somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

বিয়ে নিয়ে কিছু কথাঃ

১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। যার মাধ্যমে পরিবার প্রতিষ্ঠা হয়। আদিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রচলন ছিলো না। তখন শুধুমাত্র জৈবিক তাড়নায় নর-নারীর মিলন ঘটত। কালের বিবর্তনে বিয়ে আজকের সামাজিক অনুষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়, এরকম নয়। উভয় পক্ষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্বন্ধ হয়। বহু ক্ষেত্রে এক সমাজের সাথে অন্য সমাজের যোগাযোগ ঘটে। পরিবার গঠন করার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরণ করা নয়, বরং, সন্তান জন্ম দেয়া, তাদের লালন-পালন করা। আর এর মধ্য দিয়ে বংশধারা বা মানুষের অস্তিত্বকে অগ্রসর করা।

সমাজ ভিত্তিক জীবন ব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নর-নারীর মধ্যকার সম্পর্কের সামাজিক, আইনগত অনুমোদন একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যদিকে, পরিবার গঠন করতে বিয়ে করে নর-নারীর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার হলো সমাজের একক। পরিবারের সমষ্টিই সমাজ গড়ে তোলে। আর পরিবার গঠনে বিয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আদি কালে বিয়ের যোগ্যতা বা পূর্ব শর্ত হিসেবে কোনো বিধি বিধান না থাকলেও আধুনিক সভ্যতায় মানুষ সমাজভেদে বিভিন্ন রকম যোগ্যতা এবং পূর্ব শর্তের নিরিখে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বিয়েকে অনুমোদন দেন। যা সামাজিকভাবে বিভিন্ন রকমের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পাদিত হয়।

বর্তমান সময়ে বিয়ের জন্যে বেশ কিছু পূর্ব শর্ত লক্ষ্য করা যায়। পুরুষের জন্যে বয়স, অর্থনীতিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়। অন্যপক্ষে, নারীর ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ের সাথে তার বাহ্যিক সৌন্দর্য, বংশানুক্রম, বংশের রোগ-বালাইয়ের ইতিহাস ইত্যাদির ব্যাপারে খোঁজ-খবর সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া সমাজ ভেদে যৌতুক, বর পক্ষকে উদর পূর্তি করানো ইত্যাদি আচার চর্চা লক্ষ্য করা যায়।

বর্তমান সময়ে বিয়ে করার জন্য ব্যাপক শর্তারোপ লক্ষ্য করা যায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের বিয়ে করার সামর্থ্য পরিমাপ করা হয় তার মাসিক আয়, স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ, পরিবারের লোক সংখ্যা, বংশ মর্যাদা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় একজন পুরুষের বিয়ে করতে যেমন বিভিন্ন সামাজিক এবং অর্থনীতিক সামাজিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়। অন্যদিকে নারীকেও সামাজিক বিভিন্ন মানদণ্ডের পাশাপাশি পরিবার এবং বংশের ইতিহাসের পর্যালোচনার সূচকে উত্তীর্ণ হতে হয়।

এভাবে বর্তমান সময়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উপরের পর্যায়ে বিয়ে করাকে খুব কঠিন এক বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। বিয়েতে শুধু বর এবং কনে পক্ষ নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃস্থানীয়দের আমন্ত্রণ করতে হয়, সমাজের সবাইকে সহ সকল পর্যায়ের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী প্রমুখদের নিমন্ত্রণ করা বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।

কনে পক্ষকে বর পক্ষের নিমন্ত্রিত অতিথির উদর পুর্তির ব্যবস্থা করতে হয়। বর এবং তার বিভিন্ন আত্মীয়ের জন্যে উপঢৌকনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। বিয়ের আয়োজনের সমস্ত ব্যয়ভার সাধারণত কনে পক্ষই বহন করে থাকে।
এছাড়া মুসলমান বিবাহ ব্যবস্থায় কনেকে দেন মোহর প্রদানের ব্যবস্থা আছে। আজকের দিনে বেশিরভাগ পরিবার লোক দেখানোর জন্যে উচ্চ হারে দেন মোহর নির্ধারণ করেন। এই নির্ধারিত মোহরানার চাপেও অনেক পুরুষ বিয়ের ব্যাপারে অনীহা দেখান।

