লন্ডনের ইট কাঠ ঘেরা ব্যস্ত জীবনে সময় বের করা বড়ই মুশকিল। একদিকে ক্লাস অন্যদিকে জব এর পাশাপাশি নান রকম ঝামেলা তো আছেই। অনেকদিন ধরেই প্ল্যান করছিলাম কোথাও যাব বলে কিন্তু সময় বের করতে পারছিলাম না।এর মধ্যে রোজা শুরু হয়ে যাবে তাই মনে মনে একটু নিজেকেই তাগাদা দিচ্ছিলাম যে যা করতে হবে এই কয়েকদিনের মধ্যেই করতে হবে। অবশেষে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ফুরসত মিলল একটু দম নেবার।কাছের কয়েকজন বন্ধু মিলে প্ল্যান করতে বসলাম কোথায় যাব এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক করার জন্য... কেউ বলল পোর্টস্মাউথ আবার কেউ বর্ণমাউথ,কেউবা আইল অফ হোয়াইট... অনেক আলোচনা শেষে আমরা ঠিক করলাম যে আমরা কর্ণওয়াল যাব।বলা বাহুল্য, কর্ণওয়াল থেকে আমরা Porthcurno Beach কে বেছে নিয়েছিলাম ছুটি কাটানোর জন্য।
কর্ণওয়াল ইংলিশ চ্যানেলের দক্ষিণে অবস্থিত যার উত্তর এবং পশ্চিম পাশ সেল্টিক সাগর দ্বারা বেষ্টিত । আর Porthcurno হচ্ছে কর্ণওয়াল এর সাউথ কোস্টে অবস্থিত এবং Lands End থেকে প্রায় ৩ কি মি দূরে এর অবস্থান ...... অনেক শান্ত এবং নিরিবিলি একটি জনপদ।
নির্দিষ্ট দিনে শুরু হল আমাদের যাত্রা,আমরা ৭ বন্ধু অনেক হই হুল্লোড় করে বসলাম গাড়ির সিটে।আমাদের গাড়ির ড্রাইভার ভাইও ছিলেন যথেষ্ট ভ্রমণ পিপাসু মানুষ,উনি নিজেও আমাদেরকে অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন।
শুরু হল আমাদের চলা,এদেশে হাইওয়েতে চলার মজাই আলাদা,আপনার মনে হবে আকাশে উড়ছেন ।
আমাদের দেশে রাস্তার পাশে অনেক গবাদি পশু দেখা যায়,অনেকটা সেই স্মৃতিচারন করতে গিয়েই এই ছবি তুলেছিলাম।
যাবার পথে এরকম দৃশ্যের অবতারণা হামেশাই ঘটবে।
বলা বাহুল্য,অনেকের আপত্তির মুখে এই জায়গাটি বেছে নিয়েছিলাম তাই পথিমধ্যে আমি বেশ চিন্তিত ছিলাম এই ভেবে যে যদি জায়গাটা মনের মত না হয় তাহলে বেশ বিপদের মুখে পড়ে যাব।বিপদ বলতে বিরোধী দলের সূক্ষ্ম খোঁচার শিকার হব......... আবার নিজেকেই বোঝাচ্ছিলাম এই বলে,যা হবার হবে...... ঘুরতে বের হয়েছি এটাই বড় কথা ।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে পৌঁছালাম।
ঐ যে দেখা যায় সমুদ্র যার জন্যে এতো দূর ছুটে এলাম।
ভ্রমণের ক্লান্তি এক নিমিষেই চলে গিয়েছিল এই দৃশ্য দেখার পরে...... আহ কি শান্তি......।
সমুদ্রের ঢেউ এভাবেই আঁচড়ে পড়ছিল তীরে ।
অল্প বিস্তর মেঘের আলো আধারি খেলাও সাথে যোগ হয়েছিল।
বার বার মন চাইছিল ঐ পাথরের দ্বীপে গিয়ে রাত কাটাই......... সারা রাত কেটে যাবে কেবল সমুদ্রের গর্জন শুনে।
আরও একটি ছবি।
এরকম পাথুরে পথ পাড়ি দিতে আমাদের বেশ কষ্ট হয়েছিল,আমাদের এক বন্ধু পড়ে গিয়ে ব্যাথাও পেয়েছিল ।
পথিমধ্যে ছোট একটি বাড়ি পেয়ে গেলাম ,বাড়িটি ইট সিমেন্টে তৈরি কিন্তু খেলনা আকৃতির তাই ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না।
অনেক দূরে লাইট হাউজ......... আমাদেরকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
লাইট হাউজ এর একটু ক্লিয়ার ভিউ নেবার চেষ্টা করেছিলাম.........।
যতদূরে চোখ যায় কেবল নিলাভ জলরাশি.......
আমি আসলে এরকম পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র কেবল হিমছড়ি থেকেই দেখেছিলাম,সেই দৃশ্যও ভোলার মত নয়।কিন্তু আমি যতবার হিমছড়ি গিয়েছি ততবারই মানুষের পদভারে মুখরিত ছিল হিমছড়ির প্রতিটি কোনা......... যেই কারনে আমি নীরবতাটা উপভোগ করতে পারি নি।কিন্তু কর্ণওয়াল আমার সেই দুঃখ ঘুছিয়ে দিয়েছিল,এক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য জগতে।হয়তোবা ডুব দিয়েছিলাম নিজের মাঝেই,স্মৃতি হাতড়ে হয়তোবা খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম পুরনো কোন হিসেব নিকেশ।এক মুহূর্তের জন্য মনে পড়ে গিয়েছিল কৈশোরের হারানো দিন,উদ্দীপনা ,...... মনে পড়েছিল নিলাঞ্জনার নীল টিপ,নীল চুড়ি,আরও অনেক কিছু ।
এই উপকূল,এই জন মানবহীন নির্জনতা,এই সমুদ্রের গর্জন আপনার বিষণ্ণতার কথা বলবেই .........
ভিন্ন আরেকটি এঙ্গেল থেকে......
আমরা বন্ধুরা কয়েকজন এভাবেই ডুবে ছিলাম ভাবনার জগতে......... ( চলবে )
দার্জিলিং ভ্রমণ ব্লগ