মানুষের চিন্তার একটা বড় অসুবিধা এই যে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবিক সীমাবদ্ধতা থেকে বের হতে পারে না। অর্থাত, মানুষ হিসেবেই আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে (দৈহিক এবং মানসিক)। এই সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করা বেশির ভাগের পক্ষেই সম্ভব হয় না।
যেমন: ১) মানুষ সর্বদা বর্তমান কালকে শ্রেষ্ঠ ভাবে। প্রতিটি সভ্যতাই ভেবেছে যে আমাদের যুগই শ্রেষ্ঠ, এরকম ধরনীতে আর কখনও আসেনি, আসবেও না। ফিরআউনের সভ্যতা, লুত-সালেহ-শুআইব (রা, গ্রীক, রোমান, পারস্য, আরব, ভারতীয়, ইংরেজ ও এখন আমেরিকান প্রভৃতি সব সভ্যতাই ভেবেছে যে, আমাদের যুগই সেরা, আমাদের প্রযুক্তিই সর্বোচ্চ, আমাদের দক্ষতাই তুলনাহীন। কিন্তু সময়ের প্রবাহে সবই ভুল প্রমানিত হয়েছে।
২) মানুষ সবসময়ই বিজয়ী জাতির আনুগত্য করে। পৃথিবীতে যে সভ্যতা প্রাধান্য বিস্তার করে, তাদের সংস্কৃতি সবাই অনুকরন করে। যেমন বর্তমান বিশ্বে আমেরিকান সংস্কৃতিকেই স্ট্যান্ডার্ড ভাবা হয়। সেভাবে পশ্চিমা বুদ্ধিজীবিদের কথাবার্তাকে প্রশ্নাতীত ধরে নেয়া হয়। সব বুদ্ধিজীবিরা 'পশ্চিমা' হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।
৩) বর্তমান পশ্চিমা আধুনিক সভ্যতার কয়েকটি মূলমন্ত্র হল, এক্ষেত্রে মানুষকে সব কিছুর উর্ধ্বে, মানুষের ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ ভাবা হয়। কিন্তু বিশ্বসৃষ্টির তুলনায় মানুষের অসহায়ত্বকে কখনও টেনে আনা হয় না। আসলে আমাদের পৃথিবী সৌরজগতের অনেকগুলো গ্রহের মধ্যে একটি মাত্র। আমাদের সৌরজগত ছায়াপথের বহু সৌরজগতের মধে একটি মাত্র। আমাদের ছায়াপথ নীহারীকার বহু ছায়াপথের মধ্যে একটি মাত্র। আমাদের নীহারিকা বিশ্বজগতের অনেকগুলো নীহারিকার মধ্যে একটি মাত্র।
৪) মানুষ তার সীমাবদ্ধতা দিয়ে সব কিছু বুঝতে চায়। যেমন আল্লাহর আকৃতি কি, অবস্থান কোথায়, আয়ু কত, লিঙ্গ কি এসব প্রশ্ন করে। অথচ আমরা জানি আমাদের এই দুনিয়াবী সময়-স্থান-আকারের ধারনা মহাকাশের ক্ষেত্রে খাটে না। মহাকাশ পরিমাপের সময় এই দুনিয়াবি সময়-স্থান-আকারের মাপ বাদ দিতে হয় (যেমন সময়ের মাপ হয় আলোকবর্ষ দিয়ে, যা দুনিয়াবী মাপের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না)।
তাই আফসোস তাদের জন্য, যারা সমগ্র বিশ্বজগত আল্লাহর অস্তিত্ব সাক্ষ্য দেয় দেখেও তাকে অবিশ্বাস করে!! কুরআনে তাই বলা হয়েছে, (ফাবি আয়্যি আলা ইরাব্বিকুমা তুকায্যিবান--তোমরা আমার কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?