somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসামের অরণ্যে: পর্ব-১: গৌহাটি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসামের অরণ্যে: পর্ব-২: কামাক্ষ্যা মন্দির দর্শন
আসামের অরণ্যে: পর্ব-৩: কাজীরাঙ্গা সাফারী পার্ক
আসামের অরণ্যে: পর্ব-৪: কারবি অংলং জেলার ডিফু হেডকোয়ার্টার
মেঘপিয়নের দেশ মেঘালয়ে: পর্ব-৫: চেরাপুঞ্জী
মেঘপিয়নের দেশ মেঘালয়ে: পর্ব-৬: শিলং শহরের আশেপাশে
ছবি ব্লগ: পর্ব-৭: গৌহাটীর কামাক্ষ্যা মন্দির
ছবি ব্লগ: পর্ব-৮: চেরাপুঞ্জি
আমার ভ্রমণ-কাহিনী ও ছবি ব্লগ গুলোর কালেকশন

২৭ আগস্ট, ২০১১, শনিবার।

তামাবিল সীমান্ত পার হয়ে ভারতের ডাউকিতে যখন পা রাখলাম, ঘড়িতে বাংলাদেশ সময় তখন দুপুর দু'’টা বাজে। স্থানীয় খাসিয়া ড্রাইভার টাই অনেকক্ষণ থেকেই আমার পিছে ঘুরঘুর করছিল; উদ্দেশ্য হলো, আমাকে তার মারুতি ৮০০ সিসির গাড়িতে শিলং পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। কাস্টমস-এর ফরম্যালিটিজ শেষ করে দেখি তখনও ব্যাটা দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্যে। শিলং পর্যন্ত দাম চাইছে ১৫০০ রূপি। অবশেষে ১২০০ রূপিতে রাজী হলো। সাথে থাকা মালামাল ওর গাড়িতে উঠিয়ে এক কিলোমিটার সামনে ডাউকি বাজারে এসে থামলাম আমরা। দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম ওখানেই।

ডাউকি বাজার

ডাউকি বাজার পার হবার পর গাছের ফাঁক দিয়ে বাংলাদেশের জাফলং দেখা যাচ্ছে

বেশ কিছুদিন থেকেই ভাবছিলাম ভারতের আসাম আর মেঘালয় রাজ্য ঘুরে আসলে মন্দ হয়না। এবারের ঈদের বেশ বড় ছুটিটা তাই কাজে লাগালাম। আমার খুব কাছের বন্ধু মারুফ, মনসুন সিং আর রুবুলের বাড়ি আসামেই। বাংলাদেশ থেকে যাবার আগেই তাই ওদের সাথে পুরো ট্যুরটা প্ল্যান করে নিয়েছিলাম। এবার ভারতের দুটো রাজ্য ঘুরলাম: আসাম এবং মেঘালয়। আসামের ২৭ টা জেলার মধ্যে কামরূপ জেলার ’গৌহাটি’ আর আসামের রাজধানী ’দিশপুর’ শহর, ন’গাঁও জেলার ’ন’গাঁও’ শহর আর কারবি অংলং জেলার ’ডিফু’ শহর ঘুরলাম। মেঘালয় রাজ্যের ৭ টা জেলার মধ্যে ঘুরলাম ’চেরাপুঞ্জি’ আর মেঘালয়ের রাজধানী ’শিলং’।

ডাউকি থেকে দেখা প্রিয় বাংলাদেশ

ডাউকি ব্রিজ, জাফলং থেকে যেটি দেখা যায়

বাম থেকে ডানে - টাই, শাইনি (টাই-এর ছোট ভাই), স্যামুয়েল (কাস্টমস অফিসার)

দুপুরের খাওয়াটা দ্রুত শেষ করে টাই-এর গাড়িতে ডাউকি বাজার থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরের শিলং-এর পথে যখন রওনা হলাম, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে তখন। শুরুতে প্রায় ঘন্টা খানেক রাস্তা বেশ কিছুটা খারাপ। টাই জানালো, শিলং থেকে ডাউকি বর্ডার পর্যন্ত চার লেনের রাস্তার কাজ চলছে। দক্ষহাতে পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছে টাই।

টাই-এর গাড়িতে শিলং-এর পথে

শিলং-এর পথে

পথের দু'ধারের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগলো। দেখলাম, মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়েছি আমরা। বৃষ্টির ধারা বেড়ে গেল। একরাশ মেঘ এসে পুরো ঢেকে দিয়েছে আমাদের। এক হাত দুরের জিনিসও তখন দেখা যাচ্ছেনা। এভাবে বেশ খানিকটা পথ চলার পর মেঘ কেটে গেল, বৃষ্টিও থেমে গেল। পথের দু’'ধারের পাহাড়ী উপত্যকা আর ঝর্ণার অবর্ণনীয় সৌন্দর্য দু'’চোখ ভরে দেখতে লাগলাম। নতুন কেনা Nikon D90 ক্যামেরা দিয়ে তুলতে থাকলাম একের পর এক ছবি। যাবার পথে পাইনুরসিলা, লাইলংকোট, মিল্লিম পার হলাম। ছোট ছোট এ বাজারগুলোর বাড়ি-ঘর আর মানুষগুলো ছবির মতোই সুন্দর।

