একজন রোগীর দৃষ্টিকোন থেকে দেখা, রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলতেছি। আমার মনে হয়, ডাক্তারী পড়ার পরে, ২ বছরের আরেকটা কোর্স পড়া উচিৎ, "হাউ টু ডিল ইউথ প্যাশেন্টস"। ইথিকস বিষয়েও পড়ানো উচিত। মানুষের জীবন যতটা তাদের উপর নির্ভর করে অন্য কোন পেশার মানুষের উপর নির্ভর করে না।ডিরেক্টলি মানুষের জীবন নিয়ে তাদের পেশা।ড: এর ব্যবহারেই তো রোগীর অর্ধেক রোগ ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু... হচ্ছেটা কি?
অনেক মানুষ কোন অসুখ হলেই ঢাকায় আসেন, একটু ভাল চিকিৎসার জন্য।এসে কোন সরকারী হাসপাতালের ড: এর চেম্বারে দেখান, যাতে হাসপাতালে তার সুপারিশে একটা সিট পাওয়া যায়।আর ড: ইচ্ছামতন এই টেষ্ট সেই টেষ্ট করিয়ে রোগীকে মুটামুটি বিশাল পরিমান টাকা খসান। এই টেষ্টগুলা অনেকে মফস্বল থেকে করে এলেও ড: তা একসেপ্ট করেন না। ইভেন রক্তের গ্রুপও।
আর যারা নিম্ন-মধ্যবিত্ত / মধ্যবিত্ত ঢাকায় থাকে, কিংবা অন্য জায়গা থেকে আসেন তারাও চেম্বারেই রোগী দেখান। কয়েক সপ্তাহ আগে সিরিয়াল দিয়ে। আবার সেই একি কাহিনী, এই টেষ্ট সেই টেষ্ট ... এমনও দেখা গেছে, ইবনে সিনা থেকে কোন টেষ্ট করালে হবে না, করাতে হবে পপুলার থেকে কিংবা ড: যেখানে বলবেন সেখানে। টেষ্ট করে দেখা যায় ৯০% টেষ্ট ড: না দিলেও পারতেন। আর একটু এদিক সেদিক হলেই তার পছন্দের ক্লিনিকে ভর্তি অত:পর পয়সার শ্রাদ্ধ।
চিত্র:
১।
আমি একদিন পিজির আউটডোরে নাক, কান গলার ড: দেখাইছি, একজন সহকারী অধ্যাপক। উনি আমাকে একটু দেখে বলেন, আপনার নাকে অপারেশন করতে হবে। ব্লক আছে ঠিক করতে হবে।এই নিন আমার ক্লিনিকের ঠিকানা, আজকে বা কাল বিকালেই চলে আসেন!! এটা ২০০৩ এর কথা, কই আজ পর্যন্ত আমার তো অপারেশন করতে হল না।আমার তো কোন সমস্যা নাই।
২।
আমার মা, দাতের পেইন নিয়া, দাতের ড: এর কাছে গেছেন, ড: উনাকে বলে রুট ক্যানেল করতে হবে।আম্মু বলে, এতে কি হবে ড: বুঝায় ব্যাথা থাকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।রুট ক্যানেল বলতে যেটা আমি বুঝি, দাতের শিকর কেটে দেয়া হবে,হয়ত ফিলিংও করা হবে। দাতটা একটা নকল দাতের মত থাকবে সারাজীবন। আম্মুকে রুট ক্যানেল করাই নাই, ৫বছর ধরে উনার দাত ঠিকই ভাল আছে।
৩।ছোট ভাইয়ের কিডনিতে সমস্যা হয়েছিল।সাধারনত যে কোন রোগের শুরুতেই আমরা মেডিসিনের ড: এর কাছে যাওয়ার কথা ভাবি, কারন আমরা তো সিম্পটম দেখে বুঝি না কোন স্পেশালিষ্টের কাছে যাব! ১মে যে ড: দেখান হয় সে ২,৩সপ্তাহে রোগই ধরতে পারেন না আবার অন্য ড: এর কাছে রেফারও করেন না। উল্টা পাল্টা কিছু টেষ্ট দিয়ে আর নিয়মিত তার ভিজিট নিতেন।
৪। আম্মুর ডায়বেটিস। উনি বারডেমের ড: দেখান। কিন্তু উনি মনে হয় ৫জন ড: চেন্জ করছে। শুধু মাত্র একটা কারন, ড: এর ব্যবহার ভাল না, মনযোগ দিয়ে কথা শুনে না। এমন সব কথা ড: রা বলেন যেটা শুনলে মনে হয়, ডাক্তার না কষাই।আমার মায়ের বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। ড: কে কোন সিম্পটমস বললে ড: উত্তর দেন, এমন রোগ তো ছেলেদের হয়, মহিলাদের তো হওয়ার কথা না কিংবা আপনি মিথ্যা বলতেছেন / ঢং করতেছেন!!
৫। কয়েকদিন ধরে জ্বর।এক ঈদের ছুটিটে অনেক ড:ই রোগী দেখেন না। সুতরাং না পেরে এক ড: এর কাছে গেলাম, সে আবার এলার্জি স্পেশালিষ্ট।অনেক জার্নাল বের হয়েছে তার।আমাকে কয়েকটা পেরাসিটামল দিয়ে, একগাদা অন্য টেষ্ট দিলেন, মনে হল আমার এলার্জি না থাকলেও বানিয়ে দেয়া হবে।
সবাই একরকম নয়। আবার এমন ড: আছেন রোগীকে বেশি পরীক্ষা দেন না।ইভেন, প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন, নিজের পারসেন্টেজের অংশ ছেড়ে দেন, যাতে পরীক্ষা করানোর খরচ কমে।উনি প্রতিদিন ৩০জন রোগী দেখেন, ৮ঘন্টা ধরে। কিন্তু এদের সংখ্যা অনেক কম।আবার এমনও আছে ৫ঘন্টায় ১০০জন দেখেন।আমার ফেমিলিতে মোট যদি ১০০টা ড: দেখান হয়, তার মধ্যে ৮০-৯০জনই একই রকম। রোগী দেখার জন্য বেশি হলে ৩/৫মিনিট টাইম, তাড়াতাড়ি কিছু শুনেই একগাদা টেষ্ট। যেদিন টে্ষ্ট নিয়ে আসবে ঐদিনেরও ফি আছে।মুটামুটি ড: দেখালেই কয়েক হাজার টাকার ধাক্কা। এইটাই কমন চিত্র।
ভাববেন না শুধু খারাপ ড: এর সাথেই দেখা হয়েছে।দেশের সবচেয়ে বড় বড় ড: দের সাথেও দেখা হয়েছে.।ড: আবুল কালাম আজাদ, ড: নেছারউদ্দিন, ড: প্রানগোপাল দত্ত, ড: রতন, ড: হারুন... আরো অনেকে....এদের সবার থেকে ভাল/খারাপ এই এক্সপেরিয়েন্স।