somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেনাপ্রধান আসলে মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের ভূমিকা নিয়েছেন।

২২ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তুলসি গ্যাবার্ডের সফর ও কড়া ম্যাসেজ বুঝিয়ে দিয়েছে এই অঞ্চলে ট্রাম্প কী চান। মোদির সফরে ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে করা প্রশ্ন মোদির জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই ইঙ্গিতই পূর্ণতা পেলো তুলসির বক্তব্যে। আমিও ট্রাম্পের জয়ের সময়ই বলেছিলাম-- যেকোনো মূল্যে এই বিশ্বকে 'ইসলামি জঙ্গি'মুক্ত করবেন তিনি। এটা জঙ্গীবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নতুন মাত্রার সাহস এনে দিয়েছে। সেনাপ্রধান 'সবাইকে সাবধান করে' দেওয়া বক্তব্যের সময় থেকেই সরাসরি নাম ধরে ডক্টর ইউনূস বলে সম্বোধন করছেন, 'মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা' বলছেন না। এটাও একটা ম্যাসেজ।

৫ অগাস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধান পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য অনেক কথাই বলেছিলেন, অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেটা ছিলো মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের "অশ্বত্থমা হত (ইতি গজ)" এর মতো বলা। তারও আগে অভ্যুত্থানের সময় বুলেট প্রয়োগ না করে তিনি শেখ হাসিনাকেও উদ্ধার করে নিরাপদে পাঠিয়েছেন (আমাকে যেমন পুলিশ লালমনিরহাট থেকে উদ্ধার করেছিলো, অনেকটা সেরকম), আবার শান্তিরক্ষা মিশনে নিষেধাজ্ঞা ও ক্যু এড়াতে সেনাকে গুলি করার নির্দেশ না দিয়ে শান্ত থাকতে বলেছেন।

এতেই ওরা ভেবেছে সেনা আসলে তাদের পক্ষে! হ্যাঁ, কিছু সদস্য ছিলো তাদের পক্ষে, কিন্তু সেটা সামান্য। সেনাপ্রধান চাইলে তখনই অ্যাকশানে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি চাননি। কারণ কেউ একজন হোয়াটসঅ্যাপে শেখ হাসিনাকে বলে দিয়েছিলো যে উপরে মার্কিন স্যাটেলাইট আছে, গুলি করলেই নিষেধাজ্ঞা ও আফগানিস্তানের মতো মার্কিন সেনা চলে আসবে। তখন দেশটাও আফগানিস্তান-সিরিয়া হয়ে যাবে আর শেখ হাসিনার পরিণতিও সাদ্দামের মতো হবে। সূত্রটি তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলো, "তার চেয়ে আপনি আগে সেইফ হোন, ওদেরকে চালাতে দিন। কিছুদিন পর ওরাই বলবে 'আগেই ভালো ছিলাম'।"

আসলে সেদিন সেনাপ্রধান যুধিষ্ঠিরের মতো সত্য কিছুটা গোপন করে হলেও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা না দিলেও তিনি বলেছেন পদত্যাগ করেছেন। তাঁর চোখই বলে দিচ্ছিলো তিনি সত্য লুকাচ্ছেন। এমন ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে বা রেগে গেলে তিনি চোখ তীক্ষ্ম করে ফেলেন, যাকে 'চোখ তলানো' বলে।

৭ মাস তিনি চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। অনেকেই তাঁকে বেঈমান বলেছে, অনেকে গালি দিয়েছে। আবার যাদেরকে তিনি সইতে পারেন না, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে তাঁকে চলতে হয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষের লোকটাকে চলতে হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়ে! এমনকি তাঁর আদর্শের জায়গায় থাকা বঙ্গবন্ধুর নামটাও তিনি নিতে পারেননি! এসবই তিনি করেছেন দেশ ও জাতির স্বার্থে। তিনি বলেছিলেন, "আমার উপর ভরসা রাখুন, আমি সব সামলে নেবো"। এটাকে সবাই যার যার মতো করে তর্জমা করেছে। আসলে তিনি এটা বলেছেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে। তিনি সামলে নিয়েছেন বলেই সেনায় ক্যু হতে দেননি, মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সেইভ করেছেন, সংবিধানকে সেইভ করেছেন।

এই সরকার এই সংবিধানের অধীনেই শপথ নিয়েছে। কাজেই, এখন সবাইকে সংবিধান মানতেই হবে। সংবিধান বলবে পদত্যাগ সঠিক ছিলো কিনা, সংবিধানই এই সরকারের বৈধতার প্রশ্নের সমাধান দেবে, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পথও সংবিধান বলে দেবে। একইসাথে ঐ সংবিধানই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল ঠেকাবে। এই কাজ শেখ হাসিনাই করে গেছেন। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদ লাগবে, যা নেই এখন। স্পিকারও নেই যে তাকে দিয়ে জোর করে সংশোধন করানো যাবে। তিনি আগেই পদত্যাগ করেছেন।

