ানক সুন্দুরী একজন মহিলা ছিলেন শরতের কাশ ফুলের মতো শুভ্র তার গায়ের রঙ ছিলো কিন্তু ঘুমিয়ে যাবার পর ঠিক মাঝ রাতে সে আর সে থাকতো না অন্য একজনে রুপান্তর হয়ে যেতো যে দেখতে খুবি কুৎসিত । আমার স্ত্রী লম্বা কিন্তু হয়ে যেতো খর্ব আকৃতির একজন বামন মানুষ যার হাতে দশ টা করে আঙ্গুল । মুখ দেখলে মনে হতো আগুনে পোড়া । এক গালে মাংস থাকতো না সেই গালের ফাঁকা দিয়ে তার এবড়ো খেবড়ো দাত গুলো দেখা যেতো । আর গায়ের রঙ ছিলো ফ্যাঁকাসে ।
আপনার স্ত্রীর উচ্চতা কতো ?
উম স্বাভাবিক বাঙ্গালী মেয়েদের যেমন উচ্চতা ঠিক তেমনি পাঁচ ফুট দুই কি তিন ।
আচ্ছা বুঝলাম, আপনি বলতে চাচ্ছেন একজন জলজ্যান্ত মানুষ তার শারীরিক কাঠামো পরিবর্তন করে ফেলতো রাতের মধ্যে। যা বৈজ্ঞানীক ভাবে সম্ভব না ।
জ্বী আমিও জানি সম্ভব না কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে আর এটা আমি একা দেখি নাই আমার বাড়ির কাজের লোক ওরাও দেখেছে।
কিভাবে দেখলো ? আপনার স্ত্রী কি ওই অবস্থায় বাড়ির বাহিরে চলে যেতো ।
জ্বী তিনি বাহিরের বারান্দার দেয়ালে হেটে বেড়াতেন ।
আচ্ছা আপনি গাঁজা খাওয়া শুরু করেছেন ঠিক কবে থেকে ?
হঠাত এই প্রশ্ন করলেন কেনো ? ভুরু কুচকে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো ।
না এমনি জানতে চাইলাম । মানুষের মস্তিষ্ক যখন অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যায় তখন এমন ঘটে । তারা অদ্ভুত কিছু দেখতে পায় । তারা একধরনের আজগুবি দুনিয়ায় বিচরণ করে । তাদের ভয়ানক হ্যালোসিয়েশান ঘটে । আপনি এক কাজ করেন আপনি গাঁজা খাওয়া কমিয়ে দিন । বাড়ি যান । স্ত্রী কে সময় দিন । দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে ।
কিন্তু আমার বাড়ির কাজের লোক ওরাও তো দেখেছে । ওরা তো আর গাঁজা খায় না ।
বিত্তবানদের বাড়ির কাজের লোক তাদের চাকরি বাচাতে অনেক কথায় তারা সায় দেয় । এটাও তেমনি ।
আর এই যে আমি আপনার মনের কথা বলে দিলাম এটা কি ?
এমটা অনেকেই পারে । এটা কোন ক্ষমতা না । এটা এক ধরনের চালাকি । তীক্ষ্ণ বুদ্ধ সম্পন্ন লোক এমন চালাকি করে মানুষ কে ভড়কে দিয়ে আনন্দ পায় । আপনি ও পাচ্ছেন । আপনি এইবার আসুন ।
ভদ্রলোক হা করে তাকিয়ে থাকলেন । খানিকটা দিশাহারা হয়ে যেনো আমার হাত ধরে বললেন, আমাকে বিশ্বাস করছেন না।
না, আমি চেহারা বেশ শক্ত করে বললাম । আপনি খুব নিচু মানের চালাকি করছেন আমার সাথে যা আমার পছন্দ হয় নাই । এই যে আপনি আমার হাত ধরলেন এটাও আপনার চালাকির অংশ । আপনি আমার হাত ধরে আমার ভেতর আপনার বিশ্বাস কে সত্য প্রমানের চেষ্টা করছে। আপনি এখন আসুন ।

লোকটা খানিকটা টলতে টলতে উঠে দাড়ালো । গাঁজার নেশায় দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে । আমার দিকে তাকিয়ে শূন্যে কিছুক্ষন হাত নাড়লেন এরপর মাথা নিচু করে হাটা দিলেন ।

হঠাত করে মনে হলো এতোক্ষন ধরে কথা বলছি কিন্তু ভদ্রলোকের নাম জানা হলো না । আচ্ছা আপনার নাম টা জানা হলো না ।
আমার নাম বাদশা। পেছন না ঘুরেই জবাব দিলো । আর আপনার স্ত্রীর নাম ? থমকে দাঁড়িয়ে গেলো লোকটা , অদিতি, ওঁর নাম অদিতি ।
আপনার স্ত্রী কে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন ।
আমি তো আগেই বলেছি আমার স্ত্রী বারো বছর আগে মারা গিয়েছেন । আমি তাকে খুন করেছি । পা টেনে টেনে যেতে যেতে বললো ।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলাম । লোকোটা চলে যেতে যেতে ফিরে তাকিয়ে আমাকে একবার দেখলো । লোকটার চোখে এমন কিছু ছিলো যা আমাকে খানিকটা হতভম্ব করে দিলো । আমার সারা শরীর কেমন জানি কাঁটা দিয়ে উঠলো । মনে হলো সে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এমন কেউ কে দেখছে। আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো আজ আপনি ওকে দেখবেন । ও আপনার বাসাতেই আসবে । ঠিক মধ্য রাতে ।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:৩৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্পা এবং দেহ ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে রেগে যাবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯



পুরো পৃথিবীতে স্পা এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। এইসব স্পা-গুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে ইউরোপে। এশিয়া - প্যাসিফিকের দেশগুলোতেও স্পা-এর সংখ্যা কম নয়। ৫১ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে স্পা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×