somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরু হয়ে গিয়েছে শীতকাল। পিকনিকের ভরা মৌসুম। এখন মানুষ দলে দলে যাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় পর্যটন এলাকাগুলোতে। বাস ভর্তি মানুষ, বাসের সামনে রকমারি ব্যানার লাগানো। সেই ব্যানারে লেখা থাকবে কে কোথা থেকে এসেছে, কোন জেলা থেকে এসেছে, কোন সংস্থা থেকে এসেছে। আর সবচাইতে জরুরী যে ব্যাপারটি, তা হলো, প্রতিটি বাসের ছাদে বিশালাকৃতির একটি বা দু'টি করে মাইক লাগানো। সেই মাইকে উচ্চস্বরে বাজবে হিন্দী, বাংলা গান। কখনও বা বাসের ভিতরের পিকনিকের যাত্রীদেরই অনেকে বেসুরো গলায় গাইবে। আর যারা নিজেদের গাড়ি নিয়ে যাবে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাবে দামী গাড়ির সামনের দরজা খুলে উঠতি বয়সের ছেলেরা গাড়ীর ডেক সেট-এ জোরে গান বাজাচ্ছে।

পিকনিকস্পটগুলোতে আরও বিচিত্র কিছু ব্যাপার লক্ষণীয়। যেমন: মানুষজন ওখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে ওঠে। খেলাধূলা ভাল জিনিস, সেটাতে আপত্তি নেই। কিন্তু যখন উচ্চস্বরে মাইকে বলা হয়, 'আপনাদের সবার প্রিয় রিনু ভাবী তার কোকিল কণ্ঠে এখন কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার একটা গান গাইবেন' এবং তারপর শুরু হয়ে যায় হেড়ে গলার বেসুরো গান। কিংবা 'পিলো পাসিং' খেলার ধারা বিবরণী যখন চিৎকার করে চলে পুরুষ কণ্ঠে, তখ দীর্ঘ একটা নি:শ্বাস ফেলে বলি: 'কি বিচিত্র সেলুকাস এ দেশ'!

বাংলাদেশে পর্যটনের যে ক'টি এলাকা আমি এ পর্যন্ত দেখেছি, অসাধারণ শান্ত সব জায়গা। কিন্তু এসব জায়গায় অশান্তি ডেকে নিয়ে আসছে এইসব অশান্তিকারী উচ্চস্বরে মাইক বাজানো পার্টিরা। তারা যে শান্তিপ্রিয় ট্যুরিস্টদের চরম বিরক্তির কারণ হয়, এটা তারা কখনও বুঝতে চায়না। তারা ভাবতে চায়না যে, উচ্চস্বরে মাইক বাজানোতে অন্য ট্যুরিস্টদের অসুবিধা হতে পারে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের যে ক'টি পর্যটনের স্থান আমি দেখেছি, কোথাও এই মাইক বাজানোর 'কালচার' নেই। ওসব জায়গার মানুষজন জানে যে, এই 'ট্যুরিজম' তাদের রুটি-রুজি। তাই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের তারা কোন ভাবেই উত্যক্ত করেনা, উচ্চ স্বরে মাইক বাজানোতো দূরের কথা। এমনকি ওসব জায়গার নিরাপত্তাও যথেষ্ট ভাল প্রতীয়মান হয়েছে আমার কাছে। যেখানে বাংলাদেশী হয়েও নিজের দেশের কোন পর্যটন স্থানে গিয়েও আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।

এতো গেল উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে শব্দদূষণের কাহিনী। আরও বেশ কিছু বিচিত্র্য ব্যাপার আছে। বিদেশী টুরিস্ট দেখলেই লোকজন তাদের আশেপাশে ভীড় করে, যেন চিড়িয়াখানার 'জলহস্তি' দেখার মতো অবস্থা। আর ভিক্ষুকের যন্ত্রণায় দেশী-বিদেশী সকল পর্যটকরাই বিরক্ত। সাথে রয়েছে হকারদের যন্ত্রণা। পর্যটন এলাকাগুলোতে ঘুরে অল্প কিছু জায়গা ছাড়া চারিদিকে ছড়িয়ে থাকতে দেখেছি ময়লা-আবর্জনা, চিপস আর চানাচুরের খালি প্যাকেট, বাদামের খোসা এমনকি কনডমের প্যাকেট।

আরও যে ব্যাপারটি না বললেই নয়, তা হলো, দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষ তার স্মৃতিচিহ্ন রেখে আসার ব্যাপারে উদগ্রীব। তাই কোন মন্যুমেন্ট বা দেয়ালে আপনি যদি দেখেন: 'মিলা+সুজন' কিংবা, 'মলি, তোমাকে ভালবাসি' অথবা, কোন মেয়ের নামে কুৎসিত কোন গালি বা মোবাইল নম্বর, তাহলে দয়া করে অবাক হবেন না।

উপরের কথাগুলো 'নতুন বোতলে পুরনো মদের মতো'। আপনারা যারা পর্যটন স্থানগুলোতে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন, তারা সবাই কম-বেশি উপরিউক্ত সমস্যাগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেখেছেন। কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসেবে মনে-প্রাণে আমি বিশ্বাস করি, পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন। দেশের হর্তা-কর্তা পলিসিমেকাররা পর্যটনের জায়গা গুলোতে নিজেরাই ব্যবসা করে নিজেদের পকেট ভারী করুন, তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু অপার সম্ভাবনার এই পর্যটন শিল্পকে বাঁচান, দেশের অর্থনীতিকে একটু হলেও চাঙ্গা করুন। দেশপ্রেম আপনাদের মধ্যে না থাকুক বা থাকুক, সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো আপনাদের নিজেদের লাভের কথা বিবেচনা করে হলেও বাংলাদেশের পর্যটন এলাকাসমূহে সুস্থ-সুন্দর নিরাপদ একটি পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:৪৪
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×