পাইনুরসিলা বাজারে যাত্রাবিরতি

আবার শুরু হলো পথ চলা

শিলং তখনো অনেক দূর

শিলং-এর পথে

বিকাল পাঁচটায় টাই আমাকে নামিয়ে দিল শিলং শহরের গৌহাটি যাবার ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডে। ওর মোবাইল ফোন দিয়েই মারুফের সাথে কথা বলে নিলাম। মারুফ জানালো গৌহাটি শহরের ’'খানাপাড়া'’ এলাকায় যেন আমি চলে আসি। অতএব আর দেরী না করে গৌহাটীগামী একটি মারূতি-সুজুকি ওয়াগন-আর গাড়িতে আরও পাঁচ জনের সাথে শেয়ারে উঠে পড়লাম ২৫০ রূপি ভাড়াতে। এবারের ড্রাইভার আব্দুল কাইয়ুম।

খাসিয়া শিশুরা

শিলং-এর রাস্তায়

নয়নাভিরাম পথের দৃশ্য

পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম আমরা। শিলং থেকে গৌহাটীর এ প্রচণ্ড ব্যাস্ত রাস্তাতেও দেখলাম চার লেনের কাজ চলছে। আস্তে আস্তে শিলং-এর ঠাণ্ডা থেকে আসামের গরমের মাঝে ঢুকলাম। সারাদিনের জার্নিতে প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে। গাড়িতে একটু ঝিমুনি এলো। কাইয়ুম এর ডাক শুনে বুঝলাম, পথের ধারে এক ধাবাতে (রেস্টুরেন্ট) সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে। ওখানে অখাদ্য এক চিকেন ফ্রাইড রাইস আর চা খেয়ে আবার রওনা হলাম আমরা।

পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা

মেঘে ঢাকা শিলং

গৌহাটি শহরে পৌঁছানোর পর খানাপাড়াতে আমাকে নামিয়ে দিল কাইয়ুম। ওখান থেকে অটো ধরে রাত ৯ টায় পৌঁছে গেলাম জি.এস রোডের ’সোহাম’ শপিং মলের বিপরীতে ’'দি ধাবা'’ এর সামনে। ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত আমি। কিন্তু মারুফের দেখি কোন খোঁজ নেই। মারুফকে ফোন করার জন্যে এদিক ওদিক পি.সি.ও ফোনের দোকান খুঁজতে লাগলাম। এখানে অহমীয়া (আসামের ভাষা) ছাড়া বাংলা তেমন কেউ একটা বুঝেনা। রাত প্রায় সাড়ে ন’'টা বাজে। সব দোকান ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেশ খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। উপায়ন্তর না দেখে ’'দি ধাবা'’তে ঢুকে পড়লাম। রিসেপশন ডেস্কে বসা ম্যানেজারকে ইংরেজি-হিন্দী মিলিয়ে বুঝিয়ে বললাম যে, মারুফ আমার বন্ধু এবং তাকে আমার একটা ফোন করা দরকার। ভদ্রলোক হাসিমুখে মারুফকে ফোনে ধরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি মারুফ তার খালাতো ভাই জাহিদকে নিয়ে উপস্থিত। তারপর তিনজন মিলে এখানেই রাতের খাওয়া সেরে চলে গেলাম কাছেই ’খ্রীস্টান বস্তি’ এলাকায় জাহিদের এপার্টমেন্টে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা চললো মারুফ আর জাহিদের সাথে। আড্ডার ফাঁকেই পরের দিনগুলোর ট্র্যাভেল প্ল্যান রেডি করে ঘুমের অতল রাজ্যে হারিয়ে গেলাম সবাই।

আসামের অরণ্যে: পর্ব-২: কামাক্ষ্যা মন্দির দর্শন
আসামের অরণ্যে: পর্ব-৩: কাজীরাঙ্গা সাফারী পার্ক
আসামের অরণ্যে: পর্ব-৪: কারবি অংলং জেলার ডিফু হেডকোয়ার্টার
মেঘপিয়নের দেশ মেঘালয়ে: পর্ব-৫: চেরাপুঞ্জী
মেঘপিয়নের দেশ মেঘালয়ে: পর্ব-৬: শিলং শহরের আশেপাশে
ছবি ব্লগ: পর্ব-৭: গৌহাটীর কামাক্ষ্যা মন্দির
ছবি ব্লগ: পর্ব-৮: চেরাপুঞ্জি
আমার ভ্রমণ-কাহিনী ও ছবি ব্লগ গুলোর কালেকশন
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:৫৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×