অবশ্য এ অভিজ্ঞতাও ওরা পেয়ে গিয়েছিল ইরানে আসার দশ দিনের মধ্যেই। সবাই মিলে তেহরানের বাইরে লার লেইক দেখতে যাচ্ছিলাম। সময়টা ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে। শহর পেরিয়ে উত্তরে যেতেই দেখি আবহাওয়া পুরো অন্যরকম। আকাশ মুখ গোমড়া করে বসে আছে, চারিদিকে সাদা আর সাদা আর এক পর্যায়ে বরফ আবার পড়তে শুরু করা। বউ বাচ্চারা দারুণ মজা পেয়েছিল সেদিন। যদিও ঐ তুষারে ঢাকা পথের কারণেই আর লার লেইক যেতে পারিনি, পথের কোন এক জায়গা থেকেই ফিরে আসতে হয়েছিল।
বলা বাহুল্য, গত বছর ইরানে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশী তুষারপাত হয়েছিল। উত্তরে নাকি ২০ ফিট পর্যন্ত বরফ জমে গিয়েছিল, হয়েছিল মানবিক বিপর্যয়।
যাহোক, এবার চিত্র পুরো ভিন্ন। গত বছর আমাদের কারোই ভাল গ্লাভস ছিল না। এবার শীত আসতেই বরফের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। বাজারে বোজোর্গ (তেহরানের বড় বাজার) থেকে সবার হ্যান্ড গ্লাভস, মাথার টুপি, মাফলার কিনে সেরকম প্রস্তুতি, কিন্তু তেহরানে বরফ কই?? এবার শীত একেবারেই কম তেহরানের যেদিকটা আমি থাকি সেখানে। মাঝে দুয়েক দিন সকাল বেলা দেখলাম, কিছু গাড়ী রাস্তায় চলছে গায়ে এক গাদা বরফ নিয়ে। বুঝলাম, তেহরানে অন্য কোথাও তুষারপাত হচ্ছে, কিন্তু আমি যেদিকটায় থাকি, সেখানে একেবারেই খা খা ! বরফের দেখাই নেই। তো শীত কাল প্রায় শেষের পথে, কিন্তু বরফের দেখা পাব না, তা কি করে হয় ! সুতরাং, তেহরানে আমাদের পরিচিত বাংলাদেশী কমিউনিটি মিলে ঠিক করলাম, ডিজিন স্কি রিসোর্ট ঘুরে আসি।
তেহরানের উত্তরে পুরো এলাকাটাই আলবোর্জ পর্বতমালা। তাই তেহরানের আশে পাশে মোট সাতটি স্কি রিসোর্ট আছে। তবে, ডিজিন বেশ বিখ্যাত এবং জন সমাগমটা বেশী হয়। এখানে নাকি মে মাস পর্যন্ত বরফ থাকে, মানে স্কি করা যায়। তাই আন্তর্জাতিকভাবেও ডিজিনের বেশ খ্যাতি আছে। ডিজিন স্কি রিসোর্ট চালু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তেহরান থেকে চলুস রোড ধরে গেলে এর দূরত্ব ১২৪ কি.মি। আমরাও এই পথটা ধরেই গিয়েছিলাম। এর সবচেয়ে উচু স্কি লিফট ১১,৮০০ ফিট ওপরে যায়। বিশ্বের চল্লিশটি উচু স্কি রিসোর্টের মধ্যে ডিজিন অন্যতম।
ডিজিনের পথে...
জানুয়ারির ২ তারিখে ২৬ জনের দল নিয়ে আমরা ডিজিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌছে গেলাম। চলুস রোডের মন কাড়া সৌন্দর্য সব সময়ই মুগ্ধ করে। লোকজন পাগলের মত ছবি তুলছে। অনেকের কাছেই জীবনে প্রথম বরফ ঢাকা পাহাড় দেখা, তাই উত্তেজনাটা একটু বেশীই।
এই হোটেলের স্থপতির প্রশংসা না করে উপায় নেই !
কত সুন্দর সৃষ্টি আল্লাহর, আলহামদুলিল্লাহ !
ডিজিন পৌছে জনপ্রতি ৩৫০,০০০ ইরানি রিয়েল দিয়ে টিকেট কেটে ডিজিন স্কি রিসোর্টে ঢুকে পড়লাম। সব বয়সের লোকজন স্কি করছে। বিদেশীও কিছু দেখলাম। ছোট ছোট বাচ্চাদের যখন দেখি কি সুন্দর করে স্কি করছে তখন বড় আফসোস হয়।
ডিজিন স্কি রিসোর্টের কেবল কার আপনাকে নিয়ে যাবে আকাশের কাছে...
বেশ কিছু কেবল কার আছে এখানে, মানে বেশ কয়েকটা রুট। আমরা একটাতে উঠে ওপরে চলে এলাম। ছবিতেই দেখুন।
চারিদিকে শুধু সাদা আর সাদা...
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, আলহামদুলিল্লাহ !
বরফ নিয়ে ছোড়াছুড়ি আর পলিথিনের ওপরে বসে হালকা উচু থেকে নিচে নেমে আসাটা বেশ মজার খেলা হয়ে গেল। সাথে থাকা ভাবীরা মহা উৎসাহে এই খেলা খেললেন। জমজমাট অবস্থা।
হাকলা পাতলা স্কি করার ইচ্ছে আমারো ছিল, ভেবেছিলাম ওপরে স্কি ইকুইপম্যান্ট ভাড়া পাব। কিন্তু ওপরে উঠে দেখি, যন্ত্রপাতি নীচ থেকেই নিয়ে আসা দরকার ছিল। তাই এবার আর স্কি করা হল না। গত বছর এসে করেছিলাম, তবে প্রমাণ সাইজের একটা আছাড়ও খেয়েছিলাম, ভাগ্যিস বড় ধরণের কোন ব্যাথা পাই নি…
সবশেষে আমার অফিসের সামনের একটি ছবি দিচ্ছি, কদিন আগে সকালে এসে দেখি রাতে হালকা তুষারপাত হয়েছিল, আর তাতেই ছোট্ট পার্কটি কি সুন্দর সাজে সেজেছে...
ভাল থাকবেন সবাই...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