আমার কেন জানি মনে হয় আসল মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা বা অন্য কেউ, যে ফরহাদ মজহার বা মাহফুজের খেলাও খেলে দিয়েছে। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার নিরাপদে চলে যাওয়া কি আসলে একটা শুদ্ধাভিযান? কী জানি? তবে এই দিনটা না এলে আপন-পর চেনা যেত না, ত্যাগী আর হাইব্রিডকে চেনা যেত না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আর বিপক্ষের লোকদেরকেও চেনা যেত না। মব ও জঙ্গীদের আসল রূপটাও মানুষ দেখতে পারতো না। কেননা যত ভালো কাজই করুন শেখ হাসিনা, যত উন্নয়নই করুন ভারতের সাথে হাত মিলিয়ে, এসবই মানুষের কাছে অদেখা থেকে যাচ্ছিলো। কিছু তেলবাজ ব্যাক্তিস্বার্থে প্রশংসা করতো বটে, কিন্তু তারা ছিলো সুসময়ের বন্ধু। এখন সব জলবৎ তরলং। তবে শেখ হাসিনারও বুঝা উচিত কে তাঁর আপন আর কে পর। তাঁর নিজের ত্রুটিগুলিও তাঁকে বুঝতে হবে। এক প্যাঁচাল বারবার পারলে মানুষ বিরক্ত হয়। সব কিছুর নামই একটা নামে হলেও যে বিরক্ত হয়, এটাও তিনি বুঝতেন। তাই পদ্মা সেতুর নাম চেঞ্জ করতে দেননি। কিন্তু তোষামোদিরাই যত নষ্টের মূল!

সেনা আজ থেকে সারাদেশে টহল জোরদার করেছে। মনে হচ্ছে তুলসির কথাকে সিরিয়াসলিই নিয়েছে। নিতেই হবে, নাহলে বিপদ। এখন জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি, অপরাধ ঠেকিয়ে দ্রুত একটা নির্বাচন আয়োজনই মনে হচ্ছে সেনার লক্ষ্য। আর যদি কেউ সংবিধান ছুঁড়ে ফেলতে চায় বা দেশের অরাজকতা আবার আনতে চায়, রাস্তা দখল করতে চায় অকারণে, ছাত্র পরিচয়ে আকাম করতে চায়, সেনা তাদেরকে আর ছাড়বে না। কারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন আর আগেরটা নাই। এখন বিশ্বের মোড়লদের মোড়ল ট্রাম্প। তুলসির কথাই তাঁর কথা আর মোদির কথাই তুলসির কথা। বিশ্বের এই নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণকে এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ নেই।
দেব দুলাল গুহ -- দেবু ফরিদী।


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৪৭
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রসঙ্গ আওয়ামী রাজনীতিঃ প্রস্তাবনা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৪

প্রসঙ্গ আওয়ামী রাজনীতিঃ প্রস্তাবনা.....

খুব লক্ষ্য করে দেখলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ- সার্জিস আলম- আইএসপিআর তিন দিকের বক্তব্যের শানেনজুল এবং সারমর্ম একই। একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে সব আলোচনা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বামী-স্ত্রী'র সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনে মরিয়া বিএনপি

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:১৪



আপনাদের আওয়ামী স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলগা মোমেনের সেই যুগান্তকারী বাণীর কথা মনে আছে? উহা বলেছিল, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্কের মতো। আবার বলেছিল, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নাকি রক্তের সম্পর্ক।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনাপ্রধান ভয় পাননি, ভয় দেখিয়েছেন।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৯


ভাইয়েরা এখনই এত আনন্দিত হইও না। সাবধানে থেকো। তোমাদের নেতারা তাঁকে 'ভারতের দালাল'সহ এতকিছু বলার পরেও তিনি কুল আছেন, তোমাদের দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন, এটা সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কার্টেসি দায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

অন্তর্দাহ

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৫০


তোমার নীরবতা আজ মহাকালের মতোই ভারী,
তোমার চোখের গভীর অশ্রুধারা
আমার প্রতিটি শ্বাসে জীবন্ত এক অভিশাপ হয়ে জেগে থাকে।
তোমার হৃদয় ভাঙার শব্দ আমি শুনিনি,
তোমার ব্যথার সুর আমি বুঝিনি—
তোমার সেই বোবা যন্ত্রণাগুলো
আমার হৃদয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসনাতের বয়ানে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেনা সদরের অস্বীকার

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:০১

হাসনাতের বয়ানে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেনা সদরের অস্বীকার

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের একটি 'সংশোধিত' অংশকে রাজনৈতিকভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×