
৩০ শে মার্চ রাতে এস আলম পরিবহণে রওনা হয়ে গেলাম, সকাল সকাল পৌছে গেলাম। কোয়ার্টারটি টিলার ওপরে বেশ সুন্দর করে সাজানো, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে লিজ নিয়ে তৈরী। এক পাশে উচু জায়গায় গোল ঘর, ওখান থেকে আশে পাশের সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়।

ওদের কোয়ার্টারে স্ট্রবেরি চাষ হয়। ভায়রা কিছুদিন আগে এক সৈনিকের হাতে এক প্যাকেট স্ট্রবেরি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, আমার খেতে বেশ লেগেছিল। তাই মোবাইলে আগেই বলে রেখেছিলাম যেন নাস্তায় আমার জন্য কিছু স্ট্রবেরি রাখা হয়। ভিআইপি কামরায় জায়গা হল। বেশ ভাল। ফ্রেশ হয়ে আমি আর ভায়রা খিচুড়ী আর গরুর গোশত দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর রুমে এসে আয়েশ করে তাজা স্ট্রবেরি ভোজন। একটা ফাইভ স্টার অনুভূতি নিয়ে দিলাম এক ঘুম।


স্ট্রবেরি গাছ
বৃহস্পতিবার অফিস খোলা থাকাতে সেদিন আর কোথাও যাইনি। কোয়ার্টারের লাইফ খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত। খাওয়া-দাওয়ায় কোন সমস্যা নেই। যা খেতে চাইবেন তাই মিলবে, পাচকের রান্নার হাত খুবই ভাল। ডাইনিং রুমের সাথেই লাগোয়া টিভি রুম, ৪০ ইঞ্চি সনি ব্রাভিয়া, সাথে ক্যারাওকে সিস্টেম। অফিসাররা সন্ধ্যার পরে খাওয়ার আগে একটু গলা সেধে নেয়, পাহাড়ী জীবনে এক ঘেয়েমি কাটিয়ে একটু ভাল থাকার সব ব্যবস্থাই করা আছে। সন্ধ্যার পরে গোল ঘরে বসে উদাস নয়নে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকারও একটা অন্য রকম মজা আছে, সেটা ওখানে বসেই বুঝেছিলাম...

এদিকে আমার শ্যালক ল্যাফটেন্যান্ট সাহেবেরও ছুটি হয়েছিল, ওকে বললাম কুমিল্লা থেকে চলে আস, খাগড়াছড়ি ঘুরে দুজনে এক সাথেই ঢাকা ফিরব। শুক্রবারে ভোরে এসে পৌছাল ও, সাথে কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের রসমালাই ! পরটা, ডিম ভাজি আর সাথে কুমিল্লার রস মালাই - একটা টপ ক্লাস নাস্তা সারলাম। দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম খাগড়াছড়ি দর্শনে।

প্রথমেই চলে গেলাম আলুটিলা। ওখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়। আর মূল দর্শনীয় জিনিস হল একটা সুড়ংগ। সুড়ংগে অন্ধকার, তাই মশাল হাতে নিয়ে যেতে হবে। বাইরেই মশাল বিক্রি চলছে। ছোট্ট একটা বাশের ডগায় কিছু কাপড় গুজে সেটা কেরোসিনে চুবিয়ে দিল। সাথে একটা দেয়াশলাই। জিনিস পত্র নিয়ে সুড়ংগে প্রবেশ করলাম, আমি, আমার ভায়রা, শালা আর কয়েক জন সৈনিক। মশাল জাললাম, কিন্তু সে এমন এক মশাল, নিজের পা ও ঠিক মত দেখা যায় না।




আলুটিলার সুড়ংগমুখে অভিযাত্রীগন...
সত্যি কথা বলতে রিসাং ঝর্ণা আমার বেশ লেগেছে, ভরা বর্ষায় এটা আরো আকর্ষনীয় হবে বলার অপেক্ষা রাখেনা। রিসাং ঝর্ণা যাবার পথে প্রায় এক কি.মি. আগেই আমাদের গাড়ী বহরকে থেমে যেতে হয়েছিল, কারণ এক উপজাতির ঘর ভেংগে রাস্তার উপর পড়ে আছে। গাড়ী নিয়ে আর যাওয়া যাবে না। বেলা তখন ১১ টার উপরে, গরম আর আর্দ্রতা ভালই কষ্ট দিচ্ছে, এর মধ্যেই হাটা শুরু করলাম। আমার ভায়রা বললেন, আপনারা যান, আমার খায়েশ নাই এখন যাওয়ার।








রিসাং ঝর্ণা...
যাইহোক, ফেরার পথে টের পেলাম কত ধানে কত চাল। খাড়া পাহাড় বেয়ে ওই তপ্ত রোদে উঠতে জান বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মুখে প্রকাশ পেতে দিচ্ছিলাম না। শেষ ঢালটা উঠেই বসে পড়লাম, কিছুক্ষণ বিশ্রাম না নিলে যে মারা পড়ি !! দেখলাম, বগুড়া থেকে এক পরিবার এসেছে ঝর্ণা দেখতে, সাথে এক বৃদ্ধা, বেশ কয়েকটি শিশু ! ওদের বললাম, "“ওঠার সময় খবর হবে !!"” একজন বলে উঠল, "এত দূর থেকে এসেছি, দেখেতো যেতেই হবে !!" হক কথা !! ফেরার সময় গাড়ীতে আমি আর আমার শালা ওদের ফেরার সময়কার অবস্থা চিন্তা করে আরেক প্রস্থ হাস্যরসে মেতে উঠলাম...


দুপুরে খেয়ে দেয়ে আমরা তিন জন আমার ভায়রার নিজস্ব গাড়ীতে করে রওনা হলাম, পানছড়ি নামক এক স্থানে নাকি এক বৌদ্ধ মন্দির আছে, যেখানে অনেক উচু একটা বৌদ্ধ মূর্তি আছে, সেটা দেখব বলে। আমার ভায়রা ওই দিকটায় যায় নি। উনি খুব আশা করে বের হলেন যে সেইরকম পাহাড়ী পথ বেয়ে আমরা যাব, প্রায় ২৫ কি.মি. পথ ! কিন্তু, ওমা, একি ! এ যে পুরো সমতল রাস্তা ! আশে পাশে পাহাড়ের কোন নাম গন্ধ নেই ! চরম হতাশ হয়েই এগুতে থাকলাম, রাস্তার অবস্থাও খারাপ ! ছ্যাচা খেতে খেতে আর একটু পর পর ব্রেক কষতে কষতে আমার ভায়রার মেজাজ তখন চরম খারাপ !


পরের দিন ঢাকায় ফিরব... রাতে খাবারের আগে ক্যারাওকে তে গান ধরলাম, আমি একাই... দিলরুবার “"ভ্রমর কইও গিয়া”", তপুর "“নুপুর ২"” এরকম আরো কিছু জনপ্রিয় গান !! সেই রকম অনুভূতি !