মুসলমান রীতিতে বিয়ে নবি (সা) এর সুন্নত। তিনি দ্বীন পরিপূর্ণ করতে বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। সাধ্যমত দেন মোহর নির্ধারণ করা, বর পক্ষের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্যে খাবারের আয়োজন করা, দুস্থ, অসহায়দের মধ্যে বিয়ের খাবার বন্টণ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

আধুনিক সভ্যতায় বিয়ে একটি দুরূহ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সমাজ এবং পরিবারের বিভিন্ন বিধি-বিধান মেনে বিয়ে করতে করতে একজন পুরুষের বয়েস মধ্য তিরিশে এসে পৌঁছাচ্ছে। অন্যদিকে, বিয়ের সময় কনের বয়েস ২০-২২ বছরের বেশি খুব গ্রহনযোগ্য নয়। ফলে দেখা যায় ৩৫-৩৮ বছরের একজন পুরুষ বিয়ে করছেন তার ১২-১৫ বছরের ছোটো একজন নারীকে। এতে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

নারী শিক্ষার প্রসার এবং চাকুরীর ক্ষেত্র প্রসারিত হবার কারণে, অনেক নারী প্রতিষ্ঠিত হবার আগে বিয়েতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এতে তার বয়েস তিরিশের কোঠায় চলে যাচ্ছে বা কখনো কখনো পার হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীও বিয়ের জন্যে নিজের পছন্দসই পাত্র পাচ্ছেন না। পাত্রদের পছন্দ অল্প বয়েসী নারীদের।

এসব কারণে, অনেকে বিপত্নীককে বিয়ে করছেন। যার সন্তান আছে। অনেক সময় সেখানে স্বামীর সাথে মানিয়ে নিলেও তার সন্তানদের সাথে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে, স্বামী এবং স্ত্রী দুই জনই নিজেদের চাকুরি বা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সন্তানদের গুণগত সময় দিতে পারছেন না। ফলে, ভবিষ্যতের জন্যে সন্তানেরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না।

সামাজিক এবং পারিবারিক বিভিন্ন মানদণ্ডের কারণে নারী-পুরুষ বিয়ে করতে না পেরে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। কখনো একজন একাধিক ব্যক্তির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে, পাশ্চাত্য সমাজে সিঙ্গেল মাদার সমাজের উৎপত্তি হয়েছে। পিতৃহীন সন্তানদের উদ্ভব ঘটেছে। যা সামাজিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্রহনযোগ্য হলেও মানসিক দিক দিয়ে সন্তানদের পিতৃহারা হয়ে বেড়ে উঠতে হচ্ছে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে বিষাদ, সামাজিক দক্ষতার অভাব ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে।

আর আমাদের মতো ৩য় বিশ্বের দেশগুলোতে দেখা দিচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। প্রাচ্যের সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহ পূর্ব নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক বেশিরভাগ সমাজেই অনুমোদিত নয়। বিয়ের মাধ্যমেই এখানে নারী-পুরুষের মেলামেশা অনুমোদন দেয়া হয়। পাশ্চাত্যের অনুকরণে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়তে গিয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে। পরিবারে মাঝেও বিশৃংখলা দেখা দিচ্ছে। শুধু পারস্পরিক মেলামেশা বা বন্ধুত্বের সীমানা পেরিয়ে আজকাল নারী-পুরুষের সম্পর্ক জৈবিক কার্যকলাপে উপনীত হয়েছে। এর ফলে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ, গর্ভপাত, যৌন বাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ব্যক্তি বিভিন্ন জনের সংস্পর্শে আসার কারণে বিভিন্ন ধরণের রোগ-জীবাণু সংক্রামক হয়ে উঠছে।

সমাজ এবং পরিবার যদি বিয়ের মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারিত সূচকের পরিবর্তন না ঘটায়। তাহলে অবিবাহিত নারী-পুরুষ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়াবে। ফলে সামাজিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে, ব্যক্তি পর্যায়ে যদি বিয়ের জন্যে নিজেকে ‘প্রতিষ্ঠিত’ হয়ে তারপর বিয়ের করার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না ঘটান। তাহলে বয়সের ব্যবধান যেমন বেশি হবে, পরিবারেও মানসিক টানাপোড়েন থাকবে। অধিক বয়সে বিয়ে করার কারণে নারী পুরুষ উভয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রজনন সমস্যায় পতিত হবেন। গোটা সমাজেই ধীরে ধীরে এক ধরণের সামাজিক ভারসাম্যহীনতা এবং অসামঞ্জস্য দেখা দেবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×