আমরা কি কথা বলতে পারবো না ! ঘুমিয়ে থাকবো ?
রাষ্ট্রের অন্ধ, বোবা, কালা নাগরিক হিসাবে দিনাতিপাত করবো ?
অথবা দৃশ্যমান বাস্তবতাকে কুর্ণিশ করে করে মোদের জীবন থাকবে চলমান; সময়ের তালে তালে, স্বার্থের উৎসবে নতজানু করে নিজেদের মন। নাকি সংকীর্ণচেতা কতিপয় অমঙ্গলকামী বাঙালীদের মত; যাদের গুজবে ভাইরাল হয় রাষ্ট্র - তেমনটি কী ? প্রতিহিংসা পূরণ !
নিশ্চয় যারা সাধারণ মানুষ, আমজনতা, তারা কেউই বোবা-কালা, অধিকার বঞ্চিত জনগণ অথবা প্রতিহিংসা পরায়ণ নাগরিক হিসাবে নিজেদেরকে ভাবতে পারেন না কিছুতেই। বাংলাদেশের মানুষ, বাঙালী জাতি যেমন ধৈর্য্যর পরিচয় দিতে জানে, তেমনই অধিকার আদায়ে, সত্য প্রকাশে, যে কোন সংকটে উত্তোরণে একাত্মতা প্রকাশে পিছ পা হয় না। সময়ের প্রয়োজন সংঘবদ্ধ হয়। নেতা জন্মায়।
উল্লেখ করার মত হাজারো ঘটনাবহুল সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে বাঙালী জাতির জীবনে। আপদমস্তক পুরোটাই জুড়ে। যে ইতিহাসের পরতে পরতে আছে রক্তমাখা, আছে জীবন দিয়ে কেনা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্র, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রাম, আছে অধিকার আদায়ের গল্প । ছেলে থেকে বুড়ো, বাঙ্গালিত্ব আছে যেখানে, সেখানেই আছে আত্নত্যাগ, স্বচ্ছতার হুঙ্কার।
জনতার লড়াই সংগ্রামের সে সব ইতিহাস পর্যালোচনায় এখন নাই বা গেলাম। নাই বা করলাম প্রতিবাদ। তবুও, চোখে যা দেখছি, যা শুনছি, যা জানছি, পত্রপত্রিকা পড়ে যা বুঝছি - বুদ্ধি, বিবেক, বিবেচনাবোধ, বিবেকের তাড়না, ন্যায়-অন্যায় উপলব্দি, মানবিকতা, সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে বেঁচে থাকবে বাঙালি জাতি, বাংলার মানুষ, আমাদের বাংলাদেশ।
বলছিলাম; দৃক গ্যালারীর প্রতিষ্ঠাতা, এশিয়ায় আলোকচিত্র শিল্পের পথিকৃৎ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ডঃ শহিদুল আলমের গ্রেফতার প্রসঙ্গে। শুধু গ্রেফতার নয়, মানুষটির বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আটক দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
কেনো এই সৃৃষ্টিশীল মানুষটির ওপর নেমে এলো রোষানলের খড়গ ?
আলোকচিত্রী ডঃ শহিদুল আলম সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক টিভি মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি তথা ক্ষমতার দীর্ঘস্থায়ী দাম্ভিকতার যে বিরুপ প্রভাব, গোটা রাষ্ট্রের রন্ধে রন্ধে যে দূষণ, তা সহজ সরল ভাবে তুলে ধরে ছিলেন। তিনি যে কথাগুলো বলে ছিলেন, তা আপনার, আমার, এ দেশের প্রতিটি মানুষের কথা, অপ্রকাশিত প্রতিবাদ।
Al Jazeera
গত কয়েকদিন ধরে রাজপথে চলমান শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে যা যা ঘটতে দেখলাম, বেসম্ভব অবাক হলাম, লজ্বিত হলাম এবং সর্বশেষ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের ওপর অজ্ঞাত যুবকদের হামলা, মারপিট, পুলিশের টিয়ার সেল নিক্ষেপ এবং সর্বশেষ আলোকচিত্রী ডঃ শহিদুল আলমকে গ্রেফতারসহ নানা ঘটনা যেন খোলসা করে দিয়েছে অনেক কিছু। মূল কথা হলো নিরাপদ পথচলার দাবিটি এখন মূখ্য হয়ে উঠেছে সবার কাছে।
এমনই নানা বিষয়ে কথা বলে ছিলেন স্যোসাল এ্যাক্টিভেটর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ডঃ শহিদুল আলম। তিনি বিগত তিন থেকে সাড়ে তিন বছরে দেশে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণহানীর খবরা খবর বলেছিলেন। উল্লেখিত সময়ে সড়ক দূর্ঘটনায় ২৫,১২০ জন মানুষের মৃত্যু, ৬২,৪৮২ জন মানুষের আহত হওয়া, বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডসহ দেশে চলমান অসঙ্গতি, অনিয়ম ও অমানবিকতার ক্ষুদ্র চিত্র তুলে ধরে ছিলেন।
আমরা অধিকাংশ জনই এই অসঙ্গতিগুলো অনুভব করি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি, রাজনৈতিক বাকবিতন্ডে তুলে ধরলেও তা মিডিয়ার সামনে, রাজপথে কিংবা প্রতিবাদী কন্ঠে উচ্চারণ করি না। কেননা আমরা সবাই জানি ও বুঝি বাংলাদেশের চলমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এমন একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে একজন নাগরিকের ক্ষেত্রে উত্তম হলো বোবা-কালা ও অন্ধ সেজে বসবাস করা।
এ রাষ্ট্র বোবা কালার !
এ রাষ্ট্র অন্ধ নাগরিকের আবাস !!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:০৯