বান্দরবানের আলিকদমে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগেই। আমাদের দলটিতে ছিলাম ৪ জন। উদ্দেশ্য ওখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ভিজিট করা। আজকে আপনাদের শোনাবো, আলীকদমের শ্বাসরুদ্ধকর এক অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী।
ঢাকা থেকে এ.সি. বাসে করে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কক্সবাজারের আগেই ’চকোরিয়া’ নামের একটি জায়গায় নেমে পড়লাম আমরা। চকোরিয়া থেকে ’চান্দের’ গাড়িতে সরাসরি আলীকদম বাস স্ট্যাণ্ড-এ পৌঁছাতে প্রায় দু’ঘন্টা লেগে গেল। নেমেই দেখি অফিস সহকারী রফিক আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। মাল-পত্র নিয়ে সরাসরি গিয়ে উঠলাম আলীকদম জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজে। এই রেস্ট হাউজটি ছাড়া আলীকদমে থাকার আর তেমন কোন জায়গা নেই। যে ক’দিন ছিলাম, স্থানীয় বাজারের একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেছি।
আলীকদম বাসস্ট্যাণ্ডে চান্দের গাড়ী
আলীকদম জেলা পরিষদ রেষ্ট হাউজ
বিলবোর্ড
বাজারে অবস্থিত বিলবোর্ড
বান্দরবানের অন্যান্য স্থানের তুলনায় আলীকদম জায়গাটি অপেক্ষাকৃত সমতল। এখানে বেশ কিছু জায়গায় যাবার, পাহাড়ী মানুষের জীবনযাত্রা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। দেখার মতো কিছু জায়গা হলো বাবু পাড়া, কলার ঝিরি -এসব জায়গায় ম্রো উপজাতিদের ছবির মতো সুন্দর গ্রাম।
আলীকদমের সৌন্দর্য
আলীকদমের সৌন্দর্য
আজকের লেখায় যে জায়গাটির বর্ণনা আমি দেব সেটি হলো ’আলীকদমের আলীর সুরঙ্গ’। ভয়ঙ্কর একটি জায়গা, যেখানে গেলে গা শিউরে ওঠে। রফিক বলেছিল আলীর সুরঙ্গ দেখতে হলে সকাল সকাল রওনা হতে হবে। কিন্তু দেরী হয়ে গেল। দুপুরের খাবার খেয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দিলাম আমরা চার অভিযাত্রী। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম আলীর সুরঙ্গ-এর একদম দোড় গোড়ায়। মাঝে একটা ছোট ঝিরি পড়লো। পা ভিজিয়ে পার হলাম। যে ভুলগুলো করেছিলাম আমরা তা হলো, সঙ্গে কোন টর্চ নেইনি, পায়ে ছিল ক্যাজুয়াল জুতা। আর পরে তো পানির তেষ্টায় মারাই যেতে বসেছিলাম। যারা যেতে চান, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, সঙ্গে করে গাম বুট, টর্চ, পানি, সম্ভব হলে বাঁশের লাঠি নিতে ভুলবেননা।
অভিযাত্রীরা আলীর সুরঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি
আলীর সুরঙ্গের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি আমরা
আলীর সুরঙ্গের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি আমরা
পাহাড় বেয়ে নামার পর হাঁটু পানির ঝিরি
হাঁটু পানির ঝিরি
হাঁটু পানির ঝিরি
ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল
ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল
ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল
ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল
ঝিরি পার হয়ে
আলীর সুরঙ্গ-এর কাছাকাছি যাবার উদ্দেশ্যে পাহাড় বেয়ে উঠলাম। সাংঘাতিক পিচ্ছিল রাস্তা। একজন আরেকজনকে ধরাধরি করে এগুলাম।
পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠছি আমরা
পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠছি আমরা
পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠছি আমরা
তারপর গহীন অন্ধকারে আমরা অভিযাত্রীরা ধীরে ধীরে ঢুকে গেলাম। আমাদের দু’পাশে পাহাড় আর বন, মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। চারদিকে গা ছমছমে একটা ভুতুড়ে পরিবেশ। চলার পথে কখনো বিশাল পাথরের চাঁই, আবার কখনোবা ছোট খাল। চারপাশে এত বেশি অন্ধকার যে, সামনের রাস্তা ঠাহর করতে কষ্ট হচ্ছিল।
বনের ভিতরে ঢুকে পড়েছি
নিকষ কালো অন্ধকার পথ ধরে এগুচ্ছি
কোমর পানি সমান খাল পার হচ্ছি
হাঁটতে হাঁটতে হয়রান হয়ে বিশ্রামরত আমরা
বিশ্রামরত আমরা
আমাদের গাইড রফিক
যতই ভিতরে ঢুকছি, সূর্যের আলো ততই ফিকে হচ্ছে। ভয়ঙ্কর এক সরু রাস্তা দিয়ে প্রায় ঘন্টা খানের হাঁটার পর অবশেষে পৌঁছালাম সুরঙ্গের মুখে। দেখলাম, একটা লোহার সিঁড়ি দেয়া আছে প্রায় ৩ তালা উঁচু সুরঙ্গে প্রবেশের জন্য। একজন আরেকজনকে ধরাধরি করে উঠে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে। অন্ধকারাচ্ছন্ন নিকষ কালো মৃত্যুপুরী আলীর সুরঙ্গতে ঢুকলাম আমরা। রফিক জানালো আরো একটি সুরঙ্গ আছে কাছেই। কিন্তু ওখানে ওঠাটা আরও কষ্টকর।
আলীর সুরঙ্গে ওঠার সিঁড়ি
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায়। আমরাও আর দেরী না করে সুরঙ্গ থেকে নেমে এসে, ফিরতি পথ ধরলাম। ফেরার সময় কষ্টটা আরও বেশি হলো। সাথে টর্চ না থাকায় সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে অবশেষে গহীন বনের সেই ভয়ঙ্কর রাস্তা ধরে বের হয়ে এলাম মুক্ত আকাশের নিচে, প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম সবাই।
আলীকদম সুরঙ্গ থেকে ফিরে বাজারে গুড়ের জিলাপি খাচ্ছি আমরা
আলীকদমে থাকার জন্য জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার খালেদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। খালেদের নম্বর: ০১৫৫৮ ৬০৪০৭৫
আমার অন্যান্য ভ্রমণ কাহিনী গুলো:
রূপসী দাসিয়ার ছড়া: বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে ভারতীয় এক ছিটমহল
চলুন, ঘুরে আসি মুম্বাই
বারিক্কা টিলা: বাংলাদেশের মানচিত্রে যেন ছোট্ট একটি ভূ-স্বর্গ
টাঙ্গুয়ার হাওড়: যার সৌন্দর্যের তুলনা সে নিজেই
কালিমপং-লাভা-লোলেগাঁও: যেন পৃথিবীর বুকে একটুকরো স্বর্গ
সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত মসূয়া